কনটেইনারে বিলাসবহুল গাড়ি-শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক

সত্যিই কী বিচিত্র এই দেশ! 'কেঁচো খুঁড়তে সাপ'_বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদ। আর এখন এই দেশে কনটেইনার খুলে পাওয়া যাচ্ছে বিলাসবহুল গাড়ি। একটি নয়, একাধিক। বন্দরের ইতিহাসে এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়। আগেও ঘটেছে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকার অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোতেও। সেসব ঘটনা নিয়ে কিছুদিন সরগরম।


তারপর সব ঠাণ্ডা মেরে গেছে। সব আবার সেই আগের মতোই। এমন অনেক ঘটনাই ঘটে বন্দরে। চালানে ওজন কম দেখিয়ে কিংবা কোড পাল্টে ফেলে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও লক্ষ করা গেছে। বন্দরকে ঘিরে একটি অসাধু চক্র সব সময় সক্রিয়। এই অসাধু চক্র নানা উপায়ে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
সম্প্রতি যে ঘটনাটি পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে, সেটা হচ্ছে মিথ্যা ঘোষণা। বলা হয়েছিল, কনটেইনারে আছে প্যাসেঞ্জার লিফট। সেই কনটেইনার খোলার পর তাতে পাওয়া গেল বিলাসবহুল তিনটি নতুন গাড়ি। প্যাসেঞ্জার লিফটের নামে বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা দামের এই গাড়ি আমদানিতে অসাধু চক্র সফল হলে রাষ্ট্রের যে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হতো, তা প্রায় ৫৫০ শতাংশ, তার মানে কয়েক শ কোটি টাকা। এই বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বন্দর থেকে কনটেইনার ছাড় করানোর চেষ্টাও হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অসাধু চক্রের চক্রান্ত ভেস্তে গেছে। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান এক কনটেইনারে ১৫টি প্যাসেঞ্জার লিফট আমদানির ঘোষণা দেয়। যথারীতি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টও নিয়োগ করা হয় পণ্য খালাস করার জন্য। কিন্তু আগে থেকেই এই কনটেইনারের ব্যাপারে তথ্য থাকায় গত ৫ সেপ্টেম্বর আটক করা হয় কনটেইনারটি। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে কনটেইনার পরীক্ষার সময় হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু তাঁদের কেউই উপস্থিত হননি। বরং এখন বলছেন যে এই কনটেইটার তাঁরা আমদানি করেননি।
চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে একটি অসাধু চক্র যে সব সময় সক্রিয়, তা অনস্বীকার্য। এর আগে ওজন ও এসএস কোড পাল্টে দেওয়া যে কাপড়ের চালানটি ধরা পড়ে, সেটাতে প্রায় আট কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর যেন অসাধু চক্রের খপ্পরে বন্দি। এখানে আস্ত কনটেইনার হাওয়া হয়ে যায়। বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা দামের পণ্য চুরি যায়, এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বছরের পর বছর দাম বা ওজন কম দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া তো নৈমিত্তিক ব্যাপার। আর এক পণ্যের নামে অন্য পণ্য আমদানিও যে হামেশাই ঘটে থাকে, সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। গত ডিসেম্বর মাসেই কাপড় আমদানির ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা তিনটি বিলাসবহুল গাড়ির চালান আটক করা হয়েছিল। এর আগে ঢাকার আইসিডিতে আটক করা হয় একই ধরনের চালান। ক্ষেত্রবিশেষে এসব চালানে ব্যবহার করা হয় ভুয়া নাম-ঠিকানা।
দেশের স্বার্থে এই প্রবণতা রোধ করা জরুরি। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন কিছু দৃষ্টান্ত। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগে যে গাড়ির চালানটি ধরা পড়েছিল, সে বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি। অপরাধী চক্রের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতা বাড়াতে হবে। আর শর্ষের মধ্যে যেন ভূত না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে, রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে যারা এসব আমদানির সঙ্গে জড়িত, তারা অবশ্যই দেশের শত্রু। এক অর্থে তাদেরও চোরাকারবারি বলা যেতে পারে। দেশের স্বার্থে এই চোরাকারবারিদের রুখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.