যাত্রী পরিসেবা-বিপর্যস্ত বিমান

হজযাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওপর প্রতি বছরই হজ মৌসুমে বাড়তি চাপ পড়ে_ এটা স্বাভাবিক। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রুটের নিয়মিত ফ্লাইটে খুব বড় ধরনের কোনো সিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেনি, যা এবার ঘটল।


হজযাত্রী পরিবহনে এ বছর বিমানের অবস্থা লেজেগোবরে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল, শেষ পর্যন্ত হজযাত্রীদের যাত্রা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গতকাল বুধবার বিমানের অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। কারণ এরই মধ্যে উড়োজাহাজ সংকটের কারণে গত এক সপ্তাহে লন্ডন, কুয়েত, রিয়াদ, জেদ্দা, কাতার, মালয়েশিয়া, নেপালের নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। ৭টি সিডিউল ফ্লাইট এবং ১১টি ফ্লাইটের সময়সূচি পরিবর্তন করতে হয়েছে। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে এসে বিপাকে পড়েছেন। তারা অনেকেই যথাসময়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে পারেননি। অনেকে উদ্বিগ্ন, যথাসময়ে পেঁৗছতে না পারলে চাকরি থাকবে কি-না_ সেই আশঙ্কায়। হজযাত্রী পরিবহনে যাত্রীর বাড়তি চাপ পড়বে, এ অভিজ্ঞতা তো নতুন নয় বিমান কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনায় রাখাই ছিল প্রত্যাশিত। সবকিছু দেখেশুনে মনে হচ্ছে সেই বিকল্প ভাবনা যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। গত ১২ সেপ্টেম্বর যখন ভাড়া করা বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে ওমানে যাওয়ার পর লাপাত্তা হয়ে গেল, তখনই জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। তাছাড়া সিডিউল বিপর্যয়ের আরও কারণ_ দুটি উড়োজাহাজ ডিসি ১০ ও বোয়িং ৭০৭ উড়তে পারছে না যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে। ১৪ সেপ্টেম্বর বিমানের বোয়িং ৭০৭ লন্ডন থেকে এসে ঢাকায় অবতরণকালে পাখার মধ্যে পাখি ঢুকে গেলে বিপর্যয় আরও বড় হয়ে যায়। এ অবস্থায়ই ১৭ সেপ্টেম্বর ভোরে ৪১৯ যাত্রী নিয়ে বিমান হজ ফ্লাইটের সূচনা করে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিপর্যয়ের শিকার যাত্রীরা গত এক সপ্তাহে একাধিকবার বিক্ষোভ করেছেন। অপ্রত্যাশিত ঘটনা আরও আছে। চট্টগ্রাম-জেদ্দা সরাসরি ফ্লাইটে গত ৮ বছর ধরে হজযাত্রীরা মক্কায় যান। এবার হঠাৎ সরাসরি ফ্লাইট বাতিল করে দেওয়ায় চট্টগ্রামের ১০ হাজার হজযাত্রী শুধু নন, সংশ্লিষ্ট আরও অনেকেই ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিক্ষোভ আর ভাংচুরের ঘটনায়। সবাই জানি ক্ষোভ আর ভাংচুরে সমস্যার সমাধান নেই; সমাধান হচ্ছে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে। বাংলাদেশ হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) গত কয়েকদিন ধরে এ সংকট নিরসনে বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের বাইরে থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার তারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঢাকায়। সংবাদ সম্মেলনে হাব নেতারা আশঙ্কা করেছেন, যে ধীরগতিতে বিমান ৪৫ থেকে ৫০ দিনের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তাতে প্রথম ১০ দিনেই ৩০ হাজার টিকিটের সংকট দেখা দিচ্ছে। ফলে এখনই থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করা না হলে শেষদিকে গিয়ে মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ক'দিন আগেই থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন। তাহলে সৃষ্ট সংকট নিরসনের বিকল্প পন্থা কী? এখন সে তথ্য জানা খুবই জরুরি। কারণ এ বছর প্রায় দেড় লাখ হজযাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একা বহন করবে সাড়ে ৫৬ হাজার। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাচ্ছেন মাত্র ৩ হাজার ৯৬ জন। বাকি সবাই যাচ্ছেন বেসরকারি উদ্যোগে। সৌদি এয়ারলাইন্স ও নাসা এয়ার বাকি যাত্রী কতটা বহন করতে পারবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এরই মধ্যে সৌদি এয়ারলাইন্স পূর্বনির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে প্রায় ৩-৪ হাজার যাত্রী কম পরিবহনে সক্ষম হবে বলে জানা গেছে। হাবের আশঙ্কা, কিছু হজযাত্রী যেতেই পারবেন কি-না সন্দেহ। এ অব্যবস্থায় ধর্ম মন্ত্রণালয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সংশ্লিষ্ট সবার জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। বিমানকে সিডিউল বিপর্যয় থেকে মুক্ত করার জন্য স্থায়ী সংস্কার কার্যক্রমের কথাও এখনই ভাবা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.