সুন্দরবনে ট্যাংকারডুবির দায় নৌ মন্ত্রণালয়ের
সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবি এবং এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির জন্য নৌ মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। তারা বলেছে, মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মন্ত্রণালয় এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে সংসদীয় কমিটি আশংকা প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে অবিলম্বে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধেরও সুপারিশ করেছে কমিটি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে সদস্যরা এসব কথা বলেন। বৈঠকে জানানো হয়, ২০১১ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে তেলবাহী ট্যাংকারসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার সুপারিশ করে। তারা তখন সুন্দরবনের বিকল্প হিসেবে মংলা-ঘসিয়াখালী-মোরেলগঞ্জ চ্যানেল পুনঃখনন করে এ পথে নৌ চলাচলের নির্দেশনা দেয়।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ সুপারিশের আলোকে তখন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ২০১৪ সালের মধ্যে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করা হবে। মংলা-ঘসিয়াখালী-মোরেলগঞ্জ চ্যানেল পুনঃখনন করে এ পথে নৌ চলাচলের বিকল্প পথ তৈরি করা হবে। কিন্তু গত তিন বছরেও এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়ায় গতকাল কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
কমিটির সদস্যদের মতে, কিছুদিনের মধ্যে ২০১৪ সাল শেষ হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কথা দিয়ে কথা রাখেনি। কেন তারা কথা রাখেনি তা জানতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। সম্ভব হলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গেও তারা বৈঠকে বসবেন।
বৈঠকে কমিটির একজন সদস্য বলেন, নৌমন্ত্রী বিভিন্ন সময় এমনভাবে কথা বলেন যা শুনে মনে হয় না আসলে তিনি কি- মন্ত্রী না একজন শ্রমিক নেতা। তার কথায় ও কাজে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। এত বড় একটি দুর্ঘটনার পরও মন্ত্রী ছিলেন নির্বিকার। তিনি তখন তার নির্বাচনী এলাকায় হোসাফ পাওয়ারের টাকায় কেনা কম্পিউটার বিতরণ করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
কমিটির অন্য সদস্যরাও নৌমন্ত্রীর ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে দুর্ঘটনাকবলিত জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকারটি চলাচলের জন্য কোনো প্রকার ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে কিনা তা সংসদীয় কমিটিকে জানাতে বলা হয়। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন অয়েল ট্যাংকার চলাচল বন্ধের সুপারিশ করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এত বড় দুর্ঘটনার পরও যদি নৌমন্ত্রণালয়ের টনক না নড়ে তাহলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।
কমিটি তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির কারণে সুন্দরবন এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি কি কি প্রভাব পড়বে বা পড়েছে সে বিষয়ে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করার জন্য পরিবেশ ও বন বিভাগকে নির্দেশনা দেয়। এ সময় কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, দুর্ঘটনার পর নৌমন্ত্রণালয় গাফিলতি না দেখালে তেল এত বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ত না। তারা তেল অপসারণ কার্যক্রমে নৌমন্ত্রণালয়ের গাফিলতি রয়েছে বলেও দাবি করেন।
বৈঠকে জানানো হয়, সুন্দরবনের মধ্যে এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে সুন্দরবনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য দীর্ঘদিনের জন্য নষ্ট হতে পারে। ডুবে যাওয়া ট্যাংকারের ৩ লাখ ৫৭ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েলের মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত অনুন্নত পদ্ধতিতে মাত্র ৬০ হাজার লিটার সংগ্রহ করা হয়েছে। সুন্দরবনের ৩০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল পর্যন্ত তেল ছড়িয়ে পড়েছে। তেল সংগ্রহের জন্য নৌমন্ত্রণালয়ের ভূমিকা মুখ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা সে ভূমিকা রাখেনি। এজন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে শ্যালা নদী ও আশপাশের নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা বর্তমানে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যা স্বাভাবিক মাত্রা ৫-এর চাইতে বেশি। এসব নদীর পানিতে গ্রিজ অয়েলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় সুন্দরবন এলাকায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় বের করার জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মো. নূরুল করিমকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, ট্যাংকারটি ডুবে যাওয়ার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের দুর্ঘটনার পর তেল অপসারণের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের বিপর্যয় নিয়ে কমিটি বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ শেষে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছে।
ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটির বৈধ কাগজপত্র ছিল না- দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণে জানতে পেরেছি কেবল ডুবে যাওয়া ট্যাংকারই নয়, এমন বহু তেলবাহী ট্যাংকারের বৈধ কাগজপত্র নেই। ত্র“টিপূর্ণ এসব নৌযান চলাচল যত দ্রুতসম্ভব বন্ধ করতে আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে বলেছি। তারা এটি না করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ট্যাংকারটি ডুবের যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি এর চারপাশে বুম বা ভাসমান বেরিকেড তৈরি করা যেত তাহলে তেল এত বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ত না। তিনি বলেন, ভাসমান তেল অপসারণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে একটি বিশেষ জাহাজ ছিল। কিন্তু সুন্দরবনের দুর্ঘটনায় এ জাহাজটিকে ঘটনাস্থলে আনা হয়নি। পরে কমিটি জানতে পেরেছে জাহাজটিকে ঘটনাস্থলে আনতে হলে সমুদ্রপথে আনতে হবে। কিন্তু এ জাহাজটিরও সমুদ্রপথে চলাচলের ছাড়পত্র নেই।
কমিটির সদস্য পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নবী নেওয়াজ, মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, টিপু সুলতান, মজিবুর রহমান চৌধুরী এবং মেরিনা রহমান বৈঠকে অংশ নেন। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নৌচলাচল দুঃখজনক-পরিবেশমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ সত্ত্বেও সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচলে নৌমন্ত্রণালয় অনুমতি দেয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা উপেক্ষা করে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচল করছে। নৌযান চলাচলের জন্য দুটি নৌরুট করার কথা ছিল। কিন্তু তা এখনও করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এটা দুঃখজনক। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। নৌদুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাশাপাশি তাদের ছবিও রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাঙিয়ে দেয়া উচিত।
পরিবেশদূষণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সন্দুরবনে তেলের দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। বিদেশিদের সহায়তা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন প্রয়োজন। এজন্য কাজ করছে ইআরডি। তারপরও সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তদন্ত রিপোর্ট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। কী ঘটেছে, ক্ষতির পরিমাণ কত, তা নির্ধারণের জন্য আমাদের গবেষণার প্রয়োজন।
তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনে খুব বেশি ক্ষতি হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের ঘটনা নগণ্য। নৌপথের নির্দেশনার বিষয়ে সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসন চলা আর ঘোড়ার গাড়ি চলা একই কথা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে সদস্যরা এসব কথা বলেন। বৈঠকে জানানো হয়, ২০১১ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে তেলবাহী ট্যাংকারসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার সুপারিশ করে। তারা তখন সুন্দরবনের বিকল্প হিসেবে মংলা-ঘসিয়াখালী-মোরেলগঞ্জ চ্যানেল পুনঃখনন করে এ পথে নৌ চলাচলের নির্দেশনা দেয়।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ সুপারিশের আলোকে তখন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ২০১৪ সালের মধ্যে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করা হবে। মংলা-ঘসিয়াখালী-মোরেলগঞ্জ চ্যানেল পুনঃখনন করে এ পথে নৌ চলাচলের বিকল্প পথ তৈরি করা হবে। কিন্তু গত তিন বছরেও এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়ায় গতকাল কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
কমিটির সদস্যদের মতে, কিছুদিনের মধ্যে ২০১৪ সাল শেষ হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কথা দিয়ে কথা রাখেনি। কেন তারা কথা রাখেনি তা জানতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। সম্ভব হলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গেও তারা বৈঠকে বসবেন।
বৈঠকে কমিটির একজন সদস্য বলেন, নৌমন্ত্রী বিভিন্ন সময় এমনভাবে কথা বলেন যা শুনে মনে হয় না আসলে তিনি কি- মন্ত্রী না একজন শ্রমিক নেতা। তার কথায় ও কাজে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। এত বড় একটি দুর্ঘটনার পরও মন্ত্রী ছিলেন নির্বিকার। তিনি তখন তার নির্বাচনী এলাকায় হোসাফ পাওয়ারের টাকায় কেনা কম্পিউটার বিতরণ করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
কমিটির অন্য সদস্যরাও নৌমন্ত্রীর ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে দুর্ঘটনাকবলিত জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকারটি চলাচলের জন্য কোনো প্রকার ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে কিনা তা সংসদীয় কমিটিকে জানাতে বলা হয়। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন অয়েল ট্যাংকার চলাচল বন্ধের সুপারিশ করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এত বড় দুর্ঘটনার পরও যদি নৌমন্ত্রণালয়ের টনক না নড়ে তাহলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।
কমিটি তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির কারণে সুন্দরবন এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি কি কি প্রভাব পড়বে বা পড়েছে সে বিষয়ে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করার জন্য পরিবেশ ও বন বিভাগকে নির্দেশনা দেয়। এ সময় কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, দুর্ঘটনার পর নৌমন্ত্রণালয় গাফিলতি না দেখালে তেল এত বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ত না। তারা তেল অপসারণ কার্যক্রমে নৌমন্ত্রণালয়ের গাফিলতি রয়েছে বলেও দাবি করেন।
বৈঠকে জানানো হয়, সুন্দরবনের মধ্যে এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে সুন্দরবনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য দীর্ঘদিনের জন্য নষ্ট হতে পারে। ডুবে যাওয়া ট্যাংকারের ৩ লাখ ৫৭ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েলের মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত অনুন্নত পদ্ধতিতে মাত্র ৬০ হাজার লিটার সংগ্রহ করা হয়েছে। সুন্দরবনের ৩০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল পর্যন্ত তেল ছড়িয়ে পড়েছে। তেল সংগ্রহের জন্য নৌমন্ত্রণালয়ের ভূমিকা মুখ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা সে ভূমিকা রাখেনি। এজন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে শ্যালা নদী ও আশপাশের নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা বর্তমানে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যা স্বাভাবিক মাত্রা ৫-এর চাইতে বেশি। এসব নদীর পানিতে গ্রিজ অয়েলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় সুন্দরবন এলাকায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় বের করার জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মো. নূরুল করিমকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, ট্যাংকারটি ডুবে যাওয়ার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের দুর্ঘটনার পর তেল অপসারণের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের বিপর্যয় নিয়ে কমিটি বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ শেষে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছে।
ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটির বৈধ কাগজপত্র ছিল না- দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণে জানতে পেরেছি কেবল ডুবে যাওয়া ট্যাংকারই নয়, এমন বহু তেলবাহী ট্যাংকারের বৈধ কাগজপত্র নেই। ত্র“টিপূর্ণ এসব নৌযান চলাচল যত দ্রুতসম্ভব বন্ধ করতে আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে বলেছি। তারা এটি না করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ট্যাংকারটি ডুবের যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি এর চারপাশে বুম বা ভাসমান বেরিকেড তৈরি করা যেত তাহলে তেল এত বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ত না। তিনি বলেন, ভাসমান তেল অপসারণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে একটি বিশেষ জাহাজ ছিল। কিন্তু সুন্দরবনের দুর্ঘটনায় এ জাহাজটিকে ঘটনাস্থলে আনা হয়নি। পরে কমিটি জানতে পেরেছে জাহাজটিকে ঘটনাস্থলে আনতে হলে সমুদ্রপথে আনতে হবে। কিন্তু এ জাহাজটিরও সমুদ্রপথে চলাচলের ছাড়পত্র নেই।
কমিটির সদস্য পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নবী নেওয়াজ, মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, টিপু সুলতান, মজিবুর রহমান চৌধুরী এবং মেরিনা রহমান বৈঠকে অংশ নেন। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নৌচলাচল দুঃখজনক-পরিবেশমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ সত্ত্বেও সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচলে নৌমন্ত্রণালয় অনুমতি দেয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা উপেক্ষা করে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচল করছে। নৌযান চলাচলের জন্য দুটি নৌরুট করার কথা ছিল। কিন্তু তা এখনও করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এটা দুঃখজনক। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। নৌদুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাশাপাশি তাদের ছবিও রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাঙিয়ে দেয়া উচিত।
পরিবেশদূষণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সন্দুরবনে তেলের দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। বিদেশিদের সহায়তা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন প্রয়োজন। এজন্য কাজ করছে ইআরডি। তারপরও সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তদন্ত রিপোর্ট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। কী ঘটেছে, ক্ষতির পরিমাণ কত, তা নির্ধারণের জন্য আমাদের গবেষণার প্রয়োজন।
তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনে খুব বেশি ক্ষতি হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের ঘটনা নগণ্য। নৌপথের নির্দেশনার বিষয়ে সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসন চলা আর ঘোড়ার গাড়ি চলা একই কথা।
No comments