তাহাদের ফুটবল খেলা by ময়ুখ চৌধুরী
বাঁশি বাজিবার তরটুকু সহিল না। খেলা শুরু হইয়া গেল। বিরাট ফুটবল খেলা। এক প্রান্তে আবাহনী অন্য প্রান্তে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। অর্থাৎ অ আর ই-এর খেলা। খেলার শুরুতেই গুঁতাগুঁতি, তারপর ধাক্কাধাক্কি, তারপর শুরু হইল লাথালাথি। যেরূপ নব্বই সালের শীতকালীন গলাগলি ক্রমশ গালাগালি পার হইয়া গোলাগুলিতে পর্যবসিত হইয়াছে- অনেকটা সেইরূপ।
ফাউল! রেফারির বাঁশি বাজিল। কিন্তু কেউই গ্রাহ্য করিল না। স্টেডিয়ামজুড়িয়া রীতিমতো ভূমিকম্পজনিত ছোটাছুটি। ক্রীড়াবিশারদরা রঙিন বাক্সের মধ্যে বসিয়া বকবক করিয়া যাইতেছেন। প্যাভেলিয়নে বসিয়া থাকা কতিপয় বিদেশী পর্যবেক্ষক উৎকণ্ঠিত ভাব প্রকাশ করিতেছেন। কলকাঠি নাড়িয়া থাকিলেও ইহাদের ভাব দেখিয়া বুঝিবার উপায় নাই।
ফাউল চলিতেছে তো চলিতেছেই। সমানে বাঁশির আর্তনাদও চলিতেছে। নিষ্ফল থুতু জমিয়া বাঁশির ফুটা বন্ধ হইবার উপক্রম। ইতিমধ্যে অফসাইডের একটি গোল লইয়া সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখা দিল। উভয়দলীয় প্রহারের ভয়ে বাঁশি স্তব্ধ হইল। বেচারা রেফারি, মাঠ ছাড়িতে পারিলেই বাঁচে। হলুদ কার্ড, লাল কার্ড যথাকালে গোপন জায়গায় ঢুকিয়ে পড়িয়াছে।
সর্বাপেক্ষা করুণ অবস্থা বেচারা ফুটবলের। বেশ কয়েকবার সীমানা ছাড়িয়া পালাইতে চাহিয়াছে, কিন্তু পারে নাই। আবার ধরিয়া আনা হইয়াছে। আবার লাথি। উড়িয়া মাটিতে পরিবার আগেই আরেক লাথি। হঠাৎ একজন মমতাময় হাত বাড়াইয়া লুফিয়া লইল। বুকেও ছোঁয়াইয়াছিল। পিতৃস্নেহের কথা মনে পড়িতেই প্রচণ্ড এক লাথিতে ফুটবলের ভ্রম ভাঙিয়া গেল। পালাক্রমে লাথি চলিতে লাগিল। একবার অ, একবার ই।
এক পর্যায়ে বহুল প্রতীক্ষিত বিরতি ঘোষণা করা হইল। অস্ফুট স্বরে ফুটবল কথা বলিয়া উঠিল- ভাইজান, সালামালাইকুম...। রেফারি চমকিয়া উঠিল। শুরু হইল উভয়ের কথোপকথন।
রেফারি তুমি! তুমি কথা কইতে পার!
ফুটবল- হ হুজুর।
রে.- কিন্তু কোনোদিন তো শুনি নাই!
ফু.- কইতে দিলেই তো।
রে.- আইচ্ছা, আইচ্ছা, কী কইবার চাও, কও।
ফু.- ভাইজান, আমারে রেহাই দিলে হয় না? বাইশজনের গোস্সা আমার উপরে ঝাড়ার কোনো মানে আছে!
রে.- চুপ। চুপ। শেষে আমারে মাইর খাওয়াবি?
ফু.- তাইলে ভাইজান, অত্যাচার দেখনটাই বুঝি আপনার কাম?
রে.- চোওপ, বেয়াদবি করবি না।... আমি বাঁশিও বাজাই।
ফু.- কিন্তু আপনার বাজনা শুইন্যা তো হেরা আরও ক্ষেইপ্যা যায়, বাইশজনের লাথি কী জিনিস বোঝেন?
রে.- ওই ব্যাটা, বাইশ বাইশ করছ ক্যান? এগোরে কি বাইশ পরিবার মনে করছস! এরা হইল গিয়া আমাগো পরিবারের বাইশ। এগো পিছে বাইশ হাজার পরিবার আছে। অ-থিক্যা বাইশটা সেম্পল তরে মারতাছে, আর তাতেই তর কোঁ কাঁ!
ফু.- নসিবের দোষ হুজুর। তয়, হেরা কী চায়?
রে.- হেরা গোল করতে চায়।
ফু.- হুজুর, আমি তো এমনিতেই গোল আছি, আর কত গোল করব?
রে.- ধুর ব্যাটা, এই গোল সেই গোল না। তর গোলটা হইল জিওমেট্রিক্যাল গোল, হেগোরটা হইল গিয়া পলিটিক্যাল গোল, ম্যালা টাকার খেলা- বুঝবি না।
ফু.- তাইলে তো ভাইজান, ভারি গণ্ডগোল দেখতাছি।
রে.- শাব্বাশ ব্যাটা, এতক্ষণে গোলটা ঠিকমতন ধরছস, লাত্থি খাইয়া তর ব্রেইন খুইল্যা গেছে।
ফু.- আইচ্ছা ভাইজান, কইতে পারেন- কোন ভালা মাইনষ্যের পোলা খেলাটা বাইর করছিল?
রে.- মুখ খারাপ করছ ক্যান? এক্কারে মুখ সিলাই কইরা দিমু। তর হিস্ট্রি জানার দরকার কী! যা, রেডি হ। হাফটাইম আর বেশিক্ষণ নাই।
ফু.- ভাইজান, প্লিজ...
রে.- আবার কী?
ফু.- এক পাটি নাম লইছে আবাহনী, কাম করে বিতাড়নি-এইটা ক্যামন কথা! ওই পাটিও কয় ব্রাদার্স, লাথি মারে সৎভাইয়ের মতন। ভাইজান, আমারে অন্য কোনো মাঠে ছাইড়া দেন। গরুছাগল হইয়া গুরমু, হেও ভালা। এই দুই পাটির জ্বালা আর সহ্য হইতাছে না।
রে.- যাবি কই! সবাই এক কিসিম।
ফু.- ক্যান, আরামবাগ?
রে.- আররে ব্যাটা, আরামবাগের মাইর কী জিনিস জানছ না। এক লাথিতে সব ব্যারাম বাইর কইরা দিব। আমি অগো রেফারি পর্যন্ত হই না।... কী রে মন খারাপ করলি?
ফু.- না, ভাবতাছি আমার জিম্মার কথা।
রে.- জিম্মা! কিসের জিম্মা?
ফু.-হ। আমার পেটের ভিত্রে ষোল কোটি নিরীহ জীবাণু। এই জুতাওয়ালাগো ডরে ভুল কইরা আমার পেটে লুকাইছিল। অগো লাইগ্যা পেট পুড়তাছে।
রে.- রাখ তর ষোল কোটি! সবডি মিল্যা হেগো এক পায়ের দামও তো না।
ফু.-পায়ের কথাই যখন তুলছেন, তয় আরেকখান কথা...
রে.- আবার কথা!
ফু.- হেরা যে বুটজুতা পায়ে দিছে, ওইডাও তো চামড়া- আমাগো জাতভাই। ভাইরে দিয়া ভাইরে মারন-এইডা কোন পলিটিক্স?
রে.- ধুর বেকুব, চামড়া হইলেই হইল! তরটা হইল বলদের চামড়া, অগোরটা হইল গণ্ডারের চামড়া। জাতে বেশকম আছে। দুই চামড়ার সিস্টেমই আলাদা- একটা লাথি মারনের, আরেকটা লাথি খাওনের। আরামবাগ-মোহামেডান কইয়া লাভ নাই। হগলের ঠ্যাঙে এক জুতা। বেবাক বিশ্ব এই সিস্টেমেই চলতাছে। দেখছ না- এই গোলগাল দুনিয়ায় এত গোলমাল ক্যান!
ফু.- যদি পেট ফাইট্যা ষোল কোটি বাইরাইয়া পড়ে?
রে.- ওই ব্যাটা, হুমকি দেছ কারে! সিস্টেম কইরা তর ষোল কোটিরে আবার ঢুকাইয়া দিব। আবার খেলা, আবার লাথি, আবার গোল। হেরাই জিতব, হেরাই হারব। জিতলে সোনার চামচ, রানার-আপ হইলে রূপার চামচ। তর তো চামচের দরকার নাই। খাবি তো বাতাসই খাবি, বাতাস খাইতে চামচ লাগে না; লাত্থি লাগে, লাত্থি।
পাদটীকা : কোন ভালা মাইনষ্যের পোলা খেলাটা আবিষ্কার করিয়াছে, ফুটবলের এই বিব্রতকর প্রশ্নের উত্তর রেফারি দেয় নাই অথবা দিত চাহে নাই। লোকশ্র“তি বলে, বহু প্রাচীনকালে চীনদেশে এক রাজা ছিলেন। প্রজাগণ তাহাকে নানা রকম ভেট দিত (তখন ভোট ছিল না)। একবার দরিদ্র এক প্রজা রাজার শ্রীচরণে একটি ছাগল নিবেদন করিল। এহেন উপঢৌকন দেখিয়া রাজা ক্ষুব্ধ। সঙ্গে সঙ্গে কষিয়া একলাথি মারিলেন। ছাগলটি গড়াইতে গড়াইতে টিলার পাদদেশে পড়িয়া ম্যা করিয়া উঠিল। ইহাতে রাজা খুব মজা পাইলেন। ছাগলটিকে আবার তোলা হইল। আবার লাথি, আবার পদসুখ, আবার আর্তনাদ। রাজার নির্মম আনন্দের জোগান দিতে গিয়া এক সময় বিকল্প পদগোলকের উদ্ভব ঘটিল। অতএব, লাথিখেলা আবিষ্কারের কৃতিত্ব ভালা মাইনষ্যের পোলাকে নয়, রাজাকেই দিতে হইবে। অন্যথায় অন্যায় হইবে।
* মার্কেন্টাইল কালচার অনুযায়ী একটা গদ্য পড়িলে একটা পদ্য ফ্রি।-
রাজায় রাজায় যুদ্ধ বাধে
হায় রে প্রজার প্রাণটা যায়,
অনেক প্রজা মরলে পরে
একটা রাজা রাজ্য পায়।
[লেখাটি ২০১৩ সালে রচিত ও অপ্রকাশিত। তবে এর প্রাসঙ্গিকতা এখনও রয়েছে বলে মনে করি। -লেখক]
ময়ুখ চৌধুরী : কবি, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ফাউল! রেফারির বাঁশি বাজিল। কিন্তু কেউই গ্রাহ্য করিল না। স্টেডিয়ামজুড়িয়া রীতিমতো ভূমিকম্পজনিত ছোটাছুটি। ক্রীড়াবিশারদরা রঙিন বাক্সের মধ্যে বসিয়া বকবক করিয়া যাইতেছেন। প্যাভেলিয়নে বসিয়া থাকা কতিপয় বিদেশী পর্যবেক্ষক উৎকণ্ঠিত ভাব প্রকাশ করিতেছেন। কলকাঠি নাড়িয়া থাকিলেও ইহাদের ভাব দেখিয়া বুঝিবার উপায় নাই।
ফাউল চলিতেছে তো চলিতেছেই। সমানে বাঁশির আর্তনাদও চলিতেছে। নিষ্ফল থুতু জমিয়া বাঁশির ফুটা বন্ধ হইবার উপক্রম। ইতিমধ্যে অফসাইডের একটি গোল লইয়া সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখা দিল। উভয়দলীয় প্রহারের ভয়ে বাঁশি স্তব্ধ হইল। বেচারা রেফারি, মাঠ ছাড়িতে পারিলেই বাঁচে। হলুদ কার্ড, লাল কার্ড যথাকালে গোপন জায়গায় ঢুকিয়ে পড়িয়াছে।
সর্বাপেক্ষা করুণ অবস্থা বেচারা ফুটবলের। বেশ কয়েকবার সীমানা ছাড়িয়া পালাইতে চাহিয়াছে, কিন্তু পারে নাই। আবার ধরিয়া আনা হইয়াছে। আবার লাথি। উড়িয়া মাটিতে পরিবার আগেই আরেক লাথি। হঠাৎ একজন মমতাময় হাত বাড়াইয়া লুফিয়া লইল। বুকেও ছোঁয়াইয়াছিল। পিতৃস্নেহের কথা মনে পড়িতেই প্রচণ্ড এক লাথিতে ফুটবলের ভ্রম ভাঙিয়া গেল। পালাক্রমে লাথি চলিতে লাগিল। একবার অ, একবার ই।
এক পর্যায়ে বহুল প্রতীক্ষিত বিরতি ঘোষণা করা হইল। অস্ফুট স্বরে ফুটবল কথা বলিয়া উঠিল- ভাইজান, সালামালাইকুম...। রেফারি চমকিয়া উঠিল। শুরু হইল উভয়ের কথোপকথন।
রেফারি তুমি! তুমি কথা কইতে পার!
ফুটবল- হ হুজুর।
রে.- কিন্তু কোনোদিন তো শুনি নাই!
ফু.- কইতে দিলেই তো।
রে.- আইচ্ছা, আইচ্ছা, কী কইবার চাও, কও।
ফু.- ভাইজান, আমারে রেহাই দিলে হয় না? বাইশজনের গোস্সা আমার উপরে ঝাড়ার কোনো মানে আছে!
রে.- চুপ। চুপ। শেষে আমারে মাইর খাওয়াবি?
ফু.- তাইলে ভাইজান, অত্যাচার দেখনটাই বুঝি আপনার কাম?
রে.- চোওপ, বেয়াদবি করবি না।... আমি বাঁশিও বাজাই।
ফু.- কিন্তু আপনার বাজনা শুইন্যা তো হেরা আরও ক্ষেইপ্যা যায়, বাইশজনের লাথি কী জিনিস বোঝেন?
রে.- ওই ব্যাটা, বাইশ বাইশ করছ ক্যান? এগোরে কি বাইশ পরিবার মনে করছস! এরা হইল গিয়া আমাগো পরিবারের বাইশ। এগো পিছে বাইশ হাজার পরিবার আছে। অ-থিক্যা বাইশটা সেম্পল তরে মারতাছে, আর তাতেই তর কোঁ কাঁ!
ফু.- নসিবের দোষ হুজুর। তয়, হেরা কী চায়?
রে.- হেরা গোল করতে চায়।
ফু.- হুজুর, আমি তো এমনিতেই গোল আছি, আর কত গোল করব?
রে.- ধুর ব্যাটা, এই গোল সেই গোল না। তর গোলটা হইল জিওমেট্রিক্যাল গোল, হেগোরটা হইল গিয়া পলিটিক্যাল গোল, ম্যালা টাকার খেলা- বুঝবি না।
ফু.- তাইলে তো ভাইজান, ভারি গণ্ডগোল দেখতাছি।
রে.- শাব্বাশ ব্যাটা, এতক্ষণে গোলটা ঠিকমতন ধরছস, লাত্থি খাইয়া তর ব্রেইন খুইল্যা গেছে।
ফু.- আইচ্ছা ভাইজান, কইতে পারেন- কোন ভালা মাইনষ্যের পোলা খেলাটা বাইর করছিল?
রে.- মুখ খারাপ করছ ক্যান? এক্কারে মুখ সিলাই কইরা দিমু। তর হিস্ট্রি জানার দরকার কী! যা, রেডি হ। হাফটাইম আর বেশিক্ষণ নাই।
ফু.- ভাইজান, প্লিজ...
রে.- আবার কী?
ফু.- এক পাটি নাম লইছে আবাহনী, কাম করে বিতাড়নি-এইটা ক্যামন কথা! ওই পাটিও কয় ব্রাদার্স, লাথি মারে সৎভাইয়ের মতন। ভাইজান, আমারে অন্য কোনো মাঠে ছাইড়া দেন। গরুছাগল হইয়া গুরমু, হেও ভালা। এই দুই পাটির জ্বালা আর সহ্য হইতাছে না।
রে.- যাবি কই! সবাই এক কিসিম।
ফু.- ক্যান, আরামবাগ?
রে.- আররে ব্যাটা, আরামবাগের মাইর কী জিনিস জানছ না। এক লাথিতে সব ব্যারাম বাইর কইরা দিব। আমি অগো রেফারি পর্যন্ত হই না।... কী রে মন খারাপ করলি?
ফু.- না, ভাবতাছি আমার জিম্মার কথা।
রে.- জিম্মা! কিসের জিম্মা?
ফু.-হ। আমার পেটের ভিত্রে ষোল কোটি নিরীহ জীবাণু। এই জুতাওয়ালাগো ডরে ভুল কইরা আমার পেটে লুকাইছিল। অগো লাইগ্যা পেট পুড়তাছে।
রে.- রাখ তর ষোল কোটি! সবডি মিল্যা হেগো এক পায়ের দামও তো না।
ফু.-পায়ের কথাই যখন তুলছেন, তয় আরেকখান কথা...
রে.- আবার কথা!
ফু.- হেরা যে বুটজুতা পায়ে দিছে, ওইডাও তো চামড়া- আমাগো জাতভাই। ভাইরে দিয়া ভাইরে মারন-এইডা কোন পলিটিক্স?
রে.- ধুর বেকুব, চামড়া হইলেই হইল! তরটা হইল বলদের চামড়া, অগোরটা হইল গণ্ডারের চামড়া। জাতে বেশকম আছে। দুই চামড়ার সিস্টেমই আলাদা- একটা লাথি মারনের, আরেকটা লাথি খাওনের। আরামবাগ-মোহামেডান কইয়া লাভ নাই। হগলের ঠ্যাঙে এক জুতা। বেবাক বিশ্ব এই সিস্টেমেই চলতাছে। দেখছ না- এই গোলগাল দুনিয়ায় এত গোলমাল ক্যান!
ফু.- যদি পেট ফাইট্যা ষোল কোটি বাইরাইয়া পড়ে?
রে.- ওই ব্যাটা, হুমকি দেছ কারে! সিস্টেম কইরা তর ষোল কোটিরে আবার ঢুকাইয়া দিব। আবার খেলা, আবার লাথি, আবার গোল। হেরাই জিতব, হেরাই হারব। জিতলে সোনার চামচ, রানার-আপ হইলে রূপার চামচ। তর তো চামচের দরকার নাই। খাবি তো বাতাসই খাবি, বাতাস খাইতে চামচ লাগে না; লাত্থি লাগে, লাত্থি।
পাদটীকা : কোন ভালা মাইনষ্যের পোলা খেলাটা আবিষ্কার করিয়াছে, ফুটবলের এই বিব্রতকর প্রশ্নের উত্তর রেফারি দেয় নাই অথবা দিত চাহে নাই। লোকশ্র“তি বলে, বহু প্রাচীনকালে চীনদেশে এক রাজা ছিলেন। প্রজাগণ তাহাকে নানা রকম ভেট দিত (তখন ভোট ছিল না)। একবার দরিদ্র এক প্রজা রাজার শ্রীচরণে একটি ছাগল নিবেদন করিল। এহেন উপঢৌকন দেখিয়া রাজা ক্ষুব্ধ। সঙ্গে সঙ্গে কষিয়া একলাথি মারিলেন। ছাগলটি গড়াইতে গড়াইতে টিলার পাদদেশে পড়িয়া ম্যা করিয়া উঠিল। ইহাতে রাজা খুব মজা পাইলেন। ছাগলটিকে আবার তোলা হইল। আবার লাথি, আবার পদসুখ, আবার আর্তনাদ। রাজার নির্মম আনন্দের জোগান দিতে গিয়া এক সময় বিকল্প পদগোলকের উদ্ভব ঘটিল। অতএব, লাথিখেলা আবিষ্কারের কৃতিত্ব ভালা মাইনষ্যের পোলাকে নয়, রাজাকেই দিতে হইবে। অন্যথায় অন্যায় হইবে।
* মার্কেন্টাইল কালচার অনুযায়ী একটা গদ্য পড়িলে একটা পদ্য ফ্রি।-
রাজায় রাজায় যুদ্ধ বাধে
হায় রে প্রজার প্রাণটা যায়,
অনেক প্রজা মরলে পরে
একটা রাজা রাজ্য পায়।
[লেখাটি ২০১৩ সালে রচিত ও অপ্রকাশিত। তবে এর প্রাসঙ্গিকতা এখনও রয়েছে বলে মনে করি। -লেখক]
ময়ুখ চৌধুরী : কবি, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
No comments