‘আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই’ by শেখ সাবিহা আলম
‘শ্রদ্ধেয় মামা, আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই। আমি জানি আমি পারব। আমার রক্তে দেশপ্রেম আছে। আমি দেশপ্রেমিকের সন্তান। ভেবো না এটা আকাশকুসুম কল্পনা। আমি পুরো আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছি, সুযোগ পেলে আমিই হব এ দেশের ভবিষ্যৎ নেত্রী।’
মামার কাছে এভাবেই স্বপ্নে বোনা চিঠি লিখেছে সাদিয়া মরিয়ম। মামার কাছে থেকে পড়াশোনা করছে সে। রংপুরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার মেয়ে কিশোরী সাদিয়া নবম শ্রেণিতে পড়ছে। তার মতো এমন স্বপ্নে বোনা বাল্যবিবাহবিরোধী শত শত চিঠি জমা পড়েছে ব্র্যাকের আহ্বানে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ঢাকায় অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম গার্ল সামিট উপলক্ষে কিশোরীদের কাছ থেকে এ চিঠি আহ্বান করে ব্র্যাক।
এর মধ্যে বাছাই করা ১০টি চিঠি পড়ে জানা গেল অসম্ভব সুন্দর কিছু স্বপ্নের কথা। যে দেশের ৬৬ শতাংশ কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার, সেই দেশের কিশোরীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। স্বনির্ভর করতে চায় দেশকে। কালকের পৃথিবীটা নিতে চায় নিজেদের দখলে।
রাজধানী ঢাকা থেকে লালমনিরহাট সদরের দূরত্ব ৩৪৭ কিলোমিটার। সদর থেকে অনন্যাদের আরও ৫০ কিলোমিটার দূরে, হাতিবান্ধার গড্ডিমারি । কিন্তু তার কাছে এ দূরত্ব কিছুই নয়। কারণ সে তিন লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মহাশূন্যে পাড়ি দিতে প্রস্তুত।
মা-বাবার উদ্দেশে লেখা চিঠিতে অনন্যা বলেছে, ‘আমি কল্পনা চাওলার মতো মহাশূন্য ভ্রমণ করব।’ লিখেছে, প্রতিদিনের ঘটে চলা অন্যায়, অবিচার দেখে তার কখনো ইচ্ছে হয় সাংবাদিক হতে, কখনো বা ইচ্ছে হয় মালালা ইউসুফজাইয়ের মতো নারীশিক্ষা নিয়ে কাজ করতে। কখনো সে মাদাম কুরির মতো বিজ্ঞানী হওয়ার কথা ভাবে।
বাল্যবিবাহবিরোধী চিঠিতে তারা আইন-কানুন, বাল্যবিবাহের অপকারিতা নিয়ে লিখলেও আদপে যে তারা শিশু, তার প্রকাশ ঘটেছে কোথাও কোথাও। গোলদীঘির পূর্বপাড় কক্সবাজারের মেয়ে লোপা চৌধুরী লিখেছে, তার প্রিয় সব জিনিসের কথা। সুন্দর স্টিকার লাগানো ফ্লাস্ক, নতুন জুতা—এসব ফেলে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা সে ভাবতেই পারে না। মা-কে লিখেছে, ‘মা, আপনার গল্প না শোনা পর্যন্ত আমার রাতে ঘুম আসে না। ১২তম জন্মদিনে বাবার দেওয়া পুতুলটা ছাড়াও আমি ঘুমাতে পারি না। আমার প্রিয় ময়না প্রতিদিন তিনবার আমার হাতে কলা খায়। আমি না থাকলে ওকে কে খাওয়াবে শুনি? ছোটবেলা থেকেই আমার আকাশে ওড়ার ইচ্ছা। আমি তো পাইলট হব।’
কেউ আবার নোবেল পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এমন কিছু আবিষ্কার করতে চায়, যা বাঁচাবে বহু মানুষের জীবন। বগুড়ার মালতিনগরের মেয়ে উছাইলা রাহবার তাদের একজন। বাবা-মাকে চিঠিতে সে লিখেছে তাঁর দৃপ্ত ইচ্ছার কথা। বলেছে, ‘আমি ক্যানসার বা এইডসের স্থায়ী প্রতিষেধক আবিষ্কার করে নোবেল পাব।’
এদের প্রত্যেকেই চিঠিতে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বাবা-মা ও অভিভাবকদের সতর্কও করেছে। দেশের অন্যতম বাল্যবিবাহপ্রবণ এলাকা সিলেটের মেয়ে তাসলিমা আক্তার। বাবাকে লিখেছে, ‘কেন, আব্বাজান, আমাদের ফুলি আপা ও খাদিজা আপারও তো বাল্যবিবাহ হয়েছিল। তাঁরা কি সুখী হয়েছেন? নাকি সংসার করতে পেরেছেন? ফুলি আপার ঘর ভাঙল যৌতুকের জন্য। খাদিজা আপা স্বামীর অত্যাচারে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু সুমনা ভাবি? লেখাপড়া শেষ করেছিলেন বলে ভাইয়ের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে পেরেছেন।’
কেউ আবার বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জের নবম শ্রেণির মেয়ে মাফরুহা মোর্শেদ বাবাকে লিখেছে, ‘গত বছর অষ্টম শ্রেণিতে যখন গ্রাম থেকে আমি একাই বৃত্তি পেলাম, খুব তো তখন বলেছিলে “আমার মেয়ে বৃত্তি পেয়েছে”। এখন কি আমি তোমাদের মেয়ে নই যে জলে ফেলে দিতে চাইছ?’
কেউ কেউ বাবা-মাকে অনুরোধ করেছে যেন তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ান তাঁরা। সিরাজগঞ্জের হাটপাংগাসী গ্রামের মেয়ে তামান্না লিখেছে, ‘আমার দেখা স্বপ্ন তোমরাও দেখো বাবা-মা।’
মামার কাছে এভাবেই স্বপ্নে বোনা চিঠি লিখেছে সাদিয়া মরিয়ম। মামার কাছে থেকে পড়াশোনা করছে সে। রংপুরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার মেয়ে কিশোরী সাদিয়া নবম শ্রেণিতে পড়ছে। তার মতো এমন স্বপ্নে বোনা বাল্যবিবাহবিরোধী শত শত চিঠি জমা পড়েছে ব্র্যাকের আহ্বানে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ঢাকায় অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম গার্ল সামিট উপলক্ষে কিশোরীদের কাছ থেকে এ চিঠি আহ্বান করে ব্র্যাক।
এর মধ্যে বাছাই করা ১০টি চিঠি পড়ে জানা গেল অসম্ভব সুন্দর কিছু স্বপ্নের কথা। যে দেশের ৬৬ শতাংশ কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার, সেই দেশের কিশোরীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। স্বনির্ভর করতে চায় দেশকে। কালকের পৃথিবীটা নিতে চায় নিজেদের দখলে।
রাজধানী ঢাকা থেকে লালমনিরহাট সদরের দূরত্ব ৩৪৭ কিলোমিটার। সদর থেকে অনন্যাদের আরও ৫০ কিলোমিটার দূরে, হাতিবান্ধার গড্ডিমারি । কিন্তু তার কাছে এ দূরত্ব কিছুই নয়। কারণ সে তিন লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মহাশূন্যে পাড়ি দিতে প্রস্তুত।
মা-বাবার উদ্দেশে লেখা চিঠিতে অনন্যা বলেছে, ‘আমি কল্পনা চাওলার মতো মহাশূন্য ভ্রমণ করব।’ লিখেছে, প্রতিদিনের ঘটে চলা অন্যায়, অবিচার দেখে তার কখনো ইচ্ছে হয় সাংবাদিক হতে, কখনো বা ইচ্ছে হয় মালালা ইউসুফজাইয়ের মতো নারীশিক্ষা নিয়ে কাজ করতে। কখনো সে মাদাম কুরির মতো বিজ্ঞানী হওয়ার কথা ভাবে।
বাল্যবিবাহবিরোধী চিঠিতে তারা আইন-কানুন, বাল্যবিবাহের অপকারিতা নিয়ে লিখলেও আদপে যে তারা শিশু, তার প্রকাশ ঘটেছে কোথাও কোথাও। গোলদীঘির পূর্বপাড় কক্সবাজারের মেয়ে লোপা চৌধুরী লিখেছে, তার প্রিয় সব জিনিসের কথা। সুন্দর স্টিকার লাগানো ফ্লাস্ক, নতুন জুতা—এসব ফেলে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা সে ভাবতেই পারে না। মা-কে লিখেছে, ‘মা, আপনার গল্প না শোনা পর্যন্ত আমার রাতে ঘুম আসে না। ১২তম জন্মদিনে বাবার দেওয়া পুতুলটা ছাড়াও আমি ঘুমাতে পারি না। আমার প্রিয় ময়না প্রতিদিন তিনবার আমার হাতে কলা খায়। আমি না থাকলে ওকে কে খাওয়াবে শুনি? ছোটবেলা থেকেই আমার আকাশে ওড়ার ইচ্ছা। আমি তো পাইলট হব।’
কেউ আবার নোবেল পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এমন কিছু আবিষ্কার করতে চায়, যা বাঁচাবে বহু মানুষের জীবন। বগুড়ার মালতিনগরের মেয়ে উছাইলা রাহবার তাদের একজন। বাবা-মাকে চিঠিতে সে লিখেছে তাঁর দৃপ্ত ইচ্ছার কথা। বলেছে, ‘আমি ক্যানসার বা এইডসের স্থায়ী প্রতিষেধক আবিষ্কার করে নোবেল পাব।’
এদের প্রত্যেকেই চিঠিতে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বাবা-মা ও অভিভাবকদের সতর্কও করেছে। দেশের অন্যতম বাল্যবিবাহপ্রবণ এলাকা সিলেটের মেয়ে তাসলিমা আক্তার। বাবাকে লিখেছে, ‘কেন, আব্বাজান, আমাদের ফুলি আপা ও খাদিজা আপারও তো বাল্যবিবাহ হয়েছিল। তাঁরা কি সুখী হয়েছেন? নাকি সংসার করতে পেরেছেন? ফুলি আপার ঘর ভাঙল যৌতুকের জন্য। খাদিজা আপা স্বামীর অত্যাচারে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু সুমনা ভাবি? লেখাপড়া শেষ করেছিলেন বলে ভাইয়ের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে পেরেছেন।’
কেউ আবার বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জের নবম শ্রেণির মেয়ে মাফরুহা মোর্শেদ বাবাকে লিখেছে, ‘গত বছর অষ্টম শ্রেণিতে যখন গ্রাম থেকে আমি একাই বৃত্তি পেলাম, খুব তো তখন বলেছিলে “আমার মেয়ে বৃত্তি পেয়েছে”। এখন কি আমি তোমাদের মেয়ে নই যে জলে ফেলে দিতে চাইছ?’
কেউ কেউ বাবা-মাকে অনুরোধ করেছে যেন তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ান তাঁরা। সিরাজগঞ্জের হাটপাংগাসী গ্রামের মেয়ে তামান্না লিখেছে, ‘আমার দেখা স্বপ্ন তোমরাও দেখো বাবা-মা।’
No comments