প্রশ্নপত্র ফাঁসে হাত দিলে পুড়ে যাবে: শিক্ষামন্ত্রী by নুর মোহাম্মদ
প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে অধিদপ্তরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন>> প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষার প্রায় সব প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মাধ্যমে। গত রোববার থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া এই পরীক্ষার পাঁচটি বিষয়ের মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলেছে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকসহ সব জায়গায়। ঠিক এই সময় এটির পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য রেখেছেন দুই মন্ত্রী। গতকাল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের জানান, জাতিকে ধ্বংস করার কাজে যারা নেমেছে তাদের হাত ভেঙে দেয়া হবে। প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে না পারলে প্রয়োজনে পরীক্ষার দিন মোবাইল, ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হবে। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, কোন জেলায়ই প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ নেই। এ ধরনের সংবাদকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেন তিনি। তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে প্রমাণ করতে পারলে এর দায় নিজের কাঁধে তুলে নেবো। একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর একই মত প্রকাশ করে বলেন, পিএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর স্রেফ গুজব। আজ পর্যন্ত একটা পরীক্ষার প্রশ্নও মিলেনি। ফেসবুকের পেজগুলো বন্ধ করার জন্য বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছি। মামলার প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। আর যেহেতু প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়া যায়নি তাই আপাতত কোন তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে না। শিক্ষাবিদরা বলছেন, গত তিন বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁস একটি শঙ্কার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটি রোধ করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে প্রায় ৩১ লাখ ক্ষুদে শিক্ষার্থী। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষাসহ অন্যান্য ম্যানেজমেন্ট করার সক্ষমতা নেই এই পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (ন্যাপ)’র। তাই প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর বিষয়ে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না অভিভাবকরা।
কর্মকর্তা বলছেন, গত বছরের পিএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত কমিটি বাংলায় ৫৩ এবং ইংরেজি বিষয়ে ৮০ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে প্রমাণ পায়। তদন্ত কমিটি প্রশ্নপত্র প্রণয়নে ‘আমূল’ পরিবর্তনের সুপারিশ করেন। সেখানে বিজি প্রেসের কাগজ শনাক্ত করার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করতে বলা হয়। প্রশ্ন তৈরি ও বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করার সুপারিশও করে তদন্ত কমিটি। কিন্তু সেই তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ আমলে না নিয়ে এ বছর সনাতন পদ্ধতিতেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণ করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, গত বছর একই অভিযোগ আমরা শুনেছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি ছাড়া প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে কার্যত কোন উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এটি বন্ধ করা সম্ভব মন্তব্য করে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জোরালো উদ্যোগের ফলে এবার জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানান তিনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ফেসবুকের সাজেশন আকারে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন যদি মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলে যায় তবেই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। পরীক্ষা বাতিল বা নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা যাবে না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
ধর্ম শিক্ষার প্রশ্নও ফাঁস: আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ের প্রশ্নপত্রের হুবহু মিলেছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। অভিভাবকরা জানান, আগের রাতে ও পরীক্ষার দিন সকালে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ‘নমুনা’ প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার মূল প্রশ্নের কপি মিলে গেছে। তারা বলেন, ‘নমুনা’ প্রশ্নে পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ও প্রশ্ন নাম্বার দেয়া ছিল। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর এক পরীক্ষার্থী জানান, তার গৃহশিক্ষক আগের রাতে যে সব প্রশ্নের সমাধান পড়িয়েছেন; পরীক্ষায় সেগুলোই এসেছে। তার পরীক্ষা খুব ভাল হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর জেএসসি প্রশ্ন ফাঁসের পর এবার সারাদেশের ৮টি শিক্ষা বোর্ডের জন্য ৩২ সেট প্রশ্নপত্র তারা প্রণয়ন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে লটারি করে বোর্ডওয়ারি প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। তাই এবার জেএসসিতে প্রশ্ন ফাঁসের কোন অভিযোগ ওঠেনি। অথচ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তেমন কোন ব্যবস্থা না নিয়েই পিএসসি পরীক্ষা নেয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিবছর এসএসসিতে প্রায় ১৩-১৪ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এ পরীক্ষার জন্য সারা দেশে মোট দশটি বোর্ড কাজ করে। সে হিসাবে প্রতিটি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় দেড় লাখের কিছু বেশি। এসব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতেই বোর্ডকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা পিএসসি’র ৩১ লাখ পরীক্ষার্থীর জন্য কোন বোর্ড নেই। অথচ ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই পরীক্ষা।
সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় অগ্রসর হয়নি বোর্ড গঠনের কাজ। কবে হতে পারে তা-ও মন্ত্রণালয় বলতে পারছে না। তবে সম্ভাব্য ব্যয় ও জনবল কাঠামো কি হবে সে বিষয়ে খসড়া তৈরির জন্য ন্যাপকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় যেভাবে: প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় ময়মনসিংহে অবস্থিত ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্রাইমারি এডুকেশন (ন্যাপ) কার্যালয়ে। সেখান থেকে অনেকটা অরক্ষিতভাবেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। এখান থেকেই কেউ কেউ প্রশ্ন ফাঁসের নেপথ্যে কাজ করে। বিজি প্রেসের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেই হাত করে দেশের কোচিং সেন্টারগুলো নানা সময় জড়িয়ে পড়ে এই অপকর্মে। কিছু অর্থলোভী শিক্ষকও প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বলে প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজি প্রেসের গোপনীয় শাখার প্রুফ রিডিং সেকশনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র মুখস্থ বিদ্যার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। একটি প্রশ্নপত্র কয়েকজন মিলে ভাগ করে তা মুখস্থ করে। অনেক সময় এখানকার কেউ কেউ আন্ডারওয়্যারের ভেতর লুকিয়ে প্রশ্নপত্র বাইরে সাপ্লাই করে। মূলত এখান থেকেই শুরু। এরপর এখান থেকে মুঠোফোন, ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। কোথাও কোথাও ফটোকপি করেও বিক্রি হয়। এরপর এটা নিয়ে চলে প্রশ্ন বাণিজ্য। পরীক্ষা শুরুর আগ পর্যন্তই বিক্রি হতে থাকে প্রশ্নপত্র। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার প্রশ্নপত্র বিজি প্রেসে ছাপানোর পর সিলগালা করে ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্রাইমারি এডুকেশন (ন্যাপ)-এর কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্যাকেটবদ্ধ ও গণনা করে নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে জেলাওয়ারি পাঠানো হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজ জেলার ট্রেজারিতে তা সংরক্ষণ করেন। জেলা কমিটি থেকে প্রশ্নপত্র উপজেলায় পাঠানোর পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিলগালাযুক্ত প্রশ্নপত্র সোনালী ব্যাংক বা থানায় সংরক্ষণ করেন। জেলার ক্ষেত্রে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং মহানগরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এ সব প্রশ্নপত্র। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এবার পিএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী, বগুড়া, যশোর, সুনামগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বড় বড় জেলা থেকে ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও পেজ খুলে সেখানে প্রশ্ন তুলে দেয়া হয়েছে। পেজগুলোয় লেখা থাকে, এটা প্রশ্ন নয়, সাজেশন। তবে সাজেশন শতভাগ মিলে যাবে। আগাম প্রশ্নপত্র আপলোড করা একাধিক ফেসবুক পেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পিএসসি পরীক্ষার আগের রাত ১০টা থেকে সেখানে প্রশ্নপত্র দেয়া হয়।
কর্মকর্তা বলছেন, গত বছরের পিএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত কমিটি বাংলায় ৫৩ এবং ইংরেজি বিষয়ে ৮০ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে প্রমাণ পায়। তদন্ত কমিটি প্রশ্নপত্র প্রণয়নে ‘আমূল’ পরিবর্তনের সুপারিশ করেন। সেখানে বিজি প্রেসের কাগজ শনাক্ত করার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করতে বলা হয়। প্রশ্ন তৈরি ও বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করার সুপারিশও করে তদন্ত কমিটি। কিন্তু সেই তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ আমলে না নিয়ে এ বছর সনাতন পদ্ধতিতেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণ করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, গত বছর একই অভিযোগ আমরা শুনেছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি ছাড়া প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে কার্যত কোন উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এটি বন্ধ করা সম্ভব মন্তব্য করে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জোরালো উদ্যোগের ফলে এবার জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানান তিনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ফেসবুকের সাজেশন আকারে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন যদি মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলে যায় তবেই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। পরীক্ষা বাতিল বা নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা যাবে না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
ধর্ম শিক্ষার প্রশ্নও ফাঁস: আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ের প্রশ্নপত্রের হুবহু মিলেছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। অভিভাবকরা জানান, আগের রাতে ও পরীক্ষার দিন সকালে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ‘নমুনা’ প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার মূল প্রশ্নের কপি মিলে গেছে। তারা বলেন, ‘নমুনা’ প্রশ্নে পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ও প্রশ্ন নাম্বার দেয়া ছিল। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর এক পরীক্ষার্থী জানান, তার গৃহশিক্ষক আগের রাতে যে সব প্রশ্নের সমাধান পড়িয়েছেন; পরীক্ষায় সেগুলোই এসেছে। তার পরীক্ষা খুব ভাল হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর জেএসসি প্রশ্ন ফাঁসের পর এবার সারাদেশের ৮টি শিক্ষা বোর্ডের জন্য ৩২ সেট প্রশ্নপত্র তারা প্রণয়ন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে লটারি করে বোর্ডওয়ারি প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। তাই এবার জেএসসিতে প্রশ্ন ফাঁসের কোন অভিযোগ ওঠেনি। অথচ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তেমন কোন ব্যবস্থা না নিয়েই পিএসসি পরীক্ষা নেয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিবছর এসএসসিতে প্রায় ১৩-১৪ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এ পরীক্ষার জন্য সারা দেশে মোট দশটি বোর্ড কাজ করে। সে হিসাবে প্রতিটি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় দেড় লাখের কিছু বেশি। এসব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতেই বোর্ডকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা পিএসসি’র ৩১ লাখ পরীক্ষার্থীর জন্য কোন বোর্ড নেই। অথচ ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই পরীক্ষা।
সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় অগ্রসর হয়নি বোর্ড গঠনের কাজ। কবে হতে পারে তা-ও মন্ত্রণালয় বলতে পারছে না। তবে সম্ভাব্য ব্যয় ও জনবল কাঠামো কি হবে সে বিষয়ে খসড়া তৈরির জন্য ন্যাপকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় যেভাবে: প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় ময়মনসিংহে অবস্থিত ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্রাইমারি এডুকেশন (ন্যাপ) কার্যালয়ে। সেখান থেকে অনেকটা অরক্ষিতভাবেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। এখান থেকেই কেউ কেউ প্রশ্ন ফাঁসের নেপথ্যে কাজ করে। বিজি প্রেসের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেই হাত করে দেশের কোচিং সেন্টারগুলো নানা সময় জড়িয়ে পড়ে এই অপকর্মে। কিছু অর্থলোভী শিক্ষকও প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বলে প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজি প্রেসের গোপনীয় শাখার প্রুফ রিডিং সেকশনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র মুখস্থ বিদ্যার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। একটি প্রশ্নপত্র কয়েকজন মিলে ভাগ করে তা মুখস্থ করে। অনেক সময় এখানকার কেউ কেউ আন্ডারওয়্যারের ভেতর লুকিয়ে প্রশ্নপত্র বাইরে সাপ্লাই করে। মূলত এখান থেকেই শুরু। এরপর এখান থেকে মুঠোফোন, ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। কোথাও কোথাও ফটোকপি করেও বিক্রি হয়। এরপর এটা নিয়ে চলে প্রশ্ন বাণিজ্য। পরীক্ষা শুরুর আগ পর্যন্তই বিক্রি হতে থাকে প্রশ্নপত্র। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার প্রশ্নপত্র বিজি প্রেসে ছাপানোর পর সিলগালা করে ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্রাইমারি এডুকেশন (ন্যাপ)-এর কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্যাকেটবদ্ধ ও গণনা করে নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে জেলাওয়ারি পাঠানো হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজ জেলার ট্রেজারিতে তা সংরক্ষণ করেন। জেলা কমিটি থেকে প্রশ্নপত্র উপজেলায় পাঠানোর পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিলগালাযুক্ত প্রশ্নপত্র সোনালী ব্যাংক বা থানায় সংরক্ষণ করেন। জেলার ক্ষেত্রে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং মহানগরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এ সব প্রশ্নপত্র। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এবার পিএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী, বগুড়া, যশোর, সুনামগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বড় বড় জেলা থেকে ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও পেজ খুলে সেখানে প্রশ্ন তুলে দেয়া হয়েছে। পেজগুলোয় লেখা থাকে, এটা প্রশ্ন নয়, সাজেশন। তবে সাজেশন শতভাগ মিলে যাবে। আগাম প্রশ্নপত্র আপলোড করা একাধিক ফেসবুক পেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পিএসসি পরীক্ষার আগের রাত ১০টা থেকে সেখানে প্রশ্নপত্র দেয়া হয়।
No comments