নারী কর্মকর্তার প্রবঞ্চনার ফাঁদে বাংলাদেশী অভিবাসী
ভারতীয়
বংশোদ্ভূত এক বৃটিশ নারী কর্মকর্তার খপ্পরে পড়ে অর্থের জলাঞ্জলি দিয়েছেন
বাংলাদেশ সহ একাধিক দেশের অভিবাসী। অঞ্জলি পাটেল (৩১) নামের ওই নারী জুয়ার
ঋণ পরিশোধ করার জন্য অসহায় অভিবাসীদের প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পথ
বেছে নেন। এতে তাকে সহায়তা করেছে তার বয়ফ্রেন্ড আবদুল ফারুক (২৮)। জুয়ার ঋণ
শোধ করতে অসহায় অভিবাসীদের প্রবঞ্চনা করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন
উভয়েই। সম্প্রতি তারা দক্ষিণ লন্ডনে ক্রয়ডন শহরের একটি আদালতে এ
স্বীকারোক্তি দেন। এ খবর দিয়েছে লন্ডন ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড। অঞ্জলি পাটেলের
প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাড়াও কলম্বিয়া ও পাকিস্তানের
অভিবাসীরা। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দেশে ফেরত পাঠানো ঠেকাতে অঞ্জলি
তাদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। বয়ফ্রেন্ড ফারুকের কাছে পাঠিয়ে অর্থ
জমা করিয়েছেন। আইন বিষয়ের ছাত্র ফারুকের কাছে অবৈধভাবে অতি গোপনীয় সরকারি
তথ্য সরবরাহ করে অভিবাসীদের মিথ্যা প্রমাণ করেছেন যে তার বয়ফ্রেন্ড
সত্যিকারের যোগ্য উকিল। আইনজীবী হওয়া তো দূরের কথা, আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ
হয় নি ফারুকের। অঞ্জলি কেস রেজুলেশন ডিরেক্টরেটের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা
হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ক্রয়ডন ক্রাউন আদালতের শুনানিতে বলা হয়, তদন্তকারী
কর্মকর্তারা অঞ্জলির ফোনে একটি ছবি খুঁজে পেয়েছেন যা থেকে প্রমাণ মেলে
অবৈধভাবে অভিবাসন তথ্য ফারুককে দিয়েছেন তিনি। সেই সব তথ্যের সাহায্যে
অভিবাসীদের সামনে নিজেকে পুরোদস্তুর আইনজীবী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন ফারুক।
প্রসিকিউটর ক্যারেন রবিনসন বলেন, অঞ্জলি এবং ফারুক এ জালিয়াতি করেছে ২০১০ ও
২০১১ সালে যখন তাকে প্যারোল বোর্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরবর্তীতে
সেখানেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তকারীরা আরও প্রমাণ পান, অঞ্জলির কাঁধে
ছিল বড় অঙ্কের জুয়ার ঋণ। বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি অর্থ
ধার নিয়েছিলেন। ফারুক সে সময় ব্রুনেল ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা
করছিলেন। তার কোন উপার্জন ছিল না। তা সত্ত্বেও হাজার হাজার পাউন্ড তার
পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে বিভিন্ন সময়। এছাড়া, জুয়া খেলে সে
হেরেছে ১২ হাজার পাউন্ড। মিস রবিনসন বলেন, ল’ ডিগ্রি না থাকলেও সে নিজেকে
আইনজীবী হিসেবে উপস্থাপন করেছে বা অভিবাসন সংক্রান্ত উপদেশ দিয়েছে। তিনি
আরও বলেন, অসহায় অভিবাসীদের বৃটেনে থাকতে সহায়তা করবেন এ আশ্বাস দেখিয়ে
তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এদিকে অঞ্জলি তাকে সহায়তা
করেছে অন্যায়ভাবে অভিবাসী সংক্রান্ত অতি গোপনীয় সরকারি তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ
করে। ফারুককে পরামর্শ দিয়েছে নিয়মিত। বাংলাদেশী মামুনুর রহমান ফারুককে
১২৯৫০ পাউন্ড নগদ দিয়েছে। পাঁচ বছরের ওয়ার্ক ভিসা পাইয়ে দেয়ার মিথ্যা
আশ্বাস দেখিয়ে এ পরিমাণ অর্থ নেয় সে। এদিকে মামুনুর স্বপ্ন দেখতে থাকে
ওয়ার্ক ভিসা হয়ে গেলে স্ত্রী সন্তানের স্থায়ী আবাসের আবেদন করতে পারবে
বৃটিশ সরকারের কাছে। তাদের মধ্যে বৈঠকটি হয় ক্রয়ডন হোটেলে। আর ফারুক বরাবরই
নগদ অর্থ প্রদানে জোর দিতো। সে মোতাবেক অর্থও দিয়েছে মামুনুর। কিন্তু
ভিসার স্বপ্ন আর কখনও বাস্তবায়ন হয় নি তার। একই পরিণতি হয় কলম্বিয়া থেকে
আসা আশ্রয়প্রার্থী মারিয়া গার্সিয়া জুনিগা। সে ফারুককে দিয়েছে নগদ ২ হাজার
পাউন্ড। সে মারিয়াকে বলেছিল, সেই তার আইনজীবী আর তার অভিবাসন সংক্রান্ত
সমস্যার জন্য তাকে অন্যত্র যেতে হবে না। পরবর্তীতে যখন ভিসার মুখ দেখেননি
তখন ফারুকের কথা পুলিশকে জানায় মারিয়া। সরকারি কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন
দু’ দফা দুর্নীতির কথা স্বীকার করে অঞ্জলি। একই দুই অভিযোগ স্বীকার করেছে
ফারুক। এছাড়া ৪৮৮৫০ পাউন্ড ও ২৪৩৩০ পাউন্ড মূল্যের সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ
ছেড়ে দেয় প্রসিকিউশন। তাদের বিরুদ্ধে আদালত রায় ঘোষণা করবে ২০শে
ফেব্রুয়ারি।
No comments