বেলজিয়ামে সেনা মোতায়েন
সন্দেহভাজন ইসলামি জঙ্গিদের গ্রেপ্তার এবং চলমান সন্ত্রাসবাদ–বিরোধী অভিযানের প্রেক্ষাপটে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুরো ইউরোপ। যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় পুলিশকে সতর্কতার চতুর্থ স্তরে রাখা হয়েছে, যা দেশটিতে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ফ্রান্সের মতো প্রতিবেশী বেলজিয়ামেও গতকাল শনিবার থেকে পুলিশের পাশাপাশি সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। ফ্রান্সে আরও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে। খবর বিবিসি ও এএফপির। গত সপ্তাহে প্যারিসে কয়েকটি ঘটনায় উগ্রপন্থী বন্দুকধারীদের হাতে ১৭ জন নিহত হওয়ার পর ইউরোপের কয়েকটি দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিদের হয়ে লড়াই করতে যাওয়া তরুণেরা অনেকে ফিরে আসায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বেলজিয়ামে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান শুরু হওয়ার পর শুক্রবার সে দেশে সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অভিযোগে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার খবর পেয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ভের্ভিয়ে শহরে পুলিশ অভিযান চালায়। ওই অভিযানে সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি নিহত হয়। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী শার্ল মিশেলের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ৩০০ সেনা পর্যায়ক্রমে রাজধানী ব্রাসেলস ও উত্তরাঞ্চলীয় শহর অ্যানভার্সের সড়কে টহল দেওয়ার জন্য মোতায়েন করা হবে। এ দুটি শহরেই বিপুলসংখ্যক ইহুদি বাস করে। টহলরত সেনাসদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় থাকবেন। বিবৃতিতে বলা হয়, মোতায়েন করা সেনাসদস্যদের কাজ হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকাগুলোতে নজরদারি এবং পুলিশকে সহায়তা করা। ভের্ভিয়ে শহরেও শেষ পর্যন্ত সেনা মোতায়েন করা হতে পারে। বেলজিয়ামের সন্ত্রাসী হামলার কথিত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্যারিসের হামলার যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভল গত শুক্রবার বলেছেন, ‘দুই দেশই একই হুমকি মোকাবিলা করছে।
দুটি ঘটনার মধ্যে যে যোগসূত্র রয়েছে তা হলো আমাদের মূল্যবোধকে আক্রমণের ইচ্ছা।’ ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামের ঘটনার পর প্রতিবেশী দেশেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাজ্যে পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। ইহুদি সম্প্রদায়-অধ্যুষিত এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হচ্ছে। দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ইহুদি- অধ্যুষিত এলাকায় টহল বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের স্কুলগুলোতে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জার্মানিতে পুলিশ শুক্রবার অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে। ফ্রান্সের পুলিশ এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটি জুড়ে ১ লাখ ২০ হাজার পুলিশ ও সেনা টহল দিচ্ছে। বোমা হামলার আতঙ্কে শুক্রবার প্যারিসের একটি রেলস্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ক্যামেরন-ওবামা যৌথ পদক্ষেপ: সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় যৌথ প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দেশের ভেতরে এবং বাইরে ইসলামি উগ্রপন্থীদের মোকাবিলায় নতুন পদক্ষেপের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। গতকাল হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে তাঁরা দুই দেশে কট্টরপন্থী ভাবাদর্শের বিস্তার রোধ এবং ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করার বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি করেন। তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সহিংস মতাদর্শের বিস্তার রোধ করতে দুই দেশের কর্মকর্তারা একসঙ্গে কাজ করে ছয় মাসের মধ্যে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। উগ্রপন্থী ভাবনা মোকাবিলা এবং মৌলবাদ বিরোধিতার নকশা প্রণয়নের ওপর জোর দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে যুদ্ধ করে আসা জিহাদিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় সন্ত্রাসবাদবিরোধী সম্মেলনে এ পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বৈঠকে ওবামা প্যারিসের ঘটনার অতিরঞ্জিত প্রতিক্রিয়ার বিপদ সম্পর্কেও সতর্ক করে দেন।
No comments