ব্রিগেন বৃত্তান্ত by মুহাম্মদ রোকনুদ্দৌলাহ্
নরওয়ের ব্রিগেন সাংস্কৃতিক কারণে
ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্য স্থানের মর্যাদায় ভূষিত হয় ১৯৭৯ সালে। ব্রিগেন বলতে
বোঝায় একধরনের অবকাঠামো বা স্থাপনা, যা কোনো পোতাশ্রয়ের উপকূলে জাহাজে মাল
ভরা ও খালাসের কাজে ব্যবহার করা হয়। এতে থাকে সারিবদ্ধ বিশেষ ধরনের দালান
বা পণ্যসামগ্রীর গুদাম। তার মানে ব্রিগেন হচ্ছে বিশেষ ধরনের বন্দর। একে
টিস্কেব্রিগেনও বলা হয়। ব্রিগেন মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিস্ময়কর
স্থাপনা। নরওয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্গেনে আসার পথে ফজোর্ডের পূর্ব
ধারে এর অবস্থান। ফজোর্ড হচ্ছে একধরনের দীর্ঘ ও সরু জলাশয়, যার ধার বেশ
খাড়া। বার্গেন শহর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১০৭০ সালে। আর এখানে হ্যানসিটিক লিগের
একটি কন্টর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৩৬০ সালে। হ্যানসিটিক লিগ বলতে বোঝায় উত্তর
ইউরোপের নগরগুলোর বাণিজ্যিক সঙ্ঘ, যা টিকে ছিল ১৩ থেকে ১৭ শতক পর্যন্ত। আর
কন্টর হচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যকেন্দ্র। ধরা যাক, হ্যানসিটিক লিগের যুগে
জার্মানির হামবুর্গ শহর নরওয়ের বার্গেন নগরে একটি বাণিজ্যকেন্দ্র খুলল।
তাহলে সাধারণ অর্থে এটি হলো বার্গেনে হামবুর্গের একটি কন্টর। একসময়
ব্রিগেনের প্রশাসনিক ভবনগুলোয় অনেক কেরানির বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়েছিল।
এরা হ্যানসিটিক লিগের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছিল। তবে বেশি এসেছিল জার্মানি
থেকে। ব্রিগেনের গুদামগুলো পণ্যসামগ্রীতে ভরা থাকত। এখানে বেশি পাওয়া যেত
নরওয়ের মাছ এবং ইউরোপের অন্যান্য এলাকার শস্যকণা। ইতিহাসের যুগপরিক্রমায়
বার্গেন শহর বহুবার আগুনে পুড়েছে। এখানকার বেশির ভাগ বাড়ি ছিল কাঠের তৈরী।
বার্গেনের অগ্নিকাণ্ডের বিশেষ কারণ ছিল ব্রিগেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
১৭০২ সালে ব্রিগেন অগ্নিদগ্ধ হয়। এর ফলে বার্গেন হয় ক্ষতিগ্রস্ত। ১৯৫৫ সালে
সর্বশেষ ব্রিগেন পোড়ে। তবে ঐতিহ্য ঠিক রেখে এটি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করা
হয়। এখন ব্রিগেনের পুরনো ভূদৃশ্যসহ মাত্র ৬২টি বাড়ি টিকে আছে। আর এগুলোই
বিশ্বঐতিহ্যের বিশেষ অংশ হিসেবে পরিচিত।
No comments