বিপ্লবী তিনটি গানের জন্ম হয়েছিল কিভাবে
স্বাধীন
বেতারে ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানটি প্রথম প্রচারিত হওয়া মাত্র
চারদিকে প্রবল উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল। তারপর শহীদদের মনে রেখে ‘এক সাগর
রক্তের বিনিময়ে’ গানটি প্রচারিত হওয়ার পর আর বুঝতে এতটুকু কষ্ট হয়নি যে,
এসব গানের স্রষ্টা চিরকালের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অঙ্গীভূত হয়ে
গিয়েছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরিচালক কামাল লোহানী
যখন কলকাতার ধর্মতলায় তরুণ কবি ও গীতিকার গোবিন্দ হালদারের কাছ থেকে জয়
বাংলার গান লেখা দুটি খাতার পাতায় পাতায় চোখ বুলিয়েছিলেন সে সময়ই তিনি বুঝে
নিয়েছিলেন তিনি যা চাইছেন তাই রয়েছে এই দুটি খাতার পাতায় পাতায়। রিদমের
পাশাপাশি যুদ্ধের বাঙ্ময় পরিবেশ ফুটিয়ে তুলেছেন তরুণ এই গীতিকার। স্বাধীন
বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রধান সুরকার সমর দাস খাতাগুলো পেয়েও সুর দেয়ার সময়
পান নি। এক সপ্তাহ পরে কামাল লোহানী আপেল মাহমুদের কাছে জানতে চান গোবিন্দ
হালদারের গানগুলোর কি হলো? তখন আপেল মাহমুদ খাতা দুটির পাতা উল্টে একটি
গানকে নিয়ে সুর দেয়ার কথা ভাবেন। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’
গানটিতে দু’দিনের পরিশ্রমে সুর দিয়েছিলেন আপেল মাহমুদ। পরে এ গানটি
সম্পর্কে আপেল মাহমুদ লিখেছিলেন, আমি সেই সময়ই বুঝেছিলাম এটি একটি ঐতিহাসিক
গানের মর্যাদা পাবে। গানটি প্রচারিত হওয়ার পর সাড়া পড়ে গিয়েছিল। এর আগে
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা দিতে পুরানো দিনের
গানই বাজানো হতো। এই প্রথম সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেখা গান প্রচার করা
হয়েছিল। এই গানের সাফল্যের পরই সুরকার সমর দাস আর দেরি না করে ’সূর্য্য
উঠেছে পূর্ব দিগন্তে’ গানটিতে সুর দেন। এটিও প্রচারিত হওয়া মাত্র সাড়া পড়ে
গিয়েছিল। তবে এই গান প্রচারের জন্য কামাল লোহানীকে প্রশংসার পাশাপাশি
সমালোচনাও শুনতে হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের লেখা থেকেই জানা যায়, কামাল লোহানীকে
বন্ধুদের কাছে শুনতে হয়েছিল, প্রেমের জন্য যুদ্ধ হচ্ছে কিনা? লোহানী তার
জবাবে বলেছিলেন, দেশকে না ভালবেসে দেশের জন্য কেউই যুদ্ধ করতে পারে না। এই
ভাবে ১৯৭১ সালের ২০শে ডিসেম্বর আরেকটি ঐতিহাসিক গান রচনা করেছিলেন গোবিন্দ
হালদার। আপেল মাহমুদের অনুরোধে শহীদদের মনে রেখে গোবিন্দ হালদার লিখেছিলেন
‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ গানটি। তবে গানটিতে কিছু শব্দ এমন ছিল যে, সুর
দিতে অসুবিধা হচ্ছিল। তখন সুরকারের অনুরোধে কয়েকটি শব্দ বাদ দিয়েছিলেন
গীতিকার। তিনি নিজেই পরে জানিয়েছিলেন সেদিনের কথা। দু’দিনের চেষ্টায়
গানটিতে সুর দেয়া হয়েছিল। এইভাবেই একের পর এক প্রেরণাসৃষ্টিকারী গানের জন্ম
হয়েছিল গোবিন্দ হালদারের কলমে।
No comments