হুমকির মুখে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা by মাসুদ ফরহান অভি

বা দশাহ শেরশাহ ঘোড়ার ডাকের মাধ্যমে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে সংবাদ প্রেরণের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই থেকে সাংবাদিকতার শুরু। সময়ের পরিক্রমায় সাংবাদিকতা আধুনিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সমাজ ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে সংবাদমাধ্যম।


মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের রক্ষাকবচ হিসেবে গণমাধ্যম ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। মূলত গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় ভবিষ্যৎ জনশক্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। সে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংবাদগুলো গণমাধ্যমে সহজেই পেঁৗছানো সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন থেকেই সুযোগ পাচ্ছেন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সত্য বলার সাহস চর্চা করার।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাংবাদিকতা যখন বিকশিত তখনই প্রশাসন বা শাসক শক্তি তা রুখতে ব্যস্ত। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন প্রশাসন, প্রশাসনপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী দুর্নীতি এমনকি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এতে সংবাদপত্রে কোনো দুর্নীতি বা অপকর্মের খবর প্রকাশিত হলে এদেরই কারও না কারও বিপক্ষে যায়। তখন যেন তাদের পৈশাচিক শক্তি আরও বৃদ্ধি পায়। দেশের আইন-কানুন নিজেদের স্বার্থে প্রয়োগ করা এবং এমন ধারণা থেকে নিজের অপরাধকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য আরও বড় অপরাধ সংঘটিত করতে দ্বিধাবোধ করে না এই শ্রেণীর মানুষ।
গত ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে এক সাংবাদিককে মারধর করে ছাত্রলীগ নামধারীরা। একই দিন রাতে দৈনিক যুগান্তরের চবি প্রতিনিধি লাঞ্ছিত হন তাদের হাতে। গত তিন বছরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে হরহামেশা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ঘটনায় কার্যকর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি, বরং সাংবাদিকরা তাদের ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলার প্রতিবাদ জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌন মিছিলের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাইলে তাতেও প্রশাসনের বাধা ডিঙাতে হয় সাংবাদিকদের। প্রশাসনের দাবি, সাংবাদিকরা কর্মসূচি পালন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। এটা কোন ধরণের কথা! ছোট্ট এই ক্যাম্পাসে সাড়ে তিনশ' পুলিশ রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। যেই ক্যাম্পাসে শত শত পুলিশ নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন রাখা হলো, সেই ক্যাম্পাসে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হওয়া কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক নয়?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে_ বিশ্ববিদ্যলয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি আর সহিংসতার খবর প্রচার না করে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দেওয়াটাই সাংবাদিকতা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করেন তারা। প্রশাসনের আচরণ দেখে আরও মনে হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার কোনো প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন না। কিন্তু জাতির কাছে তাদের প্রয়োজন আছে, যাদের ঘাম ঝরানো টাকায় চলে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময়ই সাংবাদিকদের ওপর নাখোশ থাকে। আর যে গ্রুপটি ক্ষমতার বাইরে থাকে, তাদের কাছে সাংবাদিকরা ভালো। প্রশাসনের কেউ কেউ আবার সখ্য গড়ে তোলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। সখ্যের খাতিরে প্রশাসনের দুর্নীতিগুলো, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ লুণ্ঠন করার নীতিগুলো চোখে পড়ে না বা দেখে না_ এমন সাংবাদিকও পাওয়া যায়। তবে এ সংখ্যা হাতেগোনা। আরেক দল সাংবাদিক থাকেন, যাদের কাজ প্রশাসনের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরা; শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে_ শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী এমন নীতির সমালোচনা করা। প্রশাসন এদের হলুদ সাংবাদিক বলে আখ্যা দেন। টেন্ডারবাজি, শিক্ষক নিয়োগসহ সব নিয়োগে দুর্নীতি, আত্মীয় তোষণ আর আঞ্চলিকীকরণের প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তারা হয়ে যান হলুদ সাংবাদিক।
সাংবাদিকতার শক্তি হচ্ছে প্রকাশ করা। সত্য কথা প্রকাশ করলে শাসকদের বিরুদ্ধাচরণ করা হবে_ এটাই স্বাভাবিক। অন্যায়কারীদের হুমকি আর বাধা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সাংবাদিকতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও কর্তব্যরত সাংবাদিকদের নৈতিকতা ও সত্য প্রকাশের দৃঢ়তার কাছে তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি, পারবে না।
স মাসুদ ফরহান অভি :শিক্ষার্থী
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
forhanovi6@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.