দরজা খোলেন কার্টুনিস্টই, ভাগ্যের জোরে জীবনরক্ষা সেলসম্যানের
সকালটা
অন্যান্য দিনের মতোই শুরু হয়েছিল দিদিয়েরের৷ পেশায়, সেলসম্যান৷ প্রিন্টিং
ব্যবসার জন্য এক গ্রাহকের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল তার৷ তখন কে জানত শার্লি
এবদো পত্রিকা অফিসে তাণ্ডব চালানো আততায়ীর সঙ্গে এমনভাবে দেখা হবে
দিদিয়েরের৷ প্যারিস শহর থেকে উত্তরে আধঘণ্টার পথ দার্মাত্যাঁ আঁ-গোয়েল অফিস
চত্বর৷ এখানেই শুক্রবার সকালে ক্লায়েন্ট অফিসে পৌঁছেছিলেন সেলসম্যান
দিদিয়ের৷ দেখা করার কথা ছিল মিশেল বলে এক ব্যক্তির সঙ্গে৷ দিদিয়ের পৌঁছনোর
পরই অফিসের দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন মিশেল৷ কিন্ত্ত তার সঙ্গে ছিল এক
বন্দুকধারী৷ 'আমি তো দু'জনের সঙ্গে হাত মেলালাম৷ বন্দুকধারী ব্যক্তি বলল,
সে পুলিশ৷আমি তখনও কিছু বুঝিনি৷ মিশেল আমায় বললেন, 'চলে যাও'৷ তাই ফিরে
এলাম৷ কিন্ত্ত বন্দুকধারী ব্যক্তি হঠাৎ বলে বসল, 'হ্যাঁ যাও, আমরা সাধারণ
নাগরিকদের হত্যা করি না৷' তখনই আমার সন্দেহ হলো৷ দার্মাত্যাঁ আঁ-গোয়েলের
অফিস চত্বর থেকে বেরিয়ে পুলিশকে খবর দিলাম,' ফ্রান্সের ইন্টার রেডিয়োতে
নিজের রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন দিদিয়ের৷ দিদিয়ের বলেন, মিশেলের সঙ্গে
থাকা বন্দুকধারী যে এই মুহূর্তে ফ্রান্সের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' আততায়ী সে
বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না তার৷ 'ওই ব্যক্তির কাছে কালশকনিকভ জাতীয়
বন্দুক ছিল৷ বুলেট-প্রুফ জ্যাকেট পরেছিল সে৷ সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর মতো
পোশাক ছিল তার৷ তাই সন্দেহ হয়নি প্রথমে৷ যখন নাগরিকদের মারার কথা তুলল সে,
তখন আমার খটকা লাগল৷ মিশেল অফিসের সামনের দরজা খুলেছিলেন৷ কিন্ত্ত আমায় চলে
যেতে বলে দরজা বন্ধ করে দেন,' দিদিয়ের বলেন৷ তার মতে, সন্ত্রাসবাদীরা অফিস
চত্বরে লোকজনকে পণবন্দি করেছে সেটা বোঝাই যায়নি৷ 'মিশেল বা বন্দুকধারীর
আচরণে বুঝতে পেরেছিলাম কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে,' স্বীকারোক্তি দিদিয়েরের৷
আর কিছু বুঝতে চাইছেন না দিদিয়ের৷ গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে গোটা ফ্রান্সে সন্ত্রাস
সৃষ্টি করা ব্যক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রাণ নিয়ে ফিরেছেন এই আনন্দেই লটারি
কিনতে চাইছেন তিনি৷ 'ভাগ্যকে আর একবার পরখ করতে দোষ কী,' দিদিয়েরের বলেন!-
সংবাদ সংস্থা
দরজা খোলেন কার্টুনিস্টই
প্যারিসের
ব্যঙ্গ রসাত্মক পত্রিকা শার্লে এবদোর দরজাতেই আটকে গিয়েছিলেন মুখোশধারী
জঙ্গিরা৷ আর সে দিন বাধা কাটাতে সমর্থ হয়েছিল ওই পত্রিকারই আরেক
কার্টুনিস্টের সহায়তায়৷ আমাদের এখানে এটিএম যন্ত্রে যেমন নম্বর লেখা
কি-প্যাড থাকে, প্যারিসের সব বাড়ির দরজাতেও তেমনি কি প্যাড লাগানো থাকে৷
সেখানে পাসওয়ার্ড টাইপ করলে তবেই খোলে দরজা৷ শার্লে এবদোর দরজাও ব্যতিক্রমী
নয়৷ তাই স্মরণকালের মধ্যে ফ্রান্সে দ্বিতীয় ভয়াবহ জঙ্গিহানার আগে সম্ভবত
সম্ভবত এই এক জায়গাতেই বাধা পেতে হয়েছিল কালাশনিকভ হাতে মুখোশপরা জঙ্গিদের৷
গাড়ি থেকে নেমেই বাধা দরজায়৷ আর ঠিক তখনই হাজির করিন রে, ওই পত্রিকারই
আরেক সাংবাদিক, যার ডাকনাম কোকো৷ পত্রিকার সাপ্তাহিক সম্পাদকীয় বৈঠকের সময়
প্রায় হয়ে গিয়েছে, তাই প্রি-স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে তিনি তখন পড়ি-মরি করে
অফিসে ছুটছেন৷ ফরাসি সংবাদপত্র লুমানিতে-কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন,
'আমি ডে-কেরারের জন্য আমার মেয়েকে আনতে স্কুলে গিয়েছিলাম, আমি যেই পত্রিকার
দরজায় পৌঁছাই, মুখঢাকা দই অস্ত্রধারী আমাদের মারাত্মক হুমকি দেয়৷' পুলিশকে
রে জানিয়েছেন, এই দু'জনই প্রাথমিক সন্দেহের তালিকায় থাকা সাঈদ ও শরিফ
কুয়াশি, বয়স ৩৪ ও ৩২- ঝরঝরে ফরাসিতে জানাল, তারা আল কায়েদার লোক, 'তারা
উপরে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতে বলে৷' রে-র কথায়, তারা বন্দুক তাক করল,
ট্রিগার টানল, কিন্ত্ত টিপলো না, বলল, 'আমি আপনাকে মারব না, কারণ আপনি
নারী, আর আমরা নারীহত্যা করি না, তবে আপনাকে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে, কুরআন
পড়তে হবে, মুখ ঢাকতে হবে৷' শুধুমাত্র মহিলা হওয়ার সুবাদেই সেদিন প্রাণে
বেঁচে যান রে ও তার শিশুকন্যা৷- সংবাদ সংস্থা
No comments