সরিষা ফুলে মধু by মোজাম্মেল হোসেন সজল
সরিষা
ফুল থেকে কৃত্রিম উপায়ে মধু সংগ্রহ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন মৌচাষীরা। মধু
উৎপাদন করে উপার্জন করছেন কোটি কোটি টাকা। মৌচাষ করে চাষিরা এখন শুধু
নিজেদের বেকারত্বই দূর করছে না, বরং তারা এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও
মধু রপ্তানি করছেন। কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে কৃত্রিম
মৌমাছি চাষের উপযুক্ত আবহাওয়া, গাছপালা ও সহায়ক পরিবেশ থাকায় জীবন-জীবিকার
তাগিদে মৌচাষ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে অনেক পরিবার। শ্রীনগরের সাতগাঁও
এলাকাজুড়ে রয়েছে সরিষা ফুলের হলদে বাগান। কৃত্রিম উপায়ে মধু সংগ্রহে
মহাব্যস্ত এখন মধুচাষিরা। নভেম্বর থেকে শুরু করে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে
তাদের মধু সংগ্রহ কাজ। এদিকে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে
নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করতে শ্রীনগরে ছুটে এসেছেন দেশের বিভিন্ন জেলার
মৌচাষিরা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে শুরু করেছেন তাদের
উৎপাদিত মধু। সাতগাঁও মধুপল্লীতে এখন মধু উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন
টাঙ্গাইল জেলার সখিপুরের মোস্তাক (৫৫), ঢাকার কাওরান বাজারের মনু, মনুর
ছেলে বেলায়েত হোসেন, বগুড়ার হযরত আলী, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটের
বদরুদ্দিনের ছেলে আল-আমিনসহ অনেকেই। দেশের বিভিন্ন জেলায় তারা এবং তাদের
মতো আরো অনেক বেকার যুবক প্রতি বছর ৩ মাসের জন্য সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ
করতে আসেন এখানে। এছাড়া, অন্য মওসুমে তিল ও ধঞ্চা চাষের সময় ফরিদপুরসহ
বিভিন্ন এলাকায় একই উপায়ে মধু উৎপাদন করে থাকেন তারা। মধুচাষিরা জানান,
সুন্দরবনসহ দেশের প্রায় সব জেলাতেই মধু পাওয়া যায়। তবে তা ব্যাপকভাবে
রপ্তানিযোগ্য নয়। গাছের ডালে অথবা পছন্দের স্থানে মৌচাক বানিয়ে মৌমাছিরা
মনের আনন্দে মধু আহরণ করে থাকে। কিন্তু মৌচাষের মাধ্যমে মধু উৎপাদনের যে
ব্যবস্থা দেখছেন, তা একটু ভিন্নমাত্রার মৌচাষ। কৃত্রিম উপায়ে মৌচাষ করা
খুবই সহজ একটি উপায়। ইচ্ছা করলেই যে কেউ এই চাষে এগিয়ে আসতে পারেন। তবে তার
আগে একটু প্রশিক্ষণ নিয়ে নিতে হয়। মধুচাষে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম
মধুচাষের জন্য পৃথক পৃথক বাক্স তৈরি করে এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কিছু
দ্রব্য ক্রয় করে তার মধ্যে এক প্রকার প্রজাতির মৌমাছি সংরক্ষণ করে। সেটা
সরিষা ক্ষেতের পাশে পেতে রেখে মধু সংগ্রহের এক অভিনব সংগ্রহশালা নির্মাণ
করা হয়। এর মাধ্যমে মধুচাষের ব্যাপকতা সৃষ্টি হয়েছে। মধু বিদেশে রপ্তানি
করে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। ফলে এটা নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক
পেশা। মুন্সীগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আবদুল আজিজ
জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় কৃত্রিম উপায়ে মধু চাষ হয়ে আসছে। দেশের
অন্যান্য জেলার মতো এ জেলার শ্রীনগর ও গজারিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে
এ উপায়ে মধুচাষ হয়ে থাকে। এ বছরও শ্রীনগরের সাতগাঁও এলাকায় ব্যাপকভাবে
মধুচাষ হচ্ছে। এ বছর মধুর উৎপাদন দ্বিগুণ হতে পারে বলেও তিনি দাবি করেন।
তিনি ঢাকাস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জানান, এ বছর দেশে
প্রায় ৭ হাজার টন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার
সহযোগিতা করলে মধুর উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের জেলা
প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল বলেন, কৃত্রিম উপায়ে মধুচাষের কথা তিনি জেনেছেন।
এটা অবশ্যই একটি ভাল উদ্যোগ। এর ফলে একদিকে যেমন আমাদের বেকারত্ব দূর হবে,
অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে স্বাবলম্বী করা সম্ভব হবে। এছাড়া, এভাবে
মধুচাষের ফলে সরিষা ফসলেরও উৎপাদন বেশি হবে বলে তিনি দাবি করেন। কারণ
হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, কৃষি গবেষণা মতে মৌমাছির মধু আহরণের সময় পরাগায়ন
সৃষ্টি হয়। আর এ কারণে সরিষা ফসলের উৎপাদন অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে
কৃষকরা হাজার হাজার মণ মধু সংগ্রহ করে বাড়তি রোজগার করতে পারেন। জেলা
প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের এ কাজে সহায়তা করা হবে বলে তিনি জানান।
No comments