চিকিৎসায় বিপ্লব আনতে পারে মলিকিউলার কাঁচি
একই ওষুধ সবার কাজে লাগে না। তাই জিন
থেরাপি চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে। যেমন মলিকিউলার কাঁচি। এর কাজ
শরীরের কোষকে সংক্রমণমুক্ত রাখা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফল হলে মানুষের উপরেও
এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীরা এক চমকপ্রদ সাফল্য হাসিল
করেছেন। হামবুর্গের গবেষকদের সঙ্গে তারা এমন এক এনজাইম তৈরি করেছেন, যা
অনেকটা কাঁচির মতো কাজ করে। তাই তারা এটিকে মলিকিউলার বা আণবিক কাঁচি
বলছেন। এই এনজাইম ভাইরাস জেনোম চিনতে পারে এবং সংক্রমিত কোষের জেনোম থেকে
সেটিকে বের করতে পারে। বের করে আনা জেনেটিক অংশটি বিচ্ছিন্ন করলে কোষ আবার
সুস্থ হয়ে ওঠে।
সেল-কালচার নিয়ে সফল প্রচেষ্টার পর গবেষকরা এবার এই কাঁচি দিয়ে ইঁদুরের চিকিৎসা করেছেন। ড্রেসডেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাংক বুখহলৎস বলেন, ‘যে ইঁদুরগুলো মলিকিউলার কাঁচি বহন করছে, সেগুলোর েেত্র আমরা সংক্রমণ দূর করতে পেরেছি। কয়েকটি ক্ষেত্রে এমনকি ইঁদুরের শরীরে সংক্রমণের কোনো চিহ্নই আর অবশিষ্ট ছিল না। এরপর মানুষের শরীরেও এই প্রক্রিয়া একইভাবে কাজ করবে বলে আমাদের আশা।’
এই গবেষণার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সংক্রমণ ঘটার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওষুধ দিয়ে ভাইরাসকে কাবু করা যাবে, যাতে তা ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এই চিকিৎসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তথাকথিত ‘মিসিসিপি বেবি’, এই হাসপাতালে যার চিকিৎসা চলছে। জন্মের মাত্র ৩০ ঘণ্টা পর মেয়েটিকে এমন ওষুধ দেয়া হয়, যা প্রাপ্তবয়স্ক এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট। এইডস ভাইরাস যেন শরীরে ছড়িয়ে না পড়তে পারে, সেটাই ছিল এর উদ্দেশ্য। প্রায় দুই বছর ধরে মনে হয়েছিল, ছোট্ট এই মেয়েটি এইচআইভি সংক্রমণ সেরে গেছে। এর জন্য কোনো ওষুধ খেতে হয়নি। কিন্তু এখন এইডস ভাইরাস আবার ফিরে এসেছে। রোগ থামানো সম্ভব না হলেও এই কেসটি নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এর ফলে এইডস গবেষণায় অগ্রগতি ঘটবে। মলিকিউলার কাঁচি মানুষের ক্ষেত্রেও কাজ করে কিনা, জার্মানির ড্রেসডেন শহরের গবেষকরা তা শিগগিরই পরীক্ষা করে দেখতে চান।
এমন পরীক্ষার ব্যয়ভার বহন করার জন্য বিনিয়োগকারীও পাওয়া গেছে। অধ্যাপক বুখহলৎস বলেন, ‘এর ফলাফল কী হয়, তা জানতে আরো অপেক্ষা করতে হবে। আমার আশা, ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এমন চিকিৎসা পদ্ধতি সৃষ্টি হবে, যা সাধারণ রোগীদের উপরও আমরা প্রয়োগ করতে পারব।’
প্রক্রিয়াটা এ রকম- গবেষকরা তাদের মলিকিউলার কাঁচি রোগীদের রক্তের কোষে ঢুকিয়ে দেবেন। তারপর পরিবর্তিত কোষ আবার ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢোকানো হবে। বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে তারা গোটা ব্লাড সিস্টেম পরিশোধন করতে পারবে। চিকিৎসা যেহেতু নিজস্ব রক্তকোষেই ঘটছে, এ যাবৎ চালানো অন্যান্য থেরাপির তুলনায় তা শরীরের পক্ষে গ্রহণ করা অনেক সহজ হবে।
No comments