নরকযাত্রা by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে মাইলের পর মাইল রাস্তায় অসংখ্য মরণফাঁদ |
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের ভয়াবহ চিত্র |
ঘণ্টায়
১০০ কিলোমিটার স্পিড তুললে ২০ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়ার কথা। অথচ এখন সিলেট
থেকে মাত্র ২৯.৮ কিলোমিটার দূরের কোম্পানীগঞ্জ যেতে সময় লাগে প্রায় তিন
ঘণ্টার মতো। আর সে তিন ঘণ্টার যাত্রা নরক যন্ত্রণার চেয়ে মোটেও কম নয়। পথে
পথে গর্ত, খাদ। খোদ সড়কের মন্ত্রীও বিস্মিত হয়েছিলেন সড়কটির এমন দশা দেখে।
বলেছিলেন ‘ক্যানসার’ হয়েছে সড়কটির। সাধারণ ডাক্তারে কাজ হবে না-এফসিপিএস
লাগবে। রোগ শনাক্ত করলেও কোন ‘এলাজ’ দেননি মন্ত্রী। চা খেলেন এক কাপ।
‘ক্যানসার আক্রান্ত’ সড়কের পাশের টংঘরে। ৫শ’ টাকা বিল দিলেন দোকানিকে।
মন্ত্রীর মহানুভবতায় মুগ্ধ হলেন কোম্পানীগঞ্জবাসী। ভাবলেন এমন মমতার পরশ
হয়তো পাবে অবহেলিত সড়কটিও। তবে তদের ভুল ভেঙেছে। পৌনে এক বছরেও সড়ক
সংস্কারের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, দুদিনের মধ্যে
প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। আর ৬শ’ কোটি টাকার মূল কাজ শুরু হবে শীত মওসুমে।
পঞ্জিকা থেকে শীত ছুটি নিলেও কাজ শুরু হয়নি। মন্ত্রীকে এক কাপ চা খাওয়ানোর
আনন্দ ছাড়া আর কিছু পাওয়া হয়নি কোম্পানীগঞ্জবাসীর। উত্তরে সিলেট নগরীর
সবচেয়ে কাছের উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। ২৭৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ
উপজেলা নবম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সদর উপজেলার সঙ্গে ‘সিলেট-১’ আসনের
অংশ ছিলো। উন্নয়ন যা হয়েছে তা সে সময়ের মধ্যেই হয়েছে। কারণ সিলেট-১ আসন
থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উপজেলাটি হারিয়েছে হেভিওয়েট এমপি বা মন্ত্রীর ছায়া।
সিলেট-১ আসনের অংশ থাকার সময় এ অঞ্চলে উন্নয়নের পরশ বুলিয়ে দিয়েছিলেন সাবেক
স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর
রহমান।
দেশের প্রান্তঃসীমার একটি উপজেলা হলেও দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে কোম্পানীগঞ্জের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। দেশের নির্মাণ শিল্পে পাথরের একটি বড় যোগানদার এই উপজেলা। রেলপথের জন্য সবচেয়ে বড় পাথর সরবরাহকারীও এই উপজেলা। দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জের অবস্থানও এখানেই। পাথর পরিবহনে দেশের দীর্ঘ রজ্জুপথও এখানে। দেশের ভবন, সড়ক নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও কোম্পানীগঞ্জের পথ নিজেই এখন বিপদসঙ্কুল। স্থানে স্থানে বিশাল গর্ত, খাদ রয়েছে এ পথজুড়ে। কিন্তু সংস্কারের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি এ পর্যন্ত। পথ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তাই পথে নেমেছেন কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দারা। সড়ক সংস্কারের দাবিতে এক হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন তারা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮ই জানুয়ারি একসঙ্গে সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে কোম্পানীগঞ্জের উৎমা সীমান্ত পর্যন্ত ২০টি পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান মানবজমিনকে রাস্তার করুণদশা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এটি রাস্তা নয় যেন নরকের পথ। এ রাস্তার কারণে বলতে গেলে আমরা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। রাস্তার কারণে কেউই এখানে আসতে চান না। এমনকি স্থানীয় এমপিও খুব একটা আসেন না। রাস্তা পেরোনোর ভয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই শহরমুখী হন না। তিনি বলেন, রাস্তার এমনই বিপজ্জনক অবস্থা যে, গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও দু’বার ভাবতে হয়। এমনও ঘটেছে, কোন গর্ভবতী মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই সন্তান প্রসব করেছেন তিনি।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের ভয়াবহ চিত্র সরজমিন দেখতে ২০১৪ সালের ১৯শে মে কোম্পানীগঞ্জ এসেছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী (বর্তমানে সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী) ওবায়দুল কাদের। সড়কটির বেহাল দশায় বিস্মিত মন্ত্রী একে তুলনা করেছিলেন ক্যানসারের সঙ্গে। সড়কটির এ করুণ দশাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা উল্লেখ করে বলেছিলেন, এ সড়কের রোগ সারাতে সাধারণ ডাক্তারে কাজ হবে না-এফসিপিএস লাগবে। সড়কের ধলাই সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে মন্ত্রী মোবাইলফোনে সংশ্লিষ্টদের ২ দিনের মধ্যে সড়ক সংস্কারের প্রাথমিক কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি এ সময় স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেছিলেন, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের নির্মাণ কাজের জন্য ছয় শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, শীত মওসুমে কাজ শুরু হবে। সেদিন বিক্ষুব্ধ জনতা মন্ত্রীর গাড়ি আটকে দিয়েছিলেন। মান ভাঙাতে পথের এক টং দোকানে বসে চা খেয়েছিলেন তিনি। ৫ টাকার চায়ের বদলে মন্ত্রী পরিশোধ করেছিলেন ৫ শ’ টাকা। মুগ্ধ হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই ভরসা পেয়েছিলেন যোগাযোগমন্ত্রীর কথায়। তবে মন্ত্রীর আশ্বাসের পর সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে সামান্য যে সংস্কারের আঁচড় পড়েছিলো তাতে মন ভরেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
তবে বিআরডিবি’র কোম্পানীগঞ্জ শাখার চেয়ারম্যান শাহ মো. জামাল উদ্দিন তথ্য দেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মন্ত্রীর ঘোষণামতোই সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে। তিনি জানান, মন্ত্রী সড়ক সংস্কারের জন্য ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিলেও উপজেলায় একটি প্রকল্পে এত বড় অংকের বরাদ্দে রাজি হয়নি সরকার। তিনি বলেন, প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে এখন ৪৪৭ কোটি করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মঙ্গলবার একনেকের বৈঠক রয়েছে, সেখানে প্রকল্পটি পাস হলে কোম্পানীগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটবে সেই আশায় আমরা বুক বেঁধে আছি।
দেশের প্রান্তঃসীমার একটি উপজেলা হলেও দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে কোম্পানীগঞ্জের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। দেশের নির্মাণ শিল্পে পাথরের একটি বড় যোগানদার এই উপজেলা। রেলপথের জন্য সবচেয়ে বড় পাথর সরবরাহকারীও এই উপজেলা। দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জের অবস্থানও এখানেই। পাথর পরিবহনে দেশের দীর্ঘ রজ্জুপথও এখানে। দেশের ভবন, সড়ক নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও কোম্পানীগঞ্জের পথ নিজেই এখন বিপদসঙ্কুল। স্থানে স্থানে বিশাল গর্ত, খাদ রয়েছে এ পথজুড়ে। কিন্তু সংস্কারের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি এ পর্যন্ত। পথ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তাই পথে নেমেছেন কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দারা। সড়ক সংস্কারের দাবিতে এক হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন তারা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮ই জানুয়ারি একসঙ্গে সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে কোম্পানীগঞ্জের উৎমা সীমান্ত পর্যন্ত ২০টি পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান মানবজমিনকে রাস্তার করুণদশা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এটি রাস্তা নয় যেন নরকের পথ। এ রাস্তার কারণে বলতে গেলে আমরা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। রাস্তার কারণে কেউই এখানে আসতে চান না। এমনকি স্থানীয় এমপিও খুব একটা আসেন না। রাস্তা পেরোনোর ভয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই শহরমুখী হন না। তিনি বলেন, রাস্তার এমনই বিপজ্জনক অবস্থা যে, গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও দু’বার ভাবতে হয়। এমনও ঘটেছে, কোন গর্ভবতী মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই সন্তান প্রসব করেছেন তিনি।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের ভয়াবহ চিত্র সরজমিন দেখতে ২০১৪ সালের ১৯শে মে কোম্পানীগঞ্জ এসেছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী (বর্তমানে সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী) ওবায়দুল কাদের। সড়কটির বেহাল দশায় বিস্মিত মন্ত্রী একে তুলনা করেছিলেন ক্যানসারের সঙ্গে। সড়কটির এ করুণ দশাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা উল্লেখ করে বলেছিলেন, এ সড়কের রোগ সারাতে সাধারণ ডাক্তারে কাজ হবে না-এফসিপিএস লাগবে। সড়কের ধলাই সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে মন্ত্রী মোবাইলফোনে সংশ্লিষ্টদের ২ দিনের মধ্যে সড়ক সংস্কারের প্রাথমিক কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি এ সময় স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেছিলেন, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের নির্মাণ কাজের জন্য ছয় শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, শীত মওসুমে কাজ শুরু হবে। সেদিন বিক্ষুব্ধ জনতা মন্ত্রীর গাড়ি আটকে দিয়েছিলেন। মান ভাঙাতে পথের এক টং দোকানে বসে চা খেয়েছিলেন তিনি। ৫ টাকার চায়ের বদলে মন্ত্রী পরিশোধ করেছিলেন ৫ শ’ টাকা। মুগ্ধ হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই ভরসা পেয়েছিলেন যোগাযোগমন্ত্রীর কথায়। তবে মন্ত্রীর আশ্বাসের পর সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে সামান্য যে সংস্কারের আঁচড় পড়েছিলো তাতে মন ভরেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
তবে বিআরডিবি’র কোম্পানীগঞ্জ শাখার চেয়ারম্যান শাহ মো. জামাল উদ্দিন তথ্য দেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মন্ত্রীর ঘোষণামতোই সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে। তিনি জানান, মন্ত্রী সড়ক সংস্কারের জন্য ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিলেও উপজেলায় একটি প্রকল্পে এত বড় অংকের বরাদ্দে রাজি হয়নি সরকার। তিনি বলেন, প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে এখন ৪৪৭ কোটি করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মঙ্গলবার একনেকের বৈঠক রয়েছে, সেখানে প্রকল্পটি পাস হলে কোম্পানীগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটবে সেই আশায় আমরা বুক বেঁধে আছি।
No comments