দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ কোটি মানুষের ট্র্যাজেডি by এমএ শাহেন শাহ
ব্রিটিশ আমলে ১৮৯৫ সালে চালু হয় চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেল যোগাযোগ। দেশের পূর্বাঞ্চলের প্রাচীন এ রেলপথটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ রেল সংযোগ ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিভাগের যাত্রীরা চাঁদপুর যেতেন ও চাঁদপুর থেকে স্টিমারে গোয়ালন্দ ও গোয়ালন্দ থেকে ট্রেনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী ও অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্রাণকেন্দ্র কলকাতা যেতেন।
সেসময় এ রেলপথের গুরুত্ব ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের তুলনায় অনেক বেশি। ১৯৬৫ সালের পরে এ পথে কলকাতা যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে অসম-বেঙ্গল রেলওয়ের গেটওয়ে হিসাবে খ্যাত শতবর্ষেরও অধিক পুরনো চাঁদপুর রেল স্টেশন ও নৌবন্দরের অতীত গৌরব, ঐতিহ্য ও ঔজ্জ্ব¡ল্য ম্লান হয়ে আসে। বর্তমানে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান গেটওয়ে হচ্ছে চাঁদপুর। যেমন দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীর যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান গেটওয়ে মাওয়া। বাণিজ্যিক রাজধানীর সাথে চাঁদপুর হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ অতি সহজ ও সাশ্রয়ী। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের ৮০% পণ্যের আমদানি ও রফতানি হয়ে থাকে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসী যারা ব্যবসা, চাকরি ও শিক্ষা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রামে বসবাস করেন, তাদের দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অতিরিক্ত অর্থ, সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হয়। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বাণিজ্যিক রাজধানীর সাথে ব্যবসা, কর্মসংস্থান বা আমদানি ও রফতানির স্বার্থে বন্দর ব্যবহার দ্বারাই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তীর্থস্থান ও পর্যটন শিল্পের বিবেচনায় উভয় অঞ্চলই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। চট্টগ্রামে যেমন আছে আমানত শাহ দরগাহ, মাইজভা-ার শরিফ, হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির, তেমনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আছে বাগেরহাটের খান জাহান আলীর ষাট গম্বুজ মসজিদ, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, সুরেশ্বর দরগাহ শরিফ, কুষ্টিয়ার লালন শাহের আখড়া, শিলাইদহে কবিগুরুর কুঠিবাড়ী, মেহেরপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর। এছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেমন রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ও পার্বত্য সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটি। তেমনি দক্ষিণাঞ্চলে আছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র। এ অঞ্চলের গুরুত্ব বহন করছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলা ও অপার সম্ভাবনার স্থলবন্দর বেনাপোল। নির্মাণের অপেক্ষায় আছে পটুয়াখালী উপকূলে প্রস্তাবিত তৃতীয় সমুদ্রবন্দর। প্রতিদিন উভয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পর্যটন ও তীর্থ ভ্রমণের জন্য উল্লেখিত এলাকাগুলোতে যাতায়াত করেন। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য পূর্বাঞ্চলের মানুষের আগ্রহ ও প্রত্যাশা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেলপথের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৮০ কিলোমিটার যা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দৈর্ঘ্যরে প্রায় অর্ধেক। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দৈর্ঘ্য ৩৪৬ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম জংশনের দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুরের দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। সুবর্ণ এক্সপ্রেস মাত্র ২ ঘণ্টায় এবং মহানগর প্রভাতী ও মহানগর গোধূলী ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম পৌঁছে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ২৬টি আন্তঃনগর ট্রেন দেশের বিভিন্ন স্থানে গমন করে, সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন মাত্র ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়ে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে রেল পরিচালনা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেলপথে একাধিক বিরতিহীন ও আন্তঃনগর ট্রেন চালু করতে কোন অসুবিধা নেই। এ লাইনে ১০টি ট্রেন চালু করলেও যাত্রীর অভাব হবে না এবং রেলের আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন তার একটি উদাহরণ। চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৭-৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর বিরতিহীন ট্রেন চালু করার জন দাবি দীর্ঘদিনের। বিরতিহীন ট্রেন ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে চাঁদপুর পৌঁছতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে লাকসামে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যরে রেলওয়ে বাইপাস নির্মাণ। এরপর ৬ কিলোমিটার প্রশস্ত চাঁদপুরের মেঘনা পার হলেই শরীয়তপুর ফেরিঘাট। ফেরি ও লঞ্চে মেঘনা পার হওয়া যায়। শরীয়তপুর ফেরিঘাট থেকে সড়কপথে স্বল্প সময়ের মধ্যে খুলনা, বরিশাল, যশোর, বেনাপোল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট যাওয়া যায়। আমি ১৯৬৩ সাল থেকে মাঝে মাঝে এ লাইনে চলাচল করি। তারা সবাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাকে জানিয়েছেন, কতিপয় কালো বিড়াল চট্টগ্রাম থেকে ছাড়ে এরূপ ৩টি পৃথক বাস লাইনের মালিকদের থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের মাসোহারা পাচ্ছেন। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা এই মাসোহারা প্রাপ্তির কারণেই গত ৩ দশকেও তীব্র ঘনবতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অবস্থিত চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেলপথে কোন নতুন ট্রেন চালু হয়নি। বিদ্যামান ট্রেন দুটিকেও করা হয়েছে এক্সট্রিম লোকাল। ট্রেন দুটির সেবা এ রেলপথ সংলগ্ন এলাকার নগণ্য সংখ্যক যাত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ও সংরক্ষিত। যদিও সেবা কোনক্রমে সুস্থ রেলভ্রমণের পর্যায়ে পড়ে না। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ জাতীয় রেল সংযোগের সেবা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ বিশাল জনগোষ্ঠীকে (যা দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ)।
চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলভ্রমণ ও বাসভ্রমণের সময় প্রায় সমান (৬/৭ ঘণ্টা)। কিন্তু চট্টগ্রাম-চাঁদপুর বিরতিহীন ট্রেনে ভ্রমণকাল ৩ ঘণ্টা কিন্তু বাসে ভ্রমণকাল ৬ ঘণ্টা। ট্রেনের ভাড়া বাস ভাড়ার এক-চতুর্থাংশ। এ দিক থেকে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর লাইনে বিরতিহীন ট্রেনে ভ্রমণ হবে একটি ম্যাজিক অ্যাডভান্টেজ। এ কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও চাঁদপুর সদরের যাত্রীদের জন্য এ লাইনে রিবতিহীন ট্রেন চালু করা অপরিহার্য।
চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনিয়মের তদন্তে সংসদীয় কমিটি এবং একই সাথে সিআরবি ও রেলভবনে সন্দেহভাজন কালো বিড়ালদের বিরুদ্ধে দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থার সর্বাত্মক যৌথ অভিযান চালানোর এখনই প্রকৃষ্ট সময়। জনগণের সহজ ও নিরাপদ যাতায়াত মাধ্যম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর ও ধ্বংস করার জন্য দায়ী দুর্নীতিবাজ চক্রকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল অর্থ উদ্ধারের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী জনগণের ভাষ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ কালো বিড়াল নয়, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আমাদের পবিত্র সংবিধানেও তা লিপিবদ্ধ আছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ৫ কোটি মানুষের দীর্ঘ ৬৪ বছরের নির্যাতনমূলক যাতায়াত ব্যবস্থার চির অবসানকল্পে চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৭.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর বিরতিহীন ট্রেন চালু করা এখন জরুরী। প্রস্তাবিত ট্রেনটি চালু করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৪টি ট্রিপ বৃদ্ধি পাবে। প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪০০০ যাত্রী চাঁদপুর হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবেন। বিশাল দূরত্ব ঘুরে ঢাকা- মাওয়া পথে অথবা ঢাকা- পাটুরিয়া পথে যেতে হবে না। জাতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকেন্দ্রকরণেও এ ট্রেনটি হতে পারে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। ঢাকা-চট্টগ্রাম আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট তখন আর সোনার হরিণ হয়ে থাকবে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অনেকটা যানজটমুক্ত থাকবে এবং সংস্থার ও রক্ষাবেক্ষণ ব্যয় হ্রাস পাবে। এ মহাসড়কে বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেলপথের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৮০ কিলোমিটার যা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দৈর্ঘ্যরে প্রায় অর্ধেক। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দৈর্ঘ্য ৩৪৬ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম জংশনের দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুরের দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। সুবর্ণ এক্সপ্রেস মাত্র ২ ঘণ্টায় এবং মহানগর প্রভাতী ও মহানগর গোধূলী ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম পৌঁছে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ২৬টি আন্তঃনগর ট্রেন দেশের বিভিন্ন স্থানে গমন করে, সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন মাত্র ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়ে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে রেল পরিচালনা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেলপথে একাধিক বিরতিহীন ও আন্তঃনগর ট্রেন চালু করতে কোন অসুবিধা নেই। এ লাইনে ১০টি ট্রেন চালু করলেও যাত্রীর অভাব হবে না এবং রেলের আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন তার একটি উদাহরণ। চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৭-৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর বিরতিহীন ট্রেন চালু করার জন দাবি দীর্ঘদিনের। বিরতিহীন ট্রেন ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে চাঁদপুর পৌঁছতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে লাকসামে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যরে রেলওয়ে বাইপাস নির্মাণ। এরপর ৬ কিলোমিটার প্রশস্ত চাঁদপুরের মেঘনা পার হলেই শরীয়তপুর ফেরিঘাট। ফেরি ও লঞ্চে মেঘনা পার হওয়া যায়। শরীয়তপুর ফেরিঘাট থেকে সড়কপথে স্বল্প সময়ের মধ্যে খুলনা, বরিশাল, যশোর, বেনাপোল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট যাওয়া যায়। আমি ১৯৬৩ সাল থেকে মাঝে মাঝে এ লাইনে চলাচল করি। তারা সবাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাকে জানিয়েছেন, কতিপয় কালো বিড়াল চট্টগ্রাম থেকে ছাড়ে এরূপ ৩টি পৃথক বাস লাইনের মালিকদের থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের মাসোহারা পাচ্ছেন। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা এই মাসোহারা প্রাপ্তির কারণেই গত ৩ দশকেও তীব্র ঘনবতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অবস্থিত চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেলপথে কোন নতুন ট্রেন চালু হয়নি। বিদ্যামান ট্রেন দুটিকেও করা হয়েছে এক্সট্রিম লোকাল। ট্রেন দুটির সেবা এ রেলপথ সংলগ্ন এলাকার নগণ্য সংখ্যক যাত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ও সংরক্ষিত। যদিও সেবা কোনক্রমে সুস্থ রেলভ্রমণের পর্যায়ে পড়ে না। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ জাতীয় রেল সংযোগের সেবা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ বিশাল জনগোষ্ঠীকে (যা দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ)।
চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলভ্রমণ ও বাসভ্রমণের সময় প্রায় সমান (৬/৭ ঘণ্টা)। কিন্তু চট্টগ্রাম-চাঁদপুর বিরতিহীন ট্রেনে ভ্রমণকাল ৩ ঘণ্টা কিন্তু বাসে ভ্রমণকাল ৬ ঘণ্টা। ট্রেনের ভাড়া বাস ভাড়ার এক-চতুর্থাংশ। এ দিক থেকে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর লাইনে বিরতিহীন ট্রেনে ভ্রমণ হবে একটি ম্যাজিক অ্যাডভান্টেজ। এ কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও চাঁদপুর সদরের যাত্রীদের জন্য এ লাইনে রিবতিহীন ট্রেন চালু করা অপরিহার্য।
চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনিয়মের তদন্তে সংসদীয় কমিটি এবং একই সাথে সিআরবি ও রেলভবনে সন্দেহভাজন কালো বিড়ালদের বিরুদ্ধে দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থার সর্বাত্মক যৌথ অভিযান চালানোর এখনই প্রকৃষ্ট সময়। জনগণের সহজ ও নিরাপদ যাতায়াত মাধ্যম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর ও ধ্বংস করার জন্য দায়ী দুর্নীতিবাজ চক্রকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল অর্থ উদ্ধারের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী জনগণের ভাষ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ কালো বিড়াল নয়, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আমাদের পবিত্র সংবিধানেও তা লিপিবদ্ধ আছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ৫ কোটি মানুষের দীর্ঘ ৬৪ বছরের নির্যাতনমূলক যাতায়াত ব্যবস্থার চির অবসানকল্পে চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৭.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর বিরতিহীন ট্রেন চালু করা এখন জরুরী। প্রস্তাবিত ট্রেনটি চালু করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৪টি ট্রিপ বৃদ্ধি পাবে। প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪০০০ যাত্রী চাঁদপুর হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবেন। বিশাল দূরত্ব ঘুরে ঢাকা- মাওয়া পথে অথবা ঢাকা- পাটুরিয়া পথে যেতে হবে না। জাতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকেন্দ্রকরণেও এ ট্রেনটি হতে পারে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। ঢাকা-চট্টগ্রাম আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট তখন আর সোনার হরিণ হয়ে থাকবে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অনেকটা যানজটমুক্ত থাকবে এবং সংস্থার ও রক্ষাবেক্ষণ ব্যয় হ্রাস পাবে। এ মহাসড়কে বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
No comments