‘বিপ্লবী’ তরুণ যেভাবে প্রেসিডেন্ট
বীর সেনানীর ঘরে জন্ম তাঁর। ছোটবেলা থেকেই আচরণও ছিল আর দশটা ছেলের চেয়ে আলাদা। যেমন মৃদুভাষী, তেমনই মিশুক। আদর্শের ব্যাপারে আপসহীন। পরিচিতজনেরা বলাবলি করতেন, ভবিষ্যতে ছেলেটা বড় কিছু একটা হবে। তাদের কথা বাস্তবে পরিণত হলো আজ। গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে জয়ী হয়ে শ্রীলঙ্কার সপ্তম প্রেসিডেন্ট হয়েছেন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা (৬৩)। তাঁর পুরো নাম পালেওয়াত্তি গামারালালাজে মাইথ্রিপালা ইয়াপা সিরিসেনা। জন্ম ১৯৫১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, মধ্য-উত্তর শ্রীলঙ্কার পোলোনারুয়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে। বাবা অ্যালবার্ট সিরিসেনা ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-ফেরত বীর সেনা। ছোটবেলা থেকেই সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল সিরিসেনার। মাত্র ১৬ বছর বয়সে গ্রাম থেকে অচেনা রাজধানী কলম্বোতে গিয়ে যোগ দেন সমাজতন্ত্রীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে। রাজনীতিতে সেটাই হাতেখড়ি। এরপর উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। ১৯৬৭ সালে সিরিসেনা যোগ দেন প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির (এসএলএফপি) যুব শাখায়।
তিন বছর পর মাত্র ২০ বছর বয়সে তাঁকে সরকারবিরোধী ‘বিপ্লবে’ নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে দুই বছর কারাগারে থাকতে হয়। তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে। ১৯৮১ সালে এসএলএফপির পলিটব্যুরোতে যোগদানের মধ্য দিয়ে সিরিসেনার রাজনৈতিক উত্থান শুরু। ১৯৮৯ সালে দলটির টিকিট নিয়ে নিজ এলাকা থেকে নির্বাচন করে পার্লামেন্ট সদস্য হন তিনি। এরপর বিভিন্ন সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন সরকারের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের অধীনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। সিরিসেনা খুব ডাকসাইটে মন্ত্রী ছিলেন, বিষয়টি তেমন নয়। তবে কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সবাই তাঁকে পছন্দ করতেন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও সিরিসেনার সাবেক সহকর্মী অস্টিন ফার্নান্দো সেভাবেই তুলে ধরলেন তাঁকে। সিরিসেনাকে ‘নম্র-ভদ্র ও মৃদুভাষী রাজনীতিক’ হিসেবে বর্ণনা করে ফার্নান্দো বলেন, ‘তিনি এমন একজন পছন্দ হওয়ার মতো মানুষ, যিনি সহজেই অন্যের শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠতে পারেন।’ কৃষক পরিবার থেকে এসেছেন সিরিসেনা। বাবা অ্যালবার্ট সিরিসেনা সেনাসদস্য হলেও বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে কৃষিকাজেই মন দেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের মতো তিনিও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহিল জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। দুজনই বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। সূত্র: এএফপি ও বিবিসি
No comments