সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য -১৬০ by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
হাজী শরীয়তউল্লাহ |
ফরায়েজী আন্দোলনের জনক হাজী শরীয়তউল্লাহ ও দুদুমিয়ার বাড়ী |
হাজী
শরীয়তউল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০) : বর্তমান শরীয়তপুর জেলার শ্যামাইল গ্রামে ১৭৮১
সালে শরীয়তউল্লাহর জন্ম। ছেলেবেলায় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যান কলকাতায়।
হুগলী জেলার ফুরফুরায় দু’বছর আরবি ও ফারসি শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৭৯৯ সালে
তিনি তার ওস্তাদ মওলানা বাশারত আলীর সঙ্গে মক্কায় যান এবং হজ সম্পন্ন করেন।
তিনি ওয়াহাবি ভাবধারায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। এ কারণে ১৮১৮ সালে দেশে ফিরে
তিনি ইসলামী সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেন, যা ইতিহাসে ফরায়েজি আন্দোলন
নামে পরিচিত।
হিন্দু সমাজে যখন সংস্কার চলছিল, তখন বাংলার মুসলমানদের, বিশেষ করে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন হাজী শরীয়তউল্লাহ। শরীয়তউল্লাহ লক্ষ্য করেছিলেন ইংরেজ শাসিত এদেশে মুসলমানরা নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। স্থানীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির আচার-আচরণ নিজেদের জীবনে প্রবেশ করায় ইসলামের মূল শিক্ষার প্রতি তারা উদাসীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে ফরায়েজি আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগী করে তাদের শক্তি জাগিয়ে তোলা। একই উদ্দেশ্যে এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও অনুশাসন পালনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সব ধরনের কুসংস্কার থেকে মুক্ত করারও প্রচেষ্টা নেয়া হয়। ধর্মীয় সংস্কারের পাশাপাশি জমিদার, নীলকর, মহাজন ও স্থানীয় প্রশাসনের শোষণ ও অত্যাচার থেকে কৃষকদের মুক্ত করাও ছিল এ আন্দোলনের লক্ষ্য।
হাজী শরীয়তউল্লাহ তার আন্দোলনের প্রধান বক্তব্য হিসেবে ইসলামের পাঁচটি মৌলিক আদর্শের ভেতর মুসলমানদের নিষ্ঠাবান থাকার নির্দেশ দেন। এই মূল আদর্শগুলোর ব্যতিক্রম কাজকে তিনি শিরক ও বিদাত বলে ঘোষণা দেন। ফরায়েজিরা জন্মদিন, বিয়ে, মৃত্যু ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত আচার অনুষ্ঠান, পীরপূজা, পীরের প্রতি অতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, তাজিয়া নির্মাণ ও মহররম মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
হাজী শরীয়তউল্লাহর জীবদ্দশায় ফরায়েজি আন্দোলন ফরিদপুর ছাড়াও ঢাকা, বরিশাল ও কুমিল্লা জেলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শরীয়তউল্লাহ বুঝেছিলেন মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের নীতি ছিল শত্র“তামূলক। এ কারণে মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছিল। তিনি মুসলমানদের বোঝাতে চেয়েছিলেন, রাজনৈতিকভাবে তারা আর স্বাধীন নয়। তাদের দেশ এখন ‘দারুল হারব’ অর্থাৎ যুদ্ধরত বা অমুসলিমের দেশ। এমন দেশকে হয় শক্তি প্রয়োগ করে মুসলমান শাসিত দেশ অর্থাৎ ‘দারুল ইসলাম’ বানাতে হবে অথবা দারুল হারব ছেড়ে অন্য কোনো মুসলমানের দেশে চলে যেতে হবে। এর কোনোটি করা সম্ভব না হলে মুসলমানদের কয়েকটি নিয়ম মেনে এ দেশে থাকতে হবে। এ কারণেই শরীয়তউল্লাহ ঘোষণা দেন, দারুল হারবে মুসলমানদের শুধু ফরজ ইবাদতটুকু করলেই চলবে। তাই আন্দোলনটির নাম হয় ফরায়েজি আন্দোলন। শরীয়তউল্লাহ এমন প্রতীকী নিয়ম পালনের মধ্য দিয়ে বাংলার মুসলমানদের ধর্মীয় পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন।
ইংরেজ সিভিলিয়ান জেমস ওয়াইজ হাজী শরীয়তউল্লাহকে মুসলমান কৃষকদের উজ্জীবিত করার কাজে একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা বলে উল্লেখ করেছেন। লক্ষ্য করা গেছে, যেসব অঞ্চলে ফরায়েজি আন্দোলন জনপ্রিয় হয়েছে সেখানে হিন্দু জমিদার ও নীলকররা শক্তিশালী ছিল এবং এদের দ্বারা কৃষকরা অত্যাচারিত হতো। কঠোরভাবে ধর্ম সংস্কার করায় একশ্রেণীর মুসলমান নেতা শরীয়তউল্লাহর আন্দোলনকে সমর্থন করেননি। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী। এই মতবিরোধের সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন হিন্দু জমিদাররা। তারা কৌশলে রক্ষণশীল মুসলমান কৃষকসহ নীলকরদের ফরায়েজিদের বিরুদ্ধে একত্রিত করেন। এভাবে ১৮৮০ সালের দিকে ফরায়েজিরা একটি সংঘাতময় অবস্থার মুখোমুখি হয়। এমন একটি পরিস্থিতি যখন বিরাজমান, তখনই হাজী শরীয়তউল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন।
হিন্দু সমাজে যখন সংস্কার চলছিল, তখন বাংলার মুসলমানদের, বিশেষ করে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন হাজী শরীয়তউল্লাহ। শরীয়তউল্লাহ লক্ষ্য করেছিলেন ইংরেজ শাসিত এদেশে মুসলমানরা নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। স্থানীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির আচার-আচরণ নিজেদের জীবনে প্রবেশ করায় ইসলামের মূল শিক্ষার প্রতি তারা উদাসীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে ফরায়েজি আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগী করে তাদের শক্তি জাগিয়ে তোলা। একই উদ্দেশ্যে এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও অনুশাসন পালনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সব ধরনের কুসংস্কার থেকে মুক্ত করারও প্রচেষ্টা নেয়া হয়। ধর্মীয় সংস্কারের পাশাপাশি জমিদার, নীলকর, মহাজন ও স্থানীয় প্রশাসনের শোষণ ও অত্যাচার থেকে কৃষকদের মুক্ত করাও ছিল এ আন্দোলনের লক্ষ্য।
হাজী শরীয়তউল্লাহ তার আন্দোলনের প্রধান বক্তব্য হিসেবে ইসলামের পাঁচটি মৌলিক আদর্শের ভেতর মুসলমানদের নিষ্ঠাবান থাকার নির্দেশ দেন। এই মূল আদর্শগুলোর ব্যতিক্রম কাজকে তিনি শিরক ও বিদাত বলে ঘোষণা দেন। ফরায়েজিরা জন্মদিন, বিয়ে, মৃত্যু ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত আচার অনুষ্ঠান, পীরপূজা, পীরের প্রতি অতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, তাজিয়া নির্মাণ ও মহররম মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
হাজী শরীয়তউল্লাহর জীবদ্দশায় ফরায়েজি আন্দোলন ফরিদপুর ছাড়াও ঢাকা, বরিশাল ও কুমিল্লা জেলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শরীয়তউল্লাহ বুঝেছিলেন মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের নীতি ছিল শত্র“তামূলক। এ কারণে মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছিল। তিনি মুসলমানদের বোঝাতে চেয়েছিলেন, রাজনৈতিকভাবে তারা আর স্বাধীন নয়। তাদের দেশ এখন ‘দারুল হারব’ অর্থাৎ যুদ্ধরত বা অমুসলিমের দেশ। এমন দেশকে হয় শক্তি প্রয়োগ করে মুসলমান শাসিত দেশ অর্থাৎ ‘দারুল ইসলাম’ বানাতে হবে অথবা দারুল হারব ছেড়ে অন্য কোনো মুসলমানের দেশে চলে যেতে হবে। এর কোনোটি করা সম্ভব না হলে মুসলমানদের কয়েকটি নিয়ম মেনে এ দেশে থাকতে হবে। এ কারণেই শরীয়তউল্লাহ ঘোষণা দেন, দারুল হারবে মুসলমানদের শুধু ফরজ ইবাদতটুকু করলেই চলবে। তাই আন্দোলনটির নাম হয় ফরায়েজি আন্দোলন। শরীয়তউল্লাহ এমন প্রতীকী নিয়ম পালনের মধ্য দিয়ে বাংলার মুসলমানদের ধর্মীয় পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন।
ইংরেজ সিভিলিয়ান জেমস ওয়াইজ হাজী শরীয়তউল্লাহকে মুসলমান কৃষকদের উজ্জীবিত করার কাজে একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা বলে উল্লেখ করেছেন। লক্ষ্য করা গেছে, যেসব অঞ্চলে ফরায়েজি আন্দোলন জনপ্রিয় হয়েছে সেখানে হিন্দু জমিদার ও নীলকররা শক্তিশালী ছিল এবং এদের দ্বারা কৃষকরা অত্যাচারিত হতো। কঠোরভাবে ধর্ম সংস্কার করায় একশ্রেণীর মুসলমান নেতা শরীয়তউল্লাহর আন্দোলনকে সমর্থন করেননি। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী। এই মতবিরোধের সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন হিন্দু জমিদাররা। তারা কৌশলে রক্ষণশীল মুসলমান কৃষকসহ নীলকরদের ফরায়েজিদের বিরুদ্ধে একত্রিত করেন। এভাবে ১৮৮০ সালের দিকে ফরায়েজিরা একটি সংঘাতময় অবস্থার মুখোমুখি হয়। এমন একটি পরিস্থিতি যখন বিরাজমান, তখনই হাজী শরীয়তউল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন।
No comments