পুলিশ পাহারায় সিলেটের রাজপথে যানবাহন- শঙ্কা কমেনি, জ্বলছে গাড়ি by ওয়েছ খছরু
পাঁচ
দিন ধরে ঢাকার সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আসছে না কোন মালবাহী
গাড়ি। যাত্রী পরিবহনের গাড়ি চলাচলও বন্ধ। এ কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে
সিলেট। এ অবস্থায় সিলেটে যানবাহন চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। আগে-পিছে
চলছে পুলিশের গাড়ি। আর মাঝখানে যাত্রীবাহী বাস। ওদিকে, সিলেট থেকে বিশ্ব
ইজতেমাগামী বেশ কয়েকটি গাড়ি কোন পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়াই সিলেট থেকে ছেড়ে
গেছে। সিলেটে দিনে তেমন সহিংসতা না হলেও রাতের পরিস্থিতি ভিন্ন। রাতে
যানবাহনে দেয়া হচ্ছে আগুন। প্রতিদিন রাতেই সিলেট নগরীসহ আশপাশ এলাকায় কোথাও
না কোথায় হচ্ছে সহিংস ঘটনা। এতে করে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। বিশ্ব ইজতেমার জন্য
গতকাল অবরোধ অনেকটা শিথিল থাকলেও অবরোধের পক্ষে মিছিল সমাবেশ থেমে ছিল না।
হাইওয়েতে অবরোধকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। তবে, পুলিশের
কড়াকড়ির কারণে তারা বেশি সময় অবস্থান করতে পারেনি। ৫ই জানুয়ারির উত্তাপকে
কেন্দ্র করে ৪ই জানুয়ারি বিকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের সঙ্গে ঢাকাসহ
দেশের বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ। রেল ও আকাশপথ স্বাভাবিক থাকলেও সড়ক পথে
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। এতে করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সিলেট।
চলে রাজপথে সহিংসতাও। প্রতিদিনই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হঠাৎ তাণ্ডবের ঘটনায়
রীতিমতো আতঙ্ক দেখা দেয় সড়ক-মহাসড়কগুলোয়। যানবাহনের মালিক ও চালকরা
জানিয়েছেন, সিলেট নগরী ও আশপাশ এলাকায় চোরাগুপ্তা হামলা বেশি। পুলিশের
কড়াকড়ির কারণে দীর্ঘ সময় অবস্থানকারীরা রাজপথে না থাকলেও হঠাৎ সহিংস ঘটনার
কারণে যানবাহন চালানো সম্ভব হয়নি। এ অবস্থা চলার ফাঁকে বিশ্ব ইজতেমাকে
কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট থেকে ইজতেমাগামী কয়েকটি গাড়ি কোন বাধা
ছাড়াই ঢাকা পৌঁছায়। পথিমধ্যে তাদের কোন সমস্যা হয়নি। শুক্রবার সকাল ও রাতে
সিলেট থেকে আরও অর্ধশতাধিক গাড়ি বিশ্ব ইজতেমায় পৌঁছায়। ইজতেমাগামী যানবাহন
অবরোধে আক্রান্ত না হলেও সিলেটে বৃহস্পতিবার থেকে সহিংসতা থেমে নেই।
পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও শুক্রবার বিকালে
নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের
তেতলি এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হয়। এতে বাসটি পুরোপুরি
ভস্মীভূত হয়ে যায়। এর আগের রাতে নগরীর ব্যস্ততম স্বাপ্লাই এলাকায় একটি
চালবাহী গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। আগুনে ট্রাকটিও ভস্মীভূত হয়। এ ঘটনা পুলিশের
ছাত্রদলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক লোকমান ও বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবকদল
নেতাকে আসামি করে মামলা করে। দক্ষিণ সুরমায় আগুন দেয়ার ঘটনায়ও বিএনপি এবং
ছাত্রদলের কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এদিকে, পুলিশ প্রহরায় সিলেট থেকে
দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে আন্তজেলা বাস
সার্ভিসের অনেক গাড়ি পুলিশ প্রহরায় সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা
ছেড়ে গেছে। সকাল ১০টার পর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে এসব বাস চলাচল করেছে। এ সময়
পুলিশ স্থানে স্থানে মোতায়েন ছিল। প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সিলেট থেকে
বিভিন্ন জেলায় দূরপাল্লার বাস চলাচলের জন্য পুলিশি প্রহরার সিদ্ধান্ত নেয়া
হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেটের জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আইন শৃঙ্খলা
বাহিনী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া
হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন, সিলেট জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম। সভায়
জানানো হয়, সিলেট-দূরপাল্লার বাস চলাচলে সামনে ও পেছনে পুলিশি প্রহরা থাকবে
এবং মালবাহী ট্রাকের নিরাপত্তার জন্য টহল পুলিশ ও বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশি
প্রহরা রাখা হবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় বিশেষ টহলে পুলিশ থাকবে। এসময় সভায়
উপস্থিত ছিলেন, মালিক, শ্রমিকের পাশাপাশি পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তাবৃন্দ। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শহীদ ইসলাম সাংবাদিকদের
জানিয়েছেন, প্রশাসন নিরাপত্তা দেয়া সিলেটে যানবাহন চলাচল বেড়েছে। এ
প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। ছাত্রদলের অবরোধ: শনিবার সিলেট
সুনামগঞ্জ মহাসড়কের আখালী, সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড, বিডিআর ক্যাম্প এলাকায়
ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট ল’ কলেজের ভিপি মাহবুবুল হক
চৌধুরীর নেতৃত্বে সিলেট ছাত্রদল মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল ও সমাবেশ করে।
মহাসড়ক অবরোধকালে মিছিল ও সমাবেশে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য দেন ও উপস্থিত
ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক অর্থ সম্পাদক আবদুস সামাদ তুহেল, জেলা
ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সদস্য শফিকুর রহমান টুটুল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক
সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল মজিদ, মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সদস্য মো.
কামরুজ্জামান দিপু, লোকমান আহমদ চৌধুরী, ছাত্রদল নেতা আবু আহমদ আনসারী,
আবুল হাশিম জাকারিয়া, আবদুর রউফ, শিহাব খান, মহানগর ছাত্রদল নেতা কামরান
আহমদ হেলাল, উসমান গনি, রকিবুল হাসান রাসেল, খন্দকার ফয়েজ আহমদ, রুনু আহমদ,
খালেদ আহমদ, আকাব আহমদ পলাশ, সুহেল রানা প্রমুখ।
No comments