আইবিএ মানবাধিকার পুরস্কার পেলেন আদিলুর রহমান
‘মানবাধিকার রক্ষায় অসামান্য অবদানের’
জন্য ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন (আইবিএ) হিউম্যান রাইটস এওয়ার্ড জিতলেন
আদিলুর রহমান খান। গতকাল জাপানের রাজধানী টোকিওতে আইবিএন বার্ষিক সম্মেলনে
তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন আইবিএ’র প্রেসিডেন্ট মাইকেল রেনল্ড। রুল অব
ল’ সিম্পোজিয়ামে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে আইবিএ একটি বিবৃতি দিয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন এডভোকেট আদিলুর রহমান খান।
তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা
সেক্রেটারি। তার ক্যারিয়ারে আদিলুর রহমান খান নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত
হত্যাকাণ্ড, গুম, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর
চালানো সহিংসতার বিরুদ্ধে নিরলসভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৯৪ সালের
১০ই অক্টোবর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অধিকার। এ সংস্থা এরই মধ্যে অনেক সত্য
উদঘাটন করেছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে। এর ফলে,
তিনি ও তার পরিবারকে কর্তৃপক্ষের হাতে হয়রানি ও বিচারের মুখোমুখি হতে
হয়েছে। ২০১৩ সালের ১০ই অক্টোবর তাকে ‘মিথ্য ছবি ও তথ্য প্রকাশের’ দায়ে আটক ও
অভিযুক্ত করা হয়। বলা হয়, তার এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে। ২০১৩ সালের জুনে অধিকার একটি রিপোর্ট প্রকাশ
করে। তাতে মতিঝিলে ওই বছরের মে মাসে হেফাজতে ইসলামীর একটি র্যালিতে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৬১ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি
করা হয়। এ কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তার বিরুদ্ধে এ মামলাটি
এখনও আছে মুলতবি অবস্থায়। ফলে তিনি, তার পরিবার ও সহকর্মীরা রয়েছেন টানা
নজরদারির মধ্যে। তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হাতে হয়রান হচ্ছেন। পুরস্কার
বিতরণকালে আদিলুর রহমান খানের কাহিনীর গুরুত্ব বিশ্বের আইনজীবীদের উদ্দেশে
মাইকেল রেনল্ড তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই যে, আমাদের মনে রাখতে
হবে যে, ন্যায়বিচার, মানবাধিকারে সহায়তা করার ক্ষেত্রে ও আইনশৃঙ্খলা
সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আদিলুর
রহমান খানের সাহস, দৃঢ় সংকল্প ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা যে কোন স্থানের
আইনজীবীদের জন্য একটি উৎসাহ হয়ে থাকবে। পুরস্কার গ্রহণ করে আদিলুর রহমান
খান বলেন, আমার দেশে আইনের শাসন মারাত্মক হুমকির মুখে। নির্যাতিত ও তার
পরিবারের প্রতি যে মানবাধিকারের লঙ্ঘন করা হচ্ছে তাতে তারা সুবিচার পাচ্ছে
না। তাদের অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। তা সংবিধানে যা-ই লেখা থাকুক না কেন।
দমনমূলক আইন বিদ্যমান। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিকরণের কারণে
স্বাধীন বিচার বিভাগও আক্রান্ত। এখন বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষ তার জীবন নিয়ে
আতঙ্কে। এই যে পুরস্কার এটা শুধু আমাকে আমার কাজ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে
উৎসাহই যোগাবে না, এটা অধিকার-এর সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ে যেসব মানবাধিকার
কর্মী রয়েছেন তাদের সবার শক্তি বৃদ্ধি করবে, অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।
No comments