ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে- দিনে পুলিশ, সন্ধ্যায় ফাঁকা রাতে ভুতুড়ে অবস্থা by মহিউদ্দীন জুয়েল
দিনে
পুলিশ। সন্ধ্যায় ফাঁকা রাস্তা। রাতে ভুতুড়ে পরিবেশ। সুনসান নীরবতা।
একঘণ্টা পর দেখা মিলছে পণ্যবাহী লরির। সামনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
পরিস্থিতি এমন যেন কোন অঘোষিত কারফিউ চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের
অলঙ্কার থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ১০০ পয়েন্টে এমন অবস্থা বিরাজ করছে
প্রতিদিন। সরকার পুলিশ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে বড় বাস ও পণ্যবাহী
কনটেইনার চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও এখনও আতঙ্ক কাটছে না চালক, মালিক ও
যাত্রীদের। তারা জানিয়েছেন, লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দেয়ার
ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মাঝে। তাই জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সবাই
শঙ্কিত। চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার একাধিক বাসের মালিক ও চালকরা ক্ষোভ
প্রকাশ করে বলেছেন, গত ১০ দিনে তাদের হরতাল অবরোধে ক্ষতি হয়েছে ৩২ কোটি
টাকা। এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ খুব অল্প সময়ে ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে
বলে আশঙ্কা সবার। প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ন্যূনতম ৪০ সিটের একটি
গাড়ি দিনে আসা-যাওয়া করে ঢাকা থেকে দুবার। ৪০০ বড় বাস স্বাভাবিক নিয়মে
চলাচল করে শিডিউল অনুযায়ী। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এসব গাড়ির সংখ্যা তিন
ভাগের এক ভাগের নিচে নেমে এসেছে।
সরজমিনে গতকাল শনিবার সকালে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন মহাসড়ক ও চট্টগ্রামের অলঙ্কার-বিআরটিসি বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গাড়ির কোন ভিড় নেই। অলস বসে আছেন চালকরা। গ্যারেজে পড়ে রয়েছে এসি, নন এসি, ভলবোসহ অন্তত ১০০০ গাড়ি। এই বিষয়ে জানতে চাইলে চালকরা সরকারের কাছে হরতাল-অবরোধ পরিস্থিতি দ্রত সমাধানের দাবি জানান। একইসঙ্গে জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
সিকান্দার আলী নামের হানিফ যশোর রোডের একটি গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রামের স্টেশনরোডের বাসস্ট্যান্ডে। তিনি বলেন, আমি কিছুদিন আগে হানিফ পরিবহন চালাতাম। এখন ভাল উপার্জনের আশায় অন্য একটি বাস চালাচ্ছি। গত কয়েক দিন আগে দেখলাম এই বাসের অন্য একটি সার্ভিসে পেট্রোল দিয়েছে অবরোধকারীরা। খুবই শঙ্কায় আছি। গ্রাম থেকে পরিবারের লোকজন প্রতিদিন ফোন করে।
এস আলম পরিবহনের সুপারভাইজার সজল বলেন, পুলিশ দিয়ে কত দিন গাড়ি চালানো যাবে ভাই। একটা সমাধানেও তো আসতে হবে। গাড়ি চালাতে না পারলে খাব কি। আমাদের সব আয় বন্ধ হয়ে গেছে। মালিক রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না। ভাঙচুর করলে, আগুন দিলে দায় নেবে কে?
যাত্রীরা জানান, চট্টগ্রামের গরীবুল্লাহ শাহ মাজার বাস কাউন্টারে গিয়ে প্রতিদিনই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে অনেককে। তবে দুয়েকটি বাস রাতের বেলায় ছেড়ে গেলেও তাতে কেউ যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। কর্মস্থলে ফিরতে না পেরে চট্টগ্রামের বাস কাউন্টারগুলোতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার লোক। এই কাউন্টার থেকে দূর পাল্লার ৫০টি রুটের গাড়ি ছেড়ে যায় প্রতিদিন। এসি-ননএসি। সব ধরনের গাড়ি রয়েছে বড় এই কাউন্টারে। অন্যদিন এখানে লোকজনের টিকিট পাওয়া দুষ্কর হলেও গত কয়েক দিনের চিত্র ছিল ভিন্ন।
কথা হলে যাত্রীদের কয়েকজন জানান, বিএনপির ডাকা লাগাতার অবরোধের কারণে কোন গাড়ি চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে চাইছে না। বিশেষ করে নোয়াখালী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চাঁদপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, খুলনা, যশোরসহ একাধিক রুটের সব গাড়ি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কায় বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যায়নি গত ১০ দিনেও।
যাত্রীদের বিশ্বাস, বিশ্ব ইজতেমার কারণে অবরোধ শিথিল হলে আবারও স্বাভাবিক হতে পারে পরিস্থিতি। কিন্তু নতুন করে সঙ্কট তৈরি হওয়ায় আশঙ্কা ভেতরেই থেকে গেছে। রাকিবুল মওলা নামের সিটি করপোরেশনের এক কলেজশিক্ষক বলেন, আমার বাড়ি টাঙ্গাইলে। শুনেছি রাতে সীতাকুণ্ডে আগুন দিচ্ছে কে বা কারা। এসব খবর উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বাড়ি যেতে গিয়ে লাশ হতে হবে শেষমেষ।
নগর পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে পণ্যবাহী কন্টেইনারের দিকে বেশি নজর পুলিশ বিভাগের। বিজিবির প্রহরায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু গাড়ি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছেড়ে গেছে। এসব গাড়ি চট্টগ্রাম দিয়ে সীতাকুণ্ড হয়ে প্রথমে ফেনী চলে যাচ্ছে। এরপর সেখান থেকে পুলিশের আরেকটি দল তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত মানবজমিনকে বলেন, পুলিশ প্রহরায় গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেখা যাক কি হয়। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করবো যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
চট্টগ্রাম বাসমালিক সমিতির নেতারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বিভিন্ন কাউন্টার থেকে ১১০০ গাড়ি ছাড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এবারের চিত্র ভিন্ন। পুলিশ প্রহরায় বন্দর থেকে প্রতিদিন রাতে ৫০-৬০টি পণ্যবাহী গাড়ি ছেড়ে যায়। যাত্রীবাহী বাসসহ মোট দূরপাল্লার ১০০টি গাড়ি ছাড়ছে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন।
বর্তমানে বাস মালিক নেতারা গাড়ি পুড়ে ফেলার ভয়ে রাস্তায় পরিবহন নামাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, কত দিন এভাবে পুলিশ দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে। তবে গত কয়েক দিন ধরে দুয়েকটি বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায়।
চট্টগ্রামের আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, একদিনের হরতালে আমাদের বাস মালিকদের ক্ষতি হচ্ছে ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি। সেই হিসেবে নথি অনুযায়ী আমাদের ১০ দিনে ৩২ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়ে গেছে। পুলিশ দিয়ে গাড়ি চালাতে রাজি নন আমাদের ড্রাইভাররা। বাস মালিকরা কোন দলের নয়। তারা রাজনীতি করে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গাড়ি চালানো যাবে না। কিন্তু এভাবে কত দিন আমরা লস দেবো বলতে পারেন?
সরজমিনে গতকাল শনিবার সকালে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন মহাসড়ক ও চট্টগ্রামের অলঙ্কার-বিআরটিসি বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গাড়ির কোন ভিড় নেই। অলস বসে আছেন চালকরা। গ্যারেজে পড়ে রয়েছে এসি, নন এসি, ভলবোসহ অন্তত ১০০০ গাড়ি। এই বিষয়ে জানতে চাইলে চালকরা সরকারের কাছে হরতাল-অবরোধ পরিস্থিতি দ্রত সমাধানের দাবি জানান। একইসঙ্গে জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
সিকান্দার আলী নামের হানিফ যশোর রোডের একটি গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রামের স্টেশনরোডের বাসস্ট্যান্ডে। তিনি বলেন, আমি কিছুদিন আগে হানিফ পরিবহন চালাতাম। এখন ভাল উপার্জনের আশায় অন্য একটি বাস চালাচ্ছি। গত কয়েক দিন আগে দেখলাম এই বাসের অন্য একটি সার্ভিসে পেট্রোল দিয়েছে অবরোধকারীরা। খুবই শঙ্কায় আছি। গ্রাম থেকে পরিবারের লোকজন প্রতিদিন ফোন করে।
এস আলম পরিবহনের সুপারভাইজার সজল বলেন, পুলিশ দিয়ে কত দিন গাড়ি চালানো যাবে ভাই। একটা সমাধানেও তো আসতে হবে। গাড়ি চালাতে না পারলে খাব কি। আমাদের সব আয় বন্ধ হয়ে গেছে। মালিক রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না। ভাঙচুর করলে, আগুন দিলে দায় নেবে কে?
যাত্রীরা জানান, চট্টগ্রামের গরীবুল্লাহ শাহ মাজার বাস কাউন্টারে গিয়ে প্রতিদিনই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে অনেককে। তবে দুয়েকটি বাস রাতের বেলায় ছেড়ে গেলেও তাতে কেউ যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। কর্মস্থলে ফিরতে না পেরে চট্টগ্রামের বাস কাউন্টারগুলোতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার লোক। এই কাউন্টার থেকে দূর পাল্লার ৫০টি রুটের গাড়ি ছেড়ে যায় প্রতিদিন। এসি-ননএসি। সব ধরনের গাড়ি রয়েছে বড় এই কাউন্টারে। অন্যদিন এখানে লোকজনের টিকিট পাওয়া দুষ্কর হলেও গত কয়েক দিনের চিত্র ছিল ভিন্ন।
কথা হলে যাত্রীদের কয়েকজন জানান, বিএনপির ডাকা লাগাতার অবরোধের কারণে কোন গাড়ি চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে চাইছে না। বিশেষ করে নোয়াখালী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চাঁদপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, খুলনা, যশোরসহ একাধিক রুটের সব গাড়ি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কায় বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যায়নি গত ১০ দিনেও।
যাত্রীদের বিশ্বাস, বিশ্ব ইজতেমার কারণে অবরোধ শিথিল হলে আবারও স্বাভাবিক হতে পারে পরিস্থিতি। কিন্তু নতুন করে সঙ্কট তৈরি হওয়ায় আশঙ্কা ভেতরেই থেকে গেছে। রাকিবুল মওলা নামের সিটি করপোরেশনের এক কলেজশিক্ষক বলেন, আমার বাড়ি টাঙ্গাইলে। শুনেছি রাতে সীতাকুণ্ডে আগুন দিচ্ছে কে বা কারা। এসব খবর উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বাড়ি যেতে গিয়ে লাশ হতে হবে শেষমেষ।
নগর পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে পণ্যবাহী কন্টেইনারের দিকে বেশি নজর পুলিশ বিভাগের। বিজিবির প্রহরায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু গাড়ি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছেড়ে গেছে। এসব গাড়ি চট্টগ্রাম দিয়ে সীতাকুণ্ড হয়ে প্রথমে ফেনী চলে যাচ্ছে। এরপর সেখান থেকে পুলিশের আরেকটি দল তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত মানবজমিনকে বলেন, পুলিশ প্রহরায় গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেখা যাক কি হয়। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করবো যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
চট্টগ্রাম বাসমালিক সমিতির নেতারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বিভিন্ন কাউন্টার থেকে ১১০০ গাড়ি ছাড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এবারের চিত্র ভিন্ন। পুলিশ প্রহরায় বন্দর থেকে প্রতিদিন রাতে ৫০-৬০টি পণ্যবাহী গাড়ি ছেড়ে যায়। যাত্রীবাহী বাসসহ মোট দূরপাল্লার ১০০টি গাড়ি ছাড়ছে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন।
বর্তমানে বাস মালিক নেতারা গাড়ি পুড়ে ফেলার ভয়ে রাস্তায় পরিবহন নামাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, কত দিন এভাবে পুলিশ দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে। তবে গত কয়েক দিন ধরে দুয়েকটি বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায়।
চট্টগ্রামের আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, একদিনের হরতালে আমাদের বাস মালিকদের ক্ষতি হচ্ছে ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি। সেই হিসেবে নথি অনুযায়ী আমাদের ১০ দিনে ৩২ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়ে গেছে। পুলিশ দিয়ে গাড়ি চালাতে রাজি নন আমাদের ড্রাইভাররা। বাস মালিকরা কোন দলের নয়। তারা রাজনীতি করে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গাড়ি চালানো যাবে না। কিন্তু এভাবে কত দিন আমরা লস দেবো বলতে পারেন?
No comments