খালেদা জিয়ার ভারত সফর-কথায় ও কাজে মিল চাই
বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার ভারত সফর সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের গুরুত্ব উপলব্ধি এবং তা অর্জনের জন্য সরকার, বিরোধী দল নির্বিশেষ প্রধান প্রধান গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার মধ্যে সহমত অপরিহার্য।
বিরোধীদলীয় নেত্রী বাংলাদেশের ভূমি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আশা করি তিনি এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, বড় দল হিসেবে বিএনপির ভারত বিরোধিতার পুরনো নীতিতে অটল থাকা বাস্তবোচিত নয়। এ উপলব্ধির ভিত্তিতে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে ভারত বিরোধিতার নীতি থেকে সরে এলে দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীল মৈত্রীর সম্পর্ক বজায় থাকবে। বিএনপি নেতৃত্ব নিশ্চয়ই উপলব্ধি করে থাকবেন যে, বিগত নির্বাচনে তাদের প্রচণ্ড ভারতবিরোধী নীতি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসনে বিজয় ঠেকাতে পারেনি। সাম্প্রদায়িক স্ল্নোগান বা ধর্মকে অকারণ টেনে এনেও বিএনপি তাদের পক্ষে কোনো জনজোয়ার সৃষ্টি করতে পারেনি। বিশ্ব পরিস্থিতিতে পরিবর্তন ও ভারত দ্রুত একটি আঞ্চলিক, এমনকি আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রভাব সৃষ্টিকারী শক্তি হিসেবে যে আবির্ভূত, এ হচ্ছে অনিবার্য সত্য। বিএনপি এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারে না। ভারতও তার নবলব্ধ অবস্থানকে আরও সংহত করতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রত্যাশী। দেশটি প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন প্রশ্নে কোনো একক দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে সখ্য বজায় রাখার পূর্ব নীতি থেকে সরে এসে জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রত্যাশী। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আমন্ত্রণেও সেই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত। এর ফলে 'আওয়ামী লীগ ভারতপন্থি আর বিএনপি ভারতবিরোধী'_ এই তকমাযুক্ত পুরনো ধারণারও অবসান হবে। তবে সেটা অনেকাংশে নির্ভর করবে বিএনপি নেতৃত্ব তাদের তৃণমূল পর্যায়ে নীতি পরিবর্তনের বার্তা পেঁৗছে দেবে কি-না এবং তাদের কর্মীদের উগ্র ভারতবিরোধী জিগির থেকে বিরত রাখতে পারেন কি-না, তার ওপর। আওয়ামী লীগকেও এ পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে। ভারতের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে এবং উত্তরোত্তর তা প্রসারিত করতে হলে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শক্তিকে এ ব্যাপারে অভিন্ন না হোক, কাছাকাছি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে বিএনপিকে এ ক্ষেত্রে কথায়-কাজে বিশ্বাসযোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। এটা সর্বজনবিদিত যে, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অস্ত্র চালানের ঘটনা চারদলীয় জোট সরকারের আমলেই ঘটেছে। সেই ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলা এখনও বিচারাধীন। তাই বিএনপির মুখের কথা ও মনের কথার মধ্যে মিল থাকতে হবে। বাংলাদেশের জনমতকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, এমন বিষয়গুলো আন্তরিকভাবে ভারতকে পরিহার করতে হবে। আমরা আশা করব, বিএনপি এবার অন্ধ ভারত বিরোধিতার নীতি থেকে সরে আসবে। আমরা চাই, খালেদা জিয়ার ভারত সফর দুই প্রতিবেশী দেশের উন্নত স্থিতিশীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখুক। খালেদা জিয়ার বর্তমান ভারত সফরকে নেতিবাচকভাবে না
দেখাই বাঞ্ছনীয়।
দেখাই বাঞ্ছনীয়।
No comments