জিএসপি ফিরে পেতে আরও অনেক কাজ করতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রে
পণ্য রপ্তানিতে জেনারেলাইজড সিস্টেম প্রিফারেন্সেস (জিএসপি) ফিরে পেতে
বাংলাদেশকে আরও অনেক কাজ করতে হবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষায়
অনেক দূর এগুতে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশে যেসব শ্রমিক নেতা নতুন করে
ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টা অথবা তাদের আইনি অধিকার আদায়ের চেষ্টা করছেন তাদেরকে
অব্যাহতভাবে হয়রানি ও সহিংসতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার
উদ্বিগ্ন। ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) এক বিবৃতিতে এ
কথা বলেছে। ১৬ই জানুয়ারি দেয়া ওই বিবৃতিতে যেসব গার্মেন্টে এখনও নিরাপত্তা
অনুসন্ধান করা হয়নি, সেগুলোতে তদন্ত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে,
শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে। অ্যাকশন প্ল্যানে শ্রম আইন
সংস্কারের যে আহ্বান জানানো হয়েছে সেক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই।
অ্যাকশন প্ল্যানে বলা হয়েছে, দেশের বাকি সব গার্মেন্টের শ্রমিকদের মতো
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার শ্রমিকরা যেন অধিকার ও নিরাপত্তা পায় তা
নিশ্চিত করতে হবে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে গত বছর
বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে জিএসপি ফিরে পেতে
অ্যাকশন প্ল্যানের অধীনে বাংলাদেশকে আরও কিছু করতে হবে। দেশে কোথায় কোথায়
শ্রম অধিকার সুষ্ঠু হচ্ছে না, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনি
সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে জরুরিভিত্তিতে। ইউএসটিআর-এর মাইকেল ফ্রোম্যান
বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ২০১২ ও ২০১৩ সালের ট্র্যাজেডির মতো কর্মক্ষেত্রে যাতে
পুনঃ পুনঃ না ঘটে তা প্রতিরোধে বাকি গার্মেন্টে অনুসন্ধান সম্পন্ন করতে
আহ্বান জানাচ্ছি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। এখনও অনেক কাজ করার বাকি আছে।
বাংলাদেশ, বেসরকারি সংশ্লিষ্ট পক্ষ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন আইএলও’র
সমন্বয়ের মাধ্যমে গার্মেন্টস খাতের নিরাপত্তার বিষয়টি চিহ্নিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে ইউএসটিআরের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা শেষ হয়েছে। তাতে বলা
হয়েছে তৈরী পোশাক খাতে বাংলাদেশে অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তায় গত বছর অগ্রগতি
হয়েছে। এ সময়ে সরকারের তত্ত্বাবধানে ২০০০ এর বেশি পোশাক কারখানা পরিদর্শন
করা হয়েছে। তাদেরকে সহায়তা করেছে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপীয় কিছু ব্রান্ড ও
খুচরা ক্রেতা। এ পরিদর্শনের সময় কমপক্ষে ৩১টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
১৭টি কারখানার অংশবিশেষ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে আরও শত শত কারখানা এখনও
পরিদর্শন করা হয় নি। এসব কারখানা পরিদর্শন করা ও বাড়তি পরিদর্শন দল নেয়ার
দায় বাংলাদেশ সরকারের। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
২০১৩ সালের জুনে বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেন। এর আগের বছর
যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের
রপ্তানি আমদানি করেছিল। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে
তার মধ্যে অন্যতম হলো তামাক, খেলাধুলার সামগ্রী, সিরামিক ও প্লাস্টিকের
পণ্য। জিএসপি’র অধীনে শুল্কমুক্ত সুবিধার আইনি বৈধতা শেষ হয়ে গেছে ২০১৩
সালের ৩১শে জুলাই। তবে কংগ্রেশনাল অ্যাকশনের সমর্থনের অধীনে বারাক ওবামা
প্রশাসন নতুন করে জিএসপি পুনঃস্থাপন করার ক্ষমতা রাখে। বাংলাদেশের
শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে শ্রম মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়, ইউএসএইডের মাধ্যমে মার্কিন সরকার কর্মসূচি পরিচালনায় সহায়তা
দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয় অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তা, শ্রম
সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারের লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে
বাংলাদেশ সরকারকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
No comments