জনশূন্য গোয়ালাবাজার আসামি ৭০০
শ্রমিকদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় ওসি মোস্তাফিজুর রহমান মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে সিলেটের গোয়ালাবাজারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার বিকাল থেকে গোয়ালাবাজার পার্শ্ববর্তী করনসী ও ব্রাহ্মণশাসন গ্রামের ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ওদিকে, পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের কারণে ওই দু’টি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাটই বন্ধ। এ ঘটনায় পুলিশ গোয়ালাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিকসহ শতাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ৭০০ জনকেও মামলায় আসামি করে। বুধবারের সংঘর্ষের পর বিকালে গোয়ালাবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে শুরু হয় অভিযান। রাতে গোয়ালাবাজারের দক্ষিণ অংশ, ব্রাহ্মণশাসন ও করনসী গ্রামে তল্লাশি করা হয়। বুধবার রাত থেকে আসামি গ্রেপ্তারে শুরু হওয়া পুলিশি অভিযান গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আরও জোরদার করা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার করতে এই দুই গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশি। অবৈধ অটোরিকশা আটকে গোয়ালাবাজার এলাকায় পুলিশ টহল বসানো হয়েছে। অভিযানে পুলিশ পর্যন্ত অন্তত ২৫টি অটোরিকশা আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসআই আনোয়ার হোসেন। এদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে গোয়ালাবাজারের নিজ করনসী ও ব্রা?হ্মণশাসন এলাকা এখন পুরুষশূন্য। গ্রেপ্তার এড়াতে এই দুই গ্রামের পুরুষ অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সরজমিন গিয়ে এই দুই গ্রামে কোন বাড়িতে মহিলা ছাড়া পুরুষের দেখা পাওয়া যায়নি। এ সময় গ্রামের অনেকেই অভিযোগ করেন ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নিরীহ লোককে হয়রানি করছে। গোয়ালাবাজার এলাকা এখন অটোরিকশাশূন্য। প্রতিদিন এই বাজারে ৫ শতাধিক অটোরিকশা থাকলেও বুধবার বিকাল থেকে একটিও নেই। গ্রেপ্তার এড়াতে চালকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অটোরিকশা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওসমানীনগরসহ পার্শ্ববর্তী একাধিক উপজেলার কয়েক সহস্রাধিক মানুষকে। বাজারের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ঘটনার পর থেকে আটক হওয়া ৩৭ জনের মধ্যে অনেকেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন তাদের পরিবার। সিলেটের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নঈমুল হাসান বলেন, আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে সকাল পর্যন্ত যারা আটক হয়েছেন তাদের মধ্যে ৩৭ জন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। অবৈধ কাগজপত্র ও অবৈধ লাইসেন্সধারী অটোরিকশা আটকে পুলিশি অভিযান চলছে। নিরীহ লোকদের হয়রানি করা হবে না বলে জানান তিনি। গ্রেপ্তারকৃত ৩৭ জনকে গতকাল বিকালে নির্ধারিত মামলায় আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বুধবার রাত ৯টার দিকে ওসমানীনগর থানার পার্শ্ববর্তী ইলাশপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাযা শেষে ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার লাশ ওসমানীনগর থানা প্রাঙ্গণে নিয়ে এলে সৃষ্টি হয় এক ?হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। এ সময় ওসি’র স্ত্রী, দুই মেয়ে রাইশা ও মাইশার কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে বাতাস। পুলিশ কর্মকর্তারাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তখন। জানাজা শেষে রাতেই তার লাশ নিয়ে কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা সদর থানার চক মোগলটুলীর পাথুরীপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে তৃতীয় জানাজা এবং একই এলাকায় নিজ বাড়িতে শেষ জানাজা শেষে জোহরের নামাজের পর গ্রামের কবরস্থানে তার লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।
আসামি সাংবাদিক: ওসমানীনগর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় দৈনিক মানবজমিন-এর ওসমানীনগর প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন গতকাল জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনে গোয়ালাবাজার ছিলেন। ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ওসমানীনগর থাকাকালে তার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল। এ কারণে ঘটনাকালে তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের সঙ্গে কাজ করেন। তার গ্রামের লোকজন সংঘর্ষ জড়ালে তিনি উভয় দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালান। তিনি বলেন, ওসি মৃত্যুর ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে। কিন্তু রাতে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার ইন্ধনে মামলার এজাহারে আমার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একজন সাংবাদিক কখনও সংঘর্ষে জড়াতে পারে না বলে দাবি করেন জয়নাল আবেদীন।
আসামি সাংবাদিক: ওসমানীনগর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় দৈনিক মানবজমিন-এর ওসমানীনগর প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন গতকাল জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনে গোয়ালাবাজার ছিলেন। ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ওসমানীনগর থাকাকালে তার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল। এ কারণে ঘটনাকালে তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের সঙ্গে কাজ করেন। তার গ্রামের লোকজন সংঘর্ষ জড়ালে তিনি উভয় দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালান। তিনি বলেন, ওসি মৃত্যুর ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে। কিন্তু রাতে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার ইন্ধনে মামলার এজাহারে আমার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একজন সাংবাদিক কখনও সংঘর্ষে জড়াতে পারে না বলে দাবি করেন জয়নাল আবেদীন।
No comments