কাজের খোঁজে মালদ্বীপের রাস্তায় বাংলাদেশীদের অপেক্ষা by দীন ইসলাম
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী মালে,
হোলেমালে দ্বীপসহ বিভিন্ন স্থানে কাজের খোঁজে বাংলাদেশীদের অপেক্ষা করতে
দেখা যায়। প্রতিদিন সকালে মালের প্রাণকেন্দ্র মাজিদা সড়ক, হোলেমালের
বিভিন্ন বাঙালি গেস্ট হাউজে তারা কাজের জন্য অপেক্ষা করেন। এদের মধ্যে কেউ
কেউ একদিনের জন্য বিক্রি হয়ে যান। যারা বিক্রি হতে পারেন না, তাদের হতাশা
দীর্ঘ হয়। মালে ও হোলেমালে দ্বীপে সরজমিন গিয়ে শোনা যায়, অনেক স্বপ্ন নিয়ে
তারা মালদ্বীপে এসেছিলেন ভাগ্য বদলানোর আশায়। দালালদের মাধ্যমে তারা অনেক
স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে এসেছিলেন। কিন্তু কাজ পাননি। তাই দিনভিত্তিক কাজের আশায়
এখানে ভিড় করেন তারা। মালদ্বীপের যেসব জায়গায় দিনভিত্তিক শ্রমিক পাওয়া যায়
ওই জায়গার নাম প্রবাসী বাংলাদেশীরা বলেন, ‘আমিলার বাজার’ (আমিলা অর্থ
যাদের কোন কাজ নেই, কাগজপত্র নেই)। মুন্সীগঞ্জের নজরুল ইসলাম, চাঁদপুরের
শাহাবুদ্দিন, টাঙ্গাইলের আবদুস সামাদ, কুমিল্লার আলাল হোসেনসহ শতাধিক
মানুষের সঙ্গে গত ৮ই অক্টোবর কথা হয়। বাংলাদেশের সাংবাদিক পরিচয় জেনে তারা
তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা বলতে থাকেন। প্রবাসীরা জানান, প্রতিদিন সকালে কয়েক
হাজার বাংলাদেশী কাজের আশায় মালদ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হন। সকাল ছয়টা
থেকে নয়টার মধ্যে নিয়োগকর্তারাও ওই সব স্পটে আসেন। সারা দিন কাজ করিয়ে ১০০
থেকে ১৫০ রুপি (১ রুপি সমান বাংলাদেশী সাড়ে চার টাকা) পর্যন্ত দেবেন এমন
আশ্বাসে তাদের কাজে নিয়ে যান নিয়োগকর্তারা। বেশির ভাগ লোক নেয়া হয় বিভিন্ন
নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু অনেক সময় কাজ করিয়ে কেউ কেউ টাকা দেন না। টাকা
চাইলে তোর কাগজপত্র নেই বলে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়। হোলেমালে
দ্বীপের একটি গেস্ট হাউজে বসবাস করেন কুমিল্লার কামাল হোসেন। তিনি দৈনিক
ভিত্তিতে কাজ করেন। কামাল হোসেন জানান, দুই লাখ টাকা খরচ করে দুই বছর আগে
এসেছিলাম। বাংলাদেশে দালালেরা বলেছিল, ফাইভ স্টার হোটেল অর্থাৎ অনেক ভাল
চাকরি। কিন্তু এখানে এসে জানতে পারি সব ভুয়া। এখন তাদের কাজ খুঁজে নিতে হয়।
এমনকি মালে পুলিশও কাজ করতে তাদের নিয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় বেতনই দেয়
না। তাদের অনেকেই রাত কাটান রাস্তায়। আমিলার বাজারে কাজের অপেক্ষায় থাকা
মুন্সীগঞ্জের শামীম বিন মাহবুব বলেন, দেড় লাখ টাকা খরচ করে এক বছর আগে
মালদ্বীপে এসেছিলাম। এসে জানতে পারি, এখানে আমার জন্য কোন কাজের ব্যবস্থা
নেই। দেশে ফিরে যাবো ওই অবস্থাও নেই। তাই অবৈধ হয়ে এখানে কাজ করে যাচ্ছি।
মালদ্বীপে নিজেদের দুরবস্থার কথা বলতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ভাই দেশে যে জীবন ছিল,
সেই জীবন এর চেয়ে অনেক ভাল। এখন না পারি সইতে, না পারি দেশে চলে যেতে।
প্রবাসী এই বাংলাদেশীদের প্রায় সবারই অভিযোগে, মালদ্বীপের বাসিন্দারা
ইদানীং তাদের কাজ করিয়ে টাকা দিচ্ছেন না। কেন এ ঘটনা ঘটছে জানতে চাইলে তারা
বলেন, মালদ্বীপে এখন যত লোক দরকার, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশী চলে
এসেছেন।
No comments