বর্ণবাদ আগুনে জ্বলছে আমেরিকা
যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরে নিরস্ত্র এক কৃষাঙ্গ কিশোরকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত না করার সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে তীব্র গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছে। হাজার হাজার লোক গ্রান্ড জুরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে রাস্তায় নেমে এসেছে। এর পরপরই ফার্গুসন শহরে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনগণ। লুটপাটসহ একাধিক ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত লোকজন। এ প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা জোরদারে ২ হাজার ২০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছে। সোমবারের বিভীষিকাময় রাত শেষে মিসৌরি গভর্নর জে নিক্সন বলেন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ বন্ধ করতে ন্যাশনাল গার্ডের সংখ্যা তিনগুণ করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিউইয়র্ক থেকে সিয়াটল পর্যন্ত এই বিক্ষোভের অধিকাংশই শান্তিপূর্ণ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন এবং নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড বহন করেন। নিউইয়র্কে বিক্ষোভকারীরা অল্প সময়ের জন্য ব্র“কলিন সেতু বন্ধ করে দেন।
অন্যান্য সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। মিশিগান, মাইন, জর্জিয়া, উইসকনসিন, আটলান্টা, বোস্টন, লস-অ্যাঞ্জেলেসসহ আরও অনেক শহরে বিক্ষোভ হচ্ছে। মিনেসোটার মিনেপোলিসেও বিক্ষোভ হয়েছে। ক্লিভল্যান্ডে খেলনা পিস্তল হাতে ১২ বছরের কিশোরকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবারও সেখানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন কয়েকশ’ মানুষ। এর ফলে ব্যস্ত সড়কে দেখা দেয় যানজট। সেখানে প্রধান স্লোগান ছিল ‘হ্যান্ডস আপ ডোনট শ্যুট’, ‘নো জাস্টিস নো পিস’। শনিবার তামির রাইস নামের ওই কিশোরকে হত্যার পর প্রতিবাদের আগুন ক্লিভল্যান্ড থেকে ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে। এই আগুনে ঘি ঢেলেছে ফার্গুসন। ক্লিভল্যান্ডের প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। বিবিসি। বিক্ষোভকারীদের একজন নিশা পিয়ার্স সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেন, ‘যে ব্যবস্থা চলছে তাতে আমাদের রক্ষা করার জন্য কোনো আইন নেই। তাই সুবিচার পেতে হলে নিজের হাতেই আইন তুলে নিতে হবে।’ সোমবারের বিভীষিকাময় রাত শেষে মিসৌরি গভর্নর জে নিক্সন বলেন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ বন্ধ করতে ন্যাশনাল গার্ডের সংখ্যা তিনগুণ করা হচ্ছে। ৯ আগস্ট সেন্ট লুইসের ফার্গুসনে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসনের গুলিতে নিরস্ত্র কৃষাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন (১৮) নিহত হলে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়, যা অব্যাহত রয়েছে কয়েক সপ্তাহ ধরে এবং এ বিক্ষোভ মাঝেমাঝেই সহিংস হয়ে উঠছিল। এর মধ্যেই সোমবারের এ রায় আগুনে ঘি ঢালার মতো চলমান বিক্ষোভকে আরও তীব্র ও গতিশীল করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। এমনকি পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করেও বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়। এছাড়া এ রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় চলতি মাসের শুরু থেকেই পুরো মিসৌরিজুড়ে এক মাসের জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়। মোতায়েন করা হয় ন্যাশনাল গার্ডও। তবু অবদমিত হয়নি জনগণ। এদিকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মঙ্গলবার সহিংসতার সমালোচনা করে দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। সংখ্যালঘুদের গভীর হতাশার কথা স্বীকার করেই ওবামা বলেন, ক্ষোভ প্রকাশের গঠনমূলক উপায় রয়েছে। কিন্তু দাঙ্গাকারীরা যা করছে তা ধ্বংসাত্মক। তিনি বলেন, বাড়ি-গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সম্পদ ধ্বংস এবং জনগণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা এসবই ধ্বংসাত্মক কাজ, ফৌজদারি অপরাধ। তাদের ক্ষমা নেই। রয়টার্স। নিহত ব্রাউনের পরিবারও রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। পরিবারের আইনজীবীর মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘অনেকেই আমাদের যন্ত্রণার অংশীদার হয়েছেন।
আমরা বলতে চাই আমাদের হতাশা ও ক্ষোভ এমনভাবে প্রকাশিত হওয়া উচিত যেন তা একটি শুভ পরিবর্তনের সূচনা করে।’ ব্রাউন পরিবারের আইনজীবী বেঞ্জামিন ক্রাম্প বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে একে ক্রুটিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ড্যারেন গ্রান্ড জুরির সামনে হাজির হলে ওই পুলিশকে হত্যাকারী উইলসনকে জেরা করা হয়নি। এদিকে, মাইকেল ব্রাউনকে গুলি করে হত্যাকারী পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসন ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে প্রথমবারের মতো এবিসি নিউজে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্রাউন নিহত হওয়ায় আমি দুঃখিত, কিন্তু এ জন্য বিবেকের কাছে দায়ী নই তিনি। তবে নিজের জীবন নিয়ে তার সংশয় রয়েছে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি এও বলেছেন যে, ব্রাউনের জায়গায় কোনো শ্বেতাঙ্গ থাকলে গুলি করার প্রশ্নই আসতো না। উইলসনের মতে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এদিকে, বর্ণবাদী দাঙ্গার পর মার্কিন নাগরিকদের মানবাধিকারবিষয়ক একটি শুনানি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিনেট। কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর হত্যার ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদ বৈষম্য, পুলিশের ভূমিকা, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ও নাগরিক অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সিনেটে বিস্তারিত শুনানি হবে। সিনেটের সংবিধান ও নাগরিক অধিকারবিষয়ক উপ-কিমিটির প্রধান ডিক ডারবিন একথা জানান। ওদিকে, ফার্গুসনে দাঙ্গার ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ সংকট’ বলে অভিহিত করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার জানায়, ওয়াশিংটন তার নিজের নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এএফপি।
No comments