বিচিত্রিতা- আত্মহত্যার অরণ্য!
জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন— শোনা গেল লাশকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে; কাল রাতে—ফাল্গুনের রাতের আঁধারে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ মরিবার হলো তার সাধ...রূপসী বাংলার এই কবির কালজয়ী কবিতাটি যেন মূর্ত জাপানের সেই বনে।
কে জানে কোন তাড়নায় সেখানে গিয়ে জীবনের ইতি টানার সাধ জাগে কিছু মানুষের। ষাটের দশক (গত শতক) থেকে আওকিগাহারা ফরেস্টে কত লোক যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে—এর কোনো হিসাব নেই। প্রতিবছর ওই বন থেকে গড়ে ৫০টি করে আত্মহত্যা করা লোকের লাশ সরায় কর্তৃপক্ষ।
হনশু দ্বীপে অবস্থিত জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট ফুজির পাদদেশে রয়েছে সেই চিরসবুজ বন। সেখানে যেন আঁধার আর মৃত্যুর নিবিড় সখ্য। বনটির অন্য নামও আছে। গাছপালার প্রাচুর্যের জন্য কেউ বলে ‘বৃক্ষ-সাগর’, কেউ বা বলে ‘শয়তানের বন’। তবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ‘আত্মহত্যার বন’ বলে।
বিভিন্ন জরিপের ফলাফল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে আত্মহত্যার স্থান হিসেবে আওকিগাহারা ফরেস্ট রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এক নম্বর স্থানটি দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর ঝুলন্ত সেতু ‘দ্য গোল্ডেন গেট ব্রিজ’।
জনশ্রুতি আছে, ১৯৬০ সালে প্রকাশিত জাপানি লেখক সেইচো মাতসুমোতোর একটি উপন্যাস আত্মহত্যার এসব ঘটনার পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছে। বইটির নাম কুরোয় কাইজু। এর অর্থ ‘বৃক্ষের কৃষ্ণসাগর’। আওকিগাহারা বনে দুই প্রেমিক-প্রেমিকার আত্মহননের মধ্যে এই উপন্যাসের কাহিনির সমাপ্তি। অনেকে মনে করেন, বহুল পঠিত এই উপন্যাসটি যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন এক প্রগাঢ় আবেগ ছাপ ফেলেছে, আত্মহননে প্ররোচিত হয়েছেন তাঁরা। এভাবে আওকিগাহারার বনে গিয়ে গাছের ডালে ফাঁস দিয়ে ঝুলে জীবনপ্রদীপ নিভিয়েছে শত শত মানুষ।
১৯৯৩ সালে অপর জাপানি লেখক ওয়াতারু তসুরুমুইয়ের একটি বই প্রকাশিত হয়, যার নাম দ্য কমপ্লিট সুইসাইড ম্যানুয়াল। বিতর্কিত বইটি শিগগিরই সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের স্থান দখল করে। এতে আত্মহত্যার বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বইটিতেও আওকিগাহারা বন আত্মহত্যার একটি সঠিক স্থান হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। এ যেন এক সহজ পথ। ওই বনে গিয়ে সবুজের মধ্যে হারিয়ে যাও। তারপর কোনো গাছে উঠে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ো ডালে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ধনধান্যে সমৃদ্ধ জাপানে আত্মহত্যার প্রবণতা খুব বেশি। প্রতিবছর সে দেশে গড়ে ৩০ হাজারের বেশি লোক আত্মহত্যা করে থাকে। এসব ঘটনায় গভীর এক ক্ষত ওই আওকিগাহারা বন।
বনটি নিয়ে আরও যেসব কিংবদন্তি আছে, এর মধ্যে একটি রয়েছে প্রাচীন এক নির্মম ইতিহাসকে ঘিরে। একসময় জাপানে এখনকার মতো সচ্ছল অবস্থা ছিল না। দুর্ভিক্ষের কারণে অনেক পরিবারেই নেমে আসত নিদারুণ দুর্ভোগ। না খেয়ে মারা যেত অনেকে। এই অনাহারের কষ্ট লাঘবে পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া হতো ওই বনে। এতে পরিবারে খাওয়ার মুখ কমে যেত। তুলনামূলকভাবে অন্যরা থাকত ভালো। আর যাদের বনে রেখে আসা হতো, না খেয়ে খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যেত তারা।
অনেকের মতে, অনাহারে কষ্ট পেয়ে মারা যাওয়া এসব দুর্ভাগা মানুষের অতৃপ্ত আত্মা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই বনে। তারাই বেড়াতে যাওয়া মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। তবে এ আত্মহত্যার প্রবণতার পেছনে আসল রহস্য কী, কে জানে? প্রসঙ্গত, আজুসা হায়ানোর মতো একজন গবেষক ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এ নিয়ে গবেষণা করে কোনো কিনারা করতে পারেননি।
শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
সূত্র: ওয়াশিংটন টাইমস, ডেইলি মেইল অনলাইন।
হনশু দ্বীপে অবস্থিত জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট ফুজির পাদদেশে রয়েছে সেই চিরসবুজ বন। সেখানে যেন আঁধার আর মৃত্যুর নিবিড় সখ্য। বনটির অন্য নামও আছে। গাছপালার প্রাচুর্যের জন্য কেউ বলে ‘বৃক্ষ-সাগর’, কেউ বা বলে ‘শয়তানের বন’। তবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ‘আত্মহত্যার বন’ বলে।
বিভিন্ন জরিপের ফলাফল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে আত্মহত্যার স্থান হিসেবে আওকিগাহারা ফরেস্ট রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এক নম্বর স্থানটি দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর ঝুলন্ত সেতু ‘দ্য গোল্ডেন গেট ব্রিজ’।
জনশ্রুতি আছে, ১৯৬০ সালে প্রকাশিত জাপানি লেখক সেইচো মাতসুমোতোর একটি উপন্যাস আত্মহত্যার এসব ঘটনার পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছে। বইটির নাম কুরোয় কাইজু। এর অর্থ ‘বৃক্ষের কৃষ্ণসাগর’। আওকিগাহারা বনে দুই প্রেমিক-প্রেমিকার আত্মহননের মধ্যে এই উপন্যাসের কাহিনির সমাপ্তি। অনেকে মনে করেন, বহুল পঠিত এই উপন্যাসটি যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন এক প্রগাঢ় আবেগ ছাপ ফেলেছে, আত্মহননে প্ররোচিত হয়েছেন তাঁরা। এভাবে আওকিগাহারার বনে গিয়ে গাছের ডালে ফাঁস দিয়ে ঝুলে জীবনপ্রদীপ নিভিয়েছে শত শত মানুষ।
১৯৯৩ সালে অপর জাপানি লেখক ওয়াতারু তসুরুমুইয়ের একটি বই প্রকাশিত হয়, যার নাম দ্য কমপ্লিট সুইসাইড ম্যানুয়াল। বিতর্কিত বইটি শিগগিরই সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের স্থান দখল করে। এতে আত্মহত্যার বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বইটিতেও আওকিগাহারা বন আত্মহত্যার একটি সঠিক স্থান হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। এ যেন এক সহজ পথ। ওই বনে গিয়ে সবুজের মধ্যে হারিয়ে যাও। তারপর কোনো গাছে উঠে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ো ডালে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ধনধান্যে সমৃদ্ধ জাপানে আত্মহত্যার প্রবণতা খুব বেশি। প্রতিবছর সে দেশে গড়ে ৩০ হাজারের বেশি লোক আত্মহত্যা করে থাকে। এসব ঘটনায় গভীর এক ক্ষত ওই আওকিগাহারা বন।
বনটি নিয়ে আরও যেসব কিংবদন্তি আছে, এর মধ্যে একটি রয়েছে প্রাচীন এক নির্মম ইতিহাসকে ঘিরে। একসময় জাপানে এখনকার মতো সচ্ছল অবস্থা ছিল না। দুর্ভিক্ষের কারণে অনেক পরিবারেই নেমে আসত নিদারুণ দুর্ভোগ। না খেয়ে মারা যেত অনেকে। এই অনাহারের কষ্ট লাঘবে পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া হতো ওই বনে। এতে পরিবারে খাওয়ার মুখ কমে যেত। তুলনামূলকভাবে অন্যরা থাকত ভালো। আর যাদের বনে রেখে আসা হতো, না খেয়ে খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যেত তারা।
অনেকের মতে, অনাহারে কষ্ট পেয়ে মারা যাওয়া এসব দুর্ভাগা মানুষের অতৃপ্ত আত্মা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই বনে। তারাই বেড়াতে যাওয়া মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। তবে এ আত্মহত্যার প্রবণতার পেছনে আসল রহস্য কী, কে জানে? প্রসঙ্গত, আজুসা হায়ানোর মতো একজন গবেষক ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এ নিয়ে গবেষণা করে কোনো কিনারা করতে পারেননি।
শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
সূত্র: ওয়াশিংটন টাইমস, ডেইলি মেইল অনলাইন।
No comments