নরপশু ধর্ষক-চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
নারীর প্রতি নানামুখী সহিংসতায় এমনিতেই আমাদের সমাজ এক অলংঘনীয় কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছে বহু বছর ধরে, তার ওপর ধর্ষণের মতো পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা যখন ঘটে, তখন আমরা শিউরে উঠি।
প্রশ্ন জাগে, সভ্যতা যখন ক্রমেই উন্নতির নতুন নতুন সিঁড়ি ভাঙছে, তখনও নারীর প্রতি কেন ধর্ষণ, এসিড সন্ত্রাসের মতো ঘটনা কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ এক অমীমাংসিত প্রশ্নই বটে। শুধু আমাদের দেশেরই নয়, নিকট প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের দেশে দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। গত মাসে দিলি্লতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যু ভারত জুড়ে তোলপাড় তুলেছে। এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ আমাদের গণমাধ্যমেও লেগেছে। ভারতের ওই নৃশংস ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে ঘটে গেল প্রায় একই ধরনের একটি ঘটনা। টানা চারদিন গণধর্ষণের শিকার হয়েছে টাঙ্গাইলের হতভাগ্য এক কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর চিকিৎসা অবহেলায় কেটেছে তার ২১ দিন। এর মধ্যে অসহায় মেয়েটিকে বাবা তাড়িয়ে দিলে সে আশ্রয় নেয় মামার বাড়ি। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। অপ্রিয় হলেও সত্য, এতবড় একটা নৃশংস ঘটনা কিন্তু প্রথম দিকে আমাদের গণমাধ্যমের দৃষ্টি প্রায় এড়িয়ে গেছে। যারা ছেপেছেন প্রায় গুরুত্বহীনভাবে। 'নরপশুদের রুখতে হবে' শিরোনামে শুধু সমকাল ২ জানুয়ারি এ বর্বরোচিত ঘটনা প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে ৫ কলামে লিড করেছে। পরে ঘটনার ভয়াবহতা অনুধাবন করে অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমও গুরুত্ব দিয়ে ফলোআপ প্রকাশ করেছে। এতবড় মর্মান্তিক ঘটনার ক্ষেত্রে অন্তত এটুকু স্বস্তি যে, এই পাশবিক অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, পাঁচজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। অপরাধীর কঠোর শাস্তির দাবিতে এখন সারাদেশ সোচ্চার। আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী মেয়েটির অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দেন। চিকিৎসক বলেছেন, যত না শারীরিক, তার চেয়েও বেশি মানসিকভাবে ভারসাম্যহারা মেয়েটি। সে পুরুষ দেখলেই আর্তনাদ করে ওঠে। টাঙ্গাইলের মধুপুরের এই কিশোরীর আর্তনাদ এবং আতঙ্ক আমাদের সমগ্র জাতির জন্যই আর্তনাদ আর আতঙ্ক বলে আমরা মনে করি। তার বাবা যে মাসহ এই আক্রান্ত-অসহায় কিশোরীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন, তাও আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সংকীর্ণ মানসিক গ্গ্নানির পরিচায়ক। সমাজে নারী নির্যাতন তথা নারীর প্রতি যাবতীয় সহিংসতার মূলে এখনও এই সেকেলে দৃষ্টিভঙ্গিই দায়ী। ধর্ষক, নারী নির্যাতক নরপশুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে শুধু আইনি প্রতিরোধ বা শাস্তিই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তোলা। প্রয়োজন নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। সমকালের প্রতিবেদনে আমরা এও জেনেছি যে, প্রয়োজন হলে সরকার এই কিশোরীকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবে। আমরা সরকারের এ মনোভাবকে সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে এ কথাও বলতে চাই, ধর্ষণের মতো বর্বরোচিত অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যথার্থ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন, বিচারে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন। আমরা চাই_ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, এনজিওসহ সামাজিক ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনেও ভূমিকা রাখুক। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক।
No comments