অস্ত্রের জনপদ রূপগঞ্জ
রূপগঞ্জে
আবারও শুরু হয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। তুচ্ছ ঘটনায় ব্যবহার হচ্ছে
আগ্নেয়াস্ত্র। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন স্থানে এসব অবৈধ অস্ত্র চোখে
পড়ছে অনেকের। পুরনো সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি নতুন সন্ত্রাসীদের হাতেও শোভা
পাচ্ছে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্রে সয়লাব এখন রূপগঞ্জ।
রাজনীতি, হানাহানির কারণে এখন প্রতিনিয়ত বাড়ছে এসবের ব্যবহার। খালেদ,
তারেক, রাসেল ভুঁইয়া, ছাত্রদল নেতা শফিকসহ রূপগঞ্জের আলোচিত হত্যাকাণ্ডের
ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর একটিও উদ্ধার না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে রূপগঞ্জের
মানুষের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ। গত এক সপ্তাহে গোলাকান্দাইলের নাগেরবাগ ও
মুড়াপাড়ার মাছিমপুর এলাকায় দু’পক্ষের গুলিবিনিময়ের ঘটনায় পুনরায় আতঙ্ক
ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মনে। এছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরকারি ও বিরোধী দলের
মিটিং-মিছিলের সময় দেশী অস্ত্রের পাশাপাশি বিদেশী অস্ত্রের মহড়া রূপগঞ্জকে
ভয়ঙ্কর একটা স্থানে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে রূপগঞ্জে বসবাসকারীরা আতঙ্কিত।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর র্যাবের কার্যক্রমে স্থিতিশীলতার কারণে
এসব অস্ত্র এখন দিন দিন প্রকাশ্যে চলে আসছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী
নেতাদের প্রশ্রয়ে পুরনো ও নতুন করে গজে ওঠা সন্ত্রাসীদের হাতে এসব
আগ্নেয়াস্ত্র শোভা পাচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, থানা পুলিশ ও
স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত দুই বছরে রূপগঞ্জের বিভিন্ন পর্যায়ের সন্ত্রাসীদের
হাতে প্রায় তিন শতাধিক বিভিন্ন প্রকারের আগ্নেয়াস্ত্র নতুন করে এসেছে।
সন্ত্রাসীরা আগে র্যাবের ভয়ে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো বিক্রি অথবা পরিত্যাগ করলেও
এখন আবার নতুন করে সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন হাউজিং প্রকল্পগুলো জমিদখল ও
প্রভাব বিস্তার করার জন্য ঢাকা থেকে বিভিন্ন উপায়ে ভাড়ায় অস্ত্র আনছে
রূপগঞ্জে। আর নতুন করে গজে ওঠা সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন অস্ত্র
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি,
চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সময় এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা। এক সময়
মুড়াপাড়া এলাকায় ও চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে অধিকাংশ অস্ত্র থাকলেও সারা
রূপগঞ্জে তা ছড়িয়ে পড়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রমতে, শুধু গত ২ বছরে
রূপগঞ্জের বিভিন্ন মিল-কারখানার ঝুট ব্যবসায়ী, হাউজিং প্রকল্পের দালাল,
বালু ভরাট কাজের ঠিকাদার, যুবনেতা, ছাত্রনেতা, বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক
সংগঠনের চাঁদাবাজি আদায় করার কাজে নিয়োজিত সন্ত্রাসীরা এসব অস্ত্র সংগ্রহ
করেছে নিজেদের অবৈধ কাজে ব্যবহারের জন্য। অনেক সময় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ,
জাতীয় দিবসে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফাঁকা গুলি করে জানান দিচ্ছে তার কাছে
অস্ত্র আছে। বিভিন্ন সূত্র ও স্থানীয় জনগণ জানান, রূপগঞ্জে বর্তমানে যেসব
অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে তার অধিকাংশই ছোট আকারের। পিস্তল, রিভলবার জাতীয়
অস্ত্রই এখন বেশি আছে সন্ত্রাসীদের হাতে। মাঝে মধ্যে শটগান, কাটারাইফেলসহ
বড় অস্ত্রও সন্ত্রাসীরা প্রদর্শন করছে। যার অধিকাংশই মুড়াপাড়ার মাছিমপুর,
মঙ্গলখালী, ব্রাহ্মণগাঁও, ভুলতার মুর্তজাবাদ, বাইল্যা, গোলাকান্দাইল
উত্তরপাড়া, বলাইয়া, তারাব পৌরসভার তারাব এলাকা, বরাব, গন্ধর্বপুর, বরপা,
নোয়াপাড়া, কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র, নাওড়া, জাঙ্গীর,
কাঞ্চনের কেন্দুয়া, কাঞ্চনবাজার এলাকা, তারৈল, চরপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কেরাব,
মায়ারবাড়ি, দিঘলিয়া, দাউদপুরের উপশহর সংশ্লিষ্ট ৩টি গ্রামে, রূপগঞ্জ
ইউনিয়নের ইছাপুরা, পিতলগঞ্জ, হাবিবনগরসহ আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকার উঠিত
সন্ত্রাসীদের কাছে রয়েছে। এসব এলাকার স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় বিভিন্ন
সময় আধিপত্য বিস্তার ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য সন্ত্রাসীরা
প্রতিপক্ষের লোকজন দেখলেই অবৈধ অস্ত্র বের করে। প্রতিবাদ করলে প্রাণনাশের
হুমকি দেয়া হয়। ফলে লোকজন আছেন আতঙ্কে। থানায় জিডি হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া
যায় না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। পুলিশ দাবি করে রূপগঞ্জে কোন অবৈধ অস্ত্র
নেই। কিন্তু গত মাসেও র্যাব ১১-এর একটি দল ইছাখালী এলাকা থেকে কায়েতপাড়া
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাদলকে কয়েকটি অস্ত্রসহ আটক করে। তারপরও থানা
পুলিশের দাবি, রূপগঞ্জের কোন অবৈধ অস্ত্রের খোঁজ নেই তাদের কাছে। অথচ
বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন হচ্ছে অস্ত্রের মহড়া। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে
গোলাকান্দাইলের নাগেরবাগে ও মুড়াপাড়ার মাছিমপুরে প্রকাশ্যেই দুই গ্রুপের
মাঝে চলে অস্ত্রের মহড়া ও ফাঁকা গুলি। সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশকে কেন্দ্র করে
মুড়াপাড়ায় হয়েছে অস্ত্রের মহড়া, ঘটেছে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা। এ প্রসঙ্গে
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম বলেছেন, রূপগঞ্জে অবৈধ
অস্ত্র নেই। যদি কারো কাছে পাওয়া যায় তাহলে তাকে অবশ্যই গ্রেপ্তার করে
আইনের আওতায় আনা হবে।
No comments