হাতিরঝিল প্রকল্প-নতুনের কারিগরদের অভিনন্দন
যানবাহনের ক্রমবর্ধমান স্রোত সামাল দিতে গত কয়েক দশকে যদিও ঢাকা মহানগরীতে একের পর এক খাল ভরাট করে কিংবা কালভার্টে ঢেকে দিয়ে সড়ক নির্মিত হয়েছে; বাস্তবে যানজট কমেনি। বরং পরিবেশগত বিপর্যয় ঘনীভূত হয়েছে।
বেগুনবাড়ী খাল ও হাতিরঝিলও একই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছিল। কিন্তু সেখানে একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে রাজধানীর বিস্তীর্ণ এলাকার যানজট নিরসন এবং ইট-কাঠের বদ্ধ নগরীতে মুক্ত হাওয়া ও স্বাস্থ্যকর জলাভূমি প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি হলো। প্রকল্প এলাকার নয়নাভিরাম দৃশ্য ও আধুনিক নাগরিক সুবিধার কারণে ঢাকার সাংস্কৃতিক মর্যাদাও নিঃসন্দেহে অন্য উচ্চতায় পৌঁছবে। নিজস্ব নকশা, অর্থ, প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতা ব্যবহারের মাধ্যমে যেভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলো, তাও কম শ্লাঘার নয়। আমরা বিশ্বাস করি, হাতিরঝিলের অভিজ্ঞতা আগামী দিনের নগর উন্নয়নে প্রেরণা, উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে চলবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বুয়েটসহ অন্যান্য পক্ষকে সমকালের অভিনন্দন। অবারিত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য অভিনন্দন পেতে পারে খোদ সরকারও। সাধারণ নাগরিক, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতাও মনে রাখতে হবে। বলা বাহুল্য, বিভিন্ন পক্ষের আলোচনা-সমালোচনা ও নজরদারি প্রকল্পটিকে সুচারু করতে সহায়তা করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতাতেও প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আমরা আশা করি, ইউ লুপসহ মূল প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত অতিরিক্ত কাজগুলোও যথাসময়ে সম্পন্ন হবে। তার আগ পর্যন্ত যানজট নিরসনে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত কার্যকারিতা নাও মিলতে পারে। এই বাস্তবতা নাগরিকরা বুঝবেন বলে প্রত্যাশা। জমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পান, সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। সামষ্টিক কল্যাণের স্বার্থে তারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন; তার মর্যাদা দিতেই হবে। পরিবর্তিত হাতিরঝিলের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখা হবে সামনের দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের তৎপরতার পাশাপাশি প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা। নগরীর স্বাস্থ্য ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় কর্মরত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগ সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। সবার আন্তরিকতা ছাড়া বৃহৎ এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ সুফল যে মিলবে না_ সে কথাটিই আমাদের মনে রাখতে হবে।
No comments