স্বপ্নের সমৃদ্ধি এখনো মরীচিকা
২০১১ সালে বিদ্রোহ করে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন ঘটিয়েছিল লিবীয়দের একাংশ। তখন থেকে দেশটির অনেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ের মতো উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে বাস্তবতা হলো, লিবিয়া এখন সোমালিয়ার মতো একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। খবর এএফপির। উত্তর আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে এখন অস্ত্রশস্ত্রের অবাধ ছড়াছড়ি, মিলিশিয়া বাহিনীর দাপট এবং চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চলছে। গাদ্দাফি বন্দী ও নিহত হওয়ার তিন দিন পর, ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ লিবিয়ায় ‘পরিপূর্ণ স্বাধীনতা’ ঘোষণা করে। সেই ‘স্বাধীনতা’ ঘোষণার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে লিবিয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার কোনো সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। যদিও এটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। লিবিয়ায় এখন দুটি সরকার—একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আর অন্যটি স্বঘোষিত। বেনগাজি ও লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে সরকারপন্থী ও সরকারবিরোধী মিলিশিয়াদের মধ্যে ভয়াবহ লড়াই চলছে। তিন বছর আগে গাদ্দাফিবিরোধী বিপ্লবে অংশ নেওয়া ৩৯ বছর বয়সী শিক্ষক মোহাম্মদ আল-কারগালি বলেন, দেশের ‘স্বাধীনতা’ ঘোষিত হওয়ার পর তাঁরা ‘নতুন দুবাই’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
এর ভিত্তি ছিল তেলসম্পদ থেকে অর্জিত বিপুল পরিমাণের আয়। কিন্তু আজ লিবিয়ার পরিস্থিতি সোমালিয়া বা ইরাকের মতো হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এখনকার চেয়ে বরং গাদ্দাফির আমলই ভালো ছিল। অন্তত অনেক স্থিতিশীলতা ছিল। লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ একটি নতুন ও নিয়মিত সামরিক বাহিনী এমনকি পেশাদার পুলিশ বাহিনী গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিবর্তে তারা নির্ভর করছে মিলিশিয়াদের ওপর। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অধিকাংশ পশ্চিমা দেশই তাদের নাগরিকদের ত্রিপোলি থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে দুবাইয়ের অনুরূপ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন চলতি মাসের প্রথম দিকে লিবিয়া সফরে গিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হলে লিবিয়ায় সমৃদ্ধি এবং উন্নততর জীবনযাত্রা অর্জনের মতো ব্যাপারগুলো স্বপ্নই থেকে যাবে।
No comments