সিলেটে ভারপ্রাপ্ত মেয়র জটিলতা আইন, হাইকোর্ট কোন কিছুরই পরোয়া নেই by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
মেয়র বলে কথা। তার মুখের কথার সামনে যেন
তুচ্ছ হয়ে পড়েছে আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশ। চীন সফররত সিলেট সিটি
কর্পোরেশনের (এসসিসি) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে প্যানেলের প্রথম
সদস্যকে ডিঙিয়ে তাই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেলের
দ্বিতীয় সদস্য। প্যানেলের প্রথম সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব প্রদানে
হাইকোর্টের নির্দেশের পরও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে
গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্তও দায়িত্ব পালন করেন মেয়র প্যানেলের দ্বিতীয়
সদস্য এডভোকেট সালেহ আহমদই।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯-এর ২১ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ‘অনুপস্থিতি কিংবা অসুস্থতাহেতু বা অন্য কোন কারণে মেয়র দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে তিনি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত এই আইনের ধারা ২০ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে মেয়রের প্যানেলের কোন সদস্য মেয়রের সকল দায়িত্ব পালন করিবেন।’ আরিফুল হক চৌধুরী এসসিসি’র মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কেউই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাননি। সে হিসেবে প্রথমেই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার কথা কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর। কিন্তু কাউকে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব না দিয়েই সোমবার চীনে উড়াল দেন এসসিসি’র মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ নিয়ে নগর সংশ্লিষ্টদের মাঝে কানাকানি-গুঞ্জন শুরু হলে জানা যায় মেয়র আরিফ নাকি মেয়র প্যানেলের দ্বিতীয় সদস্য এডভোকেট সালেহ আহমদকে মৌখিক দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। ‘মুখের কথা’তেই মঙ্গলবার থেকে নগর ভবনে মেয়রের চেয়ারে বসেন সালেহ আহমদ। ক্ষুব্ধ হন রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। মঙ্গলবারই হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। বুধবার শুনানি শেষে হাইকোর্ট কয়েস লোদীর হাতেই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্তও দায়িত্ব বুঝে পাননি কয়েস লোদী।
আরিফুল হক চৌধুরী ও রেজাউল হাসান কয়েস লোদী একই আদর্শের অনুসারী হলেও দু’জনের মাঝে তেমন একটা বনিবনা নেই। মেয়র আরিফ পারতপক্ষে কয়েস লোদীকে এড়িয়েই চলতে চান। কয়েস লোদীকে ঘিরে কি যেন এক অজানা আতঙ্ক মেয়র আরিফের। ক’দিন আগে থাইল্যান্ড সফরের সময় কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে যাওয়ার পেছনেও এ আতঙ্ক কাজ করেছে বলে অনেকের সন্দেহ। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য অনেকটা গোপনেই থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন মেয়র আরিফ। ফিরে এসে জানিয়েছিলেন, হঠাৎ করেই যেতে হয়েছিল তাকে। কয়েস লোদী মেয়র প্যানেলে থাকায় মেয়র আরিফের অস্বস্তি যেন কাটছেই না। কয়েস লোদীকে দায়িত্ব দিতে হবে বলে চীন সফরের সময়ও এ প্রসঙ্গে চুপ করে থাকেন মেয়র আরিফ। যা হয় হবে, তবুও কয়েস লোদীর হাতে যেন দায়িত্ব না যায়। সিটি কর্পোরেশন আইনের ২১ নম্বর ধারাটি তাই বেমালুম ভুলে যান তিনি। আরিফুল হক চৌধুরী দেশ ছেড়ে চীনে যাওয়ার পরদিন থেকেই নগর ভবনে তার চেয়ারে বসছেন সিটি কাউন্সিলর সালেহ আহমদ। মেয়রের কাছ থেকে মৌখিক দায়িত্ব পেয়ে আপাতত তিনিই নগরপিতা। যদিও মেয়র প্যানেলে তার অবস্থান কয়েস লোদীর পরেই। স্বভাবতই কয়েস লোদী তা মেনে নিতে পারেননি। হাইকোর্ট থেকে নিজের অধিকার আদায় করেন তিনি।
হাইকোর্টের নির্দেশের পরও দায়িত্ব না পেয়ে মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য রেজাউল হাসান কয়েস লোদী যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। মানবজমিনকে তিনি বলেন, এ কোন দেশে আছি আমরা। আইনের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধা দেখানোরও প্রয়োজন মনে করছে না সিটি কর্পোরেশনের মতো প্রতিনিধিত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান। কোন ধরনের অফিস আদেশ ছাড়াই কেউ একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রধান চেয়ারে বসতে পারে- এটা ভাবতেও অবাক হতে হয়। হাইকোর্টের আদেশের পরও যদি টনক না নড়ে সেখানে কি বলার আছে?
সিটি কাউন্সিলর ও মেয়র প্যানেলের দ্বিতীয় সদস্য এডভোকেট সালেহ আহমদ মানবজমিনকে বলেন, মেয়র আমাকে মৌখিক দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। আমি না পেলেও অফিস আদেশ ফাইলে সংরক্ষিত আছে বলে জানি। হাইকোর্টের আদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিটের বিবাদী আমি নই। তাই আদেশ কার্যকর করার ক্ষমতাও আমার নেই। তাছাড়া আদেশের কোন সত্যায়িত অনুলিপিও আমার হাতে আসেনি। তিনি বলেন, কয়েস লোদী আমার সহকর্মী। তার সঙ্গে আমার কোন বিরোধ নেই। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সচিব লুৎফুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে (০১৭৩৩-৮১৫৪২৮) যোগাযোগ করা হয় বিকাল ৫টা ২৮ মিনিটে। পরিচয় জানতে পেরেই সংযোগটি ‘হোল্ড’ করে দেন তিনি। অপরপ্রান্তে সুর বাজতে থাকে। এক সময় সংযোগটি কেটেই দেন তিনি। আবার চেষ্টা করলে বন্ধ পাওয়া যায় তার ফোনটি।
No comments