শহীদ মিনার তুমি কার? by রাজু আহমেদ
পিয়াস করিমের লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভুঁইফোড় সংগঠন এতে বাধার সৃষ্টি করে। তাদের প্রতিবাদের কারণ হিসেবে তারা ড. পিয়াস করিমকে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী বলে উল্লেখ করে। পরিস্থিতি যখন ঘোলাটে হয় তখন ড. পিয়াস করিমের পরিবার থেকে তার লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে কবর দেয়া হয়। তাকে কবরে শায়িত করার মাধ্যমে উদ্ভূত এ বিতর্কের সমাধান হয়নি, বরং আরো বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে। যারা পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে ঢুকতে না দেয়ার পে আন্দোলন করেছিল, তারাই ড. পিয়াস করিমের স্ত্রীসহ দেশের ৯ জন বিশিষ্ট নাগরিককে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। ড. পিয়াস করিমসহ যে বিশিষ্ট নাগরিকদের শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে, এরা দেশের স্বাধীনতাবিরোধী না থাকলেও এরা আওয়ামী লীগবিরোধী ধরে নিয়েই এমনটি করা হয়েছে। এসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুঃশাসন এবং অন্যায় অপরাধের সমালোচনা করেছেন কিংবা এখনো করছেন। সুতরাং এসব বিশিষ্ট ব্যক্তিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পেছনে শুধু ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো নয় আওয়ামী লীগের স্পষ্ট মদদ যে রয়েছে, তা বোঝার জন্য খুব বেশি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে না।
শহীদ মিনার তুমি কার? যদি শুধু আওয়ামী লীগের হও তবে কোনো কথা নেই। আর যদি দাবি করো, তুমি সবারÑ তাহলে তোমার সাথে বহু কথা আছে। ড. পিয়াস করিমের লাশ তোমার বুকে স্থান পায়নি, সে জন্য তুমিও যেমন ব্যথিত আমরাও তেমন। তোমাকে কোনো এক তকমার বিনিময়ে যারা নিজেদের দাবি করতে চাচ্ছে, এরা তাদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তোমাকে কতটা ভালোবাসে, তা একবারো কি ভেবেছ? শহীদ মিনার এ দেশের সব মানুষের। প্রশাসন এটাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ইজারা দেয়নি, বরং দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছে মাত্র; কিন্তু বাম সংগঠনগুলো ড. পিয়াস করিমের লাশকে কেন্দ্র করে যে আচরণটি করল তা দেশের মানুষ কোনো দিনও কি ভুলতে পারবে? ড. পিয়াস করিমের লাশ তোমার বুকে রাখলে নাকি তুমি অপবিত্র হয়ে যেতে। জানতে ইচ্ছা করে, পিয়াস করিমের লাশ রাখলে যদি তোমার বুক অপবিত্র হয় তবে পবিত্র হবে কার লাশ রাখলে কিংবা কার পদধূলিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন উপাচার্য তোমার বুকে জুতা পায়ে হেঁটেছিল, সে দৃশ্য তুমি ভুলে যেতে পারো, কিন্তু আমরা আজো ভুলিনি। ফরহাদ মাজহারসহ যে বিশিষ্ট নাগরিকদের নকল তকমা লাগিয়ে তোমার থেকে দূরে রাখার দাবি করা হচ্ছে, সেই তাদের ছাড়া তুমি কি পূর্ণাঙ্গ? না তোমায় ছাড়া তারা? তোমার নসিব ভালো, যদি তোমার ভাষা থাকত আর তুমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে তবে তোমারও এ বঙ্গে জায়গা হতো কি না সন্দেহ। আইএসআইয়ের এদেশীয় চর অপবাদ দিয়ে তোমাকেও প্যাকেট করে পাকিস্তানে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হতো। এটাই আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতি। যতণ কেউ পে থাকবে ততণ তার সাত খুন মাফ আর বিপে গিয়ে পান থেকে চুন খসলেই সোজা শ্রীঘরে স্থায়ী ঠিকানা। পরমতসহিষ্ণুতার এত অভাব বিশ্বের অন্য কোনো জাতির মধ্যে নেই যতটা আমাদের মধ্যে। পৃথিবীতে কোনো শাসক গোষ্ঠীর মতাই আজ পর্যন্ত চিরস্থায়ী হয়নি। এ েেত্র স্বৈরতান্ত্রিকেরা যেভাবে মতাচ্যুত হয়েছে সেভাবে গণতান্ত্রিকেরাও কম হেনস্তার শিকার হয়নি। কাজেই বাংলাদেশের েেত্রও কারো মতা চিরস্থায়ী বলা যাবে না। শহীদ মিনারের মতো পবিত্র স্থানগুলো নিয়ে যদি রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়, তবে তা এ জাতির জন্য কোনো দিনও মঙ্গল বয়ে আনবে না। আজ যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে, সেই একই অভিযোগ তুলে ভবিষ্যতে যদি অন্য কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে অন্য কোনো মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিশিষ্টজনদেরকে শহীদ মিনারে
নিষিদ্ধ করে তখন করার থাকবে কী? এভাবে পারস্পরিক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চললে এ দেশে শান্তি আসবে কোন পথে? সুতরাং যাদেরকে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং যাদের ছত্রছায়ায় তারা এ কাজ করেছে, তাদেরকে ওইসব ব্যক্তির কাছে মা চাওয়া উচিত। ড. পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে স্থান না পেয়ে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র স্থান মসজিদে স্থান পেয়েছে এটা একার্থে অনেক কল্যাণের, তবুও শহীদ মিনারে তার স্থান পাওয়া উচিত ছিল। সুতরাং এ জন্যও অনুশোচনা করা উচিত। ব্যক্তি শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের প্রধান হতে পারেন, কিন্তু যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তখন এ দেশের প্রত্যেক মানুষের। সুতরাং তাকেই এ দেশের সব মানুষের স্বার্থ রা করতে হবে। এখানে নিজ দল কিংবা বিরোধী দলের মধ্যে পার্থক্য করা উচিত নয়।
raju69mathbaria@gmail.com
শহীদ মিনার তুমি কার? যদি শুধু আওয়ামী লীগের হও তবে কোনো কথা নেই। আর যদি দাবি করো, তুমি সবারÑ তাহলে তোমার সাথে বহু কথা আছে। ড. পিয়াস করিমের লাশ তোমার বুকে স্থান পায়নি, সে জন্য তুমিও যেমন ব্যথিত আমরাও তেমন। তোমাকে কোনো এক তকমার বিনিময়ে যারা নিজেদের দাবি করতে চাচ্ছে, এরা তাদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তোমাকে কতটা ভালোবাসে, তা একবারো কি ভেবেছ? শহীদ মিনার এ দেশের সব মানুষের। প্রশাসন এটাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ইজারা দেয়নি, বরং দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছে মাত্র; কিন্তু বাম সংগঠনগুলো ড. পিয়াস করিমের লাশকে কেন্দ্র করে যে আচরণটি করল তা দেশের মানুষ কোনো দিনও কি ভুলতে পারবে? ড. পিয়াস করিমের লাশ তোমার বুকে রাখলে নাকি তুমি অপবিত্র হয়ে যেতে। জানতে ইচ্ছা করে, পিয়াস করিমের লাশ রাখলে যদি তোমার বুক অপবিত্র হয় তবে পবিত্র হবে কার লাশ রাখলে কিংবা কার পদধূলিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন উপাচার্য তোমার বুকে জুতা পায়ে হেঁটেছিল, সে দৃশ্য তুমি ভুলে যেতে পারো, কিন্তু আমরা আজো ভুলিনি। ফরহাদ মাজহারসহ যে বিশিষ্ট নাগরিকদের নকল তকমা লাগিয়ে তোমার থেকে দূরে রাখার দাবি করা হচ্ছে, সেই তাদের ছাড়া তুমি কি পূর্ণাঙ্গ? না তোমায় ছাড়া তারা? তোমার নসিব ভালো, যদি তোমার ভাষা থাকত আর তুমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে তবে তোমারও এ বঙ্গে জায়গা হতো কি না সন্দেহ। আইএসআইয়ের এদেশীয় চর অপবাদ দিয়ে তোমাকেও প্যাকেট করে পাকিস্তানে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হতো। এটাই আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতি। যতণ কেউ পে থাকবে ততণ তার সাত খুন মাফ আর বিপে গিয়ে পান থেকে চুন খসলেই সোজা শ্রীঘরে স্থায়ী ঠিকানা। পরমতসহিষ্ণুতার এত অভাব বিশ্বের অন্য কোনো জাতির মধ্যে নেই যতটা আমাদের মধ্যে। পৃথিবীতে কোনো শাসক গোষ্ঠীর মতাই আজ পর্যন্ত চিরস্থায়ী হয়নি। এ েেত্র স্বৈরতান্ত্রিকেরা যেভাবে মতাচ্যুত হয়েছে সেভাবে গণতান্ত্রিকেরাও কম হেনস্তার শিকার হয়নি। কাজেই বাংলাদেশের েেত্রও কারো মতা চিরস্থায়ী বলা যাবে না। শহীদ মিনারের মতো পবিত্র স্থানগুলো নিয়ে যদি রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়, তবে তা এ জাতির জন্য কোনো দিনও মঙ্গল বয়ে আনবে না। আজ যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে, সেই একই অভিযোগ তুলে ভবিষ্যতে যদি অন্য কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে অন্য কোনো মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিশিষ্টজনদেরকে শহীদ মিনারে
নিষিদ্ধ করে তখন করার থাকবে কী? এভাবে পারস্পরিক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চললে এ দেশে শান্তি আসবে কোন পথে? সুতরাং যাদেরকে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং যাদের ছত্রছায়ায় তারা এ কাজ করেছে, তাদেরকে ওইসব ব্যক্তির কাছে মা চাওয়া উচিত। ড. পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে স্থান না পেয়ে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র স্থান মসজিদে স্থান পেয়েছে এটা একার্থে অনেক কল্যাণের, তবুও শহীদ মিনারে তার স্থান পাওয়া উচিত ছিল। সুতরাং এ জন্যও অনুশোচনা করা উচিত। ব্যক্তি শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের প্রধান হতে পারেন, কিন্তু যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তখন এ দেশের প্রত্যেক মানুষের। সুতরাং তাকেই এ দেশের সব মানুষের স্বার্থ রা করতে হবে। এখানে নিজ দল কিংবা বিরোধী দলের মধ্যে পার্থক্য করা উচিত নয়।
raju69mathbaria@gmail.com
No comments