জমি কার, কে বানায় বাড়ি! by মতিন আব্দুল্লাহ
হোল্ডিং
নম্বর ৬/১, ৬/২। রাজধানীর আরকে মিশন রোডের এই হোল্ডিংয়ের ১২ কাঠা জমির ওপর
চলছে সুবিশাল ভবন নির্মাণের কাজ। ১০ তলা ফাউন্ডেশনের ওপর ৯ তলা পর্যন্ত
নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতি ফ্লোরে ৫টি করে থাকছে মোট ৫০টি ফ্ল্যাট। এরই
মধ্যে ৩০টি ফ্ল্যাট বিক্রিও হয়ে গেছে। বাকিগুলো বিক্রির অপেক্ষায়।
রাজধানীর বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় ফ্ল্যাটের চাহিদা যথেষ্ট ভালো। কিন্তু জমির মালিকানার বিষয়েই যত গণ্ডগোল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমির মূল মালিক বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি)। কিন্তু অবৈধভাবে ওই জমি দখল করে সেখানে এই ভবন গড়ে তুলছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
জানা গেছে, ওই জমির অবৈধ দখলদার মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করলেও তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় হেরে যায়। পরে তিনি উচ্চ আদালতে পুনর্বিচারের আবেদন করেন। উচ্চ আদালত মামলাটির পুনর্বিচারের পক্ষে রায় দেন, যা এখনও বিচারাধীন। ওই জমিতে কোনো পক্ষের কোনো ধরনের স্থাপনা না করতে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে সংঘবদ্ধ দখলদার চক্র অবৈধ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। যদিও এই প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর রাজউক ও আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও বিটিএমসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমেই দখলদাররা অত্যন্ত মূল্যবান এই সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। ভুয়া কাগজপত্রের ওপর ভবনের নকশার অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। নিজেদের জমিতে দখলদারদের বহুতল ভবন গড়ে তোলার বিরুদ্ধে রাজউক এবং পুলিশের কাছে কয়েকটি চিঠি দেয়া ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিটিএমসি।
এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর আরকে মিশন রোডে বিটিএমসির জমির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে সংসদীয় কমিটি কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। বিটিএমসিকে সেসব নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি।
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জিএম জয়নাল আবেদীন যুগান্তরকে বলেন, রাজউক বা বিটিএমসির কেউই বিষয়টি আমাকে জানায়নি। আমি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সরেজমিন দেখা গেছে, আরকে মিশন রোড বিটিএমসির জমিতে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ কাজ করছে টোটাল রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। ক্রেতা সেজে ওই ভবনে গেলে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবদুল মান্নান এ প্রতিবেদককে প্রকল্পটি ঘুরে দেখান। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৪৫টি ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। পরে এই প্রতিবেদককে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর বিজয় নগর পানির পাম্পসংলগ্ন টোটাল রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অফিসে। কোম্পানির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হাফিজ এমডি জিকো এই প্রতিবেদককে প্রকল্পের ফ্ল্যাট সম্পর্কে ধারণা দেন। এরপর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ফ্ল্যাট বিক্রির বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেন কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের কর্মীরা।
বিটিএমসির তথ্যমতে, তাদের মালিকানাধীন এ জমির সরকারি হোল্ডিং নম্বর-০৬। দখলদার চক্র জাল কাগজপত্রে একাধিক মালিক দেখিয়ে ৬/১ ও ৬/২ নামে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে নতুন হোল্ডিং নম্বর নেয়। এই খবর জানতে পেরে বিটিএমসি সিটি কর্পোরেশনের কাছে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই ওই হোল্ডিং নম্বর বাতিলের আবেদন জানায়। সিটি কর্পোরেশন এই বিষয়ে একবার শুনানি করলেও পরে আর কোনো শুনানি হয়নি। অন্যদিকে বিটিএমসির দিক থেকেও আর কোনো তৎপরতা চালানো হয়নি। ফলে অবৈধ দখলদাররা পাকাপোক্তভাবে গেড়ে বসে এই সম্পত্তিতে।
বিটিএমসি থেকে রাজউককে লেখা চিঠির তথ্যমতে, দখলদার চক্রের তৎপরতা টের পেয়ে তারা রাজউককে ২০০৮ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারি বিদ্যমান জায়গায় কাউকে ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন না দেয়ার অনুরোধ জানায়। এরপরও ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর দখলদার চক্রের জমা দেয়া ভবনের নকশা অনুমোদন করে রাজউক। পরে ২০১০ সালের ২ ফেব্র“য়ারি বিটিএমসি রাজউকের কাছে ওই নকশার অনুমোদন বাতিল করার অনুরোধ জানায়। পাশাপাশি পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানায়। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও অব্যাহত থাকে ভবন নির্মাণ কাজ। গত বছরের ২১ আগস্ট এই অনিয়মের বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করার পর বিটিএমসির তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ অক্টোবর ওই জায়গার নকশা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে দখলদারদের নোটিশ দেয় রাজউক। একই সঙ্গে বিটিএমসির কাছে মালিকানার সপক্ষে প্রমাণপত্র চেয়ে চিঠি দেয়। দীর্ঘ শুনানি এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর রাজউক ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই ভবনের নকশা স্থগিত করে। তবে এই বিষয়ে মামলা চলমান থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি রাজউক। আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করছে নকশা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এই সময়ে ভবনের বাকি নির্মাণ কাজ এবং ফ্ল্যাট বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজউক।
জমির মালিকানাসংক্রান্ত কাগজপত্র বিশ্লেষণে জানা গেছে, এটা জাতীয়করণকৃত ঢাকেশ্বরী কটন মিলের সম্পত্তি। জাতীয়করণ আদেশে (রাষ্ট্রপতি আদেশ-২৭/১৯৭২) সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, জাতীয়করণকৃত সমুদয় সম্পত্তি শর্তমুক্তভাবে জাতীয়করণ করা। সেই হিসেবে এই সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি। জাতীয়করণকৃত এই সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের লিকুইডেশন সেল ১৯৮৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বিটিএমসির সঙ্গে সম্পত্তি হস্তান্তর চুক্তিপত্র সম্পাদন করে এবং দখল হস্তান্তর বুঝিয়ে দেয়। এরপর বিটিএমসির পক্ষ থেকে হোল্ডিং কর পরিশোধ করে মহানগর জরিপে শুদ্ধরূপে নাম রেকর্ড করে চূড়ান্ত পর্চা লাভ করে। যার হোল্ডিং নম্বর-০৬।
রাজউকে দুই পক্ষের জমা দেয়া কাগজপত্রের তথ্যমতে, মো. আবদুল মোসাব্বের ১৯৯২ সালে ওই জমির মালিকানা স্বত্ব প্রমাণের জন্য ঢাকা জজকোর্টে দেওয়ানি মামলা করেন। এই জমির এস.এ দাগ নম্বর-২৫৩৪। দেওয়ানি মামলা নম্বর-২৩৫/১৯৯২। বিটিএমসি এই মামলার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১৯৯৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আদালত বিটিএমসির পক্ষে রায় দেন।
দখলদার ও বিটিএমসির মালিকানা কাগজপত্রের তথ্যমতে, বর্তমান দখলদার জজকোর্টের মামলার রায়ের পুনর্বিচারের দাবিতে ১৯৯৯ সালে হাইকোর্টে প্রথম আপিল করেন। মামলা নম্বর-১৩৬/১৯৯৯। হাইকোর্ট ২০১০ সালে এই আপিলের রায় দেন। সেখানে নিম্ন আদালতে মামলাটির পুনর্বিচারের জন্য নির্দেশ দেয়। দ্বিতীয় যুগ্ম-জেলা জজ ঢাকার আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। নতুন মামলা নম্বর-৩২৩/২০১০।
জমির কাগজপত্র ঘেঁটে আরও জানা গেছে, ঢাকার ওয়ারী মৌজার হাটখোলায় অবস্থিত এস.এ-২৫৩৪ সম্পত্তিটি ১৯৫৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর সাফকবলা দলিল-১০৬০২ মূলে ঢাকেশ্বরী কটন মিল মালিক হয়। ওই সম্পত্তি ক্রয়ের পর ঢাকেশ্বরী কটন মিল শুদ্ধরূপে এস.এ রেকর্ডে নাম লিপিবদ্ধ করান।
পরে সরকারি আদেশে ঢাকেশ্বরী কটন মিলস ও মিলের সমুদয় সম্পত্তি জাতীয়করণ করা হয় এবং মিলটি পরিচালনার দায়িত্ব বিটিএমসির ওপর ন্যস্ত করা হয়। জাতীয়করণ অবস্থায় ১৯৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি মিলটি অবলুপ্ত করা হয়। ১৯৮৩ সালে মিলটি বিক্রি করা হয়। মিলের কিছু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হাটখোলায় ছিল। এই জমিটি তারই অংশ, যা পরে বিটিএমসিকে দেয়া হয়।
এ সংক্রান্ত কাগজপত্রের তথ্যমতে, বৈধ কাগজপত্র থাকায় লিকুইডেশন সেল ওই সম্পত্তি বিটিএমসিকে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করলে সংশ্লিষ্ট দখলদারসহ ও ওই এলাকায় বিটিএমসির অন্যান্য জমির দখলদাররা একজোট হয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নম্বর-১৪১৬/১৯৯৭) দায়ের করে। উচ্চ আদালত দখলদারদের রিট খারিজ করে বিটিএমসির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দেয়। এই চক্র আবারও খারিজাদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। যার নম্বর (সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল)-৩৯০/২০০২। উচ্চ আদালত পুনরায় দখলদারদের আদেশ খারিজ করে পূর্বের আদেশ বহাল রাখে। অবৈধ দখলদার চক্রের সদস্যরা ২০০৩ সালের ২ ফেব্র“য়ারি সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর-৩৯০/২০০২ এর আদেশের বিরুদ্ধে সিভিল পিটিশন নম্বর-৯৯/২০০৩ দায়ের করে। যা ২০০৪ সালে ২১ জুলাই মাসে খারিজ হয়ে যায়।
এরপর এই বিষয়ে আর আদালতে লড়েনি দখলদার চক্র। তবে সংশ্লিষ্ট জমির ব্যাপারে মামলা চলমান থাকায় লিকুইডেশন সেল বিটিএমসিকে সাফ কবলা দলিল করে দেয়নি। মামলা নিষ্পত্তির পর এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই অবস্থায় ওই জমির কেউ মালিকানা দাবি করতে পারে না। অবকাঠামো উন্নয়ন করার কোনো সুযোগ থাকে না।
বিটিএমসির সূত্রমতে, বিটিএমসির হাটখোলার সম্পত্তিতে কোনো প্রকার ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি না করতে এবং ভুয়া দলিলে প্রতারিত হয়ে ক্রয় না করতে ২০০৭ সালে চারটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিটিএমসির এই ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারণাকে আমলে না নিয়ে অবৈধ দখলদারদের ভুয়া কাগজপত্রকে আমলে নিয়েই তাদের সঙ্গে চুক্তি করে বেসরকারি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ‘টোটাল রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’। এটা জানার পর ওই ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে উকিল নোটিশও দিয়েছে বিটিএমসি। কিন্তু কিছুদিন কাজ বন্ধ রেখে আবারও থেমে থেমে কাজ চালিয়ে এখন শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। বিটিএমসির এক কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে একবার ডেভেলপার কোম্পানির লোকরা তাদের মারধরও করে। এই ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে জানিয়েছে বিটিএমসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার না মেলায় পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা-৩৩৬/২০০৯ দায়ের করে বিটিএমসি।
২০১১ সালের ১৪ মার্চ টোটাল রিয়েল এস্টেট লিমিটেডকে লিগ্যাল নোটিশ দেয় বিটিএমসি। জবাবে তারা বিটিএমসিকে জানায়, তারা ওই জমিতে নির্মাণ কাজ করছে না। এই জবাব পেয়েই চুপচাপ থাকে বিটিএমসি। যদিও ওই সময় নির্মাণ কাজ অব্যাহত ছিল।
মহানগর জরিপে ওই জমির রেকর্ড বিটিএমসির নামে যেই প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে ওই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সিভিল মিসলেনিয়াস পিটিশন- দায়ের করে দখলদার চক্র। যার নম্বর-৮২৯/২০১১ এবং ৮৩০/২০১১। ওই সম্পত্তিতে সুপ্রিমকোর্ট নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশনা এবং ওই সম্পত্তির ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। ওই আদেশের পরও নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় কোর্ট থেকে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি হয়। যার বিচার চলমান রয়েছে।
বিটিএমসির আইন বিভাগের পরিচালক কাজী ফিরোজ হোসেন যুগান্তরকে বলেছেন, অবৈধ দখলদার মৃত আবদুল মুসাব্বিরের সন্তান ও উত্তরাধিকারীরা জাল দলিল করে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তৃতীয় পক্ষ ডেভেলপারকে সঙ্গে নিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জমির বর্তমান মালিকানা দাবিদারদের পিতা জীবিত অবস্থায় আদালতে দলিলপত্র দাখিল করতে পারেনি। পিতার মৃত্যুর পর সন্তানরা দলিলসহ নানা জাল কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এ ব্যাপারে জমির দখলদার আহমেদ আরেফিন তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, বিটিএমসির সঙ্গে আমাদের মামলা চলছে। চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত রাজউক বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সঠিক হবে না। মামলা চলমান অবস্থায় নির্মাণ কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্মাণ কাজ চালাতে আইনগত বাধা ছিল না, এখনও নেই।
টোটাল রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক শাহজাহান কবির যুগান্তরকে বলেন, গত ১০০ বছর ধরে এই জমির মালিক বর্তমান সময়ের দখলদার। দখলদারের কাগজপত্র সঠিক জেনেই আমরা কাজ শুরু করেছি। সংসদীয় কমিটি বিটিএমসির মালিকানা নির্ধারণের কেউ নয়। আমরা যা করেছি আইন মোতাবেক করেছি।
বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সরোয়ার যুগান্তরকে বলেন, আরকে মিশন রোডের জায়গাটি যে বিটিএমসির তাতে সংশয়ের কারণ নেই। তবে অবৈধ দখলদাররা মামলা করায় বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এই ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তা আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে। আশা করি সরকারি এই মূল্যবান সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে পারব।
রাজধানীর বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় ফ্ল্যাটের চাহিদা যথেষ্ট ভালো। কিন্তু জমির মালিকানার বিষয়েই যত গণ্ডগোল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমির মূল মালিক বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি)। কিন্তু অবৈধভাবে ওই জমি দখল করে সেখানে এই ভবন গড়ে তুলছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
জানা গেছে, ওই জমির অবৈধ দখলদার মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করলেও তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় হেরে যায়। পরে তিনি উচ্চ আদালতে পুনর্বিচারের আবেদন করেন। উচ্চ আদালত মামলাটির পুনর্বিচারের পক্ষে রায় দেন, যা এখনও বিচারাধীন। ওই জমিতে কোনো পক্ষের কোনো ধরনের স্থাপনা না করতে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে সংঘবদ্ধ দখলদার চক্র অবৈধ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। যদিও এই প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর রাজউক ও আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও বিটিএমসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমেই দখলদাররা অত্যন্ত মূল্যবান এই সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। ভুয়া কাগজপত্রের ওপর ভবনের নকশার অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। নিজেদের জমিতে দখলদারদের বহুতল ভবন গড়ে তোলার বিরুদ্ধে রাজউক এবং পুলিশের কাছে কয়েকটি চিঠি দেয়া ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিটিএমসি।
এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর আরকে মিশন রোডে বিটিএমসির জমির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে সংসদীয় কমিটি কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। বিটিএমসিকে সেসব নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি।
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জিএম জয়নাল আবেদীন যুগান্তরকে বলেন, রাজউক বা বিটিএমসির কেউই বিষয়টি আমাকে জানায়নি। আমি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সরেজমিন দেখা গেছে, আরকে মিশন রোড বিটিএমসির জমিতে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ কাজ করছে টোটাল রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। ক্রেতা সেজে ওই ভবনে গেলে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবদুল মান্নান এ প্রতিবেদককে প্রকল্পটি ঘুরে দেখান। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৪৫টি ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। পরে এই প্রতিবেদককে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর বিজয় নগর পানির পাম্পসংলগ্ন টোটাল রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অফিসে। কোম্পানির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হাফিজ এমডি জিকো এই প্রতিবেদককে প্রকল্পের ফ্ল্যাট সম্পর্কে ধারণা দেন। এরপর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ফ্ল্যাট বিক্রির বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেন কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের কর্মীরা।
বিটিএমসির তথ্যমতে, তাদের মালিকানাধীন এ জমির সরকারি হোল্ডিং নম্বর-০৬। দখলদার চক্র জাল কাগজপত্রে একাধিক মালিক দেখিয়ে ৬/১ ও ৬/২ নামে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে নতুন হোল্ডিং নম্বর নেয়। এই খবর জানতে পেরে বিটিএমসি সিটি কর্পোরেশনের কাছে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই ওই হোল্ডিং নম্বর বাতিলের আবেদন জানায়। সিটি কর্পোরেশন এই বিষয়ে একবার শুনানি করলেও পরে আর কোনো শুনানি হয়নি। অন্যদিকে বিটিএমসির দিক থেকেও আর কোনো তৎপরতা চালানো হয়নি। ফলে অবৈধ দখলদাররা পাকাপোক্তভাবে গেড়ে বসে এই সম্পত্তিতে।
বিটিএমসি থেকে রাজউককে লেখা চিঠির তথ্যমতে, দখলদার চক্রের তৎপরতা টের পেয়ে তারা রাজউককে ২০০৮ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারি বিদ্যমান জায়গায় কাউকে ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন না দেয়ার অনুরোধ জানায়। এরপরও ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর দখলদার চক্রের জমা দেয়া ভবনের নকশা অনুমোদন করে রাজউক। পরে ২০১০ সালের ২ ফেব্র“য়ারি বিটিএমসি রাজউকের কাছে ওই নকশার অনুমোদন বাতিল করার অনুরোধ জানায়। পাশাপাশি পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানায়। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও অব্যাহত থাকে ভবন নির্মাণ কাজ। গত বছরের ২১ আগস্ট এই অনিয়মের বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করার পর বিটিএমসির তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ অক্টোবর ওই জায়গার নকশা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে দখলদারদের নোটিশ দেয় রাজউক। একই সঙ্গে বিটিএমসির কাছে মালিকানার সপক্ষে প্রমাণপত্র চেয়ে চিঠি দেয়। দীর্ঘ শুনানি এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর রাজউক ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই ভবনের নকশা স্থগিত করে। তবে এই বিষয়ে মামলা চলমান থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি রাজউক। আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করছে নকশা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এই সময়ে ভবনের বাকি নির্মাণ কাজ এবং ফ্ল্যাট বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজউক।
জমির মালিকানাসংক্রান্ত কাগজপত্র বিশ্লেষণে জানা গেছে, এটা জাতীয়করণকৃত ঢাকেশ্বরী কটন মিলের সম্পত্তি। জাতীয়করণ আদেশে (রাষ্ট্রপতি আদেশ-২৭/১৯৭২) সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, জাতীয়করণকৃত সমুদয় সম্পত্তি শর্তমুক্তভাবে জাতীয়করণ করা। সেই হিসেবে এই সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি। জাতীয়করণকৃত এই সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের লিকুইডেশন সেল ১৯৮৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বিটিএমসির সঙ্গে সম্পত্তি হস্তান্তর চুক্তিপত্র সম্পাদন করে এবং দখল হস্তান্তর বুঝিয়ে দেয়। এরপর বিটিএমসির পক্ষ থেকে হোল্ডিং কর পরিশোধ করে মহানগর জরিপে শুদ্ধরূপে নাম রেকর্ড করে চূড়ান্ত পর্চা লাভ করে। যার হোল্ডিং নম্বর-০৬।
রাজউকে দুই পক্ষের জমা দেয়া কাগজপত্রের তথ্যমতে, মো. আবদুল মোসাব্বের ১৯৯২ সালে ওই জমির মালিকানা স্বত্ব প্রমাণের জন্য ঢাকা জজকোর্টে দেওয়ানি মামলা করেন। এই জমির এস.এ দাগ নম্বর-২৫৩৪। দেওয়ানি মামলা নম্বর-২৩৫/১৯৯২। বিটিএমসি এই মামলার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১৯৯৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আদালত বিটিএমসির পক্ষে রায় দেন।
দখলদার ও বিটিএমসির মালিকানা কাগজপত্রের তথ্যমতে, বর্তমান দখলদার জজকোর্টের মামলার রায়ের পুনর্বিচারের দাবিতে ১৯৯৯ সালে হাইকোর্টে প্রথম আপিল করেন। মামলা নম্বর-১৩৬/১৯৯৯। হাইকোর্ট ২০১০ সালে এই আপিলের রায় দেন। সেখানে নিম্ন আদালতে মামলাটির পুনর্বিচারের জন্য নির্দেশ দেয়। দ্বিতীয় যুগ্ম-জেলা জজ ঢাকার আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। নতুন মামলা নম্বর-৩২৩/২০১০।
জমির কাগজপত্র ঘেঁটে আরও জানা গেছে, ঢাকার ওয়ারী মৌজার হাটখোলায় অবস্থিত এস.এ-২৫৩৪ সম্পত্তিটি ১৯৫৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর সাফকবলা দলিল-১০৬০২ মূলে ঢাকেশ্বরী কটন মিল মালিক হয়। ওই সম্পত্তি ক্রয়ের পর ঢাকেশ্বরী কটন মিল শুদ্ধরূপে এস.এ রেকর্ডে নাম লিপিবদ্ধ করান।
পরে সরকারি আদেশে ঢাকেশ্বরী কটন মিলস ও মিলের সমুদয় সম্পত্তি জাতীয়করণ করা হয় এবং মিলটি পরিচালনার দায়িত্ব বিটিএমসির ওপর ন্যস্ত করা হয়। জাতীয়করণ অবস্থায় ১৯৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি মিলটি অবলুপ্ত করা হয়। ১৯৮৩ সালে মিলটি বিক্রি করা হয়। মিলের কিছু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হাটখোলায় ছিল। এই জমিটি তারই অংশ, যা পরে বিটিএমসিকে দেয়া হয়।
এ সংক্রান্ত কাগজপত্রের তথ্যমতে, বৈধ কাগজপত্র থাকায় লিকুইডেশন সেল ওই সম্পত্তি বিটিএমসিকে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করলে সংশ্লিষ্ট দখলদারসহ ও ওই এলাকায় বিটিএমসির অন্যান্য জমির দখলদাররা একজোট হয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নম্বর-১৪১৬/১৯৯৭) দায়ের করে। উচ্চ আদালত দখলদারদের রিট খারিজ করে বিটিএমসির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দেয়। এই চক্র আবারও খারিজাদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। যার নম্বর (সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল)-৩৯০/২০০২। উচ্চ আদালত পুনরায় দখলদারদের আদেশ খারিজ করে পূর্বের আদেশ বহাল রাখে। অবৈধ দখলদার চক্রের সদস্যরা ২০০৩ সালের ২ ফেব্র“য়ারি সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর-৩৯০/২০০২ এর আদেশের বিরুদ্ধে সিভিল পিটিশন নম্বর-৯৯/২০০৩ দায়ের করে। যা ২০০৪ সালে ২১ জুলাই মাসে খারিজ হয়ে যায়।
এরপর এই বিষয়ে আর আদালতে লড়েনি দখলদার চক্র। তবে সংশ্লিষ্ট জমির ব্যাপারে মামলা চলমান থাকায় লিকুইডেশন সেল বিটিএমসিকে সাফ কবলা দলিল করে দেয়নি। মামলা নিষ্পত্তির পর এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই অবস্থায় ওই জমির কেউ মালিকানা দাবি করতে পারে না। অবকাঠামো উন্নয়ন করার কোনো সুযোগ থাকে না।
বিটিএমসির সূত্রমতে, বিটিএমসির হাটখোলার সম্পত্তিতে কোনো প্রকার ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি না করতে এবং ভুয়া দলিলে প্রতারিত হয়ে ক্রয় না করতে ২০০৭ সালে চারটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিটিএমসির এই ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারণাকে আমলে না নিয়ে অবৈধ দখলদারদের ভুয়া কাগজপত্রকে আমলে নিয়েই তাদের সঙ্গে চুক্তি করে বেসরকারি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ‘টোটাল রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’। এটা জানার পর ওই ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে উকিল নোটিশও দিয়েছে বিটিএমসি। কিন্তু কিছুদিন কাজ বন্ধ রেখে আবারও থেমে থেমে কাজ চালিয়ে এখন শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। বিটিএমসির এক কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে একবার ডেভেলপার কোম্পানির লোকরা তাদের মারধরও করে। এই ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে জানিয়েছে বিটিএমসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার না মেলায় পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা-৩৩৬/২০০৯ দায়ের করে বিটিএমসি।
২০১১ সালের ১৪ মার্চ টোটাল রিয়েল এস্টেট লিমিটেডকে লিগ্যাল নোটিশ দেয় বিটিএমসি। জবাবে তারা বিটিএমসিকে জানায়, তারা ওই জমিতে নির্মাণ কাজ করছে না। এই জবাব পেয়েই চুপচাপ থাকে বিটিএমসি। যদিও ওই সময় নির্মাণ কাজ অব্যাহত ছিল।
মহানগর জরিপে ওই জমির রেকর্ড বিটিএমসির নামে যেই প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে ওই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সিভিল মিসলেনিয়াস পিটিশন- দায়ের করে দখলদার চক্র। যার নম্বর-৮২৯/২০১১ এবং ৮৩০/২০১১। ওই সম্পত্তিতে সুপ্রিমকোর্ট নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশনা এবং ওই সম্পত্তির ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। ওই আদেশের পরও নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় কোর্ট থেকে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি হয়। যার বিচার চলমান রয়েছে।
বিটিএমসির আইন বিভাগের পরিচালক কাজী ফিরোজ হোসেন যুগান্তরকে বলেছেন, অবৈধ দখলদার মৃত আবদুল মুসাব্বিরের সন্তান ও উত্তরাধিকারীরা জাল দলিল করে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তৃতীয় পক্ষ ডেভেলপারকে সঙ্গে নিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জমির বর্তমান মালিকানা দাবিদারদের পিতা জীবিত অবস্থায় আদালতে দলিলপত্র দাখিল করতে পারেনি। পিতার মৃত্যুর পর সন্তানরা দলিলসহ নানা জাল কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এ ব্যাপারে জমির দখলদার আহমেদ আরেফিন তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, বিটিএমসির সঙ্গে আমাদের মামলা চলছে। চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত রাজউক বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সঠিক হবে না। মামলা চলমান অবস্থায় নির্মাণ কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্মাণ কাজ চালাতে আইনগত বাধা ছিল না, এখনও নেই।
টোটাল রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক শাহজাহান কবির যুগান্তরকে বলেন, গত ১০০ বছর ধরে এই জমির মালিক বর্তমান সময়ের দখলদার। দখলদারের কাগজপত্র সঠিক জেনেই আমরা কাজ শুরু করেছি। সংসদীয় কমিটি বিটিএমসির মালিকানা নির্ধারণের কেউ নয়। আমরা যা করেছি আইন মোতাবেক করেছি।
বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সরোয়ার যুগান্তরকে বলেন, আরকে মিশন রোডের জায়গাটি যে বিটিএমসির তাতে সংশয়ের কারণ নেই। তবে অবৈধ দখলদাররা মামলা করায় বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এই ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তা আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে। আশা করি সরকারি এই মূল্যবান সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে পারব।
No comments