এখনও শেষ হয়নি একুশের সংগ্রাম by আহমদ রফিক
ভাষা
অর্থাৎ মাতৃভাষা যে কোনো জাতিগোষ্ঠীর ভাষিক জাতীয়তাবাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিকায় বলা হয়েছে, ভাষা জাতিরাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত
সংহতি রক্ষা করে থাকে। অর্থাৎ ভাষা যে কোনো জাতির সংস্কৃতির সঙ্গে
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ভাষাও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হতে পারে মুক্তিসংগ্রামের
প্রেরণা। যেমন ঘটেছিল আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসে। ঘটেছে শ্রীলংকায়। সেখানকার
তামিলরা তাদের ওপর সিংহলী ভাষা চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তামিল
রাষ্ট্রের দাবিতে সংগ্রাম শুরু করে প্রভাকরণের নেতৃত্বে। বিশ্বের বিভিন্ন
স্থানে ভাষার অধিকারে লড়েছে মানুষ, কারণ ভাষা মূলত ভাষিক জাতিরাষ্ট্র গঠনের
একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বাংলাভাষী জাতির মাতৃভাষা প্রসঙ্গে বিতর্ক কিন্তু মধ্য যুগেও দেখা যায়। মধ্য যুগে কবি সৈয়দ সুলতান কবি আবদুল হাকিম- এরা সেক্যুলার চিন্তাধারার অনুসারী হিসেবে বাংলা ভাষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন- এর বিপরীতে পরবর্তীকালে ধর্মীয় চেতনার সঙ্গে ভাষাকে মিলিয়ে দিয়ে কেউ কেউ হিন্দু ঐতিহ্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারা বাংলা ভাষাকে হিন্দু জাতি ঐতিহ্যের অঙ্গ বলে দাবি করলেন। আবার এদিকে মুসলমান মৌলানারা বললেন, মুসলমানদের জাতি ধর্মভিত্তিক, আরবি তাদের জাতীয় ভাষা। এই দুই অবস্থানের বিরুদ্ধে সেক্যুলার ভাবধারার মানুষ বাংলা ভাষার পক্ষে অবস্থান নেন। তারা ভাষিক জাতীয়তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করলেন, ধর্মীয় জাতীয়তার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে।
ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী ‘উর্দু’কে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার পুনরুদ্যোগের অপপ্রয়াস পেল। এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন গণআজাদী লীগ, ছাত্র ফেডারেশন, তমদ্দুন মজলিস এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ প্রমুখ রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজে ব্রতী হলেন। মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী এসব বুদ্ধিজীবীর বিরোধিতা করে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ও তার সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার চিন্তার তীব্র বিরোধিতায় অবতীর্ণ হলেন। গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যখন গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে বাংলা ভাষার দাবির পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করলেন তা খারিজ হয়ে গেল। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্সের জনসভায় এবং কার্জন হলের ছাত্র সমাবেশে ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ এই ঘোষণা দিলেন। তার এ ঘোষণা ছাত্ররা ‘নো’ ‘নো’ ধ্বনি তুলে প্রত্যাখ্যান করলেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মুসলিম লীগ সরকার আরবি হরফে বাংলা লেখা, রোমান হরফে বাংলা প্রচলন প্রভৃতি উদ্ভট আলোচনা, প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকারের প্রশ্নটিকে ধামাচাপা দেয়ার নানা প্রয়াস পেলেও দেশের সচেতন বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র সমাজ বাংলা ভাষার অধিকারের দাবিতে একটু একটু করে সংগঠিত হতে শুরু করল। দীর্ঘ তিন-সাড়ে তিন বছর পর ১৯৫২ সালে সেই চেতনা দানা বেঁধে উঠল। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভাষার দাবিতে সংগঠিত হল বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্র সমাবেশে। এই ছাত্র সমাবেশের ওপর যখন ১৪৪ ধারা জারি করা হল তখন সে সময়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ছাত্র সমাজ প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে সেদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় এবং অন্যায্য সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদে বিদ্রোহের সূচনা ঘটাল। একুশের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ২২ ফেব্র“য়ারি ঢাকার সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নেমে পড়লেন। ঢাকার এই প্রতিক্রিয়া সারা দেশের জেলা শহরগুলোতে তো বটেই গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ল। ভাষা আন্দোলনের এই ব্যাপক জনসম্পৃক্তি বাংলা ভাষার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সেক্যুলার চেতনায় উদ্দীপ্ত করে তুলল। তৈরি হল এক সাংস্কৃতিক জাগরণের। ছাত্র আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হলে সূচনা হল প্রগতিশীল আন্দোলনের। যুক্ত হল আধুনিক চিন্তাধারা, গণতান্ত্রিকতা ও জাতীয়তাবাদী চেতনা। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ কুমিল্লা সাহিত্য সম্মেলনে, ১৯৫৪-এর কার্জন হল সাহিত্য সম্মেলনে এবং ১৯৬৭-এর কাগমারীতে মওলানা ভাসানী সম্মেলনে ইতিবাচক চেতনার ক্রমবিকাশ ঘটতে থাকল। যার পরিণতিতে আমরা ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ অর্জন করলাম।
ভাষা আন্দোলনের তিনটি স্লোগান ছিল ১. রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, ২. রাজবন্দিদের মুক্তি চাই ৩. সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু কর। এই দাবির ২টি অর্জিত হলেও আজ পর্যন্ত তৃতীয় দাবিটি অর্জন করতে আমরা সক্ষম হইনি। স্বাধীনতার পর যে মধ্য শ্রেণী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল, তারা রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদে রাখল ঠিকই কিন্তু সর্বস্তরে বাংলা চালুর উদ্যোগ নিল না। দীর্ঘ ৪৪ বছরে গোটা জাতিকেও শিক্ষিত করা হল না; অর্থাৎ শ্রেণী বিভাজনটি শুধু থেকেই গেল না তাকে লালন-পালন ও বর্ধন করা হতে লাগল। ফলে স্বাধীনতাটা রাজনৈতিক স্বাধীনতা হল কেবল। জনগণের প্রকৃত মুক্তি অর্জিত হল না। ফলে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হল না, উচ্চ আদালতে বাংলা চালু হল না। সাধারণ মানুষ তার নিজের রাষ্ট্রে নিজের অধিকার থেকে দূরের অবস্থানে রয়ে গেল। স্বাধীনতা যে এদেশের আপামর মানুষের সহায় হল না তার কারণ বর্তমান শাসকশ্রেণী সেই ঔপনিবেশিক শাসকশ্রেণীরই উত্তরাধিকার বহনকারী; তারা চাইল না তাদের পূর্বসূরিদের অভ্যস্ত জায়গা থেকে সরে এসে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়াতে।
একুশের অর্জন যদি বলি স্বাধীন দেশ, তাহলে একুশের ব্যর্থতা এটা যে, সেই স্বাধীন দেশে তার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার না-থাকা। তাই আমরা বলতে পারি, একুশের চেতনাকে সফল করে তোলার জন্য আরেকটি লড়াইয়ের দরকার হবে আর তা হচ্ছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর সংগ্রাম। যার মধ্য দিয়ে শ্রেণীবৈষম্য ঘোচানো যাবে। প্রতিষ্ঠা করা যাবে রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার। গ্রন্থনা : শুচি সৈয়দ
বাংলাভাষী জাতির মাতৃভাষা প্রসঙ্গে বিতর্ক কিন্তু মধ্য যুগেও দেখা যায়। মধ্য যুগে কবি সৈয়দ সুলতান কবি আবদুল হাকিম- এরা সেক্যুলার চিন্তাধারার অনুসারী হিসেবে বাংলা ভাষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন- এর বিপরীতে পরবর্তীকালে ধর্মীয় চেতনার সঙ্গে ভাষাকে মিলিয়ে দিয়ে কেউ কেউ হিন্দু ঐতিহ্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারা বাংলা ভাষাকে হিন্দু জাতি ঐতিহ্যের অঙ্গ বলে দাবি করলেন। আবার এদিকে মুসলমান মৌলানারা বললেন, মুসলমানদের জাতি ধর্মভিত্তিক, আরবি তাদের জাতীয় ভাষা। এই দুই অবস্থানের বিরুদ্ধে সেক্যুলার ভাবধারার মানুষ বাংলা ভাষার পক্ষে অবস্থান নেন। তারা ভাষিক জাতীয়তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করলেন, ধর্মীয় জাতীয়তার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে।
ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী ‘উর্দু’কে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার পুনরুদ্যোগের অপপ্রয়াস পেল। এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন গণআজাদী লীগ, ছাত্র ফেডারেশন, তমদ্দুন মজলিস এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ প্রমুখ রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজে ব্রতী হলেন। মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী এসব বুদ্ধিজীবীর বিরোধিতা করে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ও তার সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার চিন্তার তীব্র বিরোধিতায় অবতীর্ণ হলেন। গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যখন গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে বাংলা ভাষার দাবির পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করলেন তা খারিজ হয়ে গেল। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্সের জনসভায় এবং কার্জন হলের ছাত্র সমাবেশে ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ এই ঘোষণা দিলেন। তার এ ঘোষণা ছাত্ররা ‘নো’ ‘নো’ ধ্বনি তুলে প্রত্যাখ্যান করলেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মুসলিম লীগ সরকার আরবি হরফে বাংলা লেখা, রোমান হরফে বাংলা প্রচলন প্রভৃতি উদ্ভট আলোচনা, প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকারের প্রশ্নটিকে ধামাচাপা দেয়ার নানা প্রয়াস পেলেও দেশের সচেতন বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র সমাজ বাংলা ভাষার অধিকারের দাবিতে একটু একটু করে সংগঠিত হতে শুরু করল। দীর্ঘ তিন-সাড়ে তিন বছর পর ১৯৫২ সালে সেই চেতনা দানা বেঁধে উঠল। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভাষার দাবিতে সংগঠিত হল বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্র সমাবেশে। এই ছাত্র সমাবেশের ওপর যখন ১৪৪ ধারা জারি করা হল তখন সে সময়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ছাত্র সমাজ প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে সেদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় এবং অন্যায্য সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদে বিদ্রোহের সূচনা ঘটাল। একুশের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ২২ ফেব্র“য়ারি ঢাকার সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নেমে পড়লেন। ঢাকার এই প্রতিক্রিয়া সারা দেশের জেলা শহরগুলোতে তো বটেই গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ল। ভাষা আন্দোলনের এই ব্যাপক জনসম্পৃক্তি বাংলা ভাষার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সেক্যুলার চেতনায় উদ্দীপ্ত করে তুলল। তৈরি হল এক সাংস্কৃতিক জাগরণের। ছাত্র আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হলে সূচনা হল প্রগতিশীল আন্দোলনের। যুক্ত হল আধুনিক চিন্তাধারা, গণতান্ত্রিকতা ও জাতীয়তাবাদী চেতনা। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ কুমিল্লা সাহিত্য সম্মেলনে, ১৯৫৪-এর কার্জন হল সাহিত্য সম্মেলনে এবং ১৯৬৭-এর কাগমারীতে মওলানা ভাসানী সম্মেলনে ইতিবাচক চেতনার ক্রমবিকাশ ঘটতে থাকল। যার পরিণতিতে আমরা ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ অর্জন করলাম।
ভাষা আন্দোলনের তিনটি স্লোগান ছিল ১. রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, ২. রাজবন্দিদের মুক্তি চাই ৩. সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু কর। এই দাবির ২টি অর্জিত হলেও আজ পর্যন্ত তৃতীয় দাবিটি অর্জন করতে আমরা সক্ষম হইনি। স্বাধীনতার পর যে মধ্য শ্রেণী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল, তারা রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদে রাখল ঠিকই কিন্তু সর্বস্তরে বাংলা চালুর উদ্যোগ নিল না। দীর্ঘ ৪৪ বছরে গোটা জাতিকেও শিক্ষিত করা হল না; অর্থাৎ শ্রেণী বিভাজনটি শুধু থেকেই গেল না তাকে লালন-পালন ও বর্ধন করা হতে লাগল। ফলে স্বাধীনতাটা রাজনৈতিক স্বাধীনতা হল কেবল। জনগণের প্রকৃত মুক্তি অর্জিত হল না। ফলে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হল না, উচ্চ আদালতে বাংলা চালু হল না। সাধারণ মানুষ তার নিজের রাষ্ট্রে নিজের অধিকার থেকে দূরের অবস্থানে রয়ে গেল। স্বাধীনতা যে এদেশের আপামর মানুষের সহায় হল না তার কারণ বর্তমান শাসকশ্রেণী সেই ঔপনিবেশিক শাসকশ্রেণীরই উত্তরাধিকার বহনকারী; তারা চাইল না তাদের পূর্বসূরিদের অভ্যস্ত জায়গা থেকে সরে এসে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়াতে।
একুশের অর্জন যদি বলি স্বাধীন দেশ, তাহলে একুশের ব্যর্থতা এটা যে, সেই স্বাধীন দেশে তার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার না-থাকা। তাই আমরা বলতে পারি, একুশের চেতনাকে সফল করে তোলার জন্য আরেকটি লড়াইয়ের দরকার হবে আর তা হচ্ছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর সংগ্রাম। যার মধ্য দিয়ে শ্রেণীবৈষম্য ঘোচানো যাবে। প্রতিষ্ঠা করা যাবে রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার। গ্রন্থনা : শুচি সৈয়দ
No comments