দেশে কমছে না তেলের দাম
আন্তর্জাতিক
বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে কমলেও এর সুফল পাচ্ছেন না
দেশের ভোক্তারা। যদিও এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে
পাঁচ দফা বাড়ানো হয়েছিল এই তেলের দাম। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাজারে
তেলের দাম বেশি হওয়ায় পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমানো সম্ভব হচ্ছে না। বরং অনেক
ক্ষেত্রে এসব ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে বিদ্যুৎ, পানিসহ সেবা খাতের
বিলও। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ তো রয়েছেই। এতে ভোক্তাদের যেমন দুর্ভোগ কমছে
না, তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক বাজারেও দেশীয় পণ্য মূল্যের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে
পড়ছে বাংলাদেশ। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো
জরুরি বলে অভিমত দিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত ৫ বছরে চার দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল। অথচ বিশ্ববাজারে সেই অপরিশোধিত তেলের দাম কমতে কমতে সর্বনিুের রেকর্ড গড়লেও গত ৬ মাসে সরকার এক টাকাও কমায়নি। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫৬ দশমিক ৬৭ ডলারে। যা গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম নেমে গিয়েছিল ৬০ ডলারে। এরপর ২০১১ সালের এপ্রিলে তেলের দাম সর্বোচ্চ বেড়ে হয় ১২৫ মার্কিন ডলার। ধারবাহিক উত্থান-পতনের পর চলতি বছরের জুন থেকে টানা দরপতন শুরু হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত জুন থেকে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৪৮ শতাংশ কমেছে। খোদ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমায় গত অক্টোবর থেকে বিপিসি লাভের ধারায় ফিরেছে। এ কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া ভর্তুকিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তার মতে এভাবে ৬-৭ মাস চলতে থাকলে বিপিসি অতীতের সব দায় দেনা-পরিশোধ করে লাভ করতে পারবে। তবে তেলের দাম কমানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য জ্বালানি তেলের দাম কমানো নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ইতিমধ্যে ভারতসহ অনেক দেশে তেলের দাম অনেক কমানো হলেও আমাদের সরকার নিশ্চুপ। গত মাসে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম আড়াই টাকা পর্যন্ত কমিয়েছে ভারত। সর্বশেষ ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। সেবার পেট্রোল ও অকটেনের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি বাড়ানো হয়েছিল ৭ টাকা করে। ওই সময় সরকার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, বিশ্ববাজারে দাম কমলে স্থানীয় পর্যায়েও দাম সমন্বয় করা হবে। কিন্তু সরকার তার সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যে হারে কমেছে তাতে সরকারের এই মুহূর্তে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪ টাকা কমানো উচিত। তিনি বলেন, তেলের দাম না কমিয়ে সরকার ইতিমধ্যে তার প্রতিশ্র“তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। তার মতে মূলত তেল চুরি, দুর্নীতি আর লুটপাটের জন্যই সরকার ইচ্ছা করেই তেলের দাম কমাচ্ছে না। তিনি পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলেন, গত জুন মাস থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করলেও বিপিসি বলছে তারা অক্টোবর থেকে কম দামের তেল পেতে শুরু করেছে। তার মতে, এ ৫ মাসের তেল ক্রয় নিয়ে শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এর আগে সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেল আমদানিকারক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসির লোকসান বাড়ছে। ফলে কয়েক দফায় তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তখন প্রতিটি পেট্রলপাম্পে একটি তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হতো। সরকার কোন কোন খাতে কত টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে, তাতে উল্লেখ ছিল ওই তালিকায়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার ধারা বন্ধ হয়েছে বেশ আগেই। ইতিমধ্যে সরকার তেলের জন্য ভুর্তকি দেয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু ৬ মাসে তেলের দাম কমেছে ৪৮ শতাংশের উপরে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রয়েছে। তারপরও সরকার তেলের দাম না কমানোর রহস্যজনক। তিনি অবিলম্বে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সমন্বয় করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশের বাজারে যখন তেলের দাম বাড়ানো হয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ১ ব্যারেল তেলের দাম ছিল ১২২ ডলার। ওই সময় সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালেও বৃহস্পতিবার প্রতি ব্যারেল তেলের দাম অর্ধেকে নেমে আসে। অথচ দাম কমানো নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের মধ্যে কোনো ধরনের টু শব্দ নেই। উল্টো দেশের স্থানীয় বাজারে (গ্রাম পর্যায়ে) ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি বিক্রি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লাবলু বলেন, জ্বালানি তেলের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে সরকার বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে একাধিকবার। এখনও একই খোঁড়া যুক্তি অর্থাৎ তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, সরকারের এ যুক্তি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ বিশ্ববাজারে তেলের দাম ক্রমেই কমছে। অথচ একই কারণ দেখিয়ে সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের খরচ বেড়ে গিয়ে কার্যত বোঝাটা পড়ছে ভোক্তাদের ওপরই। তিনি বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে অবিলম্বে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে বিশ্লেষকরা বলছেন সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে তেলের উৎপাদন বাড়ছে। সেপ্টেম্বরে ওপেকভুক্ত দেশগুলোতে ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেও তেল উৎপাদন বেড়েছে। অন্যদিকে জাপান, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের অর্থনীতির ধীর প্রবৃদ্ধি। ফলে আইইএ বলছে, বিশ্বে তেলের চাহিদা কমবে। অর্থাৎ চাহিদা এবং সরবরাহ দুই দিকের চাপে দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) চলতি বছরের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে তেলের রফতানি কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারের তুলনায় আমাদের খুচরা বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম। কারণ সরকারকে প্রতিবছর এই খাতে অনেক টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। ফলে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে দাম কমানোর যৌক্তিকতা নেই। বর্তমানে দেশে কেরোসিন ৬৮, পেট্রল ৯৬ ও অকটেন ৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিপিসি চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, চলতি বছরের জুন থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকলেও আর্থিক সংকট ও গোডাউনের অভাবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ মাস কম দামে তেল ক্রয় করতে পারেননি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে যে পরিমাণ তেল ক্রয় শুরু হয়েছে তা অক্টোবরের শেষদিক থেকে কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। এতে লিটারপ্রতি ডিজেলে ২-৩ টাকা লাভ থাকছে বিপিসির। ৪ মাস কম দামে তেল ক্রয় করতে না পারায় কি পরিমাণ অর্থ গচ্চা গেছে এই প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বছরে গড়ে দেড়শ’ থেকে ২শ’ জাহাজ তেল আমদানি করতে হয় বিপিসিকে। প্রতি মাসে গড়ে ২০ থেকে ২৫ জাহাজ তেল আমদানি হয়। এই হিসাবে চার মাসে কম মূল্যে ১০০ জাহাজ তেল আনতে পারেনি। এর পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ মে. টন। বর্তমানে দেশে বছরে তেলের চাহিদা ৫৮ লাখ মে. টন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকার পরও বেশি দামে তেল ক্রয় করায় বিপিসিকে ওই সময়ে কমপক্ষে ২২শ’ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ৪-৫টি দেশের সঙ্গে তেল ক্রয়ের চুক্তি আছে। এর মধ্যে কুয়েত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া অন্যতম। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর গিয়ে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করেছে বিপিসি। গড়ে ৩ মাস ৬ মাস ও এক বছরের জন্য চুক্তি হয়ে থাকে। ওই চুক্তিতে নির্দিষ্ট করে কোনো মূল্য বেঁধে দেয়া হয় না। তেল জাহাজে তোলার সময় আন্তর্জাতিক বাজারের দাম ও প্রিমিয়াম মিলিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে জাহাজীকরণের আগের দুই দিন ও পরের দুই দিনসহ মোট পাঁচ দিনের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের গড়ের সঙ্গে প্রিমিয়াম যোগ করে দাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই চুক্তির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেলে বিপিসিকে বাধ্য হয়ে বেশি দামে তেল ক্রয় করতে হচ্ছে এ কথা সঠিক নয়।
বিপিসি বলছে গত অর্থবছর বিপিসির ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সরকারকে ৪ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। এ হিসাবে জ্বালানি তেল কেনাবেচায় প্রকৃতপক্ষে ২ হাজার ৪৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু রাজস্ব পরিশোধের চাপ থাকায় তেলের দাম কমাতে পারছে না তারা।
বিপিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যখন বেশি ছিল (জুনের আগে) তখন তাদের প্রতি লিটার তেলের আমদানি দাম পড়ত ৬৫ টাকা। আর স্থানীয় বাজারে সেই তেল বাজারে বিক্রি হতো ৬৮ টাকায়। কিন্তু প্রতি লিটারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৭-৮ টাকা শুল্ক দিতে হয়। আর তাতেই ডিজেল বিক্রিতে লোকসানে পড়ে বিপিসি। বর্তমানে প্রতি লিটার ফার্নেস বিক্রি করে ২ টাকা মুনাফা করে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া পেট্রল, অকটেন ও জেট ফুয়েল বিক্রি করে অনেক আগে থেকেই মুনাফা করছে। বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বছরে দেশে আমদানি করা ৫৭ লাখ টন জ্বালানি তেলের মধ্যে ৩৩ লাখ টনই ডিজেল। যা মোট আমদানির ৬৫ শতাংশ। ডিজেলের পর বেশি আমদানি হয় ফার্নেস অয়েল। এর পরিমাণ ১০-১২ লাখ টন। অন্যদিকে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল কিনতে বিপিসির ব্যয় হয় ৫০ টাকা। তা বিক্রি থেকে আয় হয় ৬০ টাকা। এ হিসাবে আমদানি করা ফার্নেস অয়েল থেকে গত অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা মুনাফা করে বিপিসি।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বাজেটে জ্বালানি তেল আমদানিতে ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বেসরকারি খাতের একাধিক কোম্পানি বর্তমানে ভ্যাটমুক্ত সুবিধায় তেল আমদানি করছে। ট্যারিফ-ভ্যাট মওকুফ হলে বিপিসিও দাম কমাতে পারবে। কিন্তু ভ্যাট মওকুফ করার পরিবর্তে বিপিসি থেকে রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। ট্যারিফ মূল্য বাড়ানোর ফলে চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণ ১ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে ২ টাকা কমালে, ফার্নেস ভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কমবে ইউনিট প্রতি প্রায় ৫০ পয়সা। তাতে পিডিবি বছরে ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারবে। সব মিলে বর্তমানে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির নিজস্ব ক্ষমতা ৭৯১ মেগাওয়াট, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার বা আইপিপির ২৯৭ মেগাওয়াট এবং ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর এ ক্ষমতা ৯১৭ মেগাওয়াট।
এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমার ফলে আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও কমবে। পাশাপাশি শিল্প খাতের অবস্থান ভালো হবে। এমন আভাস দিয়ে সম্প্রতি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করছে। এ তেলের মূল্য কমায় আগামী ২০১৫ সালের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চমক আসতে পারে। কমবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি তেলের মূল্য কমার ফলে পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে। শিল্প খাতে জ্বালানি তেলের ব্যবহারে ব্যয় কমবে। উৎপাদন ব্যয়ও হ্রাস পাবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত ৫ বছরে চার দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল। অথচ বিশ্ববাজারে সেই অপরিশোধিত তেলের দাম কমতে কমতে সর্বনিুের রেকর্ড গড়লেও গত ৬ মাসে সরকার এক টাকাও কমায়নি। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫৬ দশমিক ৬৭ ডলারে। যা গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম নেমে গিয়েছিল ৬০ ডলারে। এরপর ২০১১ সালের এপ্রিলে তেলের দাম সর্বোচ্চ বেড়ে হয় ১২৫ মার্কিন ডলার। ধারবাহিক উত্থান-পতনের পর চলতি বছরের জুন থেকে টানা দরপতন শুরু হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত জুন থেকে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৪৮ শতাংশ কমেছে। খোদ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমায় গত অক্টোবর থেকে বিপিসি লাভের ধারায় ফিরেছে। এ কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া ভর্তুকিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তার মতে এভাবে ৬-৭ মাস চলতে থাকলে বিপিসি অতীতের সব দায় দেনা-পরিশোধ করে লাভ করতে পারবে। তবে তেলের দাম কমানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য জ্বালানি তেলের দাম কমানো নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ইতিমধ্যে ভারতসহ অনেক দেশে তেলের দাম অনেক কমানো হলেও আমাদের সরকার নিশ্চুপ। গত মাসে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম আড়াই টাকা পর্যন্ত কমিয়েছে ভারত। সর্বশেষ ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। সেবার পেট্রোল ও অকটেনের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি বাড়ানো হয়েছিল ৭ টাকা করে। ওই সময় সরকার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, বিশ্ববাজারে দাম কমলে স্থানীয় পর্যায়েও দাম সমন্বয় করা হবে। কিন্তু সরকার তার সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যে হারে কমেছে তাতে সরকারের এই মুহূর্তে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪ টাকা কমানো উচিত। তিনি বলেন, তেলের দাম না কমিয়ে সরকার ইতিমধ্যে তার প্রতিশ্র“তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। তার মতে মূলত তেল চুরি, দুর্নীতি আর লুটপাটের জন্যই সরকার ইচ্ছা করেই তেলের দাম কমাচ্ছে না। তিনি পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলেন, গত জুন মাস থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করলেও বিপিসি বলছে তারা অক্টোবর থেকে কম দামের তেল পেতে শুরু করেছে। তার মতে, এ ৫ মাসের তেল ক্রয় নিয়ে শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এর আগে সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেল আমদানিকারক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসির লোকসান বাড়ছে। ফলে কয়েক দফায় তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তখন প্রতিটি পেট্রলপাম্পে একটি তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হতো। সরকার কোন কোন খাতে কত টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে, তাতে উল্লেখ ছিল ওই তালিকায়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার ধারা বন্ধ হয়েছে বেশ আগেই। ইতিমধ্যে সরকার তেলের জন্য ভুর্তকি দেয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু ৬ মাসে তেলের দাম কমেছে ৪৮ শতাংশের উপরে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রয়েছে। তারপরও সরকার তেলের দাম না কমানোর রহস্যজনক। তিনি অবিলম্বে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সমন্বয় করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশের বাজারে যখন তেলের দাম বাড়ানো হয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ১ ব্যারেল তেলের দাম ছিল ১২২ ডলার। ওই সময় সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালেও বৃহস্পতিবার প্রতি ব্যারেল তেলের দাম অর্ধেকে নেমে আসে। অথচ দাম কমানো নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের মধ্যে কোনো ধরনের টু শব্দ নেই। উল্টো দেশের স্থানীয় বাজারে (গ্রাম পর্যায়ে) ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি বিক্রি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লাবলু বলেন, জ্বালানি তেলের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে সরকার বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে একাধিকবার। এখনও একই খোঁড়া যুক্তি অর্থাৎ তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, সরকারের এ যুক্তি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ বিশ্ববাজারে তেলের দাম ক্রমেই কমছে। অথচ একই কারণ দেখিয়ে সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের খরচ বেড়ে গিয়ে কার্যত বোঝাটা পড়ছে ভোক্তাদের ওপরই। তিনি বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে অবিলম্বে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে বিশ্লেষকরা বলছেন সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে তেলের উৎপাদন বাড়ছে। সেপ্টেম্বরে ওপেকভুক্ত দেশগুলোতে ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেও তেল উৎপাদন বেড়েছে। অন্যদিকে জাপান, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের অর্থনীতির ধীর প্রবৃদ্ধি। ফলে আইইএ বলছে, বিশ্বে তেলের চাহিদা কমবে। অর্থাৎ চাহিদা এবং সরবরাহ দুই দিকের চাপে দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) চলতি বছরের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে তেলের রফতানি কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারের তুলনায় আমাদের খুচরা বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম। কারণ সরকারকে প্রতিবছর এই খাতে অনেক টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। ফলে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে দাম কমানোর যৌক্তিকতা নেই। বর্তমানে দেশে কেরোসিন ৬৮, পেট্রল ৯৬ ও অকটেন ৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিপিসি চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, চলতি বছরের জুন থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকলেও আর্থিক সংকট ও গোডাউনের অভাবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ মাস কম দামে তেল ক্রয় করতে পারেননি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে যে পরিমাণ তেল ক্রয় শুরু হয়েছে তা অক্টোবরের শেষদিক থেকে কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। এতে লিটারপ্রতি ডিজেলে ২-৩ টাকা লাভ থাকছে বিপিসির। ৪ মাস কম দামে তেল ক্রয় করতে না পারায় কি পরিমাণ অর্থ গচ্চা গেছে এই প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বছরে গড়ে দেড়শ’ থেকে ২শ’ জাহাজ তেল আমদানি করতে হয় বিপিসিকে। প্রতি মাসে গড়ে ২০ থেকে ২৫ জাহাজ তেল আমদানি হয়। এই হিসাবে চার মাসে কম মূল্যে ১০০ জাহাজ তেল আনতে পারেনি। এর পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ মে. টন। বর্তমানে দেশে বছরে তেলের চাহিদা ৫৮ লাখ মে. টন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকার পরও বেশি দামে তেল ক্রয় করায় বিপিসিকে ওই সময়ে কমপক্ষে ২২শ’ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ৪-৫টি দেশের সঙ্গে তেল ক্রয়ের চুক্তি আছে। এর মধ্যে কুয়েত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া অন্যতম। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর গিয়ে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করেছে বিপিসি। গড়ে ৩ মাস ৬ মাস ও এক বছরের জন্য চুক্তি হয়ে থাকে। ওই চুক্তিতে নির্দিষ্ট করে কোনো মূল্য বেঁধে দেয়া হয় না। তেল জাহাজে তোলার সময় আন্তর্জাতিক বাজারের দাম ও প্রিমিয়াম মিলিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে জাহাজীকরণের আগের দুই দিন ও পরের দুই দিনসহ মোট পাঁচ দিনের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের গড়ের সঙ্গে প্রিমিয়াম যোগ করে দাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই চুক্তির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেলে বিপিসিকে বাধ্য হয়ে বেশি দামে তেল ক্রয় করতে হচ্ছে এ কথা সঠিক নয়।
বিপিসি বলছে গত অর্থবছর বিপিসির ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সরকারকে ৪ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। এ হিসাবে জ্বালানি তেল কেনাবেচায় প্রকৃতপক্ষে ২ হাজার ৪৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু রাজস্ব পরিশোধের চাপ থাকায় তেলের দাম কমাতে পারছে না তারা।
বিপিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যখন বেশি ছিল (জুনের আগে) তখন তাদের প্রতি লিটার তেলের আমদানি দাম পড়ত ৬৫ টাকা। আর স্থানীয় বাজারে সেই তেল বাজারে বিক্রি হতো ৬৮ টাকায়। কিন্তু প্রতি লিটারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৭-৮ টাকা শুল্ক দিতে হয়। আর তাতেই ডিজেল বিক্রিতে লোকসানে পড়ে বিপিসি। বর্তমানে প্রতি লিটার ফার্নেস বিক্রি করে ২ টাকা মুনাফা করে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া পেট্রল, অকটেন ও জেট ফুয়েল বিক্রি করে অনেক আগে থেকেই মুনাফা করছে। বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বছরে দেশে আমদানি করা ৫৭ লাখ টন জ্বালানি তেলের মধ্যে ৩৩ লাখ টনই ডিজেল। যা মোট আমদানির ৬৫ শতাংশ। ডিজেলের পর বেশি আমদানি হয় ফার্নেস অয়েল। এর পরিমাণ ১০-১২ লাখ টন। অন্যদিকে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল কিনতে বিপিসির ব্যয় হয় ৫০ টাকা। তা বিক্রি থেকে আয় হয় ৬০ টাকা। এ হিসাবে আমদানি করা ফার্নেস অয়েল থেকে গত অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা মুনাফা করে বিপিসি।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বাজেটে জ্বালানি তেল আমদানিতে ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বেসরকারি খাতের একাধিক কোম্পানি বর্তমানে ভ্যাটমুক্ত সুবিধায় তেল আমদানি করছে। ট্যারিফ-ভ্যাট মওকুফ হলে বিপিসিও দাম কমাতে পারবে। কিন্তু ভ্যাট মওকুফ করার পরিবর্তে বিপিসি থেকে রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। ট্যারিফ মূল্য বাড়ানোর ফলে চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণ ১ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে ২ টাকা কমালে, ফার্নেস ভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কমবে ইউনিট প্রতি প্রায় ৫০ পয়সা। তাতে পিডিবি বছরে ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারবে। সব মিলে বর্তমানে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির নিজস্ব ক্ষমতা ৭৯১ মেগাওয়াট, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার বা আইপিপির ২৯৭ মেগাওয়াট এবং ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর এ ক্ষমতা ৯১৭ মেগাওয়াট।
এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমার ফলে আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও কমবে। পাশাপাশি শিল্প খাতের অবস্থান ভালো হবে। এমন আভাস দিয়ে সম্প্রতি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করছে। এ তেলের মূল্য কমায় আগামী ২০১৫ সালের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চমক আসতে পারে। কমবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি তেলের মূল্য কমার ফলে পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে। শিল্প খাতে জ্বালানি তেলের ব্যবহারে ব্যয় কমবে। উৎপাদন ব্যয়ও হ্রাস পাবে।
No comments