কোম্পানি আইন সংশোধন নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক- প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা সরকার নিলে বিপদ হবে
যেকোনো কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের জন্য বিদ্যমান কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগে কোনো সমর্থন পায়নি সরকার। ব্যবসায়ী নেতারা আবারও তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, এর অপব্যবহার হতে পারে, এর উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহারও করা হতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা লিখিতভাবে জানিয়েছেন, কোম্পানি আইন সংশোধন না করেও আদালতের মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগ সম্ভব। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. এম জহির বলেছেন, প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখার মানে হলো, এর অপব্যবহার হতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে।
সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদেরাও (সিএ) কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের জন্মের মধ্যেই সমস্যা রয়েছে, সেগুলোকে জিইয়ে রাখার চিন্তা কতটা নৈতিক এবং বাস্তবে তা সম্ভব কি না, তা-ও ভাবতে হবে।
সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানি আইন সংশোধনের বিষয়ে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সিএসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সভাতেই এভাবে আপত্তির কথা তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব আপত্তির বিষয়ে দ্বিমত করেনি। তবে কোনো সিদ্ধান্তও দেয়নি। বৈঠকের পর জানতে চাইলেও নবনিযুক্ত বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ এবং সদ্য বিদায়ী বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন কেউই সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেননি। তবে বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, সভার বক্তব্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে। পাশাপাশি আইন সংশোধনের আরেকটি খসড়া প্রস্তাবও পাঠানো হতে পারে। এতে আইনের অপপ্রয়োগ রোধে নতুন করে নিরাপত্তামূলক কিছু ধারা যুক্ত করা হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে।
ঈদের আগে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোম্পানি আইন সংশোধনে অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যবসায়ীসহ সব মহলেই ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর আইন সংশোধন না করেও ডেসটিনিতে প্রশাসক বসানো যায় কি না, সেই পরিকল্পনা করে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় গতকালের বৈঠক। মূলত ডেসটিনিতে প্রশাসক বসানোর জন্যই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ, আইনজীবী রফিক-উল হক, এম জহির, তানজীব-উল-আলম, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সাবেক সভাপতি আবদুর রশিদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তর (রেজসকো), বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই), মেট্রো চেম্বার, বাংলাদেশ চেম্বার, ঢাকা চেম্বার, উইমেন চেম্বার, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রতিনিধি।
সভা শেষে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছি, আজও জানালাম। পরবর্তী সময়ে সরকার চাইলে যেকোনো কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে—এ রকম কোনো আইন করা যাবে না।’
বৈঠকে আলোচনার সূত্র ধরে এ কে আজাদ বলেন, সরকারের বক্তব্য হলো, তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে তুলেছে ডেসটিনি। তারা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এ টাকা তুলেছে। এ অর্থ ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলেছেন। একে আজাদ বলেন, এটাও ঠিক, ডেসটিনির প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ জড়িত। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এগুলোতে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা তো আর টাকা ফেরত পাবেন না। এসব বিবেচনায় ডেসটিনি বা বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) কোম্পানির জন্য আইনে সংশোধনী আনা হলে ব্যবসায়ীদের আপত্তি নেই।
এ কে আজাদ প্রশ্ন রাখেন, শুধু ডেসটিনি নয়, হল-মার্কের টাকা কে ফেরত দেবে? এ ক্ষেত্রেও প্রশাসক বসানোর বিধান থাকা দরকার। সরকার দরখাস্ত করলে সাত দিনের মধ্যেই আদালত প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দিতে পারেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, ব্যবসায়ীদের মতামতের বাইরে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। আর, দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে এক্ষুনি কোম্পানি আইন সংশোধন করতে হবে।’
বৈঠকে লিখিত সুপারিশ উপস্থাপন করে আইনজীবী এম জহির বলেন, কোম্পানি আইনের ১৯৭ ধারা অনুযায়ী তদন্তের জন্য পরিদর্শক নিয়োগ, ২০৪ ধারা অনুযায়ী রেজসকোর নিবন্ধকের মাধ্যমে আদালতের কাছে কোম্পানির অবলুপ্তি এবং ২৩৩ ধারা অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এম জহির এ সময় লিখিতভাবে আরও বলেন, বদমাশজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বভার নিতে হলে কোম্পানি আইনের আওতায় আগে তদন্ত করতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে তারপর তা উপস্থাপন করা হবে আদালতে। তখন আদালতই বলে দেবেন ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু কোম্পানি আইন সংশোধনের সাম্প্রতিক উদ্যোগে আদালতের ক্ষমতা সরকারের হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আদালতের আদেশ ছাড়া প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখার মানে হলো, এর অপব্যবহার হতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। কখনো কখনো ভালো কাজের জন্য ব্যবহার করা হলেও এমন অভিযোগ উঠতেই পারে যে এই ক্ষমতা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
যোগাযোগ করলে সভায় উপস্থিত থাকা আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ভালো উদ্দেশে এবং খারাপ উদ্দেশে গঠিত কোম্পানিকে এক পাল্লায় মাপলে হবে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়লে সরকার সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু খারাপ উদ্দেশ্যে গঠিত কোম্পানির ক্ষেত্রে কখনোই তা উচিত হবে না। বরং এদের শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, আজকে কাউকে সুরক্ষা দিলে, ভবিষ্যতেও দিতে হবে অন্য কাউকে—একটি বাজে উদাহরণ তৈরি করতে পারে।
জানা গেছে, ডেসটিনির সব দুর্নীতি ও অনিয়ম ঈদের আগেই সরকারের শীর্ষ মহলে উপস্থাপন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে কোম্পানি আইন সংশোধন ও ডেসটিনিতে প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব করে। এতে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ডেসটিনির কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য শিগগির এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ নেবে রেজসকো, প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে নিরীক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হবে, ডেসটিনির ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করবেন প্রশাসক এবং কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে না আসা পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োজিত থাকবেন। গতকালকের সভার জন্য প্রস্তুত কার্যপত্রে এসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ গতকাল সচিবালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না, প্রকৃতপক্ষে কী হতে যাচ্ছে। তাই শঙ্কামুক্তও হতে পারছি না।’
সভাসূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের জন্য তৈরি কার্যপত্রে ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিদের বহুমাত্রিক দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে, ডেসটিনি গ্রুপের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের হেফাজতে নেওয়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে সমবায় সমিতি আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, সদস্যদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় ও স্থানান্তরের দায়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, রেজসকোতে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের শেয়ার বিনিয়োগ বিষয়ে অসত্য তথ্য দাখিল করায় কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা, তথ্য গোপন করে আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করায় বেস্ট এভিয়েশনসহ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ডেসটিনি গ্রুপের নিষ্ক্রিয় কোম্পানিগুলো বন্ধ করা ইত্যাদি।
সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদেরাও (সিএ) কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের জন্মের মধ্যেই সমস্যা রয়েছে, সেগুলোকে জিইয়ে রাখার চিন্তা কতটা নৈতিক এবং বাস্তবে তা সম্ভব কি না, তা-ও ভাবতে হবে।
সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানি আইন সংশোধনের বিষয়ে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সিএসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সভাতেই এভাবে আপত্তির কথা তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব আপত্তির বিষয়ে দ্বিমত করেনি। তবে কোনো সিদ্ধান্তও দেয়নি। বৈঠকের পর জানতে চাইলেও নবনিযুক্ত বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ এবং সদ্য বিদায়ী বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন কেউই সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেননি। তবে বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, সভার বক্তব্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে। পাশাপাশি আইন সংশোধনের আরেকটি খসড়া প্রস্তাবও পাঠানো হতে পারে। এতে আইনের অপপ্রয়োগ রোধে নতুন করে নিরাপত্তামূলক কিছু ধারা যুক্ত করা হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে।
ঈদের আগে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোম্পানি আইন সংশোধনে অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যবসায়ীসহ সব মহলেই ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর আইন সংশোধন না করেও ডেসটিনিতে প্রশাসক বসানো যায় কি না, সেই পরিকল্পনা করে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় গতকালের বৈঠক। মূলত ডেসটিনিতে প্রশাসক বসানোর জন্যই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ, আইনজীবী রফিক-উল হক, এম জহির, তানজীব-উল-আলম, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সাবেক সভাপতি আবদুর রশিদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তর (রেজসকো), বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই), মেট্রো চেম্বার, বাংলাদেশ চেম্বার, ঢাকা চেম্বার, উইমেন চেম্বার, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রতিনিধি।
সভা শেষে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছি, আজও জানালাম। পরবর্তী সময়ে সরকার চাইলে যেকোনো কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে—এ রকম কোনো আইন করা যাবে না।’
বৈঠকে আলোচনার সূত্র ধরে এ কে আজাদ বলেন, সরকারের বক্তব্য হলো, তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে তুলেছে ডেসটিনি। তারা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এ টাকা তুলেছে। এ অর্থ ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলেছেন। একে আজাদ বলেন, এটাও ঠিক, ডেসটিনির প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ জড়িত। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এগুলোতে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা তো আর টাকা ফেরত পাবেন না। এসব বিবেচনায় ডেসটিনি বা বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) কোম্পানির জন্য আইনে সংশোধনী আনা হলে ব্যবসায়ীদের আপত্তি নেই।
এ কে আজাদ প্রশ্ন রাখেন, শুধু ডেসটিনি নয়, হল-মার্কের টাকা কে ফেরত দেবে? এ ক্ষেত্রেও প্রশাসক বসানোর বিধান থাকা দরকার। সরকার দরখাস্ত করলে সাত দিনের মধ্যেই আদালত প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দিতে পারেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, ব্যবসায়ীদের মতামতের বাইরে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। আর, দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে এক্ষুনি কোম্পানি আইন সংশোধন করতে হবে।’
বৈঠকে লিখিত সুপারিশ উপস্থাপন করে আইনজীবী এম জহির বলেন, কোম্পানি আইনের ১৯৭ ধারা অনুযায়ী তদন্তের জন্য পরিদর্শক নিয়োগ, ২০৪ ধারা অনুযায়ী রেজসকোর নিবন্ধকের মাধ্যমে আদালতের কাছে কোম্পানির অবলুপ্তি এবং ২৩৩ ধারা অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এম জহির এ সময় লিখিতভাবে আরও বলেন, বদমাশজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বভার নিতে হলে কোম্পানি আইনের আওতায় আগে তদন্ত করতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে তারপর তা উপস্থাপন করা হবে আদালতে। তখন আদালতই বলে দেবেন ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু কোম্পানি আইন সংশোধনের সাম্প্রতিক উদ্যোগে আদালতের ক্ষমতা সরকারের হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আদালতের আদেশ ছাড়া প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখার মানে হলো, এর অপব্যবহার হতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। কখনো কখনো ভালো কাজের জন্য ব্যবহার করা হলেও এমন অভিযোগ উঠতেই পারে যে এই ক্ষমতা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
যোগাযোগ করলে সভায় উপস্থিত থাকা আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ভালো উদ্দেশে এবং খারাপ উদ্দেশে গঠিত কোম্পানিকে এক পাল্লায় মাপলে হবে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়লে সরকার সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু খারাপ উদ্দেশ্যে গঠিত কোম্পানির ক্ষেত্রে কখনোই তা উচিত হবে না। বরং এদের শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, আজকে কাউকে সুরক্ষা দিলে, ভবিষ্যতেও দিতে হবে অন্য কাউকে—একটি বাজে উদাহরণ তৈরি করতে পারে।
জানা গেছে, ডেসটিনির সব দুর্নীতি ও অনিয়ম ঈদের আগেই সরকারের শীর্ষ মহলে উপস্থাপন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে কোম্পানি আইন সংশোধন ও ডেসটিনিতে প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব করে। এতে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ডেসটিনির কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য শিগগির এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ নেবে রেজসকো, প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে নিরীক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হবে, ডেসটিনির ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করবেন প্রশাসক এবং কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে না আসা পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োজিত থাকবেন। গতকালকের সভার জন্য প্রস্তুত কার্যপত্রে এসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ গতকাল সচিবালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না, প্রকৃতপক্ষে কী হতে যাচ্ছে। তাই শঙ্কামুক্তও হতে পারছি না।’
সভাসূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের জন্য তৈরি কার্যপত্রে ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিদের বহুমাত্রিক দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে, ডেসটিনি গ্রুপের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের হেফাজতে নেওয়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে সমবায় সমিতি আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, সদস্যদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় ও স্থানান্তরের দায়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, রেজসকোতে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের শেয়ার বিনিয়োগ বিষয়ে অসত্য তথ্য দাখিল করায় কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা, তথ্য গোপন করে আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করায় বেস্ট এভিয়েশনসহ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ডেসটিনি গ্রুপের নিষ্ক্রিয় কোম্পানিগুলো বন্ধ করা ইত্যাদি।
No comments