পবিত্র কোরআনের আলো-জ্ঞানপাপী ও ধুরন্ধর ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি

২০৪। ওয়ামিনান্নাসি মাইঁউ'জিবুকা ক্বাওলুহূ ফিল হাইয়্যাতিদ্ দুনইয়া ওয়াইউশহিদুল্লাহা আ'লা মাফী ক্বালবিহী ওয়াহুয়া আলাদ্দুল খিসাম। ২০৫। ওয়াইযা তাওয়াল্লা ছাআ' ফিল আরদ্বি লিইউফসিদা ফীহা ওয়া ইউহলিকাল হারসা ওয়ান্নাসল; ওয়াল্লাহু লা ইউহিব্বুল ফাসাদ।


২০৬। ওয়াইযা ক্বীলা লাহুত্তাকি্বল্লাহা আখাযাতহুল ই'য্যাতু বিলইসমি ফাহাসবুহূ জাহান্নাম; ওয়ালাবি'সাল মিহাদ।
[সুরা বাকারা : আয়াত ২০৪-২০৬]
অনুবাদ
২০৪। লোকদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে, যার কথা তোমাকে খুবই উৎফুল্ল করবে, তার মনের ভেতর যা কিছু আছে এর ওপর সে আল্লাহকে সাক্ষী বানায়, কিন্তু তার প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে সে ভীষণ ধুরন্ধর ব্যক্তি।
২০৫। সে যখন কোনো ধরনের ক্ষমতা পায়, তখন পৃথিবীতে নানা ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করতে শুরু করে। শস্যক্ষেত বিনাশ করে এবং জীবজন্তুর বংশ নির্মূল করে; আল্লাহতায়ালা ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।
২০৬। যখন তাকে বলা হয়, আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতাকে ভয় করো, তখন তাকে মিথ্যা অহংকার পেয়ে বসে, যার মধ্যে রয়েছে পাপাচার; এদের জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত স্থান, তার এ ঠিকানা কতই না নিকৃষ্ট!
ব্যাখ্যা
এ আয়াতগুলোর শানেনুজুল তাফসিরে বয়ানুল কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে_আনাস ইবনে ওরাইফ নামে এক মুনাফিক খুব প্রাঞ্জলভাষী এবং উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিল। সে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে আল্লাহর কসম করে ইসলাম গ্রহণের মিথ্যা দাবি করত। সেখান থেকে উঠে গিয়েই সে নানা রকম দুষ্টামিতে লিপ্ত হতো। সে সমাজে অশান্তি সৃষ্টিকারী এবং মানুষকে কষ্ট প্রদানকারী কাজে লেগেই থাকত। ওই মুনাফিক লোকটি সম্পর্কেই আল্লাহপাক বলছেন, 'আর কোনো কোনো মানুষ এমনও আছে যে আপনার কাছে বসে আলাপ-আলোচনা করে তার পার্থিব স্বার্থ হাসিলের জন্য। সে ইসলাম গ্রহণের কথা বলে মুসলমানদের কাছে ভিড়তে চায়, আর তার ভাষার প্রাঞ্জলতা ও প্রকাশ নৈপুণ্যের দরুন তার কথাবার্তা আপনার কাছে চিত্তাকর্ষক মনে হয়। সে আল্লাহর নামে কসম করে নিজের কথার সত্যতা প্রকাশ করতে চায়। অথচ সে সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী ও মুনাফিক। ভেতরে ভেতরে সে আপনার বিরোধিতায় কঠোর। আসলে সে যেমন রাসুল (সা.)-এর বিরোধী, তেমনি সে অন্য মুসলমানদের অনিষ্ট করার জন্যও সর্বক্ষণ চেষ্টা করে। যখন সে রাসুল (সা.)-এর বৈঠক থেকে প্রস্থান করে, তখন এ চেষ্টায়ই ঘুরে বেড়ায় যে দেশে কোনো ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করবে, কিভাবে শস্যক্ষেত ও গবাদি পশুর ক্ষতিসাধন করবে। আল্লাহতায়ালা বলছেন, তিনি ফ্যাসাদ পছন্দ করেন না। এ ধরনের ধুরন্ধর ব্যক্তিরা খুবই বিপজ্জনক ও ঘৃণিত। এ ধরনের ব্যক্তিরা আবার হয়ে থাকে মিথ্যা অহংকারী। তাদের যখন আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার কথা বলা হয়, তখন তাদের অহংকার বেড়ে যায়। অহংকার এদের আরো বেশি করে পাপাচারের দিকে ধাবিত করে। আল্লাহতায়ালা বলছেন, সুতরাং এ প্রকৃতির লোকদের যথোপযুক্ত ঠিকানা জাহান্নাম। জাহান্নামের শাস্তিই তাদের প্রাপ্য। আর কত না নিকৃষ্টতম স্থান সেই জাহান্নাম। এ আয়াতগুলোতে আল্লাহতায়ালা জ্ঞানপাপী ও ধুরন্ধর ব্যক্তিদের ভয়াবহ পরিণতির কথা ব্যক্ত করেছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.