থমকে যাচ্ছে সিলেটের নগর উন্নয়ন by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
থমকে
যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড। স্থবির হয়ে পড়ছে নগর উন্নয়নের
চাকা। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটে সিটি
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্তির পর থেকেই মূলত এ অচলাবস্থার
সূচনা। আত্মগোপনে থেকে মেয়র আরিফ কিছুটা কাজ চালিয়ে গেলেও তিনি কারাবন্দি
হওয়ার পর থেকে আর চলতে চাইছে না যেনো সিটি করপোরেশনের রথ। পরিস্থিতি আরো
জটিল হয়ে উঠেছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র প্রশ্নে। কে পাবেন দায়িত্ব-এর কোন ফয়সালা
হয়নি এখনও। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মেয়র প্যানেলের প্রথম
সদস্যকে দায়িত্ব দেয়ার কথা থাকলেও করপোরেশনের কিছু কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে
মেয়রের চেয়ার আঁকড়ে ধরে আছেন প্যানেলের দ্বিতীয় সদস্য। করপোরেশনে সরকারের
প্রতিনিধি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও বুঝে উঠতে পারছেন না কি তার করণীয়।
সিটি করপোরেশন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। রয়েছে নিজস্ব জনবল, নিজস্ব আয়,
নিজস্ব ব্যয়। আর সবকিছু দেখভালের জন্য মাথায় ছাতা হয়ে থাকেন জনগণের ভোটে
নির্বাচিত মেয়র। সিলেটের সে মেয়র কারাগারে। দেখভালের ক্ষমতা হারিয়েছেন
তিনি। তাই যেনো ছন্দহারা সিলেট নগরীও। তার অবর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব
পালনকারীর একচ্ছত্র ক্ষমতা না থাকায় সে ছন্দ ফিরিয়ে আনাও যাবে না। তারপরও
যেটুকু ছন্দ থাকার কথা তাতে নগরবাসীর খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা ছিল না।
কিন্তু গোল বেঁধেছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র প্রশ্নে কাউন্সিলরদের দ্বিধা-বিভক্তি।
মেয়রের চেয়ার দাবি করছেন দুই কাউন্সিলর। কাউন্সিলররা ভাগাভাগি হয়ে দুজনকেই
সমর্থন করছেন। দুজনেই মেয়র প্যানেলের সদস্য। দুজনের হাতেই রয়েছে দুটি
ক্ষমতাপ্রাপ্তির চিঠি। সে চিঠির জোরেই সুর তুলছেন দুজনেই। মীমাংসা হচ্ছে না
কিছুতেই। কোন চিঠিটার ভিত্তি মজবুত তা বুঝতে পারছেন না কাউন্সিলররা। আর
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চিঠির ‘ওজন’ পরিমাপ করতে পারলেও বলতে পারছেন না
কিছুই। কারণ মেয়রের চেয়ারের জন্য লড়ছেন যারা সে দুই ‘যোদ্ধা’ই জনতার
প্রতিনিধি। অপেক্ষায় আছেন ‘সম্মানজনক’ সমাধানের। তাকিয়ে আছেন মন্ত্রণালয়ের
দিকে।
মেয়র নিয়ে এ জটিলতার কারণে থমকে গেছে সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কাজ। নিয়মিত মেয়র না থাকায় আপাতত নতুন কোন উন্নয়ন কাজ হাতে নিতে পারছে না সিটি করপোরেশন। চলমান কাজগুলো এগিয়ে নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না মেয়র প্রশ্নে সিদ্ধান্ত না আসায়। মন্ত্রণালয় যাকে দায়িত্ব নিতে বলেছে তিনি মেয়রের চেয়ারে না থাকায় ব্যাংক থেকে টাকাও উত্তোলন করা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বাইরে কারো স্বাক্ষর গ্রহণ করছে না ব্যাংক। অর্থাভাবে তাই আটকে যাচ্ছে কাজের বিল। গতি হারাচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠবে মাস পেরোলে। যখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হবে না। এর বাইরে নিয়মিত কাজও শ্লথ হয়েছে কাউন্সিলরদের দোলাচলের কারণে। তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কার দিকে থাকবেন, কার রয়েছে আইনি ভিত্তি। রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর হাতে থাকা মন্ত্রণালয়ের চিঠির গুরুত্ব বেশি না সালেহ আহমদের কাছে থাকা বরখাস্ত হওয়া মেয়রের দেয়া চিঠির ভিত্তি বেশি মজবুত। মেয়রের চেয়ারে থাকা অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদও মানছেন এখন আর নির্বাচিত মেয়রের সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গত ১১ই জানুয়ারি সিদ্ধান্ত হয়েছিলো আপাতত আমি দায়িত্ব পালন করবো। কথা ছিল কারাগারে থাকা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন এব্যাপারে। তবে তিনিই যখন বরখাস্তের চিঠি হাতে পেয়ে গেছেন, বোধহয় তার আর কিছু করার নেই। এখন মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই বাস্তবায়িত হবে। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নির্দেশনা চাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর। মেয়র আরিফকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিতে তাকে অনুরোধ জানানো হয়েছিলো। কিন্তু কিছু কাউন্সিলরের বিরোধিতায় তিনি দায়িত্ব নিতে পারেননি। কয়েস লোদী বললেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েই আমি গত ১১ই জানুয়ারি দায়িত্ব নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু নগর ভবনে পৌঁছে দেখি মেয়রের চেয়ারে বসে আছেন অন্য একজন। কিছু কাউন্সিলরও তাকে সমর্থন দিচ্ছিলেন। তাই কোন জোর খাটাইনি আমি। আর এটা জোর খাটানোর বিষয়ও নয়। গায়ের জোরে এ চেয়ারে বসা যাবে না। মন্ত্রণালয় আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলো, মন্ত্রণালয়ই নির্দেশনা দেবে কি আমার করণীয়। আমি অপেক্ষায় আছি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব মানবজমিনকে বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রসঙ্গে এখন কেবল মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত দিতে পারে। বরখাস্ত হওয়ার পর ক্ষমতা প্রয়োগের সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় নির্বাচিত মেয়রের সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার নেই। বরখাস্ত হওয়ার পর তিন দিন পর্যন্ত তিনি এব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা জানতে চিঠি দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
কথা হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে। যিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে মেয়রের চেয়ারে ছিলেন। তিনি বললেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়া দুঃখজনক। মেয়র-কাউন্সিলরদের মধ্যে যদি বোঝাপড়া না থাকে তবে করপোরেশনের কাজে গতি আসবে না। সাবেক এ মেয়র স্মরণ করিয়ে দেন মেয়র ও ভারপ্রাপ্ত মেয়রের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক রয়েছে তা কাউন্সিলরদের বোধগম্য হচ্ছে কিনা তা বুঝে উঠতে পারছি না। মেয়রের যে অবারিত ক্ষমতা তা কিন্তু ভারপ্রাপ্ত মেয়রের নেই। যিনি মেয়রের চেয়ারে বসবেন তারও এ কথাটি স্মরণ রাখা উচিত।
প্রসঙ্গত, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে নির্বাচিত মেয়র কারান্তরীণ আরিফুল হক চৌধুরীকে বরখাস্ত করে গত বুধবার প্যানেল মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য চিঠি প্রদান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু আত্মসমর্পণের আগে মেয়র আরিফ মেয়র প্যানেলের দ্বিতীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদকে দায়িত্ব দিয়ে একটি চিঠি দেন। এ চিঠির সূত্রেই সালেহ আহমদ এখন মেয়রের চেয়ারে।
মেয়র নিয়ে এ জটিলতার কারণে থমকে গেছে সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কাজ। নিয়মিত মেয়র না থাকায় আপাতত নতুন কোন উন্নয়ন কাজ হাতে নিতে পারছে না সিটি করপোরেশন। চলমান কাজগুলো এগিয়ে নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না মেয়র প্রশ্নে সিদ্ধান্ত না আসায়। মন্ত্রণালয় যাকে দায়িত্ব নিতে বলেছে তিনি মেয়রের চেয়ারে না থাকায় ব্যাংক থেকে টাকাও উত্তোলন করা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বাইরে কারো স্বাক্ষর গ্রহণ করছে না ব্যাংক। অর্থাভাবে তাই আটকে যাচ্ছে কাজের বিল। গতি হারাচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠবে মাস পেরোলে। যখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হবে না। এর বাইরে নিয়মিত কাজও শ্লথ হয়েছে কাউন্সিলরদের দোলাচলের কারণে। তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কার দিকে থাকবেন, কার রয়েছে আইনি ভিত্তি। রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর হাতে থাকা মন্ত্রণালয়ের চিঠির গুরুত্ব বেশি না সালেহ আহমদের কাছে থাকা বরখাস্ত হওয়া মেয়রের দেয়া চিঠির ভিত্তি বেশি মজবুত। মেয়রের চেয়ারে থাকা অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদও মানছেন এখন আর নির্বাচিত মেয়রের সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গত ১১ই জানুয়ারি সিদ্ধান্ত হয়েছিলো আপাতত আমি দায়িত্ব পালন করবো। কথা ছিল কারাগারে থাকা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন এব্যাপারে। তবে তিনিই যখন বরখাস্তের চিঠি হাতে পেয়ে গেছেন, বোধহয় তার আর কিছু করার নেই। এখন মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই বাস্তবায়িত হবে। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নির্দেশনা চাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর। মেয়র আরিফকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিতে তাকে অনুরোধ জানানো হয়েছিলো। কিন্তু কিছু কাউন্সিলরের বিরোধিতায় তিনি দায়িত্ব নিতে পারেননি। কয়েস লোদী বললেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েই আমি গত ১১ই জানুয়ারি দায়িত্ব নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু নগর ভবনে পৌঁছে দেখি মেয়রের চেয়ারে বসে আছেন অন্য একজন। কিছু কাউন্সিলরও তাকে সমর্থন দিচ্ছিলেন। তাই কোন জোর খাটাইনি আমি। আর এটা জোর খাটানোর বিষয়ও নয়। গায়ের জোরে এ চেয়ারে বসা যাবে না। মন্ত্রণালয় আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলো, মন্ত্রণালয়ই নির্দেশনা দেবে কি আমার করণীয়। আমি অপেক্ষায় আছি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব মানবজমিনকে বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রসঙ্গে এখন কেবল মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত দিতে পারে। বরখাস্ত হওয়ার পর ক্ষমতা প্রয়োগের সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় নির্বাচিত মেয়রের সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার নেই। বরখাস্ত হওয়ার পর তিন দিন পর্যন্ত তিনি এব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা জানতে চিঠি দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
কথা হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে। যিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে মেয়রের চেয়ারে ছিলেন। তিনি বললেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়া দুঃখজনক। মেয়র-কাউন্সিলরদের মধ্যে যদি বোঝাপড়া না থাকে তবে করপোরেশনের কাজে গতি আসবে না। সাবেক এ মেয়র স্মরণ করিয়ে দেন মেয়র ও ভারপ্রাপ্ত মেয়রের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক রয়েছে তা কাউন্সিলরদের বোধগম্য হচ্ছে কিনা তা বুঝে উঠতে পারছি না। মেয়রের যে অবারিত ক্ষমতা তা কিন্তু ভারপ্রাপ্ত মেয়রের নেই। যিনি মেয়রের চেয়ারে বসবেন তারও এ কথাটি স্মরণ রাখা উচিত।
প্রসঙ্গত, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে নির্বাচিত মেয়র কারান্তরীণ আরিফুল হক চৌধুরীকে বরখাস্ত করে গত বুধবার প্যানেল মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য চিঠি প্রদান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু আত্মসমর্পণের আগে মেয়র আরিফ মেয়র প্যানেলের দ্বিতীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদকে দায়িত্ব দিয়ে একটি চিঠি দেন। এ চিঠির সূত্রেই সালেহ আহমদ এখন মেয়রের চেয়ারে।
No comments