সৌদি গেজেটের নিবন্ধ-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর আহ্বান
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের গণমাধ্যমেই বাংলাদেশ মানেই নেতিবাচক সংবাদের একটি উপাদান। দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গুটিকয়েক প্রবাসী বাংলাদেশির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডই এর কারণ।
এতে বাংলাদেশ ও এর প্রবাসীদের প্রতি মারাত্মক অবিচারই করছে মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমগুলো। প্রকৃতপক্ষে জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ হলেও বাংলাদেশ অগ্রসরমান একটি দেশ এবং এর নাগরিকরা খুবই কর্মঠ ও লক্ষ্যভেদী।
বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মূল্যায়ন তুলে ধরে গত বুধবার সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক 'সৌদি গেজেটে' একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর জন্য মধ্যপ্রাচ্যের মানুষকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমাজ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক তারিক এ. আল-মাঈনার লেখা 'বাংলাদেশ অন দ্য মুভ' (উন্নয়নের পথেই বাংলাদেশ) শীর্ষক এই নিবন্ধটিতে মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে।
নিবন্ধটিতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শ্রমিকের চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি থেকে জীবিকা অর্জনের জন্য এখানে ২০ লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি এসে কাজ করছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের আমাদের গণমাধ্যমের নেতিবাচক খবরে দেখা যায়। অনেক সময় সেটা হয় ভুল কারণে বা ভুল বোঝাবুঝির ফলে। তারা যে দেশের বাসিন্দা, সে দেশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয় এতে। বিদেশ থেকে আসা শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে কম পারিশ্রমিকে কাজ করা সত্ত্বেও তারা গণমাধ্যমে চিহ্নিত হয়ে গেছে (নেতিবাচক হিসেবে)। এটা তাদের প্রতি অবিচার।
পরিতাপের আরো বিষয় আছে। সেটা হলো- আমাদের গণমাধ্যম কেবল অল্পকিছু বাংলাদেশির কুকর্মের কথাই ফলাও করে প্রচার করে। ফলে সব প্রবাসী বাংলাদেশি সম্পর্কেই নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ তাঁদের মধ্যে ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, অধ্যাপক, ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গাড়িচালক, সুইপার, দারোয়ান, কৃষকও রয়েছেন।
এটা সত্য যে, ১৫ কোটি মানুষের ভার নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতোই বহির্বিশ্বে সুযোগ খুঁজছে। কিন্তু তাই বলে তাদের ভূমিকা ও মর্যাদাকে ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই।
গভীরভাবে দেখলে বাংলাদেশের চিত্র আরো ভিন্ন। দেশটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। একটা সফর দেশটি সম্পর্কে ভুল ধারণা পাল্টে যাবে। সেখানে গিয়ে বোঝার উপায় নেই যে, এটি ১৫ কোটি মানুষের ভারে ন্যুব্জ একটি দেশ, যেখানকার মানুষ অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
২০২১ সালের মধ্যেই দেশটির মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এটা অর্জন করা মোটেই অসম্ভব নয়। তাদের এমন কিছু সম্পদ রয়েছে, যা অনেক দেশে নেই। অত্যন্ত উর্বর জমির ফলে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে পরিপূর্ণ, যেটা পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই দুর্লভ। বাংলাদেশিদের বড় বৈশিষ্ট্য, তারা অত্যন্ত কর্মঠ। সেখানকার শহর-গ্রামে গেলেই দেখা যায়, মানুষ জীবিকার জন্য কত কী করছে। এত প্রাণশক্তি যাদের, তাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো বেশি কঠিন নয়।
সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছেন এখানকার অনেক কৃতী সন্তান। ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬০টিরও বেশি দেশে অনুসরণ করা হয়। শিকাগোর ১০০ তলা জন হ্যানকক সেন্টার ও ১১০ তলা সিয়ার্স টাওয়ারের নকশা করেছিলেন বাংলাদেশি নির্মাণ প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান। ১৯৭৩ সালে নির্মিত এ ভবনগুলো সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন ছিল। ১৯৯৮ সালে শিকাগো কর্তৃপক্ষ সিয়ার্স টাওয়ারের সামনের রাস্তাটির নাম পরিবর্তন করে 'ফজলুর আর খান ওয়ে' রাখে। হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট বাংলাদেশি আইনজীবী আইরিন খান ২০০১ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রথম নারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি এ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম এশিয়ান। এখানে তিনি আট বছরেরও বেশি কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশি ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল দেশটির ফ্যাশনশিল্পকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তাঁর অধীনে বর্তমানে ৩৫ হাজারেরও বেশি বুননশিল্পী কাজ করছেন। তাঁর পণ্যের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে পৌঁছে গেছে।
এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে অনেক বাংলাদেশি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। দেশটি নিজেও অর্থনীতিতে ক্রমাগত উন্নতি করছে। বস্ত্রশিল্পে ব্যাপক উন্নতির ফলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো তাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। জাপান থেকে শুরু করে আমেরিকার অনেক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শাখা স্থাপন করছে।
বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর সময় এসেছে। দেশটি নিয়ে গবেষণায় আমি আমার পাঠকদের এটা অন্তত নিশ্চিত করে বলতে পারি, তাদের মধ্যে এমন একটা প্রাণবন্ততা আছে, যার ফলে তাদের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব। তাই বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই উন্নতির দিকে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মূল্যায়ন তুলে ধরে গত বুধবার সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক 'সৌদি গেজেটে' একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর জন্য মধ্যপ্রাচ্যের মানুষকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমাজ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক তারিক এ. আল-মাঈনার লেখা 'বাংলাদেশ অন দ্য মুভ' (উন্নয়নের পথেই বাংলাদেশ) শীর্ষক এই নিবন্ধটিতে মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে।
নিবন্ধটিতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শ্রমিকের চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি থেকে জীবিকা অর্জনের জন্য এখানে ২০ লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি এসে কাজ করছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের আমাদের গণমাধ্যমের নেতিবাচক খবরে দেখা যায়। অনেক সময় সেটা হয় ভুল কারণে বা ভুল বোঝাবুঝির ফলে। তারা যে দেশের বাসিন্দা, সে দেশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয় এতে। বিদেশ থেকে আসা শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে কম পারিশ্রমিকে কাজ করা সত্ত্বেও তারা গণমাধ্যমে চিহ্নিত হয়ে গেছে (নেতিবাচক হিসেবে)। এটা তাদের প্রতি অবিচার।
পরিতাপের আরো বিষয় আছে। সেটা হলো- আমাদের গণমাধ্যম কেবল অল্পকিছু বাংলাদেশির কুকর্মের কথাই ফলাও করে প্রচার করে। ফলে সব প্রবাসী বাংলাদেশি সম্পর্কেই নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ তাঁদের মধ্যে ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, অধ্যাপক, ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গাড়িচালক, সুইপার, দারোয়ান, কৃষকও রয়েছেন।
এটা সত্য যে, ১৫ কোটি মানুষের ভার নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতোই বহির্বিশ্বে সুযোগ খুঁজছে। কিন্তু তাই বলে তাদের ভূমিকা ও মর্যাদাকে ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই।
গভীরভাবে দেখলে বাংলাদেশের চিত্র আরো ভিন্ন। দেশটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। একটা সফর দেশটি সম্পর্কে ভুল ধারণা পাল্টে যাবে। সেখানে গিয়ে বোঝার উপায় নেই যে, এটি ১৫ কোটি মানুষের ভারে ন্যুব্জ একটি দেশ, যেখানকার মানুষ অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
২০২১ সালের মধ্যেই দেশটির মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এটা অর্জন করা মোটেই অসম্ভব নয়। তাদের এমন কিছু সম্পদ রয়েছে, যা অনেক দেশে নেই। অত্যন্ত উর্বর জমির ফলে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে পরিপূর্ণ, যেটা পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই দুর্লভ। বাংলাদেশিদের বড় বৈশিষ্ট্য, তারা অত্যন্ত কর্মঠ। সেখানকার শহর-গ্রামে গেলেই দেখা যায়, মানুষ জীবিকার জন্য কত কী করছে। এত প্রাণশক্তি যাদের, তাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো বেশি কঠিন নয়।
সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছেন এখানকার অনেক কৃতী সন্তান। ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬০টিরও বেশি দেশে অনুসরণ করা হয়। শিকাগোর ১০০ তলা জন হ্যানকক সেন্টার ও ১১০ তলা সিয়ার্স টাওয়ারের নকশা করেছিলেন বাংলাদেশি নির্মাণ প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান। ১৯৭৩ সালে নির্মিত এ ভবনগুলো সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন ছিল। ১৯৯৮ সালে শিকাগো কর্তৃপক্ষ সিয়ার্স টাওয়ারের সামনের রাস্তাটির নাম পরিবর্তন করে 'ফজলুর আর খান ওয়ে' রাখে। হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট বাংলাদেশি আইনজীবী আইরিন খান ২০০১ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রথম নারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি এ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম এশিয়ান। এখানে তিনি আট বছরেরও বেশি কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশি ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল দেশটির ফ্যাশনশিল্পকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তাঁর অধীনে বর্তমানে ৩৫ হাজারেরও বেশি বুননশিল্পী কাজ করছেন। তাঁর পণ্যের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে পৌঁছে গেছে।
এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে অনেক বাংলাদেশি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। দেশটি নিজেও অর্থনীতিতে ক্রমাগত উন্নতি করছে। বস্ত্রশিল্পে ব্যাপক উন্নতির ফলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো তাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। জাপান থেকে শুরু করে আমেরিকার অনেক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শাখা স্থাপন করছে।
বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর সময় এসেছে। দেশটি নিয়ে গবেষণায় আমি আমার পাঠকদের এটা অন্তত নিশ্চিত করে বলতে পারি, তাদের মধ্যে এমন একটা প্রাণবন্ততা আছে, যার ফলে তাদের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব। তাই বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই উন্নতির দিকে।
No comments