কুকুর নিয়ে অফিসে চড়াও মন্ত্রীর স্বামী
টেবিলে
উঠে সরকারি ফাইলপত্র কামড়ে-আঁচড়ে ছিঁড়ছে তাগড়াই চেহারার ল্যাব্রাডর।
মাঝেমধ্যে দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে যাচ্ছে চেয়ারে কুঁকড়ে বসে থাকা অফিসারের দিকে।
জাঁদরেল পোষ্যর গলার চেন হাতে ধরে তখন তাঁকে হুমকি দিয়ে চলেছেন বিহারের এক
মন্ত্রীর স্বামী! এমনই কাণ্ড না কি ঘটেছে পূর্ণিয়ার ভবানীপুরে। পুলিশের
কাছে এ নিয়ে নালিশ ঠুকেছেন ভূমি-বিষয়ক দফতরের ব্লক সার্কেল অফিসার অনিল
কুমার। থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন রাজ্যের তফসিল জাতি-উপজাতি কল্যাণ
মন্ত্রী বিমা ভারতীর স্বামী অবধেশ কুমার ও তাঁর ল্যাব্রাডর কৃষ্ণার
বিরুদ্ধে! মন্ত্রীর স্বামীর পাশাপাশি ওই পোষ্যের বিরুদ্ধেও সরকারি কর্মীর
কাজে বাধা, নিগ্রহ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা নিয়ে গল্পে মেতেছে গোটা
রাজ্য। কী ভাবে ফ্যাসাদে পড়েছিলেন অনিলবাবু? ওই সরকারি অফিসারের কথায়,
“২০-২৫ জন লোক নিয়ে আচমকা আমার অফিসে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছিলেন অবধেশ।
সঙ্গে একটা কুকুরও ছিল।” তাঁর অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে
‘কাট-মানি’ চেয়েছিলেন অবধেশ। মাসে মাসে তোলাও চান। মানতে রাজি হননি
অনিলবাবু। এর পরই তাঁর অফিসের তিন কর্মীকে মারধর করে অবধেশের শাগরেদরা।
তাঁর দিকে ল্যাব্রাডর লেলিয়ে দেওয়া হয়। এক লাফে সেটি টেবিলে উঠে পড়ে। কামড়ে
ছিঁড়তে থাকে সরকারি কাগজপত্র। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ‘ঘেউঘেউ’ করে
অনিলবাবুদের দিকে তেড়েও যায়। হামলার অভিযোগ মানতে রাজি হননি অবধেশবাবু।
তাঁর দাবি, ওই অফিসারের বিরুদ্ধে জমি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ শুনেছিলেন। তাই
তাঁর সঙ্গে কথা বলতে যান। অবধেশবাবুর বক্তব্য, “ নাগরিক হিসেবেই সরকারি
দফতরে গিয়েছিলাম। কিন্তু অফিসারের সঙ্গে দেখাই হয়নি।” একই কথা বলছেন
মন্ত্রীও। তাঁর কথায়, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় আমার স্বামীকে
ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।” অনিলবাবুর পাল্টা জবাব, “সব মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে।
আমার অফিসের কর্মীরাও ঘটনার সময় হাজির ছিলেন। ওঁদের খুব মারধর করা হয়।”
এলাকার লোকজন অবশ্য জানিয়েছেন, মন্ত্রীর স্বামী হিসেবে অবধেশবাবুর যথেষ্ট
প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে। তাঁর নামে এর আগেও পুলিশের খাতায় টুকটাক ঝামেলার
অভিযোগ লেখা হয়। কিন্তু উপরওয়ালাদের ভয়ে পুলিশ তাঁকে সহজে ঘাঁটাতে চায় না। এ
বারের ঘটনায় পুলিশকর্তারা বিব্রত। এক দিকে মন্ত্রীর স্বামী, অন্য দিকে
সরকারি অফিসার তাই তাঁরা ‘শ্যাম রাখেন না কুল’! স্থানীয় থানার ওসি এস এন
পাণ্ডে বলছেন, “অভিযোগ পেয়েছি। কী ঘটেছিল তা দেখা হচ্ছে। এখন এর বেশি কিছু
বলব না।” এ নিয়ে মুখে কুলুপ দিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপারও। কিন্তু অনিলবাবু
জানিয়েছেন, এ সবের শেষ না দেখে তিনি ছাড়বেন না। মনিব-সহ ল্যাব্রাডর শেষে
থানার লক-আপে ঢুকবে কি না, তা দেখতে উৎসুক পূর্ণিয়ার বাসিন্দারা!
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
No comments