পারিবারিক হত্যাকাণ্ড দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত by ইফতেখার আহমেদ টিপু
দেশে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। পত্রপত্রিকার পাতা খুললে এখন হরহামেশাই দেখা যায়, সন্তানের হাতে বাবা খুন, বাবা বা মায়ের হাতে সন্তান কিংবা ভাইয়ের হাতে ভাই খুন এমন সংবাদ। অথচ পরিবার হলো মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কিন্তু এখন পরিবারের মধ্যেও নিরাপত্তা খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। সামাজিক অবয়ের অপপ্রভাবে পরিবারের সদস্যদের একের প্রতি অপরের মমত্ববোধ কমে যাওয়ায় ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য আপনজনের প্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে সারা দেশে তিন হাজার ৬১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় রাজধানীতে খুন হয়েছে ১৭২ জন। যার মধ্যে পারিবারিক ও সামাজিক কারণে খুন হয়েছেন ১৬২ জন। নৈতিক মূল্যবোধের অবয়, দাম্পত্য কলহ, অর্থলিপ্সা, মাদকাসক্তি ও অবৈধ দৈহিক সম্পর্কের কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা।
রাজধানীসহ সারা দেশে বাবা-মায়ের হাতে সন্তান হত্যার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি সন্তানের হাতে জন্মদাতা বাবা-মায়ের প্রাণহানিও ঘটছে। পরকীয়ার কারণে স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং স্ত্রীর হাতে স্বামীর খুন হওয়ার ঘটনাও কম নয়। ভাই-বোনও একে অপরকে হত্যা করে পথের কাঁটা সরিয়ে দিচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক অবয়ের পরিণতিতে।
স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের হাতে গত পাঁচ বছরে এক হাজার ১৭৫ জন নারী প্রাণ হারিয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আগের মতো বাংলাদেশে যৌথ পরিবার প্রথা নেই। মানুষ ক্রমেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। এর সাথে প্রযুক্তি ও বিত্ত-বৈভব মানুষের আবেগ ও মূল্যবোধে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এখন মানুষ যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ কারণে আপন মানুষটিকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করছে না।
আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধগুলোর মূল কারণ আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবয়। বিশেষ করে তরুণ ও যুবসমাজের অবয় এতটা মারাত্মক রূপ লাভ করেছে যে, তা আইন জারি করে বা শাস্তি দিয়ে দূর করা যাবে না। কারণ এই সমস্যাটি যতটা না শারীরিক, তারচেয়েও বেশি মনস্তাত্ত্বিক। এই ব্যাধি দূর করতে হলে অবশ্যই আমাদের পাশ্চাত্য সংস্কৃতির এই অবাধ আগ্রাসন রোধ করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে আমাদের ঐতিহ্যময় ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধ। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারই পারে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে। কারণ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করা কেবল রাষ্ট্রশক্তির পইে সম্ভব।
বিভিন্ন কারণে বর্তমান সময়ে পারিবারিক বন্ধন অনেক শিথিল হয়ে পড়েছে। মূলত এ শিথিলতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। দেশে সামাজিক স্বাস্থ্য সুরা বা উন্নয়নের কোনো পরিকল্পিত পদপে নেই। শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা না করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সুশীলসমাজকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিজ নিজ জায়গা থেকে সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যমগুলোতে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের ওপরও তারা গুরুত্ব দিয়েছেন।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, দ্রুত পরিবর্তনশীল এ সমাজের সাথে মধ্যবিত্ত সমাজ খাপ খাওয়াতে পারছে না। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে, বিভিন্ন সংস্কৃতির নেতিবাচক দিকগুলোর অনুপ্রবেশ ঘটেছে বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতিতে। অভিভাবকেরা সন্তানদের ভাষা বুঝতে পারছেন না। এরা অনেক সময় সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করছেন না, আলাপ-আলোচনায় সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন না। ফলে সন্তানের সাথে অভিভাবকের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আগে গ্রামে বা শহরে শিশু-কিশোররা কী করছে, সে সম্পর্কে পাড়া-প্রতিবেশী খবর রাখতেন। শিশুদের সামাজিকায়ন হতো খোলা মাঠে। কিন্তু এখন আর সে সুযোগ নেই। শিশুরা বাড়ি থেকে স্কুল, স্কুল থেকে কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। তারা কাদের সাথে মিশছে, অভিভাবকেরা তা জানতে পারছেন না। মা-বাবাকে সন্তানের প্রতি আরো যতœশীল হতে হবে। কোনো সন্তানের আচরণ যদি অস্বাভাবিক মনে হয় তবে ভালো করে খোঁজখবর নিতে হবে। যদি দেখা যায়,
সন্তান মাদকাসক্ত, তখন আর দেরি না করে মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হতে হবে অথবা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুরা অতি আদর বা অনাদরে বখে যেতে পারে। মা-বাবার সাথে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা জরুরি। পারিবারিক হত্যাকাণ্ড দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য যেমন অশনি সঙ্কেত হয়ে দেখা দিচ্ছে, তেমনি অবয়ের চরম অবস্থারই জানান দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রা পেতে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ।
Email: chairman@ifadgroup.com
রাজধানীসহ সারা দেশে বাবা-মায়ের হাতে সন্তান হত্যার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি সন্তানের হাতে জন্মদাতা বাবা-মায়ের প্রাণহানিও ঘটছে। পরকীয়ার কারণে স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং স্ত্রীর হাতে স্বামীর খুন হওয়ার ঘটনাও কম নয়। ভাই-বোনও একে অপরকে হত্যা করে পথের কাঁটা সরিয়ে দিচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক অবয়ের পরিণতিতে।
স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের হাতে গত পাঁচ বছরে এক হাজার ১৭৫ জন নারী প্রাণ হারিয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আগের মতো বাংলাদেশে যৌথ পরিবার প্রথা নেই। মানুষ ক্রমেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। এর সাথে প্রযুক্তি ও বিত্ত-বৈভব মানুষের আবেগ ও মূল্যবোধে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এখন মানুষ যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ কারণে আপন মানুষটিকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করছে না।
আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধগুলোর মূল কারণ আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবয়। বিশেষ করে তরুণ ও যুবসমাজের অবয় এতটা মারাত্মক রূপ লাভ করেছে যে, তা আইন জারি করে বা শাস্তি দিয়ে দূর করা যাবে না। কারণ এই সমস্যাটি যতটা না শারীরিক, তারচেয়েও বেশি মনস্তাত্ত্বিক। এই ব্যাধি দূর করতে হলে অবশ্যই আমাদের পাশ্চাত্য সংস্কৃতির এই অবাধ আগ্রাসন রোধ করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে আমাদের ঐতিহ্যময় ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধ। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারই পারে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে। কারণ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করা কেবল রাষ্ট্রশক্তির পইে সম্ভব।
বিভিন্ন কারণে বর্তমান সময়ে পারিবারিক বন্ধন অনেক শিথিল হয়ে পড়েছে। মূলত এ শিথিলতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। দেশে সামাজিক স্বাস্থ্য সুরা বা উন্নয়নের কোনো পরিকল্পিত পদপে নেই। শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা না করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সুশীলসমাজকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিজ নিজ জায়গা থেকে সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যমগুলোতে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের ওপরও তারা গুরুত্ব দিয়েছেন।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, দ্রুত পরিবর্তনশীল এ সমাজের সাথে মধ্যবিত্ত সমাজ খাপ খাওয়াতে পারছে না। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে, বিভিন্ন সংস্কৃতির নেতিবাচক দিকগুলোর অনুপ্রবেশ ঘটেছে বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতিতে। অভিভাবকেরা সন্তানদের ভাষা বুঝতে পারছেন না। এরা অনেক সময় সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করছেন না, আলাপ-আলোচনায় সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন না। ফলে সন্তানের সাথে অভিভাবকের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আগে গ্রামে বা শহরে শিশু-কিশোররা কী করছে, সে সম্পর্কে পাড়া-প্রতিবেশী খবর রাখতেন। শিশুদের সামাজিকায়ন হতো খোলা মাঠে। কিন্তু এখন আর সে সুযোগ নেই। শিশুরা বাড়ি থেকে স্কুল, স্কুল থেকে কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। তারা কাদের সাথে মিশছে, অভিভাবকেরা তা জানতে পারছেন না। মা-বাবাকে সন্তানের প্রতি আরো যতœশীল হতে হবে। কোনো সন্তানের আচরণ যদি অস্বাভাবিক মনে হয় তবে ভালো করে খোঁজখবর নিতে হবে। যদি দেখা যায়,
সন্তান মাদকাসক্ত, তখন আর দেরি না করে মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হতে হবে অথবা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুরা অতি আদর বা অনাদরে বখে যেতে পারে। মা-বাবার সাথে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা জরুরি। পারিবারিক হত্যাকাণ্ড দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য যেমন অশনি সঙ্কেত হয়ে দেখা দিচ্ছে, তেমনি অবয়ের চরম অবস্থারই জানান দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রা পেতে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ।
Email: chairman@ifadgroup.com
No comments