পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ॥ সুখবর আজ?- আভাস কান্ট্রি ডিরেক্টর গোল্ডস্টেইনের by হামিদ-উজ-জামান মামুন
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ফিরে আসছে। এমনই সুখবর আসতে পারে আজ বৃহস্পতিবার। ওয়াশিংটনে অবস্থানরত কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইন এ রকমই আভাস দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের একটি সূত্র জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে এ্যালেন গোল্ডস্টেইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে।
শর্ত অনুযায়ী ড. মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়ার কাগজপত্র এবং ঋণ পুনর্বিবেচনার সরকারী অনুরোধপত্রও তিনি হাতে পেয়েছেন। আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে একটি পজিটিভ খবর দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। তা ছাড়া ওয়াশিংটনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টার কাছ থেকে সিগন্যাল আসতে পারে বলে সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁরা বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেননি।আর মাত্র একদিন। আগামীকাল ২১ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) শেষ হচ্ছে পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি কার্যকারিতার মেয়াদ। এই ডেডলাইন দিয়েছিল জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টায় সফল হতে না পারলে হয়ত এ প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যেতে পারে সংস্থাটি। তবে পঞ্চমবারের মতো আবারও সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানাতে পারে সরকার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এই অনুরোধ জানিয়ে সংস্থার কাছে চিঠি পাঠাবে বলে জানা গেছে। আজ-কালের মধ্যে চিঠি দেয়া হতে পারে। তবে জাইকা বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইআরডির অতিরিক্ত সচিব সফিকুল আযম এ সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেননি। বুধবার তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আশা করছি সমস্যা হবে না।
এদিকে বুধবার রাতে চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আজ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে চীন সফরে থাকা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমান জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, চীন সফরের সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেদেশের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাছাড়া চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। তবে ওই বৈঠকে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন না। পদ্মা সেতু বিষয়ে চীনা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কোন বৈঠক হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করে ওই কর্মকর্তা কিছুই জানাতে পারেননি। চীনের তিয়ানজিনে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে চীন সফরে যান অর্থমন্ত্রী। ১১ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেয়ার পাশাপাশি আবুল মাল আবদুল মুহিত পদ্মা সেতুর বিষয়টি নিয়েও বিভিন্ন পর্যায়ে বিকল্প অর্থায়ন নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শুক্রবার চীনের অর্থমন্ত্রী জি জুরেনের সঙ্গে বৈঠক এবং পাশাপাশি চীনের এক্সিম ব্যাংক ও এর আগে এই সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেয়া কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আলোচনার কথা।
সূত্র জানায়, জাইকার সঙ্গে সরকারের ঋণ চুক্তির মেয়াদ আগামী ২১ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চলমান সমঝোতা প্রক্রিয়া শেষ হবে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। তাই সরকার কোন ঝুঁকি নিতে চাইছে না। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দর কষাকষিতে একটু বাড়তি সময় পেতে জাইকাকে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা না হলে অর্থায়নের বিষয়টি ভেস্তে যাবে, বাস্তবতা এমনটি নয়। সরকারের প্রস্তাবে জাইকা ও এডিবি সম্মত হলে বর্ধিত সময় পর্যন্ত সমঝোতার সুযোগ থাকবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ছুটিতে যেতে সম্মত হওয়ায় চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সংস্থটির কোন আপত্তি থাকছে না। তাঁর পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত পূরণ হওয়ায় বাতিল করা ঋণ চুক্তি পুনর্বহালের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। আর এই বাস্তবতায় জাইকাও তার চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে অনেকটাই প্রস্তুত।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন পদ্ধতির সঙ্গে অন্য দুই দাতা সংস্থার অর্থায়ন পদ্ধতির কিছুটা পার্থক্য আছে। বিশ্বব্যাংক কোন চুক্তি বাতিল করলেও বরাদ্দকৃত অর্থ দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের বিপরীতে সংরক্ষিত থাকে। তাই সহজেই ঋণ চুক্তি পুনর্বহাল করা যায়। কিন্তু জাইকা ও এডিবি কোন চুক্তি বাতিল করলে প্রকল্পের জন্য সংরক্ষিত অর্থ অন্য প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়। তাই প্রকল্পের অর্থায়নে ফিরে আসতে চাইলে নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। এই জটিলতার কারণে এর আগেও চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে সংস্থা দুটি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিবির চুক্তির মেয়াদ আছে। জাইকার মতো এডিবিকেও ঋণ চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এ মাসের শেষের দিকে এডিবিকে এ প্রস্তাব দেয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সহযোগিতা করছে জাইকা ও এডিবি। এ বিষয়টি সুরাহা করতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জাইকা। একই সঙ্গে সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েও আসছে সংস্থাটি। ড. মসিউর রহমানকে ছুটিতে রাজি করাতে জাইকা প্রতিনিধি দল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গেও বৈঠক করেন। শেষ পর্যন্ত ছুটিতে যেতে মসিউরের সম্মতিও পাওয়া যায়। তবে এবার কত দিনের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জাইকা সদর দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবে। একই প্রক্রিয়ায় এগোবে এডিবিও।
এদিকে ম্যানিলা থেকে এডিবির পরিচালক সাং সুপ্রা ঢাকায় এসেছেন। বুধবার বিকেলে ইআরডির সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে ইআরডি কার্যালয়ে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়ে যায়।
পদ্মা সেতুর বিষয়টি সুরাহা করতে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গহওর রিজভী ও জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টার আলোচনার প্রভাব পড়বে জাইকা ও এডিবির সিদ্ধান্তে।
২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা দেয়ার চুক্তি করেছিল সরকারের সঙ্গে। সেতুর পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থাটি ঋণচুক্তি বাতিল করে। চুক্তি পুনর্বহালে চারটি শর্ত দেয়া হয়। ড. মসিউরের ছুটিতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সব শর্তই পূরণ হয়েছে বলে আর কোন বাধা থাকছে না।
No comments