ছেলের খতনার অনুষ্ঠান থেকে ডেকে নিয়ে পুলিশের গুলি by উৎপল রায়
কিছু
বুঝে ওঠার আগেই এসআই ওমর ফারুক ও মামুন আমাকে টেনেহিঁচড়ে একটি সিএনজি ফোর
স্ট্রোক গাড়িতে নিয়ে তোলে। কেন আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন, আমার অপরাধ কি?
জিজ্ঞাসা করতেই এসআই ওমর ফারুক বলেন, ‘তরা বিএনপি করস, এইটাই তোদের অপরাধ’।
একথা বলেই আমার দুই উরুতে শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে। আমার নামে থানায় কোন
মামলা নেই, অভিযোগও নেই, পুলিশ আমাকে কেন গুলি করলো? তার কিছুই জানি না।
আমার অপরাধ কি? ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭
নম্বর কেবিনের বিছানায় শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর শ্যামপুর ইউনিয়ন
বিএনপি নেতা মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বাবুল (৪৫)। গুলিবিদ্ধ গিয়াসউদ্দিন
যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। বার বার চিৎকার করে উঠছেন। শুক্রবার রাতে জরুরি
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার দুই উরুর ভেতরে থাকা গুলি বের করা হয়েছে। ডান
উরুতে ২টি ও বাম উরুতে আরও ১টি গুলি রয়ে গেছে। সেজন্য আবারও অস্ত্রোপচার
করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গিয়াসউদ্দিনের স্বজনদের অভিযোগ,
শুক্রবার শ্যামপুর হাইস্কুল রোড এলাকার বাসায় তার ছেলের সুন্নতে খতনার
অনুষ্ঠান থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় কদমতলি থানা পুলিশ। পরে সিএনজিতে তুলে
তার দুই উরুতে গুলি করে। তবে কদমতলি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুক
বলেন, গিয়াসউদ্দিনসহ অন্য সন্ত্রাসীরা পিকেটিং ও মিছিলের প্রস্তুতি
নিচ্ছিল। একপর্যায়ে তারা অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা
করে। আর পুলিশের ওপর হামলা হলে আমরাতো বসে থাকবো না। তাই আত্মরক্ষার্থে
পুলিশ গুলি করে। তাতেই গুলিবিদ্ধ হয় গিয়াসউদ্দিন। কদমতলি থানায় খোঁজ নিয়ে
জানা গেছে, পুলিশের কাজে বাধা দান, বিস্ফোরক নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের
অভিযোগে গিয়াসউদ্দিনসহ আরও বেশ কজনের নামে কদমতলি থানায় একটি মামলা করা
হয়েছে। মামলার আসামি তাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ
গিয়াসউদ্দিনের চিকিৎসা চলছে পুলিশি প্রহরায়। চিকিৎসাধীন গিয়াসউদ্দিন বলছেন,
কোন কারণ ছাড়াই তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনার আগে তার নামে
থানায় কোন মামলা বা অভিযোগ পর্যন্ত ছিল না। পুলিশ গুলি করে আবার পুলিশই তার
নামে মামলা দিয়েছে। গিয়াসউদ্দিন ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
তিনি (গিয়াসউদ্দিন) শ্যামপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
শ্যামপুর বরুইতলা এলাকায় তার একটি কসমেটিকসের দোকান রয়েছে। কিছুদিন ধরে
সরকারি দলের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য নিকটজনদের পরামর্শে তিনি রাজনৈতিক
কর্মসূচি থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। যে কারণে চলমান অবরোধ কর্মসূচিতেও তিনি
রাস্তায় নামেননি। ঘটনার দিন শুক্রবার ছেলে আলামিনের (১০) সুন্নতে খতনার
অনুষ্ঠান ছিল। এ উপলক্ষে সারা দিন ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বাড়িভর্তি মেহমান
ছিল। সারা দিন অনুষ্ঠান চলে। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শেষে ঘরেই বিশ্রাম
নিচ্ছিলেন গিয়াসউদ্দিন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কয়েকজন পুলিশ ও তাদের সোর্স
বাসায় ঢুকে তাকে খুঁজতে থাকে। থানায় যেতে বলে। কোন অভিযোগ, মামলা বা
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তারা তা নেই বলে জানায়।
কথাবার্তার একপর্যায়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে
গিয়াসউদ্দিনকে তারা অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। স্বজনদের সামনেই তাকে
টেনেহিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়। তুলে নেয় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ফোর
স্ট্রোক সিএনজিতে। গাড়িতে তুলেই শুরু হয় মারধর ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল।
আমার অপরাধ কি? এ কথা জিজ্ঞাসা করলেই এসআই ওমর ফারুক বলেন, ‘রবিন (শ্যামপুর
ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য) কোথায়? তোরা বিএনপি করস,
এইটাই তোদের অপরাধ।’ বলেই ওমর ফারুক ও মামুন দুই উরুতে পর পর বেশ কয়েক
রাউন্ড গুলি করে। গিয়াসউদ্দিন জানান, গুলি করার একটু পরেই দু’জন পুলিশ
রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে নিয়ে যায় মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থার
অবনতি হলে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাত ১০টায় জরুরি
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করে আনা হয়। তিনি বলেন, আমি এ ঘটনার বিচার
চাই। দায়ী পুলিশ সদস্যের শাস্তি চাই। গিয়াসউদ্দিনের ছোটভাই সোহেল রানা
বলেন, বড় ভাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এটা ঠিক। কিন্তু আমার ভাইয়ের
নামে থানায় কোন মামলা দূরে থাক কোন অভিযোগ পর্যন্ত নেই। কয়েক দিন ধরে
রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ছেলের
সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠান থেকে ধরে নিয়ে পুলিশ কেন নির্দয়ভাবে গুলি করলো তা
আমাদের জানা নেই। আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি। তবে এ ঘটনার বিচার চাই। দায়ী
পুলিশ সদস্যদের শাস্তি চাই। এ বিষয়ে কদমতলি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
আবদুস সালাম মিয়া বলেন, গিয়াসউদ্দিন ও তার স্বজনদের অভিযোগ সঠিক নয়। ওই দিন
তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছিল। ককটেল নিক্ষেপ করেছিল। তাই বাধ্য হয়ে
আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি করে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।
পুলিশের কাজে বাধা দিলে, তাদের ওপর আক্রমণ করলে পুলিশ তো আত্মরক্ষার্থে
গুলি করবেই।
No comments