মোদিকে সশস্ত্র প্রতিরোধের হুমকি উলফার
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ কেন্দ্রীয় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের হুমকি দিয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ইউনাটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা)। সংগঠনটির সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়া বলেছেন, সেনা অভিযানে নিখোঁজ উলফা ক্যাডারদের সন্ধান না দিলে আসামের মাটি রক্তাক্ত হবে। বৃহস্পতিবার সংবাদবাধ্যমে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা দিয়ে এই হুমকি দেয়া হয়। শুক্রবার উত্তর-পূর্ব ভারতের বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খ এ খবর দিয়েছে। এমন এক সময় এই হুমকি দেযা হলো, যখন নরেন্দ্র মোদির আসাম সফরের আর মাত্র দু্ই দিন বাকি। রোববার আসাম সফরে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী মোদির। মোদির আসাম সফরের দুই দিন আগে উলফা নেতা মোদিকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে ভুটানের জঙ্গলে ভারতীয় ও ভুটানি সেনার অভিযানে নিখোঁজ উলফা ক্যাডারদের সন্ধান দিতে না পারলে বিজেপির বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ই-মেইল বার্তায় পরেশ বড়ুয়া বলেন, ২০০৩ সালে ভুটানের মাটিতে উলফার বিরুদ্ধে ‘অপারেশন অল ক্লিয়ার’ চালানোর সময় নিখোঁজ ১৬৮ ক্যাডারদের সন্ধান না দিলে বিজেপিকে স্বস্তিতে থাকতে দেবেন না তারা। ২০১৬ সালে আসাম বিধানসভার নির্বাচনে গেরুয়া দলটির ‘মিশন ৮৪+’ –এর স্বপ্নও বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না। বিজেপি ওই নির্বাচনে কীভাবে জেতে ভুলে গেলে একদিন অনুশোচনায় দগ্ধ হতে হবে ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন আসামের বিজেপি নেতাকর্মীদের। পরেশ বড়ুয়া আরো বলেন, সহযোগীর দায়বদ্ধতা ও ত্যাগকে তথাকথিত আলোচনার নামে নতুন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুগ্রহে ‘টি-পার্টি’তে অংশ নেয়া কোনো ব্যক্তি ভুলে যেতে পারেন, কিন্তু উলফা (স্বাধীন) সেই দায়বদ্ধতা কখনো বিস্মৃত হতে পারে না। প্রসঙ্গত, হারিয়ে যাওয়া উলফা ক্যাডার ও নেতাদের মধ্যে রয়েছেন মেজর বেনিং রাভা (সেনাপ্রধান), মেজর অশান্ত বরফুকন (সাংগঠনিক সম্পদাক), মেজর জীবন মরান (প্রথম সারির ক্যাডার), লেফটেন্যান্ট শরৎ শরনিয়া ওরফে অভিজিৎ ডেকা প্রমুখ। তারা ভুটান রয়াল আর্মি ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গ্রেফতার হওয়ার পর নিখোঁজ হন। পরেশ বড়ুয়া দাবি করেন, ইতিমধ্যে ভুটান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে, ওই অভিযানে উলফার মোট ১৬৮ জন ক্যাডারকে আটক করে ভারতীয় সেনার হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর উলফাকে একটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে ওই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এরপর ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বরে উলফার বিরুদ্ধে শুরু হয় ‘অপরাশেন রজরং’ এবং ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘অপারেশন রাইনো-২’। সেই থেকে ২৭ নভেম্বর দিনটি ‘প্রতিবাদ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে উলফা। এদিকে উলফার একটি অংশ অরবিন্দ রাজখোয়ার নেতৃত্বে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে কয়েক বছর আগে। কেন্দ্রের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষবিরতি চুক্তিও হয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে বর্তমানে শান্তি আলোচনা চলছে। রাজখোয়াপন্থীরা দিল্লির কাছ থেকে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। আর পরেশ বড়ুয়াপন্থীরা এখনো আসামের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র আন্দোলন করে যাচ্ছে।
No comments