বড় অসময়ে চলে গেলেন by জসীম চৌধুরী সবুজ
একে একে প্রিয় মানুষ সব চলে যাচ্ছেন। সামান্য সময়ের ব্যবধানে ক’জন প্রিয় মানুষকে হারানোর শোকের আবহ কাটতে না কাটতেই চলে গেলেন প্রিয়ভাজন সাংবাদিক হোসাইন জাকির। একসময় নিয়মিত ছড়াও লিখতেন। রিপোর্টার হিসেবে সক্রিয় হওয়ার পর ছড়া লেখায় তার ছন্দপতন ঘটে। খুব অল্প বয়সে মাত্র ৪২ বছরে তার এ আকস্মিক চলে যাওয়া। হাসিখুশি প্রাণখোলা মানুষ ছিলেন, অতি অল্প সময়ে যে কাউকে সহজে আপন করে নিতে পারতেন তিনি। জাকির আর আমি একই এলাকার মানুষ; কিন্তু তার সঙ্গে আমার পরিচয় যুগান্তরে। শুরু থেকেই আমি আছি। জাকির ক’বছর পর যোগ দেন। এরপর আলাপ-পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা। বয়সে আমার চেয়ে ১৬ বছরের ছোট ছিলেন জাকির। দেখা হলে বা ফোনে কথা হলে ‘বদ্দা’ বলে সম্বোধন করতেন। বারবার তাগিদ দেয়ার পরও তাকে আমি ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতে পারিনি।
তার পিতা ডা. আবদুল হাফিজ চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া খানহাটে প্র্যাকটিস করতেন। ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৩-৭৪ সালে কলেজে পড়ার সময় আমাদের প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনে জড়িতদের আড্ডা ও যোগাযোগের কেন্দ্র ছিল তার ফার্মেসি। পোস্টার লেখার কাগজ-কালি কেনার খরচও প্রায় সময় তিনি দিতেন। জাকির যে আমাদের হাফিজ ভাইয়ের ছেলে এটি জানতাম না। ঢাকায় যুগান্তর অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার সময় একদিন জাকিরই প্রথম তা জানালেন। বললেন, জানেন সবুজ ভাই কিন্তু আমার বাবার বন্ধু। কিছুটা বিব্রত আমাকে পরে সব খুলে বললেন জাকির। ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে জাকিরের যে গুণ ছিল, তাকে আমি বলব অনন্যসাধারণ। রিপোর্টার হিসেবেও ছিলেন সৎ, মেধাবী ও পরিশ্রমী। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কভার করতে আমার সঙ্গে কাজ করার সময় দেখেছি ফাঁকি-ঝুঁকি দেয়া তার স্বভাববিরুদ্ধ। সেরা রিপোর্টার হিসেবে একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছেন। বিত্তবৈভবের পেছনে দৌঁড়াননি বলে দলকানা সাংবাদিকের তকমাও তার গায়ে লাগেনি। অতি সাধারণ জীবনযাপন ছিল তার। ঢাকায় বসবাস করলেও গ্রামের সঙ্গে ছিল তার নিবিড় যোগাযোগ। ভাইবোনদের খবরাখবর নিয়মিত রাখতেন। ক’বছর আগে তার ছোটবোনের বিয়ে দিতে গিয়ে পরিবারের প্রতি তার দায়িত্বশীলতার পরিচয় পেয়েছি। বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম বন্ধু আবদুল নঈম স্বপনসহ। সেই প্রিয় বন্ধু নঈমকে হারিয়েছি গত বছর। তাও অল্প বয়সে, আকস্মিকভাবে।
হোসাইন জাকির সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীতে। পরে ঢাকায় গিয়ে মানবজমিনে এবং সেখান থেকে যুগান্তরে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিয়ে বিশেষ প্রতিনিধি হয়েছিলেন। ২০১১ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে আমার একমাত্র পুত্রসন্তান আপনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেয়ে জাকির ছুটে এসেছিলেন আমার বাড়ি এবং তার চোখে ছিল বেদনার অশ্রু। পরে যুগান্তর ছেড়ে গেলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
জাকির পান খেতেন খুব বেশি। একটা শেষ হলেই আরেকটা মুখে পুরতেন। সম্ভবত এটাই জাকিরের কাল হয়েছে। তার মুখগহ্বরে ক্যান্সার ধরা পড়ে গত অক্টোবরে। চিকিৎসায়ও আর কাজ হয়নি। সাড়ে তিন মাসের মাথায় জাকির চলে গেলেন না ফেরার দেশে। স্ত্রী ও অবুঝ তিন সন্তানকে রেখে গেছেন অকূল সাগরে। ২ ছেলে ১ মেয়ে- সবাই এখনও প্রাইমারি স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী। আজীবন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সত্যের সন্ধানে নির্ভীক সাংবাদিকতায় অবিচল এ কলমযোদ্ধা দেশ ও সমাজকে দিয়ে গেছেন অনেক কিছু। কিন্তু পরিবারের জন্য রেখে যেতে পারেননি কিছুই। হোসাইন জাকিরকে হারিয়ে আমি হারালাম একজন প্রিয় স্বজনকে। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানানোর মতো কোনো ভাষা আমার নেই। হোসাইন জাকির তার রেখে যাওয়া কাজ ও সৃষ্টির মাঝে বেঁচে থাকবে।
জসীম চৌধুরী সবুজ : সাংবাদিক
তার পিতা ডা. আবদুল হাফিজ চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া খানহাটে প্র্যাকটিস করতেন। ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৩-৭৪ সালে কলেজে পড়ার সময় আমাদের প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনে জড়িতদের আড্ডা ও যোগাযোগের কেন্দ্র ছিল তার ফার্মেসি। পোস্টার লেখার কাগজ-কালি কেনার খরচও প্রায় সময় তিনি দিতেন। জাকির যে আমাদের হাফিজ ভাইয়ের ছেলে এটি জানতাম না। ঢাকায় যুগান্তর অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার সময় একদিন জাকিরই প্রথম তা জানালেন। বললেন, জানেন সবুজ ভাই কিন্তু আমার বাবার বন্ধু। কিছুটা বিব্রত আমাকে পরে সব খুলে বললেন জাকির। ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে জাকিরের যে গুণ ছিল, তাকে আমি বলব অনন্যসাধারণ। রিপোর্টার হিসেবেও ছিলেন সৎ, মেধাবী ও পরিশ্রমী। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কভার করতে আমার সঙ্গে কাজ করার সময় দেখেছি ফাঁকি-ঝুঁকি দেয়া তার স্বভাববিরুদ্ধ। সেরা রিপোর্টার হিসেবে একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছেন। বিত্তবৈভবের পেছনে দৌঁড়াননি বলে দলকানা সাংবাদিকের তকমাও তার গায়ে লাগেনি। অতি সাধারণ জীবনযাপন ছিল তার। ঢাকায় বসবাস করলেও গ্রামের সঙ্গে ছিল তার নিবিড় যোগাযোগ। ভাইবোনদের খবরাখবর নিয়মিত রাখতেন। ক’বছর আগে তার ছোটবোনের বিয়ে দিতে গিয়ে পরিবারের প্রতি তার দায়িত্বশীলতার পরিচয় পেয়েছি। বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম বন্ধু আবদুল নঈম স্বপনসহ। সেই প্রিয় বন্ধু নঈমকে হারিয়েছি গত বছর। তাও অল্প বয়সে, আকস্মিকভাবে।
হোসাইন জাকির সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীতে। পরে ঢাকায় গিয়ে মানবজমিনে এবং সেখান থেকে যুগান্তরে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিয়ে বিশেষ প্রতিনিধি হয়েছিলেন। ২০১১ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে আমার একমাত্র পুত্রসন্তান আপনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেয়ে জাকির ছুটে এসেছিলেন আমার বাড়ি এবং তার চোখে ছিল বেদনার অশ্রু। পরে যুগান্তর ছেড়ে গেলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
জাকির পান খেতেন খুব বেশি। একটা শেষ হলেই আরেকটা মুখে পুরতেন। সম্ভবত এটাই জাকিরের কাল হয়েছে। তার মুখগহ্বরে ক্যান্সার ধরা পড়ে গত অক্টোবরে। চিকিৎসায়ও আর কাজ হয়নি। সাড়ে তিন মাসের মাথায় জাকির চলে গেলেন না ফেরার দেশে। স্ত্রী ও অবুঝ তিন সন্তানকে রেখে গেছেন অকূল সাগরে। ২ ছেলে ১ মেয়ে- সবাই এখনও প্রাইমারি স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী। আজীবন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সত্যের সন্ধানে নির্ভীক সাংবাদিকতায় অবিচল এ কলমযোদ্ধা দেশ ও সমাজকে দিয়ে গেছেন অনেক কিছু। কিন্তু পরিবারের জন্য রেখে যেতে পারেননি কিছুই। হোসাইন জাকিরকে হারিয়ে আমি হারালাম একজন প্রিয় স্বজনকে। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানানোর মতো কোনো ভাষা আমার নেই। হোসাইন জাকির তার রেখে যাওয়া কাজ ও সৃষ্টির মাঝে বেঁচে থাকবে।
জসীম চৌধুরী সবুজ : সাংবাদিক
No comments