ধীরে ধীরে সাফল্যের চূড়ায় কেটি পেরি by মনোয়ারুল ইসলাম

ব্যর্থতা ঢেকে ধীরে ধীরে সাফল্যের চূড়ায় ওঠেছেন এমন অনেকের সঙ্গে যুক্ত হলো মার্কিন গায়িকা কেটি পেরির নাম। সব কিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার উইমেন অব দি ইয়ার পদক নিচ্ছেন নিজের নাম পাল্টানো কেটি পেরি।

সঙ্গীত জগৎ নিয়ে আমেরিকার সপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘বিলবোর্ড’-এর ‘উইমেন অফ দি ইয়ার ২০১২’ মঙ্গলবার পদকটি নেওয়ার কথা। তবে নিউইয়র্কে দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠানটির ব্যাপারে অনিশ্চিয়তা রয়েছে। তবে অনুষ্ঠান না হওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি।

এ বছর ‘বিলবোর্ড’-এর ‘উইমেন অফ দি ইয়ার ২০১২’ পদক পাচ্ছেন কেটি পেরি ।

সাত বছর ধরে বিলবোর্ড ম্যাগাজিন সঙ্গীত জগতের প্রতিভাবান এবং জনপ্রিয় নারী শিল্পীদের এ সম্মান দিচ্ছে। এ বছরের অনুষ্ঠানটি ৩০ নভেম্বর নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে জমকালো প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে।


রক-পপ সংগীতাঙ্গনে নবাগত জনপ্রিয় তারকাদের অন্যতম কেটি পেরি। স্বতঃস্ফূর্ত সুরেলা কণ্ঠে, রক ও গসপেল সংগীতের ছোঁয়ায় এক নতুন স্বাদের পপ সংগীত উপহার দিয়েছেন তার অসংখ্য অনুরাগীদের।

এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে বিলবোর্ড সংগীত ম্যাগাজিনের ২০১২ সালের ‘উইমেন অফ দ্য ইয়ার’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

টেইলর সুইফট এবং বিয়োন্সি নোলস-এর পর এবার এ সম্মানের অধিকারী হচ্ছেন কেটি পেরি।

শোবিজে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, বিয়ে করলে নাকি ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। অথচ গায়িকা কেটি পেরির ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টোটা।ব্রিটিশ কমেডিয়ান রাসেল ব্র্যান্ডকে বিয়ে করার পর থেকে কেটি পান একের পর এক সাফল্য। যদিও ২৭ বছরের এ সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেত্রী গত বছরের শেষের দিকে স্বামী ব্রিটিশ অভিনয়শিল্পী রাসেল ব্র্যান্ডের সঙ্গে ডিভোর্সের পাট চুকিয়ে অনেকটাই একাকী সময় কাটাচ্ছিলেন।

গির্জায় গান করতে করতেই পেশাদার শিল্পী হিসেবে কেটি পেরি আত্মপ্রকাশ করেন। আসল নাম ক্যাথরিন এলিজাবেথ হাডসন। জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায়, ১৯৮৪ সালে।

৯ বছর বয়সেই ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারার একটি গির্জায় গসপেল (যীশুর জীবন কাহিনী ও শিক্ষাসংবলিত সঙ্গীত) সঙ্গীত শেখা শুরু করেন।

শুধু গান নয় নাচের প্রতি আগ্রহ থাকায় তখন থেকেই গানের পাশাপাশি নাচটাও আয়ত্ত করেন । ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত সঙ্গীত চর্চা ও পরিবেশনার গণ্ডি ছিলো শুধু গির্জা ,স্কুল আর ক্যাম্প। কিন্তু কেটি স্বপ্ন দেখতেন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে।

শুধু আগ্রহের কারণে বড় বোনের ক্যাসেট প্লেয়ার চুরি করে পেরি নানা ধরনের গান শুনতেন আর গলা মিলাতেন। এভাবেই সঙ্গীত চর্চা চলতে চলতে একদিন বাবা-মা পেরির গান শুনে ফেললেন। সঙ্গীতের প্রতি মেয়ের প্রেম বুঝতে পেরে বাবা-মা তাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন সান্তা বারবারার ‘মিউজিক অ্যাকাডেমি অব দ্য ওয়েস্ট’-এ। তারপর থেকে এগিয়ে যাবার শুরু।

১৭ বছর বয়সে কেটির প্রথম অ্যালবাম বের হয়। অ্যালবামের নাম ‘কেটি হাডসন’। গসপেল-রক ধারা এ অ্যালবামটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। তার উপর অভিনেত্রী কেট হাডসনের নামের সঙ্গে মিল থাকায় সৃষ্টি হয় বিড়ম্বনার। অগত্যা নিজের নিজের নাম পাল্টে রাখেন ‘কেটি পেরি’।

প্রথম অ্যালবামটি সফল না হলেও পেরি হাল ছাড়েননি। তবে তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। দ্বিতীয় অ্যালবামটি প্রকাশের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ ৭ বছর।

অবশেষে ২০০৮ সালে বাজারে আসে পেরির দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ওয়ান অব দ্য বয়েজ’। অ্যালবামটি বিলবোর্ড নবম স্থানে জায়গা করে নেয় এবং ‘রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ থেকে অ্যালবামটিকে প্লাটিনাম খেতাব লাভ করে।

এ অ্যালবামেন ‘আই কিসড এ গার্ল’ গানটি শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেয়। ব্যবসায়িক সফলতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সবার নজরে আসেন মিষ্টি কণ্ঠ আর অপূর্ব মুখশ্রীর কেটি পেরি। ব্যস্ত হয়ে পড়েন সঙ্গীত সফরে।

২০০৯ সাল পর্যন্ত ‘হ্যালো কেটি পেরি’ শীর্ষক সঙ্গীত সফরের আওতায় তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান। আর ২০১০ সালের ‘টিনেজ ড্রিমস’ অ্যালবাম তো এখন ইতিহাস।

সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের উত্থান-পতন নিয়ে তৈরি ছবি ‘কেটি পেরি: পার্ট অব মি থ্রিডি’ ব্যাপক দর্শক প্রিয়তা পায়। অভিনয় ও সঙ্গীত জগতে খ্যাতির চূড়ায় ওঠা এ শিল্পীকে ভক্তরা নাম দেন ‘কেটিকেটস’।

গত ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ফোর্বস ম্যাগাজিনের শীর্ষ আয়ে নারী শিল্পীর তালিকায় পেরি তৃতীয় অবস্থানে আসেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই তার সিঙ্গেল অ্যালবাম বিক্রি হয় ৪৮ মিলিয়ন।

এর মধ্যে কয়েকটি হিট অ্যালবাম হচ্ছে- ‘ফায়ারওয়ার্ক’, ‘ক্যালিফোর্নিয়া গার্লস’, ‘ইটি’ এবং ‘হট এন কোল্ড’। এছাড়াও তার আগের বছর ‘টিনএজ ড্রিমস’ অ্যালবাম ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

এক বিবৃতিতে বিলবোর্ডের সম্পাদকীয় পরিচালক বিল ওয়্যার্ড বলেন, ‘কেটি পেরি পাঁচ বছর আগে এ ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু করলেও ইতোমধ্যে তিনি যা অর্জন করেছেন, তা অনেক শিল্পী তার পুরো জীবনেও অর্জন করতে পারে না। আমরা তার এ সাফল্যের জন্য তাকে ‘বিলবোর্ড উইমেন অফ দি ইয়ার’-এর খেতাব দিচ্ছি।

তিনি বলেন, পেরি বর্তমান সঙ্গীতজগতের জনপ্রিয় তারকাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একের পর এক হিট অ্যালবাম উপহার দিচ্ছেন তার ভক্তদের। তার নিজস্ব স্টাইল তাকে সবার চেয়ে আলাদা করে তুলে ধরেছে। এই অর্জনের জন্যই পেরিকে এ সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে। পেরি সঙ্গীত জগতের অন্যতম একজন উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা।

বিলবোর্ড উইমেন অব দ্যা ইয়ার হিসেবে একজন নারীকে বেছে নেওয়া হয় এ জগতে তার অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য।

১৯৮৭-৮৮ সালে মাইকেল জ্যাকসন বিরল একটি রেকর্ড করে দুনিয়াব্যাপী সংগীতপ্রেমীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। মাইকেলের ‘ব্যাড’ অ্যালবামের পাঁচ পাঁচটি গান জায়গা করে নিয়েছিলো ‘ইউএস বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড চার্টে’।

প্রায় ২৫ বছর এই রেকর্ড ধরে রেখেছিলেন পপসম্রাট। কিন্তু ২০১১ সালে একই রেকর্ডের ভাগ বসিয়েছেন কেটি পেরি। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া পেরির ‘টিনেজ ড্রিমস’ অ্যালবামের পাঁচটি গান ক্যালিফোর্নিয়া গার্ল, টিনেজ ড্রিমস, ফায়ারওয়ার্ক, ইটি আর লাস্ট ফ্রাইডে নাইট জায়গা করে নিয়েছিলো ‘ইউএস বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড চার্টে’।

বিলবোর্ড হট হান্ড্রেডের ৫৩ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী সঙ্গীত শিল্পীর ক্ষেত্রে যা অবশ্যই প্রথম। তখন সঙ্গীত বোদ্ধারা বলেছিলেন কেটি পেরি অনেকদূর যাবে। তাদের সেই ভবিষ্যৎবাণী সত্য হলো।

জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কেটি পেরি মিউজিক ভিডিও Part of Me -তে সৈনিক জীবনের গুণগান করে মেরিন সৈনিকে যোগ দেওয়ার জন্য নারীদের উৎসাহিত করেছেন। তার গানের নারী হচ্ছে সেই শ্রেণীর নারী, যারা জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে নতুন কিছু করার উপায় খুঁজছেন।

এ অ্যালবামে দেখা যায়, বয়ফ্রেন্ডের প্রতারণায় হতাশ হয়ে কেটি পেরি মেরিন সেনায় নাম লেখান। এরপর সে হয়ে ওঠে দক্ষ নারী সৈন্যে। এই মিউজিক ভিডিওতে আমেরিকার মেরিন সৈন্যদের কঠিন প্রশিক্ষণের কিছু চিত্র দেখানো হয়েছে। এই অ্যালবামটি নিয়ে সারা বিশ্বে সমালোচনা হয়েছিলো।

প্রতিভাবান সঙ্গীত শিল্পী কেটি পেরি ২০০৯ সালে ‘শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক নবাগত সঙ্গীত শিল্পী` হিসেবে ব্রিটসহ বেশ কিছু গুরুতপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এ বছর বিলবোর্ড সঙ্গীত ম্যাগাজিনের ২০১২ সালের ‘উওমেন অফ দ্য ইয়ার` হিসেবে নির্বাচিত হবার পর তার এগিয়ে যাওয়ার গতি খানিকটা বাড়লো।

No comments

Powered by Blogger.