এক দশকেও ‘স্বল্পোন্নত’ গণ্ডি পেরোনো অসম্ভব -ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
আগামী ১০ বছরেও বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, আগামী এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বাংলাদেশকে মানবসম্পদের উন্নয়ন ও অর্থনীতির বহুমুখীকরণ করতে হবে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতিসংঘের বাণিজ্য সংস্থা ‘আঙ্কটাডের এলডিসি রিপোর্ট-২০১৪’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এলডিসিভুক্ত ৪৮টি দেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে সারাবিশ্বে একযোগে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করে আঙ্কটাড। বাংলাদেশে সংস্থাটির পক্ষে রিপোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে সিপিডি।
রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, স্বল্পোন্নতের তালিকা থেকে বের হতে প্রথমে ৬ বছরের জন্য সে দেশকে মূল্যায়ন করা হয়। কারণ দেশটির যে অগ্রগতি, তা কতোটা স্থায়ী না ভঙ্গুর পর্যবেক্ষণ করা হয়। তারপরই সে দেশটি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। ২০১৫ সালে যে দেশগুলোকে এভাবে মূল্যায়নের তালিকায় রাখা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এক দশকেও হবে কিনা সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও কিছু ক্ষেত্রে আশঙ্কা দেখছি। ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে আসা সম্ভব। কারণ শুধুমাত্র জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেলেই মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে পারবে না। আসতে হলে মানবসম্পদ ও অর্থনীতির নাজুকতা সূচকে উন্নয়ন করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, আঙ্কটাডের এইবারের রিপোর্টে উন্নয়নের জন্য প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশের রপ্তানিখাত শুধু পোশাক নির্ভর। রপ্তানিকে বহুমুখী করা গেলে অনেক পরিবর্তন আসবে। এই নীতি পরিবর্তন করে প্লাস্টিকসহ আরও সম্ভাবনাময় আর কি খাত আছে তা এগিয়ে নিতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তি বিবেচনায় কোন খাতের অগ্রাধিকার দিলেও সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি পণ্যে নির্ভর হয়ে পড়ছে, এটা অবকাঠামোকে দুর্বলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্য যেসব সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে সেগুলোতে অবকাঠামো সহায়তা দিতে হবে। উৎপাদন খাত আরও সহায়তা দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামাজিক সূচকে এগুলোও কর্মসংস্থান ও আয় সৃষ্টির ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য কৃষি থেকে বের হয়ে উৎপাদনভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানবসম্পদ কৃষি থেকে সরে এসে সেবা খাতের দিকে যাচ্ছে। শিল্পখাতে উৎপাদন বাড়লেও মানুষের আয় ও জীবনমান বেড়ে যাবে। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনীতির ভঙ্গুরতা উন্নয়ন করে এলডিসি থেকে সহজে বের হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন স্বয়ংক্রিয় শিল্পনীতি ও সক্ষম মুদ্রানীতি। দেশে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় অন্যদের তা দেয়া হয় না। শুধু প্রভাবশালীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সম্ভাবনাময় খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি অগ্রাধিকার খাতে নীতি-সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। রাজস্ব আয় ও মুদ্রানীতির মাধ্যমে সম্পদ বণ্টনের দিকে নজর দিতে হবে।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডি’র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডি’র অতিরিক্ত গবেষক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
মূল প্রতিবেদন প্রকাশকালে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর যে অগ্রগতি হয়েছিল তাতে ভাটা পড়েছে। এই দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ২০১৫ পরবর্তী পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে হবে। কৃষিখাত থেকে শ্রমিক বের করে শিল্পখাতের দিকে নিয়ে যেতে হবে। কৃষিখাত থেকে শ্রমিক বের করে যত বেশি শিল্পখাতে ব্যবহার করা যাবে উৎপাদনশীলতা তত বাড়বে।
গবেষণা তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ২০১৫ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মাথাপিছু আয় ১,২৪৩ ডলার হতে হবে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯০০ ডলার। বর্তমানে ৯৯২ ডলার। ২০১৫ সালে এটি বেড়ে ১০৩৫ ডলার হতে পারে। মানবসম্পদ উন্নয়নসূচক ৬৬ হতে হবে। তবে ২০১৫ সালের মধ্যে এই সূচক বড়জোর ৬০ হতে পারে। সুতরাং ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না। ২০১৫ সালের মধ্যে যে দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে জাতিসংঘ বলছে, তার মধ্যেও বাংলাদেশের নাম নেই।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এমডিজি’র যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা খুব কমসংখ্যক দেশ অর্জন করতে পারবে। এ পরিস্থিতিতে ২০১৫ পরবর্তী যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করতে না পারলে এসডিজি’র (স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্বল্প সুদে যে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে আসলে তা বাণিজ্যিক সুদে নিতে হবে। তবে এখনই অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সুদে ঋণ নিচ্ছে। তাই স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে আসলে ঋণ পেতে যে অসুবিধা হবে, এমন ধারণা ঠিক না।
রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, স্বল্পোন্নতের তালিকা থেকে বের হতে প্রথমে ৬ বছরের জন্য সে দেশকে মূল্যায়ন করা হয়। কারণ দেশটির যে অগ্রগতি, তা কতোটা স্থায়ী না ভঙ্গুর পর্যবেক্ষণ করা হয়। তারপরই সে দেশটি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। ২০১৫ সালে যে দেশগুলোকে এভাবে মূল্যায়নের তালিকায় রাখা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এক দশকেও হবে কিনা সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও কিছু ক্ষেত্রে আশঙ্কা দেখছি। ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে আসা সম্ভব। কারণ শুধুমাত্র জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেলেই মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে পারবে না। আসতে হলে মানবসম্পদ ও অর্থনীতির নাজুকতা সূচকে উন্নয়ন করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, আঙ্কটাডের এইবারের রিপোর্টে উন্নয়নের জন্য প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশের রপ্তানিখাত শুধু পোশাক নির্ভর। রপ্তানিকে বহুমুখী করা গেলে অনেক পরিবর্তন আসবে। এই নীতি পরিবর্তন করে প্লাস্টিকসহ আরও সম্ভাবনাময় আর কি খাত আছে তা এগিয়ে নিতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তি বিবেচনায় কোন খাতের অগ্রাধিকার দিলেও সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি পণ্যে নির্ভর হয়ে পড়ছে, এটা অবকাঠামোকে দুর্বলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্য যেসব সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে সেগুলোতে অবকাঠামো সহায়তা দিতে হবে। উৎপাদন খাত আরও সহায়তা দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামাজিক সূচকে এগুলোও কর্মসংস্থান ও আয় সৃষ্টির ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য কৃষি থেকে বের হয়ে উৎপাদনভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানবসম্পদ কৃষি থেকে সরে এসে সেবা খাতের দিকে যাচ্ছে। শিল্পখাতে উৎপাদন বাড়লেও মানুষের আয় ও জীবনমান বেড়ে যাবে। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনীতির ভঙ্গুরতা উন্নয়ন করে এলডিসি থেকে সহজে বের হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন স্বয়ংক্রিয় শিল্পনীতি ও সক্ষম মুদ্রানীতি। দেশে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় অন্যদের তা দেয়া হয় না। শুধু প্রভাবশালীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সম্ভাবনাময় খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি অগ্রাধিকার খাতে নীতি-সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। রাজস্ব আয় ও মুদ্রানীতির মাধ্যমে সম্পদ বণ্টনের দিকে নজর দিতে হবে।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডি’র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডি’র অতিরিক্ত গবেষক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
মূল প্রতিবেদন প্রকাশকালে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর যে অগ্রগতি হয়েছিল তাতে ভাটা পড়েছে। এই দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ২০১৫ পরবর্তী পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে হবে। কৃষিখাত থেকে শ্রমিক বের করে শিল্পখাতের দিকে নিয়ে যেতে হবে। কৃষিখাত থেকে শ্রমিক বের করে যত বেশি শিল্পখাতে ব্যবহার করা যাবে উৎপাদনশীলতা তত বাড়বে।
গবেষণা তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ২০১৫ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মাথাপিছু আয় ১,২৪৩ ডলার হতে হবে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯০০ ডলার। বর্তমানে ৯৯২ ডলার। ২০১৫ সালে এটি বেড়ে ১০৩৫ ডলার হতে পারে। মানবসম্পদ উন্নয়নসূচক ৬৬ হতে হবে। তবে ২০১৫ সালের মধ্যে এই সূচক বড়জোর ৬০ হতে পারে। সুতরাং ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না। ২০১৫ সালের মধ্যে যে দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে জাতিসংঘ বলছে, তার মধ্যেও বাংলাদেশের নাম নেই।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এমডিজি’র যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা খুব কমসংখ্যক দেশ অর্জন করতে পারবে। এ পরিস্থিতিতে ২০১৫ পরবর্তী যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করতে না পারলে এসডিজি’র (স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্বল্প সুদে যে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে আসলে তা বাণিজ্যিক সুদে নিতে হবে। তবে এখনই অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সুদে ঋণ নিচ্ছে। তাই স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে আসলে ঋণ পেতে যে অসুবিধা হবে, এমন ধারণা ঠিক না।
No comments