যৌথ বাহিনীর অভিযানে শিবগঞ্জে আতঙ্ক- চাঁপাইনবাবগঞ্জে আজ ও কাল হরতাল
(যৌথ
বাহিনীর অভিযানের ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে এলাকা ছাড়ছে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মহদিপুর গ্রামের মানুষ। গতকাল সন্ধ্যার কিছু
আগে তোলা ছবি l প্রথম আলো) যৌথ
বাহিনীর অভিযানের ভয়ে বাক্সপ্যাটরা নিয়ে গ্রাম ছাড়ছে লোকজন। গতকাল
শনিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মহদিপুর গ্রামে গিয়ে এ
দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার যৌথ বাহিনীর
সদস্যরা মহদিপুর ছাড়াও রসুলপুর ও চণ্ডীপুর গ্রামের ৩৫টি বাড়িতে অভিযান
চালান। এ সময় বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। অভিযানের সময় হেলমেট পরা
আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী তৎপর ছিলেন। শিবগঞ্জ থানার পুলিশ জানায়,
বৃহস্পতিবার দিনভর এই অভিযান চলে। জেলা পুলিশ সুপার বশির আহমেদ ছাড়াও ৯
বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জাফর শেখ মোহাম্মদ
বজলুল হক ও র্যাব-৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর কামরুজ্জামান অভিযানে
উপস্থিত ছিলেন। অভিযানের সময় সাধারণ মানুষকে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগের
ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যৌথ
বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে অভিযান হয়েছে। এ ক্ষেত্রে
বেআইনি কাজের কোনো সুযোগ ছিল না। শুধু আসামি ধরার জন্য কয়েকটি বাড়ির
দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙচুরের ব্যাপারে এখন
পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি।’
গতকাল শনিবার সন্ধ্যার ঠিক আগে মহদিপুর থেকে ১৫-১৬ জন নারী-শিশুকে লেপ-কাঁথা ও বাক্সপ্যাটরা নিয়ে শিবগঞ্জের উজিরপুরের দিকে যেতে দেখা যায়। তাঁরা জানান, যৌথ বাহিনীর অভিযানের ভয়ে তাঁরা গ্রাম ছাড়ছেন। গতকাল বিকেলে শিবগঞ্জের মহদিপুর ও রসুলপুরের ১৬-১৭টি বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুরের আলামত দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় বাড়িতে টিভি, আসবাব, চিনামাটির থালাবাসন এবং কয়েকটি বাড়িতে ফ্রিজ ভাঙচুর ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। একটি বাড়ির খড়ির ঘর ও একটি বাড়ির রান্নাঘর এবং খড়ের গাদা পোড়ানো দেখা যায়।
নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ও মহদিপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, এ বাড়ির ধান রাখার গোলা পোড়ানোসহ তিনটি ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নজরুল ইসলামের স্ত্রী সালেয়া বেগম অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পেছনের দরজা ভেঙে র্যাব ও পুলিশ বাড়িতে ঢুকে তিনটি ঘরে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ভাঙচুর চালায় ও ধানের গোলায় (বাঁশ ও মাটি দিয়ে তৈরি ফসল রাখার বড় পাত্র) আগুন দেয়। এতে প্রায় ৩০ মণ ধান পুড়ে যায়।
রসুলপুর গ্রামের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি ইয়াসিন আলীর স্ত্রী চম্পা বেগম অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী কোনো দল করেন না। অথচ তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নষ্ট করা হয়েছে টিভি, ফ্রিজ, রাইসকুকার, শোকেস ও থালাবাসন। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি মোটরসাইকেল। তাঁর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়ে আতিফা জানায়, ২০ জনের মতো কালো পোশাকধারী লোক তাদের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করে।
এ গ্রামের বিএনপির কর্মী আবু বাক্কারের বাড়িতেও ভাঙচুরের আলামত দেখা যায়। একই গ্রামের প্রয়াত হযরতের বাড়িতেও ভাঙচুর হয়। তাঁর মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী জমিলা খাতুন বলে, ‘কেঁদে কেঁদে হাতজোড় করে র্যাবের লোকজনকে বলেছি, আমার বাবা-মা নেই, আমরা খুব গরিব, আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর করিয়েন না। কিন্তু তারা শোনেনি। আমার বড় বোনকে মারধর করা হয়।’
এ গ্রামের বিএনপির কর্মী মনিমুলের বাড়িতে একটি মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, চারটি শোকেস, দুটি ড্রেসিং টেবিল, রাইসকুকার ও থালাবাসন ভাঙচুর করা হয়। তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগম অভিযোগ করেন, ‘আমার শিশু ছেলে বাড়ির বাইরে বিজিবির সদস্যদের মোটরসাইকেল না পোড়ানোর কথা বলে গড়াগড়ি করে কাঁদছিল। কিন্তু ওরা শোনেনি। র্যাবের লোকজনকে অনুরোধ করে বলি, আমার শ্বশুর, স্বামী ও দেবর কোনো সক্রিয় রাজনীতি করেন না। তাঁরা বলেন, আমরা জেনেশুনেই এসেছি। এরপর যদি এ এলাকার সড়কে কোনো গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, তাহলে এ গ্রামের অস্তিত্বই রাখব না।’
এ গ্রামের আওয়ামী লীগ-সমর্থক মো. সোহুবুল ও তাঁর ছেলে ইসমাইলের বাড়িতেও যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ভাঙচুর চালানো হয়। সোহুবুল অভিযোগ করেন, র্যাবের লোকজন তাঁর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে।
বিএনপির শিবগঞ্জ পৌর কমিটির সদস্য রসুলপুর গ্রামের মনিমুল হকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে নষ্ট করা ছাড়াও চারটি শোকেস, দুটি টিভি, দুটি ড্রেসিং টেবিল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
গ্রামের লোকজন জানান, মহদিপুর, রসুলপুর ও চণ্ডীপুরের কয়েক শ পরিবার দামি জিনিসপত্র নিয়ে অন্য গ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আবারও অভিযানের ভয়ে গ্রামের সব মানুষই আতঙ্কের মধ্যে আছে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব অভিযোগও ঠিক নয়।
হরতাল: টানা অবরোধের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কানসাটে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রদলের একজন স্থানীয় নেতা নিহত হন। এর প্রতিবাদে আজ রোববার ও কাল সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় হরতাল ডাকা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যার ঠিক আগে মহদিপুর থেকে ১৫-১৬ জন নারী-শিশুকে লেপ-কাঁথা ও বাক্সপ্যাটরা নিয়ে শিবগঞ্জের উজিরপুরের দিকে যেতে দেখা যায়। তাঁরা জানান, যৌথ বাহিনীর অভিযানের ভয়ে তাঁরা গ্রাম ছাড়ছেন। গতকাল বিকেলে শিবগঞ্জের মহদিপুর ও রসুলপুরের ১৬-১৭টি বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুরের আলামত দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় বাড়িতে টিভি, আসবাব, চিনামাটির থালাবাসন এবং কয়েকটি বাড়িতে ফ্রিজ ভাঙচুর ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। একটি বাড়ির খড়ির ঘর ও একটি বাড়ির রান্নাঘর এবং খড়ের গাদা পোড়ানো দেখা যায়।
নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ও মহদিপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, এ বাড়ির ধান রাখার গোলা পোড়ানোসহ তিনটি ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নজরুল ইসলামের স্ত্রী সালেয়া বেগম অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পেছনের দরজা ভেঙে র্যাব ও পুলিশ বাড়িতে ঢুকে তিনটি ঘরে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ভাঙচুর চালায় ও ধানের গোলায় (বাঁশ ও মাটি দিয়ে তৈরি ফসল রাখার বড় পাত্র) আগুন দেয়। এতে প্রায় ৩০ মণ ধান পুড়ে যায়।
রসুলপুর গ্রামের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি ইয়াসিন আলীর স্ত্রী চম্পা বেগম অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী কোনো দল করেন না। অথচ তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নষ্ট করা হয়েছে টিভি, ফ্রিজ, রাইসকুকার, শোকেস ও থালাবাসন। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি মোটরসাইকেল। তাঁর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়ে আতিফা জানায়, ২০ জনের মতো কালো পোশাকধারী লোক তাদের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করে।
এ গ্রামের বিএনপির কর্মী আবু বাক্কারের বাড়িতেও ভাঙচুরের আলামত দেখা যায়। একই গ্রামের প্রয়াত হযরতের বাড়িতেও ভাঙচুর হয়। তাঁর মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী জমিলা খাতুন বলে, ‘কেঁদে কেঁদে হাতজোড় করে র্যাবের লোকজনকে বলেছি, আমার বাবা-মা নেই, আমরা খুব গরিব, আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর করিয়েন না। কিন্তু তারা শোনেনি। আমার বড় বোনকে মারধর করা হয়।’
এ গ্রামের বিএনপির কর্মী মনিমুলের বাড়িতে একটি মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, চারটি শোকেস, দুটি ড্রেসিং টেবিল, রাইসকুকার ও থালাবাসন ভাঙচুর করা হয়। তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগম অভিযোগ করেন, ‘আমার শিশু ছেলে বাড়ির বাইরে বিজিবির সদস্যদের মোটরসাইকেল না পোড়ানোর কথা বলে গড়াগড়ি করে কাঁদছিল। কিন্তু ওরা শোনেনি। র্যাবের লোকজনকে অনুরোধ করে বলি, আমার শ্বশুর, স্বামী ও দেবর কোনো সক্রিয় রাজনীতি করেন না। তাঁরা বলেন, আমরা জেনেশুনেই এসেছি। এরপর যদি এ এলাকার সড়কে কোনো গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, তাহলে এ গ্রামের অস্তিত্বই রাখব না।’
এ গ্রামের আওয়ামী লীগ-সমর্থক মো. সোহুবুল ও তাঁর ছেলে ইসমাইলের বাড়িতেও যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ভাঙচুর চালানো হয়। সোহুবুল অভিযোগ করেন, র্যাবের লোকজন তাঁর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে।
বিএনপির শিবগঞ্জ পৌর কমিটির সদস্য রসুলপুর গ্রামের মনিমুল হকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে নষ্ট করা ছাড়াও চারটি শোকেস, দুটি টিভি, দুটি ড্রেসিং টেবিল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
গ্রামের লোকজন জানান, মহদিপুর, রসুলপুর ও চণ্ডীপুরের কয়েক শ পরিবার দামি জিনিসপত্র নিয়ে অন্য গ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আবারও অভিযানের ভয়ে গ্রামের সব মানুষই আতঙ্কের মধ্যে আছে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব অভিযোগও ঠিক নয়।
হরতাল: টানা অবরোধের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কানসাটে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রদলের একজন স্থানীয় নেতা নিহত হন। এর প্রতিবাদে আজ রোববার ও কাল সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় হরতাল ডাকা হয়েছে।
No comments