সংযত হয়ে কথা বলুন ভাষা সুন্দর করুন -হাসিনাকে খালেদা
আগামী
দিনের আন্দোলনে রাজপথ খালি যাবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ
করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিয়ে তিনি বলেছেন, এবার আর ঢাকার রাজপথ খালি যাবে
না। একটা গুলি চললে জবাব দিতে জনগণ প্রস্তুত। বয়স হতে পারে কিন্তু আমাদের
সাহস আছে। গণতন্ত্রের জন্য আমরা প্রাণ দিতেও প্রস্তুত আছি। নেতাকর্মীদের
উদ্দেশে বলেন, পুলিশের গুলি, টিয়ার শেল ও লাঠিচার্জ উপেক্ষা করে ছাত্রসহ
সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। বিজয়ের মাস শেষে যে কোন সময়ে আমি আন্দোলনের ডাক
দেবো, তোমরা প্রস্তুত হও। ডাক দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে
আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে খালেদা জিয়া
বলেন, হাসিনাকে বলবো- আপনি আগে নিজের জিহ্বাকে সামলান,
ছাত্রলীগ-গুণ্ডালীগকে সামলান। নিজে সংযত হোন, সংযত হয়ে কথা বলুন। ভাষা
সুন্দর করুন। আগে নিজে ঠিক হোন, পরে অন্যকে পরামর্শ দিন। আমরা মিথ্যা বলি
না, সত্য কথা বলি। তথ্য-প্রমাণ নিয়েই কথা বলি। তিনি বলেন, আমাদের গালি দিতে
দিতে তারা এখন বিদেশীদেরও গালি দিচ্ছে। স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন
ভাষা শোভা পায় না। আমরা চাই আপনিও রাজনীতি করুন। গতকাল রাজধানীর
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ আয়োজিত
ছাত্র কনভেনশনে তিনি এ আহ্বান জানান। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান সংগ্রামে
বিজয় ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বৈরাচারবিরোধী গণতন্ত্রের সংগ্রামে নেতৃত্ব
দেয়া সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের নিয়ে এ ছাত্র কনভেনশনে আয়োজন করা হয়।
দিনব্যাপী কনভেনশনে নব্বইয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র সংসদের
নির্বাচিত সাবেক ও বর্তমানের প্রায় চার হাজার নেতা অংশ নেন। সাবেক
ছাত্রনেতারা তাদের বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের হুঁশিয়ার করে
বলেছেন, আগামী দিনের আন্দোলনে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করা
হবে। পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা দেশের মানুষকে কি
করে গুলি করেন? আপনারা তো কারও পিতা, আপনাদেরও তো সন্তান আছে। যারা দেশ
রক্ষার আন্দোলন সংগ্রাম করছে তারাও আপনাদের সন্তান। তাই বলছি, আন্দোলনে
সাধারণ মানুষের ওপর আর গুলি ছুড়বেন না। পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক করে তিনি
বলেন, সারা জীবন তো হাসিনা ক্ষমতায় থাকবে না। আপনাদেরও আগলে রাখতে পারবে
না। তবে কেবল একটি জেলা ও ছাত্রলীগ থেকে আসা ছাড়া পুলিশের বেশির ভাগ সদস্যই
ভাল। পাকিস্তানিদের উদ্দেশে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- ‘আর একটি গুলি
চললে, পাল্টা গুলি চলবে।’ আমরা পাল্টা গুলির কথা বলবো না। তবে জনগণ গুলির
মুখে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আছে। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে
খালেদা জিয়া বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দিয়ে আর গুলি চালাবেন না। গুম,
খুন, হত্যা বন্ধ করুন। ছাত্র কনভেনশনে উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি
বলেন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তোমরা শপথ নিয়েছিলে- আইনের শাসন
নিশ্চিত করতে, শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে ছড়াতে ও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আরেকবার
প্রস্তুত হও আবার যুদ্ধে নামতে। এসময় তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
তোমরা ছিলে আমার সাহস-শক্তি। তোমাদেরও বয়স হয়েছে আমারও বয়স হয়েছে। কিন্তু
মনে রেখো বয়স হলেও সাহস থাকলেই যে কোন কাজ আদায় করা যায়। সময়মতো ডাক দেবো।
শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশব্যাপী এ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র-জনতাকে আমি
বলছি, এই জালেম সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সকলে রাস্তায় নামুন।
মা-বোনদের বলবো, আর চোখের জল নয়। এবার রাস্তায় নেমে আসুন। দেশের সকল
রাজনৈতিক দলের প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা ও দেশ
বাঁচাতে যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে আন্দোলন করি।
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা শান্তি চাই, দেশের গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সংবিধানকে এমনভাবে পরিবর্তন করলো যেন নির্বাচন করলে অন্য কেউই ক্ষমতায় আসতে না পারে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না বলেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপির বাইরে থাকা প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী-কাদের সিদ্দিকী- আসম রব প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ রাজনীতিক। তারাও বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না। তারাও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেননি। তাই আমরা সরকারকে বলবো, এখনও সময় আছে। জনগণের প্রতি আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন- জনগণ আপনাদের চায়। খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে গিলে ফেলেছে। ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। বাংলাদেশের নাম-ঠিকানাও থাকবে কিনা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের অবস্থা খারাপ হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ পিছিয়ে যাবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে বিচার বিভাগ বলে কিছু নেই। বিচার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগের পকেটে ঢুকে গেছে। বিচারপতিরা চেহারা দেখে বিচার করে। আওয়ামী লীগ হলেই খালাস আর বিএনপি হলে মামলা, জেল, হয়রানি। বিচারপতিদের উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, সত্য, ন্যায় ও গণতন্ত্রের পক্ষে থাকুন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করলে হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোও পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। সবার প্রতি সমান আচরণ করুন। আওয়ামী লীগ ও হাসিনার কথা মেনে চললে হবে না। ভুলে যাবেন না- জন্মালে মরতে হবে। জনগণের প্রতি অন্যায় করলে পরকালে বহুগুণ শাস্তি ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, আজ প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টরে প্রতিনিয়ত অরাজকতা বিরাজ করছে। সচিবালয়ে অরাজকতা বিরাজমান। এভাবে একটি স্বাধীন দেশ চলতে পারে না। সেদিন আমার সঙ্গে বৈঠক করে এমন প্রচারণা চালিয়ে কিছু সিনিয়র অফিসারকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার সঙ্গে কোন সরকারি কর্মকর্তা বৈঠক করেননি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তো পিলখানার খুনিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের হোটেল থেকে খাবার এনে খাইয়েছেন। আর আমি তো এক সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, বিরোধী নেতাও ছিলাম। তাহলে আমার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা দেখা করলে সমস্যা কোথায়? আসলে আপনাদের সময় শেষ তাই গোয়েন্দারাও আপনাদের ভুল তথ্য দিচ্ছে। সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের জনসভায় তো লোক আসে না। গার্মেন্টের মেয়েদের জোর করে আনা হয়। আনসার-ভিডিপির লালপাড়-সাদা শাড়ি পরা মেয়েদের আনা হয়। কিন্তু আমাদের কর্মসূচি করতে দেন না। আগামীতে বাড়ির সামনে বালির ট্রাক দিয়েন না। দেখেন আমরা কি করতে পারি। সুন্দরবনের দুর্ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সুন্দরবনের তেলবাহী ট্যাঙ্ক দুর্ঘটনা ছিল পরিকল্পিত। রামপালের প্রকল্প চালু করার জন্যই আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ওই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। সে ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমদের আত্মীয়। তাই তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নকলের মহোৎসব শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ছেলের পরীক্ষা বাবা পর্যন্ত দিয়েছিল। এখন তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে যাতে বেশি বেশি পাস হয়। এভাবে তারা শিক্ষাকে ধ্বংস করেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতার ভাগ নেবেন আর গুম, খুনের দায় নেবেন না- তা হতে পারে না। সব কিছুর ভাগ নিতে হবে। র্যাব সম্পর্কে বলেন, র্যাবকে বিলুপ্তি করতে হবে। কারণ র্যাব এখন পেশাদার খুনিতে পরিণত হয়েছে। র্যাবের এডিজি জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তাকে ধরলে হয়তো বলবেন, উপরের নির্দেশ। কিন্তু আজ দেশের জনগণ সে নির্দেশের কথা শুনতে চায়। জনগণকে গুম-খুন করার সে নির্দেশ কে দিয়েছে? সাম্প্রতিক সময়ে সোনা পাচারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিগ ক্রয় দুর্নীতি মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি করা হয়েছিল তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধান জামালউদ্দিনকে। কেন তাকে এখন সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। তার সময়ে প্রতিদিনই সোনা চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। এর সঙ্গে জামালউদ্দিন জড়িত এবং উপরের মহলও তার ভাগ পায়। দেশের মানুষ এগুলো বোঝে। সুইস ব্যাংকে ২০১১ সালে টাকা পাচারের হার বেড়েছে। ওই সময় তো আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় ছিল। একটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, ১৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
কনভেনশনের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, সারাদেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা এই কনভেনশনে অংশ নিচ্ছেন। নব্বইয়ের চেতনায় যেভাবে স্বৈরাচার এরশাদকে বিদায় করা হয়েছে, ঠিক সেভাবে নব্যস্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে অপসারণ করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই এ কনভেনশন। এর আগে বিকাল সোয়া ৩টায় ছাত্র কনভেনশনে যোগ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। উল্লেখ্য, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৯০ সালের ১লা অক্টোবর এই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তৎকালীন ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের উদ্যোগে ছাত্র কনভেনশন হয়েছিল। ওই কনভেনশনেও প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে কনভেশনে প্রথম বক্তা ছিলেন বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলী হায়দার বাবুল। ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকনের সঞ্চালনায় দিনব্যাপী কনভেনশনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ছাত্রদলের নব্বইয়ের দশকের নেতাদের মধ্যে- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, ডেমোক্রেটিক লীগ সভাপতি সাইফুদ্দিন মনি, কাদির কামাল, শামসুজ্জামান সামু, মোতাহার হোসেন, আশরাফ উদ্দিন খান, আসিফা আশরাফি পাপিয়া, শফিকুল ইসলাম মিলন, মীর সরফত আলী সপু, হেলেন জেরিন খান, শেখ বদরুল আলম নাসিম, মোতাহার হোসেন, বিলকিস জাহান শিরিন, সাইদুল হক সাবু, ফরহাদ ইকবাল, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বক্তব্য দেন।
এবার ব্যর্থ হলে নেতাদের বাড়ি ঘেরাও হবে: সাবেক ছাত্রনেতারা
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, স্বৈরাচারী সরকার পতনে ঢাকার নেতাদের হাতিয়ার নিয়ে মাঠে নামতে হবে। চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকলে এই হাসিনা সরকারের পতন হবে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি শহীদুল হক মিলন বলেন, তৃণমূলে গিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। ঢাকা থেকে কমিটি গঠন করে চাপিয়ে দিলে আন্দোলন সফল হবে না। হেলেন জেরিন খান বলেন, ৫ই জানুয়ারির আন্দোলনে ঢাকার নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন। এবার গাফলতি করলে প্রথমে তাদের বাড়ি ঘেরাও করা হবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্দিষ্ট নেতারা ছাড়া কেউ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারে না। গুলশান অফিসে আমলা, সংস্কারপন্থিদের মর্যাদা বেশি। বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফরহাদ ইকবাল বলেন, ঢাকার নেতাদের বলতে হবে তারা রাজপথে থাকবেন কিনা। চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য তৃণমূলে আমরা প্রস্তুত। বদরুন্নেচ্ছা কলেজের সাবেক ভিপি নেওয়াজ হালিম আরলি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের কথা বললে পদ হারাতে হয়। তাই ওয়ান-ইলেভেনের কথা বলা যাবে না। কিন্তু যারা দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছে তাদেরকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। ময়মনসিংহ জেলার সাবেক ছাত্রনেতা মোতাহার হোসেন বলেন, ঢাকা মহানগরকে শক্তিশালী করতে সংগ্রাম কমিটি গঠন করতে হবে। বারবার আন্দোলনের ডাক দিলেও ঢাকায় কেন আন্দোলনের সফলতা পায় না- সে বিষয়টি ভাবতে হবে। খুলনার ছাত্রনেতা সফিকুল আলম তুহিন বলেন, খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবনে অবরুদ্ধ, আর তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসনে থাকবেন- এটা আমরা দেখতে চাই না। এর জন্য কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। যশোরের সাবেক ছাত্রনেতা সাবেরুল হক সাবু বলেন, আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করতে হবে। এখানে আপস নয়, লড়াই করতে হবে। তৃণমূল প্রস্তুত রয়েছে, তাই ঢাকা থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত করতে হবে। গোপালগঞ্জের ছাত্রনেতা বদরুল আলম নাসিম বলেন, জেলার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে অনেকেই অংশ নিতে পারে না। সাবেক ছাত্রনেতাদের জায়গা করে দিতে হবে। বরিশালের সাবেক ছাত্রনেতা বদরুল আলম বলেন, জেলা পর্যায়ে সাবেক ছাত্রনেতাদের কিভাবে পদ বঞ্চিত করে রাখা যায় সে ব্যবস্থা করে স্থানীয় নেতারা। আর এ জন্যই মাঠপর্যায়ের আন্দোলন সফল হয় না। এদিকে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ব্যানারে ছাত্র কনভেনশন আয়োজন করা হলেও নব্বইয়ের সর্বশেষ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলে প্রথম নির্বাচিত চাকসু ভিপি নাজিমসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের নির্বাচিত ভিপি-জিএসরা দাওয়াত পাননি। এছাড়া নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম ছাত্রনেতা নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী ও নিহত মাহবুবুল হক বাবলুকে কনভেনশনে উপেক্ষা করা হয়েছে বলেও সমালোচনা হয়।
ইট মারলে পাটকেল তো খেতেই হবে: ফখরুল
এর আগে সকালে ছাত্র কনভেনশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তারেক রহমান সম্পর্কে কি ভাষায় কথা বলেছেন... কেন তাদের জ্বালা লেগেছে। তারেক রহমান ইতিহাস থেকে সত্য কথা তুলে ধরেছেন বলে আপনাদের জ্বালা ধরেছে। আমরা বলতে চাই, ইট মারলে পাটকেল তো খেতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আপনারা যখন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমান ও তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ কথা বলেন, তখন ইতিহাসের সত্য কথা প্রকাশিত হবেই। আপনারা কাকে রাজাকার বলছেন? মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকারকে রাজাকার বলছেন। কেবল তাই নয়, প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সাহেবকে নিয়ে নানা রকম কটাক্ষ করছেন। এভাবে স্বাধীনতার নায়কদের আপনারা অপমান করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই, এভাবে কথা বলা বন্ধ করুন। আপনাদের কথা বলার ক্ষেত্রে সংযত হওয়া উচিত। আমরা বলবো, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সঠিকভাবে কথা বলবেন। সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, নব্বইয়ে ছাত্রদের বুকের তাজা রক্তে গণতন্ত্র ফিরে এসেছিল। সেই গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। এই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অনেক ছাত্র গুম-খুনের শিকার হয়েছে। দেশটাকে সরকার কারাগারে পরিণত করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি। বক্তব্যের শুরুতে মির্জা আলমগীর পাকিস্তানের পেশোয়ারে তালেবানদের গুলিতে একটি স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা শান্তি চাই, দেশের গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সংবিধানকে এমনভাবে পরিবর্তন করলো যেন নির্বাচন করলে অন্য কেউই ক্ষমতায় আসতে না পারে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না বলেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপির বাইরে থাকা প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী-কাদের সিদ্দিকী- আসম রব প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ রাজনীতিক। তারাও বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না। তারাও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেননি। তাই আমরা সরকারকে বলবো, এখনও সময় আছে। জনগণের প্রতি আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন- জনগণ আপনাদের চায়। খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে গিলে ফেলেছে। ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। বাংলাদেশের নাম-ঠিকানাও থাকবে কিনা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের অবস্থা খারাপ হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ পিছিয়ে যাবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে বিচার বিভাগ বলে কিছু নেই। বিচার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগের পকেটে ঢুকে গেছে। বিচারপতিরা চেহারা দেখে বিচার করে। আওয়ামী লীগ হলেই খালাস আর বিএনপি হলে মামলা, জেল, হয়রানি। বিচারপতিদের উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, সত্য, ন্যায় ও গণতন্ত্রের পক্ষে থাকুন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করলে হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোও পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। সবার প্রতি সমান আচরণ করুন। আওয়ামী লীগ ও হাসিনার কথা মেনে চললে হবে না। ভুলে যাবেন না- জন্মালে মরতে হবে। জনগণের প্রতি অন্যায় করলে পরকালে বহুগুণ শাস্তি ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, আজ প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টরে প্রতিনিয়ত অরাজকতা বিরাজ করছে। সচিবালয়ে অরাজকতা বিরাজমান। এভাবে একটি স্বাধীন দেশ চলতে পারে না। সেদিন আমার সঙ্গে বৈঠক করে এমন প্রচারণা চালিয়ে কিছু সিনিয়র অফিসারকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার সঙ্গে কোন সরকারি কর্মকর্তা বৈঠক করেননি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তো পিলখানার খুনিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের হোটেল থেকে খাবার এনে খাইয়েছেন। আর আমি তো এক সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, বিরোধী নেতাও ছিলাম। তাহলে আমার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা দেখা করলে সমস্যা কোথায়? আসলে আপনাদের সময় শেষ তাই গোয়েন্দারাও আপনাদের ভুল তথ্য দিচ্ছে। সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের জনসভায় তো লোক আসে না। গার্মেন্টের মেয়েদের জোর করে আনা হয়। আনসার-ভিডিপির লালপাড়-সাদা শাড়ি পরা মেয়েদের আনা হয়। কিন্তু আমাদের কর্মসূচি করতে দেন না। আগামীতে বাড়ির সামনে বালির ট্রাক দিয়েন না। দেখেন আমরা কি করতে পারি। সুন্দরবনের দুর্ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সুন্দরবনের তেলবাহী ট্যাঙ্ক দুর্ঘটনা ছিল পরিকল্পিত। রামপালের প্রকল্প চালু করার জন্যই আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ওই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। সে ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমদের আত্মীয়। তাই তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নকলের মহোৎসব শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ছেলের পরীক্ষা বাবা পর্যন্ত দিয়েছিল। এখন তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে যাতে বেশি বেশি পাস হয়। এভাবে তারা শিক্ষাকে ধ্বংস করেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতার ভাগ নেবেন আর গুম, খুনের দায় নেবেন না- তা হতে পারে না। সব কিছুর ভাগ নিতে হবে। র্যাব সম্পর্কে বলেন, র্যাবকে বিলুপ্তি করতে হবে। কারণ র্যাব এখন পেশাদার খুনিতে পরিণত হয়েছে। র্যাবের এডিজি জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তাকে ধরলে হয়তো বলবেন, উপরের নির্দেশ। কিন্তু আজ দেশের জনগণ সে নির্দেশের কথা শুনতে চায়। জনগণকে গুম-খুন করার সে নির্দেশ কে দিয়েছে? সাম্প্রতিক সময়ে সোনা পাচারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিগ ক্রয় দুর্নীতি মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি করা হয়েছিল তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধান জামালউদ্দিনকে। কেন তাকে এখন সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। তার সময়ে প্রতিদিনই সোনা চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। এর সঙ্গে জামালউদ্দিন জড়িত এবং উপরের মহলও তার ভাগ পায়। দেশের মানুষ এগুলো বোঝে। সুইস ব্যাংকে ২০১১ সালে টাকা পাচারের হার বেড়েছে। ওই সময় তো আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় ছিল। একটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, ১৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
কনভেনশনের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, সারাদেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা এই কনভেনশনে অংশ নিচ্ছেন। নব্বইয়ের চেতনায় যেভাবে স্বৈরাচার এরশাদকে বিদায় করা হয়েছে, ঠিক সেভাবে নব্যস্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে অপসারণ করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই এ কনভেনশন। এর আগে বিকাল সোয়া ৩টায় ছাত্র কনভেনশনে যোগ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। উল্লেখ্য, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৯০ সালের ১লা অক্টোবর এই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তৎকালীন ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের উদ্যোগে ছাত্র কনভেনশন হয়েছিল। ওই কনভেনশনেও প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে কনভেশনে প্রথম বক্তা ছিলেন বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলী হায়দার বাবুল। ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকনের সঞ্চালনায় দিনব্যাপী কনভেনশনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ছাত্রদলের নব্বইয়ের দশকের নেতাদের মধ্যে- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, ডেমোক্রেটিক লীগ সভাপতি সাইফুদ্দিন মনি, কাদির কামাল, শামসুজ্জামান সামু, মোতাহার হোসেন, আশরাফ উদ্দিন খান, আসিফা আশরাফি পাপিয়া, শফিকুল ইসলাম মিলন, মীর সরফত আলী সপু, হেলেন জেরিন খান, শেখ বদরুল আলম নাসিম, মোতাহার হোসেন, বিলকিস জাহান শিরিন, সাইদুল হক সাবু, ফরহাদ ইকবাল, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বক্তব্য দেন।
এবার ব্যর্থ হলে নেতাদের বাড়ি ঘেরাও হবে: সাবেক ছাত্রনেতারা
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, স্বৈরাচারী সরকার পতনে ঢাকার নেতাদের হাতিয়ার নিয়ে মাঠে নামতে হবে। চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকলে এই হাসিনা সরকারের পতন হবে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি শহীদুল হক মিলন বলেন, তৃণমূলে গিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। ঢাকা থেকে কমিটি গঠন করে চাপিয়ে দিলে আন্দোলন সফল হবে না। হেলেন জেরিন খান বলেন, ৫ই জানুয়ারির আন্দোলনে ঢাকার নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন। এবার গাফলতি করলে প্রথমে তাদের বাড়ি ঘেরাও করা হবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্দিষ্ট নেতারা ছাড়া কেউ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারে না। গুলশান অফিসে আমলা, সংস্কারপন্থিদের মর্যাদা বেশি। বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফরহাদ ইকবাল বলেন, ঢাকার নেতাদের বলতে হবে তারা রাজপথে থাকবেন কিনা। চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য তৃণমূলে আমরা প্রস্তুত। বদরুন্নেচ্ছা কলেজের সাবেক ভিপি নেওয়াজ হালিম আরলি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের কথা বললে পদ হারাতে হয়। তাই ওয়ান-ইলেভেনের কথা বলা যাবে না। কিন্তু যারা দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছে তাদেরকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। ময়মনসিংহ জেলার সাবেক ছাত্রনেতা মোতাহার হোসেন বলেন, ঢাকা মহানগরকে শক্তিশালী করতে সংগ্রাম কমিটি গঠন করতে হবে। বারবার আন্দোলনের ডাক দিলেও ঢাকায় কেন আন্দোলনের সফলতা পায় না- সে বিষয়টি ভাবতে হবে। খুলনার ছাত্রনেতা সফিকুল আলম তুহিন বলেন, খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবনে অবরুদ্ধ, আর তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসনে থাকবেন- এটা আমরা দেখতে চাই না। এর জন্য কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। যশোরের সাবেক ছাত্রনেতা সাবেরুল হক সাবু বলেন, আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করতে হবে। এখানে আপস নয়, লড়াই করতে হবে। তৃণমূল প্রস্তুত রয়েছে, তাই ঢাকা থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত করতে হবে। গোপালগঞ্জের ছাত্রনেতা বদরুল আলম নাসিম বলেন, জেলার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে অনেকেই অংশ নিতে পারে না। সাবেক ছাত্রনেতাদের জায়গা করে দিতে হবে। বরিশালের সাবেক ছাত্রনেতা বদরুল আলম বলেন, জেলা পর্যায়ে সাবেক ছাত্রনেতাদের কিভাবে পদ বঞ্চিত করে রাখা যায় সে ব্যবস্থা করে স্থানীয় নেতারা। আর এ জন্যই মাঠপর্যায়ের আন্দোলন সফল হয় না। এদিকে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ব্যানারে ছাত্র কনভেনশন আয়োজন করা হলেও নব্বইয়ের সর্বশেষ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলে প্রথম নির্বাচিত চাকসু ভিপি নাজিমসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের নির্বাচিত ভিপি-জিএসরা দাওয়াত পাননি। এছাড়া নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম ছাত্রনেতা নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী ও নিহত মাহবুবুল হক বাবলুকে কনভেনশনে উপেক্ষা করা হয়েছে বলেও সমালোচনা হয়।
ইট মারলে পাটকেল তো খেতেই হবে: ফখরুল
এর আগে সকালে ছাত্র কনভেনশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তারেক রহমান সম্পর্কে কি ভাষায় কথা বলেছেন... কেন তাদের জ্বালা লেগেছে। তারেক রহমান ইতিহাস থেকে সত্য কথা তুলে ধরেছেন বলে আপনাদের জ্বালা ধরেছে। আমরা বলতে চাই, ইট মারলে পাটকেল তো খেতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আপনারা যখন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমান ও তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ কথা বলেন, তখন ইতিহাসের সত্য কথা প্রকাশিত হবেই। আপনারা কাকে রাজাকার বলছেন? মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকারকে রাজাকার বলছেন। কেবল তাই নয়, প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সাহেবকে নিয়ে নানা রকম কটাক্ষ করছেন। এভাবে স্বাধীনতার নায়কদের আপনারা অপমান করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই, এভাবে কথা বলা বন্ধ করুন। আপনাদের কথা বলার ক্ষেত্রে সংযত হওয়া উচিত। আমরা বলবো, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সঠিকভাবে কথা বলবেন। সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, নব্বইয়ে ছাত্রদের বুকের তাজা রক্তে গণতন্ত্র ফিরে এসেছিল। সেই গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। এই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অনেক ছাত্র গুম-খুনের শিকার হয়েছে। দেশটাকে সরকার কারাগারে পরিণত করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি। বক্তব্যের শুরুতে মির্জা আলমগীর পাকিস্তানের পেশোয়ারে তালেবানদের গুলিতে একটি স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানান।
No comments